AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বেদে সম্প্রদায়ের বিচিত্র জীবনযাত্রা!


Ekushey Sangbad

১০:৩০ এএম, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫
বেদে সম্প্রদায়ের বিচিত্র জীবনযাত্রা!

একুশে সংবাদ : টেকেরহাটের ঐতিহ্যবাহী কুমার নদের তীরে ছোট ছোট পলিথিন মোড়ানো সারিবদ্ধভাবে সাজানো ঘরগুলো দেখলেই বোঝা যায় বেদেরা এখানে সাময়িকভাবে অবস্থান নিয়েছে। যাযাবর বেদেদের জীবনযাত্রা প্রণালী বড় বিচিত্র। নদীর সঙ্গে তাদের জীবনের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। খাল-বিল ও নদীর পাড়ে এদের অবস্থান এবং বসবাস। ছোট ছোট সাজানো নৌকায় ওদের ঘরবাড়ি। স্রোতে শ্যাওলার মতো ভেসে বেড়ানো বেদেদের জন্ম-মৃত্যু, বিয়েশাদি, সামাজিক অনুষ্ঠান নৌকায়ই হয়। এদের কোন নির্দিষ্ট এলাকা নেই। দলবদ্ধভাবে জীবিকার তাগিদেই। যখন যে দিকে প্রযোজন সে দিকেই তাদের নৌকা এগিয়ে যায়। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে অথবা কুমার নদীর তীরে প্রতিবছর অতিথি পাখির মতো এদের আগমন ঘটে। আবার একদিন তারা উধাও হয়ে যায়, কেউ খবর রখে না। কেউ জানেও না এরা কোথা থেকে এল? কোথায় গেল? কুমার নদের তীরে অবস্থানরত বেদেদের সঙ্গে আলাপ করে এদের বিচিত্র জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু জানা গেল। এ সমপ্রদায়ের মেয়েরা উপার্জন করে, ছেলেরা ঘরকন্না সামলায়, ফুর্তি করে বেড়ায়। বেদে মেয়েরা ভীষণ কর্মঠ ও পরিশ্রমী হয়। কাকডাকা ভোরে শিশু নিয়ে মনোহরী দ্রব্য বা সাপের ঝাঁপি নিয়ে বের হয় তারা। সারাদিন গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে দিনের শেষে ক্লান্ত দেহে ফেরে আস্থানায়। বেদেনিরা যখন গ্রামে গ্রামে পণ্য বিক্রির জন্য পরিভ্রমণ করতে যায়, তখন বেদেরা নৌকা পাহারা দেয়। এছাড়া তারা অলসভাবে বা নিস্ক্রিয়ভাবে নৌকায় বসে থাকে না। তারা তাঁতীদের কাপড় বোনার প্রয়োজনীয় নানা উপকরণ তৈরি করে এবং সেগুলো হাটে বিক্রি করে। পাখি শিকারের জন্য সরু মোটা লম্বাকৃত নল তৈরি করে এবং একটির মধ্যে আরেকটি প্রবেশ করিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী লম্বা করে নেয়। আর অবশেষে নলটিতে একটি শর সংযোগ করে। তারপর গাছের ডালে বসা পাখিকে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে খোঁচা মেরে শরবিদ্ধ করে। পাখি শরবিদ্ধ হওয়ার আগে টেরও পায় না যে, শিকারি এমন চাল চেলে তাকে শিকার করল। বেদেরা কেবল জেলেদের কাছ থেকে মাছ কিনে থাকে এবং নিজেরা বড়শি দিয়ে মাছ ধরে। সৌখিন বেদেরা কেউ কেউ নানা ডিজাইনের নৌকা তৈরি করে থাকে। এসবে মধ্যে রয়েছে ময়ুরপঙ্ক্ষী নৌকা। গলুইয়ে কুমিরের মাথার অনুকৃতি লাগানো নৌকা, বাজরা নৌকা, টাবইরে নৌকা, গয়না নৌকা প্রভৃতি জাতীয় নৌকা ইত্যাদি। বেদের আরেকটি বৃহৎ আয়ের উৎস ঝিনুক কুড়ানো। নদীতে অনেক ছোট বড় ঝিনুক থাকে। সারিবদ্ধভাবে নদী বেষ্টন করে বেদেরা ঝিনুক কুড়াতে সম্মুখপানে অগ্রসর হতে থাকে। বিপুল পরিমাণ সংগৃহীত ঝিনুকের ভেতরে কোষগুলো বের করে ফেলে। স্তূপীকৃত ঝিনুক বিক্রি করে তারা অনেক টাকা আয় করে। আবার ঝিনুকের ভেতরের মুক্তা বিক্রি করে তারা বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করে। ঝিনুক দিয়ে বোতাম, মেয়েদের কানের দুল, চুলের ব্যান্ড, বিভিন্ন গহনা তৈরি করা হয়। শিল্পীরা এতে রং তুলি এঁকে অপূর্ব বিষয়বস্তু করে তোলে। বেদেরা মূলত ইসলাম ধর্মাবলম্বী। মুসলমানদের মতো এদের শিশুদের খাতনা করানো হয়। বেদে-বেদেনির বিয়েতে প্রচুর অনন্দ হয়। সারারাত হইচই