বন্দীদের মধ্যে অসন্তোষ, আদালত চালুর দাবিতে অনশনের হুমকি
একুশে সংবাদ : রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বুড়ির দোকান এলাকার বাসিন্দা মোর্শেদ ওরফে কালু। চুরির মামলায় গত ১৫ জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আছেন তিনি। তাঁর আইনজীবী জানান, মোর্শদকে গ্রেপ্তারের ধারা জামিনযোগ্য। আবেদন করলে আদালত থেকে জামিন পাওয়া যেত।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ২৬ বছর আগের নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হরতালে শুনানিতে অংশ নেন না আইনজীবীরা। ফলে আদালতের কার্যক্রম কার্যত অচল। এ কারণে জামিনের আবেদন করতে পারছেন না মোর্শেদ।
শুধু মোর্শেদ নন, লোহাগাড়ার ছামিরা, বায়েজিদ বোস্তামীর কামরুল হক, ডবলমুরিংয়ের লাইলা বেগম, পাঁচলাইশের জোবাইদা আক্তারসহ কারাগারে আটক অনেকের এখন এই অবস্থা। এ নিয়ে বন্দীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এর থেকে রেহাই পেতে তাঁরাসহ ৫০ জন বন্দী হরতালে আদালত চালুর দাবিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জেল সুপারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছেন। চিিঠতে তাঁরা আদালতের কার্যক্রম শুরু না হলে অনশনের হুমকি দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন আদালত চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আইন সচিব ও জেলা আইনজীবী সমিতির নেতাদের জানিয়েছেন। এরপর দফায় দফায় বৈঠক করলেও হরতালে আদালত চালুর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি আইনজীবী সমিতি। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন বিচারপ্রার্থীরা।
এদিকে কারাগারে ধারণক্ষমতার প্রায় চার গুণ বন্দী নিয়ে বিপাকে পড়েছে কারা কর্তৃপক্ষও। কারাগারের বাইেরও বেড়েছে বন্দীদের সঙ্গে দেখা করতে আসা স্বজনদের ভিড়। প্রতিদিন দর্শনার্থীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ।
কারা সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীর ধারণক্ষমতা রয়েছে ১ হাজার ৮৫৩ জনের। সেখানে গতকাল শনিবার পর্যন্ত বন্দী ছিলেন ৬ হাজার ৭৮১ জন। এর মধ্যে হাজিত রয়েছেন ৫ হাজার ৭৮০ জন। ৬ জানুয়ারি থেকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের টানা হরতাল-অবরোধ শুরু হলে পুলিশের ধরপাকড়ও বেড়ে যায়। প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ আসামি নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আসছেন। এদিকে গত সপ্তাহ থেকে আইনজীবীর সমিতির অনাপত্তি নিয়ে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা বিচারকের খাসকামরায় জামিন আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন। এতেও জামিনের পাওয়ার সংখ্যা সীমিত—সাত থেকে আটজন। এ ছাড়া বেশির ভাগ বন্দী বিষয়টি জানেন না।
আইনজীবীরা জানান, হরতালে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কারাগারে আটক বন্দীদের বিচারাধীন মামলাগুলোর কার্যক্রম থমকে আছে। ফলে ধার্য দিনে শুনানি না হওয়ায় বিচারকাজ শেষ হচ্ছে না। মুক্তি পেতেও দেরি হচ্ছে।
বেসরকারি কারা পরিদর্শক মোহাম্মদ সিরাজদ্দৌল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে এখন তিল ধারণে ঠাঁই নেই। বন্দীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা জানতে চাইলে তাঁরা সবাই এক বাক্যে হরতালে আদালত চালুর পক্ষে মত দিয়েছেন। অনেকে জামিনযোগ্য ধারার মামলায়ও দিনের পর দিন কারাগারে কাটাচ্ছেন। এ অবস্থা বেশি দিন চলতে থাকলে বন্দীরা প্রকাশ্যে বিক্ষোভ করবেন। তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
কারাগারের ভেতরে বন্দীদের চাপ, বাইরে স্বজনদের ভিড়। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা গেছে, কারাফটকে শতাধিক নারী-পুরুষ অপেক্ষায় আছেন বন্দী স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাতের। দীর্ঘক্ষণ দাঁিড়য়ে থাকার পর কারাগারের সাক্ষাৎকক্ষে একনজর দেখা মিললেও লোহার গ্রিলগুলো খুব ঘন হওয়ায় কারও চেহারা কেউ ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছেন না। আর লোকজনের ভিড় বেশি হওয়ায় কারও কথা কেউ বুঝতেও পারছেন না।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ছগির মিয়া বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, দুই মাস ধরে হরতালে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বন্দীরা জামিন পাচ্ছেন না। এতে কারাগারে বন্দীর সংখ্যা বেড়েছে। আদালত চালুর জন্য বন্দীদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসককে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই হরতালে আদালত চালু না হলে বন্দীরা খাবার না খেয়ে অনশনে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছেন। তাঁদের শান্ত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
হরতালে আদালত চালু প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক জানান, বেশ কিছুদিন ধরে জামিনযোগ্য ধারার মামলায় বারের অনাপত্তি নিয়ে জামিনের আবেদন করতে পারছেন আইনজীবীরা। ১৯৮৯ সালে নেওয়া সিদ্ধান্ত কীভাবে পরিবর্তন করা যাবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বারের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে কয়েক দফায় মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। কিন্তু তাতে সিদ্ধান্ত আসেনি। আগামী মঙ্গলবার আবারও বৈঠকে বসার দিন ধার্য রয়েছে।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/০১-০৩-০১৫:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :