AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

কোথায় হারিয়ে গেলেন সালাহউদ্দিন?


Ekushey Sangbad

১১:৪১ এএম, মার্চ ২৪, ২০১৫
কোথায় হারিয়ে গেলেন সালাহউদ্দিন?

একুশে সংবাদ : বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি কোথায় আছেন, কী অবস্থায় আছেন, তা কেউ বলতে পারছে না। তিনি 'নিখোঁজ' নাকি কেউ তাকে ধরে নিয়ে গেছে, সে রহস্যের কেউ কূলকিনারা পাচ্ছে না। সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ ১১ মার্চ রাতে প্রথম অভিযোগ করেন যে, আগের রাতে (১০ মার্চ রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে) তার স্বামীকে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের একটি বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছেন। ওটা তাদের নিজস্ব বাসা নয়। পরিচিত কারও বাসা। ওই বাসায় আত্মগোপন করেছিলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। ধরে নিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে সালাহউদ্দিন তার স্ত্রীকে ফোন করেছিলেন। তারপর থেকেই তার ফোন বন্ধ। ১১ মার্চ রাতে হাসিনা আহমেদ উত্তরা পশ্চিম থানায় গিয়ে তার স্বামীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন। কিন্তু সালাহউদ্দিন আহমেদকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অস্বীকার করায় হাসিনা আহমেদ তার স্বামীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে ১২ মার্চ হাইকোর্টে একটি আবেদন করেন। আদালত ১৫ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে সালাহউদ্দিনকে কেন খুঁজে বের করে আদালতে হাজির করা হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। পুলিশ সদর দফতর, ঢাকা মহানগর পুলিশ, র‌্যাব, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং বিশেষ শাখার (এসবি) পাঁচটি আলাদা প্রতিবেদনে ১৫ মার্চ আদালতকে জানানো হয়, তারা সালাহউদ্দিনকে গ্রেফতার বা আটক করেনি। তবে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা হচ্ছে। হাইকোর্ট এ বিষয়ে শুনানি ৮ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি রেখেছেন। সালাহউদ্দিনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছেন তার স্ত্রী। এ বিলম্বের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, 'তাকে যে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেটা আমরা নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। ১০ মার্চ রাত ১০টার দিকে সালাহউদ্দিন ফোন করে এটা বলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু নেটওয়ার্ক খারাপ থাকায় বুঝতে পারিনি। এছাড়া সালাহউদ্দিনকে আশ্রয় দেয়ায় হাবিব হাসনাতের মধ্যেও গ্রেফতার আতঙ্ক তৈরি হয় বা তাকে ভয় দেখানো হয়। তাই তিনি দুবাই চলে যান। তার সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। এজন্য পুলিশের কাছে যেতে পারিনি। ১১ মার্চ দুপুরে হাবিবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি। এরপর দলের সঙ্গে কথা বলি। নজরুল ইসলাম খান বিবৃতি দেন। উনি থানায় জিডি করতে বলেন। থানায় গিয়ে পুলিশের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার কিংবা সহযোগিতা কোনোটিই পাননি হাসিনা আহমেদ। সেজন্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন কিংবা সন্দেহ দেখা দিচ্ছে! সালাহউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ কিংবা গ্রেফতার হওয়ার বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, ব্যাপারটা হয়তো বিএনপির আরেক নেতা ইলিয়াস আলীর মতো হয়ে যাচ্ছে। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে বনানীর রাস্তা থেকে 'নিখোঁজ' হন সাবেক সংসদ সদস্য, সিলেটের বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ির ড্রাইভার মো. আনসার। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত ইলিয়াস নিখোঁজ রহস্যের কোনো সুরাহা হয়নি। তিনি বেঁচে আছেন, না তাকে মেরে ফেলা হয়েছে সেটাও তার পরিবার জানতে পারেননি। ইলিয়াস নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রমেও কোনো অগ্রগতি নেই। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদী উচ্চ আদালতে রিট করেছিলেন। আদালত রুলও দিয়েছিলেন। রিট আবেদনটি এখনও বিচারাধীন। ইলিয়াস আলীর মতো সালাহউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টিও কি অনিষ্পত্তিই রয়ে যাবে? বিষয়টি অনেককেই ভাবিয়ে তুলেছে। বিএনপির মতো একটি বড় দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে কে বা কারা কেন ধরে নিয়ে গেল, তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে, শুধু এটুকু বলে দায়িত্ব শেষ করার সুযোগ নেই। ইলিয়াস আলীর আগে বিএনপির আরেক নেতা, ঢাকার সাবেক পৌর কমিশনার চৌধুরী আলমও গুম হয়েছিলেন, তারও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। চৌধুরী আলম এবং ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পেছনে সন্দেহের চোখ সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর থাকলেও ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা বা দলীয় অভ্যন্তরীণ বিরোধ ইত্যাদি কারণও থাকতে পারে বলে মনে করা হয়েছিল। তারা নিজেরাও নানা 'বিতর্কিত' কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বলে অভিযোগ ছিল। তারা নিজেরা 'শত্রু' তৈরি করেছিলেন, সেই শত্রুতার জের ধরে তাদের জীবনে করুণ পরিণতি ঘটতে পারে- এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া হয়নি। সালাহউদ্দিন আহমেদের বেলায় সে ধরনের ভাবা হচ্ছে বলে মনে হয় না। দলের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কিংবা ব্যক্তিগত অন্য কোনো কারণে কেউ তাকে ধরে নিয়ে গেছে, এমন কথা এখন পর্যন্ত কোনো মহল থেকেই বলা হয়নি বা হচ্ছে না। অবশ্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ১৭ মার্চ বিবিসিকে বলেছেন, 'সালাহউদ্দিন আহমেদ আগেও লুকিয়েছিলেন। তিনি আমাদের কাছে নেই। আমরা চেষ্টা করছি আসলে কী ঘটেছে, তা জানার। আমরা প্রথম থেকেই তাকে খুঁজছি।' এর আগে রাজধানী ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সালাহউদ্দিন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। আমরা তাকে অ্যারেস্ট করার জন্য খুঁজছি। তিনি কোথায়, তার জবাব খালেদা জিয়াই দিতে পারবেন। সালাহউদ্দিন আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে বিবৃতি দিচ্ছিলেন। কিন্তু সবাই জানে, তিনি ওখান থেকেই (খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়) বিবৃতি দিয়েছেন। আট বস্তা ময়লার সঙ্গে তাকেও কোথাও পাচার করে দিয়েছেন কিনা, সে জবাব খালেদা জিয়াই দিতে পারবেন। (উল্লেখ্য, খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় থেকে সম্প্রতি আট বস্তা ময়লা বের করা হয়েছে মর্মে পত্রিকায় খবর ছাপা হয়েছে)। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লা বুলু এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, 'সালাহউদ্দিনকে খালেদা জিয়া ময়লার বস্তায় পাচার করে দিয়ে থাকতে পারেন বলে প্রধানমন্ত্রী যে অবাস্তব, আজগুবি ও নিষ্ঠুর পরিহাস করেছেন, এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। দেশবাসী তার কাছ থেকে দায়িত্বশীল বক্তব্য আশা করে; দায়িত্বহীন ও বিকৃত মানসিকতার মশকরা নয়। এমন একটি গুরুতর বিষয় নিয়ে এ ধরনের বিদ্রূপাত্মক উক্তি করে সরকার তার দায় এড়াতে পারে না।' ২৩ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বনানীতে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে আটক করা হলেও সেটা প্রথমে স্বীকার করা হয়নি। প্রায় ২১ ঘণ্টা পর তাকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করে র‌্যাব জানায়, তাকে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার করেছে। এ থেকে কেউ কেউ ভেবেছিলেন, সালাহউদ্দিনের ক্ষেত্রেও হয়তো বিষয়টি একই ধরনের হবে। অর্থাৎ শুরুতে অস্বীকার করলেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে থানায় সোপর্দ করা হবে। কিন্তু তা না হওয়ায় সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ এবং তার সন্তানরা স্বামী ও বাবার খোঁজে দিশেহারা হয়ে ছোটাছুটি করছেন, এটাই স্বাভাবিক। একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ হঠাৎ করে স্বজন-প্রিয়জনের জানাশোনার বাইরে চলে যাবেন, 'হাওয়া' হয়ে যাবেন- এটা কেউ মেনে নিতে পারে না। সালাহউদ্দিন আহমেদ বেশ কিছুদিন থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে কেউ স্ত্রী-সন্তানের সান্নিধ্যে থাকে না। তবু তার সঙ্গে নিশ্চয়ই তাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তারা জানতেন তিনি ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। কাজেই কেউ তার খোঁজ করেননি, তার জন্য ব্যাকুলতা প্রকাশ করেননি। কিন্তু ১০ মার্চ রাতের পর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হওয়ার কারণেই স্ত্রী-সন্তানদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে। তারা তার সন্ধান চাচ্ছেন। সরকারও তাকে অ্যারেস্ট করার জন্য খুঁজছে। অথচ কেউ তাকে পাচ্ছে না। তিনি ভ্যানিশ হয়ে গেলেন কোন জাদুকরের হাতসাফাইয়ে- এটা জানা খুব জরুরি। না হলে কোনো নাগরিকই নিরাপদ বোধ করবেন না। হাসিনা আহমেদ সাংবাদিকদের কাছে জোর দিয়েই বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই তার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে। যে বাসা থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেই এলাকার নিরাপত্তাকর্মী এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকেও সে ধরনের তথ্যই পাওয়া গেছে। হাসিনা আহমেদ মনে করেন, 'আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরই দায়িত্ব তাকে আদালতের সম্মুখে, আমাদের সবার সম্মুখে হাজির করা। আমরা এক অজানা আশঙ্কায় আছি যে, ওনার কোনো ক্ষতি না হয়ে যায়।' বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বিবিসিকে বলেছেন, আমরা সবাই উদ্বিগ্ন যে, সালাহউদ্দিনের জীবনে কী ঘটেছে। ও কি সত্যি বেঁচে আছেন কিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার কষ্ট ও নিজের কথা সরাসরি বলার ইচ্ছা পোষণ করে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। স্মারকলিপিতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলা হয়, 'আপনার কাছে আকুল আবেদন, আমার পরিবার, আমার সন্তানদের কথা বিবেচনা করে, প্রজাতন্ত্রের নাগরিক হিসেবে আমাদের আইনি ও সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার নিমিত্তে ও সর্বোপরি মানবিক কারণে, আমার স্বামীকে খুঁজে বের করার জন্য আপনার সদয় হস্তক্ষেপ, বিশেষ নির্দেশনা ও সহায়তা প্রার্থনা করছি। ...আমার স্বামী যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন বা তার বিরুদ্ধে যদি কোনো মামলা থাকে, তাহলে তাকে অবিলম্বে আদালতে সোপর্দ করে আইনি প্রক্রিয়ায় যথাযথ বিচার কার্যক্রম গ্রহণ করা হোক।' স্মারকলিপি জমা দিয়ে হাসিনা আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। স্বামীকে খুঁজে না পাওয়ার কী বেদনা, আশা করি তিনি সেটা বুঝবেন।' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রীকে সাক্ষাৎ দেবেন কিনা, সালাহউদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষ কোনো নির্দেশ দেবেন কিনা, কিংবা সে ধরনের নির্দেশের আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে কিনা, সেসব নিয়ে জল্পনাকল্পনায় না গিয়ে এ মুহূর্তে বলার কথা এটাই যে, সালাহউদ্দিন আহমেদ যদি নিখোঁজ থাকেন, তাকে যদি খুঁজে পাওয়া না যায়, তাহলে সরকারের কোনো লাভ আছে কি? এমন নয় যে, তার অনুপস্থিতিতে বিএনপিতে গোপন স্থান থেকে বিবৃতি দিয়ে 'আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার' আহ্বান জানানোর মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ১০ মার্চ থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদ বিবৃতি দিচ্ছেন না। অন্য কেউ দিচ্ছেন। কাজেই তিনি নিখোঁজ হওয়ায় সরকারের বিশেষ কী লাভ হলো? উল্টো তো বিভিন্ন মহল থেকে সরকারের সমালোচনাই করা হচ্ছে। একজন রাজনীতিবিদ হঠাৎ করে গুম বা নিখোঁজ হয়ে যাবেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার কোনো হদিস দিতে পারবে না- এ ব্যর্থতার দায় সরকার কেন স্বেচ্ছায় ঘাড়ে নিচ্ছে? সরকারকে বিব্রত করার জন্য, বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়ার জন্য