''যমুনার জল দেখতে কালো''...
একুশে সংবাদ : ‘যমুনার জল দেখতে কালো, চান করিতে লাগে ভালো…।’ গানে একথা মধুর শোনা গেলেও বাস্তবে তা মোটেও ভালো নয়। জয়পুরহাট সুগারমিলের বিষাক্ত বর্জ্যরে বিষক্রিয়ায় আবারো আক্রান্ত হয়ে পড়েছে নওগাঁয় ছোট যমুনা নদী। এতে নদীর ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পানি কালো রং ধারণ করেছে। একই সঙ্গে দুর্ঘন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে এলাকা জুড়ে। মারা যাচ্ছে নদীর মাছসহ সব ধরনের জলজ প্রাণী।
ভেসে উঠছে মৃত জলজ প্রাণী ও মাছ। নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল মানুষ পড়েছেন চরম পানীয় জলের সংকটে। প্রতি বছরই এই সময় জয়পুরহাট সুগার মিল কর্তৃপক্ষের ছেড়ে দেয়া বর্জ্যে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। এর প্রতিকারে ইতোপূর্বে নানা ধরনের আন্দোলন হলেও সংশ্লিষ্টরা কর্ণপাত করেননি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার রাতে সুগারমিল কর্তৃপক্ষ মিলে ব্যবহৃত পানি ও বর্জ্য সংরক্ষিত ক্যানেল থেকে নদীতে ছেড়ে দিলে হঠাৎই বৃদ্ধি পায় ছোট যমুনা নদীর পানি। পানীতে ভেসে আসতে থাকে বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য। এতে নদীতে দ্রুত এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়লে কালো হয়ে যায় নদীর পানি।
রোববার সকাল থেকেই পানিতে ভেসে ওঠতে থাকে মরা মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী। নদীর পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
নওগাঁ শহরের পার নওগাঁ এলাকার আমজাদ, বেলাল, আমেনা জানান, পানি দূষিত হওয়ার পর থেকে ছোট যমুনা নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল মানুষ চরম পানীয় জলের সংকটে পড়েছেন। গোসল, কাপড় ধোয়া এমনকি ফসলেও তারা দিতে পারছেন না নদীর পানি।
শিকারপুর এলাকার নদী পাড়ের জেলে আবুল, জালাল ও ছাইমুদ্দিন জানান, সুগারমিল কর্তৃপক্ষ নদীতে বর্জ্য ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই মারা গেছে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ। ফলে এখন আর মাছ ধরে জীবিকা চালানো বাদে করতে হবে অন্যকোনো কর্ম।
তারা আরো জানান, প্রতি বছর সুগারমিল থেকে নদীতে বর্জ্য ছেড়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিষক্রিয়ায় মারা যায় সব ধরনের মাছ ও জলজ প্রাণী। আগামী বর্ষা মওসুমের আগে আর এ অবস্থার অবসান হবে না।
এদিকে, এভাবে বর্জ্য ফেলে নদীর পানি দূষণ করায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে নওগাঁর সচেতন মহলে। ইতোপূর্বে তারা নদী দূষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশসহ লিগ্যাল নোটিশ জারি করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এর পরও নদীর পানি দূষণ প্রতিকারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি এখন পর্যন্ত।
এ বিষয়ে নওগাঁ একুশে উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ডিএম আব্দুল বারি জানান, প্রতি বছর একই সময়ে নদীতে বর্জ্য ফেলে পানি দূষণ করায় চরম দুর্ভোগে পড়েন এলাকাবাসী। এভাবে চলতে থাকলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সম্প্রতি জয়পুরহাট চিনিকলের বর্জ্য শ্রী নদী দিয়ে ছোট যমুনা নদীতে মিশেছে। ট্যাংরা, বাইন, বোয়াল, পুঁটি মাছ মরে ভেসে ওঠছে। পানির রঙ বদলে গেছে, বিষাক্ত গন্ধ ছড়াচ্ছে। কারণ পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে। ভাটিতে প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হওয়াতে এই অবস্থা আরো কঠিন ও জটিল হয়ে ওঠবে। নদীর বুক থেকে বর্জ্য না সরালে এই দূষণ আরো ভয়াবহ ও তীব্র হয়ে ওঠবে। ধীরে ধীরে ছোট যমুনা নদীতে শৈবাল, শামুক, কুচে, মাছ ও জলজ জীবের টিকে থাকার সামগ্রিক পরিবেশ হারাবে।
এ বিষয়ে জয়পুরহাট সুগারমিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম জানান, মিলের বর্জ্যগুলো নিজস্ব খালে দীর্ঘদিন রেখে শুধু পানিগুলো নদীতে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে ফেলে দেয়া পানিগুলো বিষাক্ত নয়। এতে করে নদীর পানি দূষণ হচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক নয়।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/০১-০৩-০১৫:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :