হারিয়ে যাচ্ছে আদিবাসী ভাষা
একুশে সংবাদ : দীর্ঘদিন অব্যবহার, প্রাথমিক শিক্ষায় আদিবাসী বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয় না হওয়া এবং আদিবাসীদের জীবনে বাংলা- ইংরেজির আধিপত্যের কারণে হারিয়ে গেছে বাংলাদেশের অনেক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বর্ণমালা।
ভাষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় আদিবাসীদের বর্ণমালার পাঠ পরিচিতি এবং প্রযুক্তিতে এসব বর্ণমালা সংযুক্ত করা গেলে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব এসব বর্ণ এবং লিপি।
বাংলাদেশে প্রায় ৩৮ টি জনগোষ্ঠীর আলাদা আলাদা ভাষার প্রচলন রয়েছে। আইন অনুসারে দেশের সকল নাগরিক নিজ নিজ মাতৃভাষা ব্যবহারের অধিকার রাখলেও সময়ের প্রয়োজনে বাংলা ভাষার প্রচলন বৃদ্ধি এবং আদিবাসীদের বর্ণমালা সংরক্ষণের উদ্যোগ না থাকার কারণে অনেক জাতি-গোষ্ঠীর মাতৃভাষা হুমকির মুখে পড়েছে। এখন অনেক আদিবাসীই নিজের মাতৃভাষায় কথা বলতে পারলেও নিজের বর্ণমালায় লিখতে বা পড়তে পারেন না।
আদিবাসী জাতি-গোষ্ঠীর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কয়েকজন বলেন, 'আমরা ছোটবেলা থেকেই বাংলা ভাষায় পড়াশোনা করছি, নিজস্ব ভাষা বলতে পারলেও তা পুরোপুরি লিখতে পারি না। নিজেদের ভাষার দৈন্যদশা তুলে ধরার পাশাপাশি এগুলো সংরক্ষণের দাবিও জানান তারা।
ভাষা বিশ্লেষকরা বলছেন, সকলের মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র। তারা বলেন, ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পুরো পৃথিবী স্বীকৃতি দিয়ে যে মর্যাদা দিয়েছে, তা রক্ষা করতে সব ভাষার বর্ণমালা বা লিপি সংরক্ষণ এবং বাঁচিয়ে রাখার গুরু দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে।
ভাষা গবেষক অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিলো একটি অভিন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা, কিন্তু তা করতে পারেনি। বৈষম্যপূর্ণ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা এগোতে পারবো না। আন্তর্জাতিক ভাষা ইন্সটিটিউটের অন্যতম দায়িত্ব হলো, বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর ভাষা ও বর্ণমালা রক্ষা করা, এক্ষেত্রে প্রযুক্তির উন্নয়নকে কাজে লাগাতে সরকারের ভর্তুকি দিতে হবে।'
একই সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষায় এবং প্রযুক্তিতে আদিবাসীদের বর্ণমালা যুক্ত করা গেলে এসব ভাষা বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন তারা।
বাংলা ও চাকমা ভাষার কী-বোর্ড উদ্ভাবক মোস্তফা জব্বার বলেন, 'আমরা বর্ণমালা কম্পিউটারে তৈরি করে প্রমাণ করে দিয়েছি যে, সকল ভাষাই এভাবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। তাই এমন একটি সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে, যেন সেই জনগোষ্ঠী তা ব্যবহার করতে পারে।'
আন্তর্জাতিক ভাষা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগ জানতে চাইলে ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক জানান, আদিবাসীদের হারিয়ে যাওয়া বর্ণ বা লিপি সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। তবে আধুনিক প্রযুক্তিতে আদিবাসীদের ভাষা যুক্ত করার বিষয়ে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২২-০২-০১৫:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :