AB Bank
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

এক অদম্য তরুণের গল্প!


Ekushey Sangbad

১০:৩৩ এএম, মার্চ ২৪, ২০১৫
এক অদম্য তরুণের গল্প!

একুশে সংবাদ : রাস্তা দিয়ে চলতে ফিরতে বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে এক ধরনের লোকদের মানুষের কাছে হাত পাততে দেখা যায়। যাদের কারো হাত নেই, কারও পা নেই। অনেকের আবার দেখা যায়, হাত বা পায়ে সামান্য একটু সমস্যা রয়েছে। যার কারণে তারা রাস্তায় শুয়ে বসে মানুষের কাছে হাত পাতছে। তাদেরকে আমরা ভিক্ষুক বলে চিনি। এরা সাধারণত জন্মগতভাবেই এ ধরনের শারীরিক ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। এদেরকে বলা হয় বিকলাঙ্গ। স্বাভাবিকভাবেই কোনো কাজ কর্ম করতে না পারায় তারা পথে ঘাটে ঘুরে মানুষের কাছে হাত পেতে জীবিকা নির্বাহ করে। এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। তবে সব স্বাভাবিক ঘটনাকে অস্বাভাবিক করে একজন মানুষ এখনো বিশ্বের লাখ লাখ মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়ে চলেছেন। তিনি হলেন নিক বায়োসিস। জন্মগতভাবে বিকলাঙ্গ এই মানুষটির হাত বা পা কোনোটিই নেই। তারপরও তিনি সামনের দিকে এগিয়ে গিয়েছেন। নিক বায়োসিস এর জন্মের আগে তাকে নিয়ে তার বাবা-মায়ের আকাশ ছোয়া স্বপ্ন ছিল। কোনো বাবা-মাই ঘুনাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেন না যে তাদের সন্তান শারীরিক কোনো ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করুক। নিকের বাবা-মায়ের স্বপ্নকে ধুলিসাৎ করে ১৯৮২ সালের ৪ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের একটি হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের সময় হাত-পা বিহীন আজব এক শিশুকে দেখে অনেকেই ভড়কে উঠেন। নিকের অস্বাভাবিক জন্মের কারন চিকিৎসকগন কিছুতেই খুজে বের করতে পারলেন না। নিকের মায়ের গর্ভবর্তী অবস্থায় শারীরিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিরিক্ষার রির্পোট দেখা হলো, নিকের বাবা-মায়ের বংশের ইতিহাস বৃত্তান্ত খুজে দেখা হলো কিন্তু কোন কারন পাওয়া গেলো না। সূতরাং নিকের বাবা-মাকে মেনে নিতে হলো নিক অস্বাভাবিক এবং বিকলাঙ্গ । নিকের পরিচয় হলো বিকলাঙ্গ শিশু। life-history-of-nick-vujicic-pic4 নিকের ডাক নাম ‘নিকোলাস’। তার পিতার নাম পোস্টার বরিস বায়োসিস এবং মায়ের নাম ডুসকা। নিকের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে চরম হতাশার মধ্যে পড়ে যায় নিকের বাবা-মা। এভাবেই নিক এক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে বড় হতে থাকে। যেহেতু নিক ছোট বেলা থেকেই চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে বেড়ে উঠেছিল, সূতরাং কেউ কোন দিন কল্পনা করতে পারেনি বিকলাঙ্গ এই সুন্দর শিশুটি একদিন পৃথিবীর সব মানুষকে যারা বিকলাঙ্গ নয় কিংবা বিকলাঙ্গ সবাইকে অন্যভাবে বাঁচার পজেটিভ স্বপ্ন দেখাবে, পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার আহবান জানাবে। তবে জীবনের শুরুটা ছিল বড়ই কষ্টকর। একে তো হাত-পা নেই, তার উপর রয়েছে মানুষের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। স্কুলে পড়াকালীন সময়ে নিক যখন দেখতো তার বন্ধুরা খেলাধুলা করছে তখন সেই দৃশ্য দেখে হতাশ হয়ে পড়তেন। অস্বাভাবিক হওয়ায় কেউ তার সাথে বন্ধুত্বও করে নি। এরকম কোনো পরিস্থিতিতে কোনো স্বাভাবিক মানুষের পক্ষেও