মেঘনায় অবৈধ বালু উত্তোলন, হুমকিতে ১০টি গ্রাম
একুশে সংবাদ : নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে শম্ভপুরা ইউনিয়নের ঝগড়ার চর এলাকায় মেঘনা নদীর তীরবর্তী কৃষকদের ফসলি জমি কেটে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। ফলে নদীর ভাঙনে এলাকায় কয়েকশ বিঘা ফসলি জমি নদীরগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে আশপাশের ১০টি গ্রাম। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে মেঘনা নদীতে চলাচলরত সবধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন এলাকাবাসী।
সামসুল হক, আরব আলী, রহমত মিয়াসহ ওই এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, শম্ভুপুরা ইউনিয়নের ঝগড়ার চর বালু মহাল ইজারা পায় বন্দর উপজেলার চাঁদনী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী চাঁন মিয়া। গত ছয় মাস ধরে চাঁন মিয়া বেশ কয়েকটি ড্রেজার বসিয়ে মহাল বালু উত্তোলন করছিলেন। পরে ওই এলাকায় ভাঙন দেখা দিলে স্থানীয়দের অনুরোধে তিনি বালু উত্তোলন বন্ধ রাখেন। পরে চাঁদনী ট্রেডার্সের বালু উত্তোলন বন্ধের সুযোগ নিয়ে মুন্সীগঞ্জের বাশার ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আবুল বাশার একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট করে পুনরায় বালু উত্তোলন শুরু করে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ বালু উত্তোলনকারী সিন্ডিকেট রাতের আঁধারে নদীর তীরবর্তী নিচু ফসলি জমি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে। কিন্তু বালু সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। বালু সন্ত্রাসীরা অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এলাকায় ট্রলার নিয়ে মহড়া দেয়, যাতে কেউ প্রতিবাদ না করতে পারে।
এদিকে নদীর তীরবর্তী বালু উত্তোলনের কারণে ওই এলাকার কৃষকের কয়েকশ বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে ফতেপুর, দড়িগাঁও, শম্ভুপুরা, ইসলামপুর, ফরদী, এলাহীনগর, বানিয়ারচর, গোবিন্দপুর ও চেলার চর নামের ১০ গ্রামসহ কয়েকশ বাড়িঘর।
শম্ভুপুরা গ্রামের বাসিন্দা দিদার হোসেন, আবু তালেব ও শাহাজউদ্দিন জানান, বন্দর উপজেলার চাঁদনী ট্রের্ডাসের মালিক চাঁন মিয়া মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলনের ইজারা এনে কয়েক মাস বালু উত্তোলন করেন। পরে ফসলি জমি ভাঙনের মুখে পড়লে এলাকাবাসীর অনুরোধে তিনি বালু উত্তোলন বন্ধ রাখেন। পরে মুন্সীগঞ্জের আবুল বাশার বালু সন্ত্রাসীদের নিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট করে পুনরায় বালু উত্তোলন শুরু করেন। ফলে আমাদের কৃষিজমিসহ বাপ দাদার ভিটেমাটি নদীতে যাওয়া শুরু করেছে।
ফতেপুর গ্রামের আসাদ প্রধান, কামরুজ্জামান বলেন, সপ্তাহে বালু সন্ত্রাসীরা শক্তিশালী ড্রেজারের মাধ্যমে রাতের আঁধারে ৬০ বিঘা জমির বালু কেটে নিয়েছে। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ ও বালু সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করলে ১০ গ্রামের কৃষকরা আমরন অনশন ও মেঘনা নদীতে চলাচলরত সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
চাঁদনী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী চাঁন মিয়া জানান, আমি মেঘনা নদীর ঝগড়ার চর বালু মহাল ইজারা এনে বালু উত্তোলন করি। পরে গ্রামবাসীর অনুরোধে বালু উত্তোলন বন্ধ রাখার পর আবুল বাশার আমার ইজারাকৃত বালু মহাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কৃষকদের ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তবে এ বালু উত্তোলনের সঙ্গে আমি জড়িত নই।
তবে বাশার ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আবুল বাশার দাবি করেন, আমি আমার ইজারাকৃত বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন করছি। গ্রামবাসীর অভিযোগ সত্য নয়।
সোনারগাঁও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান বলেন, অবৈধভাবে কেউ যদি বালু উত্তোলন করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২০-০৩-০১৫:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :