AB Bank
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

পানির দুরবস্থা অবর্ণনীয়


Ekushey Sangbad

০৪:৩৭ পিএম, মার্চ ২২, ২০১৫
পানির দুরবস্থা অবর্ণনীয়

একুশে সংবাদ : শিগগিরই বড় ধরণের পানি সংকটে পড়তে যাচ্ছে পৃথিবী। আর পনেরো বছরের মধ্যেই দেখা দেবে এই মারাত্মক পানি সংকট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলেছে, বাংলাদেশের মানুষ ঝুঁকির মধ্যে বাস করছেন। কারণ ১৬ কোটি মানুষের দেশটিতে ৯৭ ভাগ মানুষের পানি প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হলেও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে না পারার কারণে এবং মৌসুম ভেদে পানি সংকটের কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিঘিœত হচ্ছে, শিল্পোন্নয়ন ও কৃষি কাজও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অথচ ‘বিশ্ব পানি দিবসের’ এবারের প্রতিপাদ্য: `ওয়াটার অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট` বা ‘পানি এবং টেকসই উন্নয়ন’। এর আগের বছর ছিল ওয়াটার অ্যান্ড এনার্জি। গত কয়েক বছরের প্রতিপাদ্য দেখে ধারণা করা যায়, জাতিসংঘ ক্রমেই পানি দিবসকে বৃহত্তর ইস্যুতে সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। হু জানিয়েছে, বাংলাদেশের নদ-নদীগুলোর পানির উৎস ভারত থেকে বয়ে আসা অভিন্ন নদীর পানি। কিন্তু দেশটিতে শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ এবং পানি প্রাপ্যতা ভয়াবহভাবে কমেছে। মানুষের পানি প্রাপ্যতা এবং অপ্রাপ্যতাও ঋতুভেদে ওঠানামা করে। বর্ষায় পানির ঢল থাকলেও গ্রীষ্ম ও শীত মৌসুমে পানির প্রাপ্যতা কমে যায়। এর প্রধান কারণ হিসাবে সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশের কোন নদীতেই বর্ষার পানি ধারণের ব্যবস্থা নেই। অপরদিকে পানির চাহিদা মেটাতে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন বাড়ছে। এতে পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ২০১০ সালে বিশ্বে যে ১৫টি দেশ সবচেয়ে বেশি ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে তাদের মধ্যে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান ও ইরানের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর আশংকাজনকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। প্রতিদিন ক্রমবর্ধমান চাহিদার চাপে সুপেয় পানি সরবরাহ করতে গিয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করতে বাধ্য হচ্ছে ঢাকা ওয়াসা। অন্যদিকে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানি মাত্রাতিরিক্ত দূষিত হওয়ায় ভূ-উপরিভাগের পানির ব্যবহার সেভাবে বাড়ছে না। এ অবস্থায় মানুষের চাহিদা মেটাতে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন বেড়ে যাওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আমাদের দেশে পানির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে শিল্প খাত। যেমন একটি টেক্সটাইল মিল দিনে এক বা দুই লাখ লিটার পানি ব্যবহার করে। যে নদীর পাড়ে কারখানাটি স্থাপিত, তার জন্য এটা হয়তো খুব বেশি পরিমাণ পানি নয়। কিন্তু যখন সেখান থেকে এক হাজার লিটার বর্জ্য পানি নদীতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন অপূরণীয় ক্ষতি হয়। ফলে গোটা নদীর পানি তো বটেই; মাছ, জলজ প্রাণী, উদ্ভিদ, অণুজীব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের দেশের সব নদী দূষণের কারণ মূলত শিল্প। আমরা যদি টেকসই উন্নয়ন চাই, তাহলে পানির এই দূষণ, অপচয় কমাতেই হবে। বাষট্টি রকমের রাসায়নিক বর্জ্যে অনেক আগেই বিষাক্ত হয়ে গেছে বুড়িগঙ্গার পানি। বাতাসে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। নদীর তলদেশে জমাট বেঁধেছে ৮ ফুট পুরু পলিথিনের স্তর। এর পানিতে এন্টিবায়োটিকসহ হাসপাতালের বর্জ্যও মিশছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বুড়িগঙ্গার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন অনেক কমে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে পানি। রাজধানী ঢাকার প্রাণরূপী বুড়িগঙ্গা এখন নগরবাসীর আবর্জনা ফেলার ভাগাড় মাত্র। দখল আর দূষণে ধুঁকছে বুড়িগঙ্গা। এমেক্সাসিলিন, পেনিসিলিন, সিপ্রোফ্লোক্সাক্সিন আর অ্যাজিথ্রোমাইসিনের মতো উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়েটিকও রয়েছে এর মধ্যে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে ট্যাবলেট-ক্যাপসুলের খোলস, স্যালাইন, সিরিঞ্জ, ব্যান্ডেজ, সিরাপ ইত্যাদি হাসপাতাল-বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় ফেলার কারণেই এন্টিবায়োটিক পানিতে মিশছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও প্রাণিবিজ্ঞানীদের মতে মাছ ও জলজ প্রাণী বসবাসের জন্য প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ৫ মিলিগ্রাম বা তার বেশি থাকা প্রয়োজন। অপরদিকে দ্রবীভূত হাইড্রোজেন মাত্রা কমপক্ষে ৭ মিলিগ্রাম থাকা উচিত। অথচ বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোটায়। নদী তীরবর্তী লালবাগ, সোয়ারীঘাট, শহীদনগর, চাঁদনীঘাট, লালকুঠি, মালিটোলা, মিলব্যারাক ইত্যাদি এলাকায় অভ্যন্তরীণ পয়ঃনিষ্কাশন লাইনের সংযোগ রয়েছে পুরানো ড্রেনেজ লাইনে। বাদামতলী ও শ্যামবাজারের কাঁচা সবজির বাজার থেকে পচা-নষ্ট সবজি ও ময়লা ফেলা হচ্ছে বুড়িগঙ্গায়। রাজধানী ও আশেপাশের শিল্প কারখানার বর্জ্য হিসাবে সায়ানাইড, পারদ, ক্লোরিন, নানা রকম এসিড, সীসা, দস্তা-নিকেলসহ মোট ৬২ প্রকারের রাসায়নিক বুড়িগঙ্গার পানিতে মিশছে। ২০১১ সালের ১ জুন হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়েছিল, বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষণ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এই পানিকে আর পানি বলা যায় না? আদালত মনে করে, এতে সারা দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে? আদালত জানায়, এ অবস্থার আশু সমাধান না হলে নাগরিকরা আরো ব্যাধিগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে? অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, পরিবেশ রক্ষা যেন কারোরই দায়িত্ব নয়? রায়ে ওই সময় বুড়িগঙ্গা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত সব পয়ঃপ্রণালী এবং শিল্প কারখানার বর্জ্য নিষ্কাশন লাইন এক বছরের মধ্যে বন্ধ করতেও ওয়াসা চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয় আদালত। নদী দূষণরোধে কোন গাফিলতি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়। কিন্তু এ উদ্যোগ ওই পর্যন্তই। বরং দিনে দিনে আরো বেড়েছে নদী দূষণ। পরিবেশবিদরা বলছেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এসব ট্যানারি অতিদ্রুত সাভার ও কেরানীগঞ্জের চামড়া শিল্প নগরীতে না সরানো হলে নদীর সঙ্গে প্রাকৃতিক পরিবেশের দূষণ মাত্রা প্রতিদিনই বাড়বে। অথচ হাজারীবাগ ট্যানারি শিল্পের মালিকদের বাধার মুখে প্রায় আড়াই শতাধিক ট্যানারি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। অপরদিকে ট্যানারি শিল্প মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় সাভারে ট্যানারি শিগগিরই সরিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। রাজধানীর অধিকাংশ টেক্সটাইল কারখানার বর্জ্য পরিশোধনাগার নেই। ফলে প্রতিদিন এ শিল্পের বিভিন্ন কারখানা থেকে প্রায় ৯০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য নদীতে পড়ে। নদীপথে চলাচলকারী নৌযানগুলোতেও বর্জ্য সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে নৌযানগুলোর বর্জ্য সরাসরি ফেলা হয় নদীতে। পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, অধিদপ্তর কর্তৃক পরীক্ষিত ১৩টি নদীর মধ্যে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদীর পানির মান ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছছে। শুষ্ক মৌসুমে এসব নদীতে কোনো জলজপ্রাণী বাঁচতে পারে না। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২২-০৩-০১৫:
Link copied!