'বাংলাদেশে এখনো নারীদের মুক্তি মেলেনি'
একুশে সংবাদ : অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মত বাংলাদেশেও এখনো নারীদের মুক্তি সম্পূর্ন ভাবে মেলেনি। তবে আশার কথাও রয়েছে, বিগত ১৫ বছরের তুলনায় বাংলাদেশে বর্তমানে নারীরা বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপক অবদান রেখেই চলছে। রাজনীতি থেকে শুরু করে সকল স্তরে নারীরা তাদের কর্মদক্ষতা দেখিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানের মত ভবিষ্যৎতেও নারীরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বেষ্টওয়ে গ্রুপের অপারেশনস প্রধান (এইচআর-এডমিন) ফারিদা আহমেদ নিকু।
নারী দিবস ও নারীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন তিনি, সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ইসমাঈল সিরাজী।
ফারিদা আহমেদ নিকু। জন্ম ও শৈশব রাজধানীর ধানমন্ডিতে। তবে বাবার চাকরির সুবাদে দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন স্থানে থাকার সুযোগ হয়েছে। পিতা প্রকৌশলী আমজাদ আলী আহমেদ, মাতা রাজীয়া আহমেদ। ছোট বেলা থেকেই অত্যন্ত স্বাধীনচেতা ও মেধাবী ছিলেন নিকু। তাই ছাত্র জীবন থেকেই চাকরীতে যোগ দেন। কোন বাঁধাই তার পড়া লেখা ও কর্মে প্রভাব ফেলতে পারেনি।
তিনি একজন নাট্য ও নৃত্যশিল্পী, ইউনিভার্সিটি ফিল্মস এর “ জলের মেয়ে” শর্ট ফিল্ম এর নায়িকা ছিলেন। এছাড়াও গ্রুপ থিয়েটার “লোক নাট্য দল” এর বিখ্যাত নাটক কঞ্জুশ এর মরজিনা চরিত্র নিয়ে বহুবার মঞ্চে উঠেছেন।
১৯৯১ সালে আইপিডিসি অফ বাংলাদেশ লিঃ এ কর্ম জীবন শুরু করেন। দীর্ঘ ১৫ বছর একই স্থানে কর্মরত ছিলেন। চাকরি ছাড়ার পূর্ব মুহুর্তে ঐ কোম্পানির হেড অব এইচআর এডমিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।
২০০৭ সালে স্কলাস্টিক গ্রুপ (বর্তমানে এ্যাসেন্ট গ্রুপ) এ ম্যানেজার এডমিন হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তিতে বেষ্টওয়ে গ্রুপে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি বেষ্টওয়ে গ্রুপের অপারেশনস প্রধান (এইচআর-এডমিন) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে শিক্ষার হার নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা এমন প্রশ্নে ফারিদা আহমেদ নিকু বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা শিক্ষার দিকে এগিয়ে রয়েছে। মেয়েরা ভাল ফলাফল করতে সক্ষম হচ্ছে। শিক্ষার মান এখনো সন্তুষ্টের পর্যায়ে যায়নি।
তবে দিন দিন নারীদের শিক্ষার হার বাড়ছে এটা একটি আমাদের জন্য আশার সংবাদ।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীরা কি রকম অবদান রাখছে ?
নিকু: নারীরা শুধু শিক্ষা অর্জন করে ঘরে বসে থাকেনি। সংসারের কাজের পাশাপাশি তারা বিভিন্ন সেক্টরে চাকুরি বা ব্যবসা করছে। পরিবারের স্বচ্ছলতার জন্য আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করছে।পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীরা বিশেষ অবদান রাখছে।
কর্মস্থলে নারীরা কতটুকু নিরাপত্তা পাচ্ছে ?
নিকু: বর্তমানে নারীরা কর্মস্থলে পূর্ন নিরাপত্তা পাচ্ছে। কারণ প্রতিটি সরকারি বেসরকারি অফিসে উচ্চপর্যায়ে / ম্যানেজমেন্টে নারীরা রয়েছে। যার ফলে অন্যান্য নারী কর্মচারীরা কর্মস্থল পূর্ন নিরাপত্তা পাচ্ছে।
কি কি বিষয়ে নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে?
নিকু: উচ্চ পর্যায়ে সরকারি, বেসরকারি এমনকি দিনমজুর পর্যায়েও পুরুষদের সমান কাজ করা সত্বেও নারীরা সামাজিক ও আর্থিক ভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। নারীদের প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মানি সঠিক ভাবে দেয়া হচ্ছে না। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীরা অনেক বেশি মনোযোগী তারপরও নারীরা প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক ও পদবীর ক্ষেত্রে।
কোন কোন সেক্টরে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে ?
নিকু: নারীরা সবসময় আন্তরিক ও মনোযোগ সহকারে কাজ করে, যার কারনে অধিকাংশ সেক্টরেই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। যেমন, কর্পারেট সেক্টরে প্রশাসন, মানবসম্পদ, কাস্টমার কেয়ার, ব্র্যান্ডিং, ব্যবসা উন্নয়ন ইত্যাদি।
নারী নির্যাতন আইন কি আপনি যথার্থ মনে করেন ?
নিকু: যুগের পর যুগ পুরুষরা নারীদের উপর নির্যাতন করে আসছে। তবে বর্তমানে এমনটি নেই। নারীরা এখন স্বনির্ভর, তাদের পুরুষের উপর আর নির্ভর করতে হয় না। তাই নারী নির্যাতন অনেক অংশে কমে গেছে। তবে বাংলাদেশের নারী নির্যাতন এর সংখ্যা উদ্বেগ জনক। নারী নির্যাতনের আইন আছে কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন না থাকায় নারী নির্যাতন কমছে না।নারী নির্যাতন আইনের জটিলতার কারণে অনেক সময় নারীরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
নারী নেত্রী ও সমাজ বিশ্লেষকরা অনেক ভাল ভাল কথা বলছেন কিন্ত আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়নি।
'বাংলাদেশে এখনো নারীদের মুক্তি ঘটেনি'
নারীদিবস নিয়ে কিছু বলুন...
শেষ পর্যায়ে এটাই আশা করবো যেন নারীরা তাদের শ্রমের পূর্ণ মর্যাদা পায়। কেউ যেন নারীদেরকে কারো স্ত্রী বা মেয়ে মনে এটা না ভাবে যে, “ উনিত অমুকের স্ত্রী, উনার বাবা/ উনার স্বামী ভাল আয় করে উনি টাকা দিয়ে কি করবেন ?” এখানে প্রশ্নটা টাকার না, প্রশ্নটা মর্যাদার, এটা মনে রাখতে হবে। আর সকল পুরুষকে বলব, নারী একজন মানুষ, সে শুধু নারী এই চিন্তা ধারা থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে।
একুশে সংবাদ ডটকম/রাজু/০৯-০৩-০১৫:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :