AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

টিএসসিতে যৌন হয়রানি, অপরাধীদের শাস্তি দাবি


Ekushey Sangbad

১১:২১ এএম, এপ্রিল ১৭, ২০১৫
টিএসসিতে যৌন হয়রানি, অপরাধীদের শাস্তি দাবি

একুশে সংবাদ : আমরা যারা মফস্বল থেকে ঢাকা এসেছিলাম উচ্চতর পাঠ নিতে এবং জীবন গড়তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কাছে তীর্থ সমান। এক সময় ঢাকার সংস্কৃতি ছিল টিএসসিকেন্দ্রিক। কিন্তু সে অবস্থা কেটে গেছে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের শাসনামলে। টিএসসি থেকে সংস্কৃতিকর্মীদের সে সময় যেভাবে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল আজ আর তার পুনরুল্লেখ করতে চাই না। সংস্কৃতিকর্মীরা এক সময় যেমন টিএসসিতে আসতো, এখন তেমনি তাদের জন্য বটতলা, ডাকসু চত্বরসহ বিভিন্ন জায়গা হয়েছে। বিশেষ করে ছবিরহাট, প্রজন্ম চত্বর, স্বাধীনতা স্তম্ভসহ সংস্কৃতিকর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় বসছে। আমরা যারা এক সময় দিনরাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কাটিয়েছি তাদের সবার কাছেই এর আবেদন বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের অনেক সংকট রয়েছে, কিন্তু শত সংকটের মাঝেও বিশ্ববিদ্যালয়টির ওপর থেকে কোনো অবস্থাতেই আস্থা হারাতে পারি না। এখনও সেখানে গেলে মনে হয় মায়ের কোলে এসেছি। কিন্তু এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের চিত্র দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। ছাত্র ইউনিয়নের ছেলেরা এগিয়ে গিয়ে প্রতিবাদ করা সত্বেও নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারছি না যে, এ আমার স্মৃতিবহ প্রিয় ক্যাম্পাস! অথচ এখনও একটু সময় পেলে টিএসসি চলে যাই। বুক ভরে শ্বাস নেই। সেই শ্বাস নেওয়ার জায়গাটিও যদি অগম্য হয়ে ওঠে তাহলে বুঝে নিতে হবে সমাজের পুরোটাই নষ্টদের দখলে চলে গেছে। বুকের জমিন তো কাউকে ইজারা দিতে পারি না। তাই এ ঘটনা শোনার পর অসুস্থ বোধ করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা তারুণ্যের উচ্ছলতায় ভরপুর থাকে- এমন কথা নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে পহেলা বৈশাখের মতো একটা অনুষ্ঠানে এই উচ্ছ্বাস আকাশ স্পর্শ করবে এটাই স্বাভাবিক। এ দিন অযুত তরুণ-তরুণীদের পদভারে মুখরিত থাকে এই এলাকা। এ সংস্কৃতি অনেক পুরনো। ফলে সেখানে গেলেই মনে হয় শান্তির নীড়ে ঢুকে পড়েছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মধ্যে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ ও বিশ্বজিৎ হত্যার পরেই এই বোধ আমার মধ্যে কাজ করছিল না। মনে হয়েছিল এই পবিত্র অঙ্গনে যদি ঘাতক ঢোকার সাহস পায় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এত কালের লালিত ঐতিহ্য আর থাকবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশও আর আগের মতো থাকবে না। সম্ভবত সেটি আর নেইও। এখন আমি আমার আত্মজাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আ¥মার যেসব বোনেরা এখানে পড়ে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। একি হাল হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র অঙ্গনে কোন মানুষ খাওয়া কুমির ঢুকলো? বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন কয়েকজন নারী। ঘটনা ঘটার সময় আশপাশে হাজার হাজার মানুষ থাকা সত্বেও বখাটেদের কবল থেকে বেশ কয়েকজন তরুণীকে উদ্ধার করতে গিয়ে আহত হয়েছেন তিন ছাত্রনেতা। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি সংসদের সভাপতি লিটন নন্দী, ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক সুমন সেন গুপ্ত ও রমনা থানা সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত দে। শেষ পর্যন্ত নিজেদের জামা-পাঞ্জাবি খুলে আক্রান্তদের সম্মান রক্ষা করতে চেয়েছেন তারা। তরুণ বন্ধুদের এই সাহস মনে করিয়ে দেয়, বিনা বাঁধায় কোনো অন্যায় পার পাবে না এ দেশে। তোমরাই আদর্শ তরুণ। তোমরাই তারুণ্যের প্রতীক। অতীতে ইংরেজি নববর্ষ পালনের সময় বাঁধন নামের একটি মেয়েও একই রকম যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিল এই টিএসসিতে। সেদিন রাতে যা ঘটেছিল আজ তা প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটিয়েছে একদল বখাটে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা এ ঘটনায় আক্রান্তদের রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। তবে তাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে তা হলো, এ ঘটনার পর দুই অপরাধীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ তাদের ছেড়ে দিয়েছে। আমার ধারণা অপরাধীরা পরিচিত বলেই পুলিশ তাদের ছেড়ে দিয়েছে। ওইসব বদমায়েশদের গোড়া বড় শক্ত। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন জাগে, তাদের গোড়া কি রাষ্ট্রের চেয়েও শক্ত? রাষ্ট্র যদি এদের পোষে তাহলে মানুষের নিরাপত্তা দেবে কে? সবচেয়ে অবাক হতে হয়, হাজার হাজার মানুষের মধ্যে দাঁড়িয়ে এ ধরনের ঘটনা কীভাবে ঘটে? এ সময় আশপাশের লোকজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘটনা উপভোগ করেছে। যদি এসব নপুংসক দর্শকদের পরিবারের কেউ আক্রান্ত হতো তাহলে তারা কী এমন নির্লিপ্ত থাকতে পারত? এ ঘটনায় নিজে দূরে থেকে যারা আত্মসম্মান বাঁচিয়েছেন কিংবা ঘরে বসে বুদ্ধিমত্তার ঢেকুর তুলছেন সময়ের তালে তারাও যখন এ রকম পরিস্থিতির শিকার হবেন তখন সহায়তা করার আর কেউ থাকবে বলে মনে হয় না। তাই এ ধরনের ঘটনা যেখানেই ঘটুক সবার এগিয়ে আসা উচিত। এর নামই প্রতিবাদ। এই নষ্ট সমাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এগিয়ে না এলে এ সমাজ-সভ্যতা হুমকির মুখে পড়বে। এ ঘটনায় ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে চারদিকে সবাই এই অপকাণ্ডের বিরুদ্ধে যেভাবে সংগঠিত হচ্ছে তাতে ঘটনাটি গিলে ফেলা আর সম্ভব হবে না। এইসব নষ্টরা ক্যাম্পাস থেকে অচিরেই প্রত্যাখ্যাত হবে বলে আমার ধারণা। এই ঘটনা কোনো মতেই বিনা বিচারে ছাড়া যাবে না। যে ভাবেই হোক, এই অপকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই নির্মূল হবে বখাটেরা। কোনো কারণে প্রতিকার ছাড়াই যদি এ ঘটনা চাপা পড়ে যায় তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। যা কোনো অবস্থাতেই প্রত্যাশিত নয়। ঐ নরপশুরা আপাতত ভদ্রবেশী ছাত্র বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আসলে এরা কারা, কোথাকার ছাত্র? নাকি পরিকল্পিতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা টিএসসিকে দেশবাসীর নিকট বিকৃতভাবে তুলে ধরার কোনো ষড়যন্ত্র করছে কোনো মহল? অথবা বিকৃত মানসিকতার কিছু ছাত্র ঢুকে পড়েছে এই পাড়ায়। আবার এমন হতে পারে, বাংলা নববর্ষের এই অসাম্প্রদায়িক চেতনার কর্মসূচি বিতর্কিত করার প্রয়াস করছে আড়ালে লুকিয়ে থাকা কোনো চক্রান্তকারি? অথবা এসব কিছুই নয়, একদল বিকৃত রুচির মানসিকতায় বেড়ে ওঠা কিছু তরুণের কাজ এটি। এমন অমানুষের সংখ্যা আমাদের দেশে নেয়াহেত কম নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই গুটিকয়েক পিশাচ হাজারো মানুষের মাঝে এ রকম ঘটনা ঘটানোর সাহস পেল কোথা থেকে? তাদের শক্তি, সাহসের উৎস কী? পুলিশের ভূমিকা বরাবরের মতো এবারো প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। যদি এসব অভিযোগের বিন্দুমাত্র সত্যতা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই দায়িত্বরত পুলিশের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। আর পশুদের গ্রেফতার করে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে কোনোরূপ কালবিলম্ব না করেই। তবে সবকিছুর উর্ধে হলো, অপরাধীদের গ্রেফতার করে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা। যদি ছাত্র হয়ে থাকে তবে ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। অপরাধীরা যদি কোনো ছাত্র সংগঠনের সদস্য হয়ে থাকে তাহলে তাদের সেখান থেকে বহিষ্কার করতে হবে। এটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হবে ততই মঙ্গল। নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন সমাজকে পিছিয়ে দেয়, নিয়ে যায় অন্ধকারের পথে। গুটিকয়েক সন্ত্রাসী, বিকৃত মানসিকতার অধিকারীদের হতে মানুষ জিম্মি হতে পারে না। অন্ধাকারের এই অচলায়তন ভাঙার শক্তি আমাদের আছে। এই নরপিশাচদের সৃষ্টি করা অন্ধকারের আগল ভেঙে আলোকিত দিন আনতেই হবে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৭-০৪-০১৫:
Link copied!