টিকে থাকা অসম্ভব। আর সেখানে হাত-পা বিহীন এই মানুষটি ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে থাকেন। life-history-of-nick-vujicic-pic1 স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন: আর দশজনের মতো নিকও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করার জন্য কৃত্রিম যন্ত্রপাতির দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্য বরাবরই বলা চলে অট্টহাসি হেবে নিকের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। যখন নিকের শরীরে ইলেকট্রনিকস অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ট্রায়াল করা হয় তখন দেখা যায় ভারী ভারী এসব যন্ত্রপাতি নিয়ে নিক চলাফেরা করতে পারে না। তাই কৃত্রিম যন্ত্রপাতির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন নিক এবং ভাগ্যকে উল্টো অট্ট হাসি দেখিয়ে মনে মনে ঠিক করেন হাত-পা ছাড়াই পুরো বিশ্বকে আমি জয় করবো। নিজে নিজেই আবিষ্কার করলেন স্বাভাবিক হওয়ার কৌশল: নিক নিজেই তার সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার জন্য নিজেই নিজের সমস্যা সমাধানের জন্য পথ বের করতে লাগলো। দু’হাত এবং দু’পা না থাকলেও নিক নিজে নিজেই বের করলো কিভাবে দাঁত ব্রাশ করতে হবে, চুল সুন্দর করে আচড়াতে হবে, কম্পিউটারে ব্রাউজ করতে হবে, সাতার কাটতে হবে। নিক এখন নিজের মতো করে অনেক কিছুই করতে পারে। নিকের জীবনে এভাবেই সফলতা আসতে লাগলো যখন সে সব অনাকাঙ্কিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শিখলো। সফলতার শুরু: আমাদের দেশে ব্যতিক্রম ধর্মী কিছু মানুষ দেখা যায়, যাদের হাত না থাকায় পা দিয়ে লেখেন। আবার অনেকে আছেন যাদের হাত-পা কোনোটি না থাকায় মুখ দিয়ে লেখেন। এভাবে বড়জোড় পাশ করা যায়। কিন্তু নিক বায়োসিস ৭ম শ্রেণিতে হয়েছিলেন ক্লাস ক্যাপ্টেন। সত্যিই এ এক আত্মবিশ্বাসের পাহাড়। স্কুলে পড়াকালীন সময়েই নিক বায়োসিস স্টুডেন্ট কাউন্সিলর হিসেবে জনকল্যাণমূলক কাজ করতে শুরু করেন। তার কাজের ক্ষেত্র ছিল বিকলাঙ্গ শিশুদের সমস্যা সমাধান ও প্রেরণা প্রদান। এ লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী পরিচালনা করতে শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ: স্কুলের পাঠ শেষ করে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পালা। নিকের বয়স যখন ১৯ বছর তখন তিনি অর্থনীতি ও অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। পড়াশোনার পর্ব চুকিয়ে এবার নিক পুরোদস্তুর মানবকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করেন। বিভিন্ন ধরনের সভা – সেমিনারে নিক তার নিজের জীবনের প্রতিকূল অবস্থাকে জয় করার গল্প শুনিয়ে মানুষের মধ্যে অনুপ্রেরণা প্রদান করা শুরু করেন। সব জায়গাতেই তিনি মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং সেই স্বপ্ন কিভাবে বাস্তবায়িত করতে হয় তার উপায়ও বলে দিয়েছেন। ৩২ বছরের সংগ্রামী জীবন: দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে শুধুমাত্র স্বপ্নকে পুঁজি করা এই মানুষটিকে জীবনের সাথে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। বহু মানুষকে তিনি স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তার দেখানো স্বপ্নে অনেক মানুষ নতুন করে বাঁচতে শিখেছে, অনেক মানুষ নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নিক যাদেরকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন তারা সবাই বিকলাঙ্গ নয়, তাদের সবার স্বাভাবিক হাত-পা সবই রয়েছে। তারপরও তারা হতাশার কারণে জীবনের ছন্দপতন হারিয়ে ফেলেন। নিক সেই সব মানুষদের হতাশা কাটিয়ে কিভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায় সেই পথ দেখিয়েছেন। কিন্তু তার এই চলার পথে কেউ তাকে উৎসাহ দিয়েছে, আবার অনেকে তাকে নিয়ে কটাক্ষ করেছে। তবুও স্বপ্ন দেখানো থেকে পিছপা হননি অদম্য এই মানুষটি। নিক এখন একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার প্রেসিডেন্ট। এছাড়াও নিকের নিজের একটি কোম্পানী রয়েছে যার মাধ্যমে নিক বিভিন্ন স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিভিন্ন সংস্থায় মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের উৎসাহ, উদ্দিপনামুলক বক্তব্য রাখেন। নিকের কোম্পানীর নাম – Attitude is Altitude. দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে মানুষের জন্য কাজ করার পরও নিক তৃপ্ত নন। তার মতে, তার এখনো অনেক কাজ বাকি। সারা বিশ্ব চষে বেড়াচ্ছেন স্বপ্নবাজ এই মানুষটি। পুরষ্কার: যে মানুষটি আর দশজনের মতো স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না, সেই মানুষটি মাত্র ৩২ বছর বয়সে যা করেছেন তা ৬২ বছর বয়সেও অনেক সুস্থ্য স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। অদম্য এই মানুষটিকে অস্ট্রেলিয়া সরকার ২০০৫ সালে সর্বোচ্চ সম্মানের ‘Young Australian of The Year’ প্রদান করেন। প্রেম-ভালোবাসা, বিয়ে ও সংসার: এমন একটি মানুষকে কেউ বিয়ে করবে এমন কথা অনেকেই ভাবতে পারছেন না। কিন্তু তাদের ভাবনাকে মিথ্যে প্রমাণিত করে “Kanae Miyahara” নামের এক তরুণীর সাথে ২০১২ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে সেটা পারিবারিকভাবে নয়, প্রথমে প্রেম তারপর বিয়ে। অবাক হওয়ার কিছু নেই। প্রেম-ভালোবাসা সুন্দর চেহারা, শারীরিক গঠন দেখে হয় না। প্রেম-ভালোবাসা মনের বিষয়। রোমিও-জুলিয়েট, শাহজাহান-মমতাজের প্রেমও তাদের প্রেমের কাছে কিছুই না। প্রথমে ইন্টারনেটে তাদের দুজনের পরিচয় হয় এবং এই পরিচয় থেকেই তাদের দেখা সাক্ষাৎ, প্রেম-ভালোবাসা এবং পরিনয়ে বিয়ে। তাদের সংসারে সুন্দর একটি বেবি রয়েছে। life-history-of-nick-vujicic-pic8life-history-of-nick-vujicic-pic7 যাদের কাছে কৃতজ্ঞ নিক বায়োসিস: নিকের জীবনে তার পরিবারের সকল সদস্য, ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধু এবং শিক্ষকদের অনেকটা অবদান রয়েছে। তারাই বিভিন্ন প্রতিকূল মুহূর্তে নিকের পাশে এসে দাঁড়িয়েঁছেন। নিক বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন আর নিককে স্বপ্ন দেখাতে প্রেরণা দিয়েছেন এই মানুষগুলো। নিক থেকে আমরা যা শিখতে পারি: এই মানুষটির হাত-পা কোনোটিই নেই। তারপরও তিনি বিশ্বকে জয় করেছেন নিজের মতো করে। আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যাদের হাত-পা, মেধা, সুযোগ সব কিছুই রয়েছে। তারপরও আমরা মনের দিক থেকে বিকলাঙ্গ হয়ে বসে আছি। নিক আমাদের সেটিই বোঝাতে চেয়েছেন যে, স্বপ্ন দেখ এবং সেই মোতাবেক কাজ কর। সফলতার পিছনে আমাদের ছুটতে হবে না, সময় হলে সফলতা নিজেই আমাদের পিছনে ছুটবে। আমাদের শুধু লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করে যেতে হবে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৪-০৩-০১৫:
Link copied!