অতি উৎসাহী কোনো মহল থেকে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হলো কিনা, সে প্রশ্ন অবশ্য উড়িয়ে দেয়া যায় না। সরকারের উচিত হবে, কোনো ধরনের অবহেলা বা গাফিলতি না দেখিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করা। সালাহউদ্দিন আহমেদকে খুঁজে না পাওয়া আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্যও বড় অগৌরবের ব্যাপার হবে। একসময় বলা হতো, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চাইলে পারে না এমন কিছু নেই। তাদের সক্ষমতা নিয়ে সংশয় ছিল না। কিন্তু সাগর-রুনী হত্যাকা- কিংবা ইলিয়াস আলী নিখোঁজসহ কিছু ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর মানুষের বিশ্বাস টলে যাচ্ছে। সালাহউদ্দিন আহমেদের ঘটনাটা যেন আর একটি বিশ্বাস টলানোর বিষয় না হয়, এটাই সবার প্রত্যাশা। পুনশ্চ: সালাহউদ্দিন আহমেদের কোনো খোঁজখবর না পেয়ে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ এবং ছেলেমেয়েরা যে গভীর মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাদের দুঃখ-বেদনা-ক্ষোভ সবই স্বাভাবিক। স্বামীকে খুঁজে না পাওয়ার কী বেদনা একজন নারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সেটা বুঝবেন বলে সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী আশা করেছেন। মানবিক কারণেই এসব নিয়ে কোনো মন্তব্য করা উচিত নয়। তবে এটাও তো ঠিক যে, প্রধানমন্ত্রী একজন নারী সেটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও তো সত্যি যে, তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। সরকারের নির্বাহী প্রধান। এক নারীর বেদনা নয়, দেশের সব নাগরিকের দুঃখ-বেদনাই তাকে বুঝতে হয়। ৬ জানুয়ারি থেকে বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ-হরতালের কারণে এ পর্যন্ত দেশে প্রায় ১২৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। অগি্নদগ্ধ হয়েছেন কয়েকশ'। নানা কারণে আহত হয়েছেন ১ হাজার ৫০০-এর বেশি নারী-পুরুষ-শিশু। বিএনপি-জামায়াতের সহিংস আন্দোলনের কারণে যে নারীরা স্বামী কিংবা সন্তান হারা হয়েছেন তাদের দুঃখ-বেদনা-যন্ত্রণা প্রধানমন্ত্রী বোঝেন বলেই তাদের পাশে দাঁড়ান। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। বার্ন ইউনিটে পেট্রলবোমায় দগ্ধ শিশুর পাশে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পেট্রলবোমা-ককটেলে দগ্ধ-আহত মানুষের আর্তচিৎকারে একজন নারী হয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী বিচলিত বোধ করেছিলেন কি? এভাবে জীবিত মানুষকে দগ্ধ করার মতো অমানবিক কাজ যে আর কিছু হতে পারে না, এটা কি একবারের জন্যও তার মনে হয়েছিল? একবারের জন্যও তার স্বামীকে এ মানুষ পোড়ানোর রাজনীতি থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন কি অথবা যারা এ জঘন্য ঘটনার জন্য দায়ী তাদের প্রতি ধিক্কার জানাতে বলেছিলেন? কঙ্বাজার থেকে ফেরার পথে বাসে অগি্নদগ্ধ হয়ে স্কুলছাত্রী মাইশা ও তার বাবার করুণ মৃত্যু কি সালাহউদ্দিন আহমেদের সন্তানদের বিবেককে সামান্য পীড়িত করেছিল? তারা কি তাদের বাবাকে এ অপরাজনীতি থেকে সরে আসার আবদার একবারের জন্যও করেছিল? বার্ন ইউনিটে আগুনে পোড়া মানুষ এবং স্বজনরা বুক ফাটা হাহাকার করে কি পেট্রলবোমা নিক্ষেপকারীদেরও আগুনে পোড়ানোর আর্তিই জানাননি? অথচ গোপন স্থান থেকে বিবৃতি দিয়ে 'আন্দোলন' অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে পেট্রলবোমা-ককটেল নিক্ষেপকারীদের উৎসাহিত করেছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। এ পেট্রলবোমা-ককটেলের রাজনীতি শত শত পরিবারের হাহাকার ও কান্নার কারণ হয়েছে। সে কান্না সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের কানে যায়নি। এখন তার পরিবারের কান্না যদি কারও হৃদয়ে সেভাবে দোলা না দেয়, তাহলে তাকে দোষ দেয়া যাবে কি? বিষের জ্বালা বোঝার জন্য আমাদের আর কত দিন সাপে কামড়ানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে? বিভুরঞ্জন সরকার : সাংবাদিক ও কলামিস্ট [email protected] একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৪-০৩-০১৫:
Link copied!