হয়। বর গাছের মগডালে উঠে বসে থাকে এবং বেদেনি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কাকুতি-মিনতি করে নিচে আসার জন্য বলে এবং চিরকাল রোজগার করে খাওয়াবে বলে শপথ নেয়। অতঃপর বর নিচে নেমে আসে। এভাবেই তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হয়। পরবর্তী সময়ে পালন করে এ প্রতিশ্রুতি। তবে এদের বিয়েতে কোন রেজিস্ট্রি হয় না। বেদে সমপ্রদায়ের মধ্যে ৩টি জাত রয়েছে। তা হচ্ছে বৈদ্য, সান্দা, বৈরাল। এদের প্রত্যেকেরই জীবন-জীবিকা ভিন্নতর। বৈদ্যরা সাধারণত সুশ্রী। এদের পুরুষরা কবিরাজি করে। সাপের খেলা দেখায়। সাপের কামড়ের চিকিৎসা করে তাবিজ বিক্রি করে। এদের স্ত্রীরাও এদের মতো জীবিকার অন্বেষণে গ্রামে ঘুরে সাপের খেলা দেখায় সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা করেন। তাবিজও বিক্রি করে সান্দা জাতের বেদেরা শ্রেণীভুক্ত। এদের মেয়েরা বেশি সাজ-গোছ করে ও সাধারণত চুড়ি বিক্রি করে। শহর ও গ্রামে এদের যাতায়াত বেশি। এরা হিসাব-নিকাশ ভালো বুঝে এবং কিছুটা আর্থিক সচ্ছলতায় থাকে। পুরুষরা ছাতা, টর্চলাইট ইত্যাদি মেরামতের কাজ করে। বৈরাগী শ্রেণীর বেদেরা সাধারণত বড়শি দিয়ে মাছ ধরে মাছ বিক্রি করে এরা সংসার চালায়। এ শ্রেণীর মেয়েরাও সারারাত জেগে বিভিন্ন উপায়ে মাছ ধরে পরদিন তা বাজারে বিক্রি করে এরা সারাক্ষণ নৌকায় থাকে। বেদেদের এ যাযাবর জীবনে এখনও সর্দারের অনুমোদন ছাড়া নতুন নৌকা তৈরি, ছেলেমেয়েদের নাম রাখা এবং বিয়ে ও যাত্রার স্থান নির্বাচন কল্পনাই করা যায় না। সর্দারের আদেশ তারা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। বিচারের ক্ষেত্রে সর্দারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত। সর্দারের দেয়া যে কোন দ- তারা মাথা পেতে নেয়। তবে সর্দারকে সবার মতোই কাজ করতে হয়। সম্মান ছাড়া আর কোন লাভ সর্দারের নেই। আয় না করলে সেও উপোস থাকবেন। সর্দারের মৃত্যুর আগে আর কেউ সর্দার হতে পারে না। যাযাবর বেদেদের নৌকার সংসার ক্রমশ ডাঙার মাটিতে স্থানান্তর হচ্ছে। বেদে বংশধররা তাদের পূর্বপুরুষদের জীবনধারার কথা ভুলে যেতে বসেছে। জন্ম-জন্মান্তর ধরে পানির স্রোতে ভেসে বেড়ানো বেদে সমপ্রদায়ের উথানের ইতিহাস কারো জানা নেই। শুকিয়ে যাওয়া নদীর স্থান পরিবর্তন করে বেদেরা অপেক্ষাকৃত বড় নদীতে নৌকার বহর গড়ে তোলে। সামাজিক কর্মকা- ব্যাপক দেশ-গ্রামে গেলে তখন আর বেদে বহর যত্রতত্র বড় একটা চোখে পড়ে না। এরা ধর্মকর্মের ব্যাপারেও বিমুখ নয়। নামাজ, রোজা, ঈদ উৎসব, শবেবরাত, মহরম এমনকি ছেলেদের খাতনা ঊৎসবও পালন করে থাকে। তবে মসজিদে গিয়ে এদের নামাজ পড়তে দেখা যায় না। বিচিত্র এ জীবনধারায় অভ্যস্ত বেদেদের সামজবাসী মানুষরা এখনও তাদের সমাজে অঙ্গীভূত করে যথাযথ সমাজিক মর্যদা দিতে পারেনি। স্থলবাসী মুসলমানরা তাদের বিয়ে শাদী, ফাতেহা, খাতনা ও চেহলাম অনুষ্ঠানে দাওয়াত না করলেও বেদেরা তাদের অনুষ্ঠানে সমাজের ২-৪ জন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে দাওয়াত করে থাকেন। বেদেদের এখনও চরম দুঃসময়। জাত- পেশা ছেড়ে অনেকেই উঠে এসেছে স্থলে। ঝাঁপি মাথায় বেদেনিদের সারিবদ্ধ লাইন আর তেমন চোখে পড়ে না। ক্রমেই তারা বেছে নিচ্ছে অন্য পেশা। বর্তমানে কঠিন জীবন-জীবিকার পথে এরা আর তাল মিলিয়ে টিকে থাকতে পারছে না। তাই অনেকেই পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে এরা বেছে নিচ্ছে অন্য পেশা। এদের সামাজিক মর্যাদা দেয়া আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৮-০২-০১৫:
Link copied!