বাবুই পাখি ও তার শৈল্পিক নির্দশন বিলুপ্ত
পাইকগাছা প্রতিনিধি : খুলনার পাইকগাছায় জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণতা, পরিবেশ বিপর্যয় ও লবণ পানির বিরূপ প্রভাবে হ্রাস পেয়েছে পশুপাখির সংখ্যা। অভায়শ্রম ও সংরক্ষণের অভাবে ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে অসংখ্য পাখি।
গত এক যুগেরও অধিক সময় দেখা মেলেনি কবি রজনী কান্তের‘বাবুই পাখি’। বাবুই পাখির শৈল্পিক নির্দশন বাসা এখন শুধু কবির কবিতায় সীমাবদ্ধ। উপকূলীয় এ এলাকার বর্তমান প্রজন্ম ভুলে যেতে বসেছে বাবুই পাখির ঐতিহ্য। পরিবেশ বিশ্লেষকদের মতে যে সকল পশু-পাখি বিলুপ্তি প্রায় এ সকল পশু-পাখিদের সংরক্ষণে উদ্যোগ না নিলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে হারিয়ে যাবে অসংখ্য পাখি।
সূত্র মতে, জেলার উপকূলীয় এ এলাকা এক সময় ছিল সবুজের সমারোহে ঘেরা। গাছ-গাছালিতে ভরপুর ছিল গোটা এলাকা।সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা হওয়ায় অসংখ্য প্রজাতির পশুপাখি ও প্রাণির উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। আশির দশকে বাণিজ্যিকভিত্তিতে লবণ পানির চিংড়ি চাষ ব্যাপকতা লাভ করায় কৃষি অধ্যুষিত এ এলাকা পরিনত হয় লবণ অধ্যুষিত এলাকায়। এক দিকে লবণ পানির বিরুপ প্রভাব অপর দিকে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয় এবং ইট ভাটা, টালী কারখানা ও গৃহস্থলীর কাজে অবাধে গাছপালা নিধনের ফলে ধ্বংস হয় পশু পাখিদের আবাসস্থল। ফলে হুমকির মুখে পড়ে বিভিন্ন প্রজাতির পশু পাখি। ধীরে ধীরে হ্রারাস পায় পাখিদের সংখ্যা। ইতোমধ্যে ঈগল, ময়না, টিয়া সহ কয়েক প্রজাতির পাখি বিলুপ্তি ঘটেছে। যে সকল পাখিদের বিলুপ্তি ঘটেছে তাদের মধ্যে অন্যতম বাবুই পাখি। তথ্যনুসন্ধানে জানা যায় বাবুই চডুই সদৃশ্য পাখি। গাছে ঝুরিরমত চমৎকার বাসা বুনে বাস করায় এ পাখির পরিচিতি জগৎ জোড়া। বাবুই পাখির বাসা উল্টানো কলসির মত দেখতে। বাসা বানানোর জন্য খুবই পরিশ্রম করে এরা । এ জন্য অনেকেই একে তাঁতি পাখিও বলে থাকেন। সারা বিশ্বে বাবুই পাখির প্রজাতির সংখ্যা ১১৭ হলেও বাংলাদেশে দেশি বাবুই,দাগি বাবুই, বাংলা বাবুই নামে তিন প্রজাতির বাবুই পাখির বাস। বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করার জন্য এরা জোঁনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে এবং সকাল হলে আবার তাদের ছেড়ে দেয়। প্রজনন সময় তাছাড়া অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী পাখির গায়ে কালো কালো দাগসহ পিঠ হয় তামাটে বর্ণের। নীচের দিকে কোন দাগ থাকে না। ঠোঁট পুরো মোছাকার, লেজ চৌকা। তবে প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখির রং হয় গাঢ় বাদামী। বুকের উপরের দিকটা হয় ফ্যাকাশে। অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী বাবুই পাখির চাঁদি পিঠের পালকের মতোই বাদামি। বুকের কালো দোড়া ততটা স্পষ্ট নয়। প্রকট ভ্রুরেখা কানের পিছনে একটি ফোঁটা থাকে। বাবুই পাখি সাধারণত তাল, খেজুর, নারিকেল ও আখ ক্ষেতে বাসা বাঁধে। ধান, চাল, গম ও পোকা-মাকড় প্রভৃতি তাদের প্রধান খাবার। পরিবেশ বিপর্যয়, আবাসস্থল সংকট, খাদ্যাভাব, ও সংরক্ষনের অভাবে গত এক যুগেরও অধিক সময় আগে বিলুপ্তি ঘটেছে দেশী প্রজাতির সকল বাবুই পাখি। এক সময় এলাকার প্রায় প্রতিটি তাল গাছে দেখা মিলত বাবুই পাখি। বাবুই পাখিকে ঘিরে লেখা কবির স্বাধীনতার সুখ কবিতাটি আজো উদাহারণ হিসাবে মানুষ ব্যবহার করলেও সময়ের বির্বতনে বিলুপ্তি ঘটেছে বাবুই পাখি ও তার শৈল্পিক নিদর্শন বাসা।
বাবুই পাখির বাসা আজ স্মৃতির নষ্টালজিয়ায় অথচ গত এক যুগ আগেও গ্রাম-গঞ্জের তালগাছ, নারিকেল গাছে ব্যাপকভাবে বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়তো হরহামেশাই। বাবুই পাখির এসব বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই ছিলনা। মানুষের মনে চিন্তার খোরাক যোগাত এবং স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করতো।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/০৩-০৩-০১৫:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :