AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

আমার বেলা যে যায়


Ekushey Sangbad

০৩:৫৮ পিএম, এপ্রিল ১৮, ২০১৫
আমার বেলা যে যায়

চন্দন কুমার লাহিড়ী : ভুলে যাব ভাবি, তবু মনে তার নিত্য আসা-যাওয়া। কী লুকিয়ে থাকে আসলে এর মাঝে ব্যথা, বেদনা নাকি হৃদয়ের কথা? নাকি ব্যাকুলতা বাড়ে, চোখ থেকে জল ঝরে অবলীলায়। চোখের জলের তো কোনো হয় নাকো রং। ধরন, ধারণ, কারণ আলাদা হলেও একই রকম জল ঝরে সকলের চোখ থেকে। জল ঝরে, পড়ে যায়, থেকে যায় ব্যথা, ব্যথাভরা মন। এরপরও শুধু আসা আর যাওয়া। আর অপেক্ষা, সে তো অনেক দিন বেঁচে থাকে মানুষের মনে, প্রাণে। অপেক্ষার প্রহর বড় যাতনাময়। আর এর পরেও আমরা শুধু প্রতীক্ষা করি, প্রহর গুনি দিনরাত, কার লাগী। এভাবেই এগিয়ে যায় সময়। আর এই সাথে জীবনের এ বেলা ক্রমেই জানান দেয়- আসছে ভাটার প্রহর। জীবনের গতি এখন আবারও পেছনমুখী। এমনি করেই কেটে গেছে, যাচ্ছে জোয়ারের বেলা। উত্তাল সমুদ্রে অবগাহন আর মনের সুখে নোনা স্বাদ গ্রহণের মধুরতা বা কাতরতা, যা-ই হোক না কেন, ক্রমেই তিক্ততায় পর্যবসিত হতে চায় প্রতিনিয়ত। কে পারে, কেমন করে এমন ডাকে সাড়া দিয়ে এক নিমেষেই জীবনকে ছুটি বলে দিতে। জীবন তো বৃষ্টির জল নয়, নয় ঝরা পাতা, যেমন করে ইচ্ছে ঝরে যাক, উড়ে যাক অবলীলায়, যেখানে খুশি, তার মতো করে। এর চেয়ে বেশি প্রয়োজন তাকে থামিয়ে দেওয়া, থেমে থাক, যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ। প্রাণ তো জীবনের অস্তিত্বই জানান দেয়, বলে, আমি তো আছি সেই আগের মতোই, তবে মিছে কেন এত আয়োজন, কার জন্য। মিছে কেন আমাকে মিলিয়ে দেবার চেষ্টা ভাটার তালে কিংবা জোয়ারের জলে। কী অবসাদ তোমাকে প্রতিদিন গ্রাস করে? কার মোহে এমন ভাবনা তোমার? কী যাতনায় কাতর প্রিয়তম মোর। মাঝেমধ্যে জীবনকে তো ভাসিয়ে দিতে হয় তার মতো করে। যাক না হারিয়ে যেখানে খুশি। মাঝেমধ্যে ঘুমও তো নিয়ন্ত্রণহীন। আসবে না বলে পণ করে বসে। হঠাৎ কোনো রাত অথবা ঘুমহীন মাঝরাতে আচমকা জানালার দিকে চোখ গেলে চিরচেনা জোছনার বন্যায় ভাসি, অথবা পূর্ণিমার চাঁদের রোশনিতে। ঝড় ওঠে মনে-প্রাণে। এ ঝড়ে ভেসে যেতে মন চায়। যাক না, কত দূর আর নিয়ে যাবে, কত দূর আর যাওয়া যাবে ভাসতে ভাসতে। যারা এভাবে ভাসতে জানে, তারা তো অবলীলায় ভালোবাসে, ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা করে, অথবা ভালোবাসা তাকে ভাসাতে থাকে। ভাসতে ভাসতে দূর কোনো অজানায় মিলিয়ে যাওয়া, আবার ফিরে আসা এই নিত্য সংসারে। প্রিয়জনের মুখছবি ভেসে আসে মনে। এ সময়ে অন্য রকমের অনুভূতি আচমকা ঘরের বাইরের আমন্ত্রণ জানান দেয়। ঘর তো ছাড়ে না। ঘরের মোহ আবার ঘর বাঁধার স্বপ্ন তৈরি করে। বাইরের আমন্ত্রণের অপেক্ষার প্রহর যেন ফুরাতেই চায় না। অথবা বাইরের আমন্ত্রণ রক্ষায় প্রহর পেরিয়ে যেতে থাকে ক্ষণে ক্ষণে। এ রাতে আর ঘুম হবে না। এ রাত বড়ই মধুর অথবা কঠিন। কে নিয়ে যেতে আলোর প্রলভনে। কে ফেরাতে চায় আবার তারে অন্ধকারের পথে। আঁধার কঠিন, বড় একা, খুব একা। সেই যে জীবনের সে বেলায় কেমন যেন আচমকা কারো চোখে নিজের সর্বনাশ আবিষ্কার করার সময় অথবা আবিষ্কৃত হবার প্ররোচনায়, কী যে অসহনীয় উত্তাপ, উৎকণ্ঠা আর অপেক্ষা। সব যেন ভেঙেচুরে পড়ে নিদারুণ ঝড়ে। এলোমেলো হয়ে যায় নিমেষেই সব। পড়ার টেবিল, স্নানের ঘর, জামাকাপড়, খাবার সময়, বেড়ানো- যেন এসব কিছুই ছিল না এ জীবনের নিকট অতীতে। কেন এমন করে, এভাবে তবে আসা, কেন এসেছিলে, ভালোবেসেছিলে অথবা ঝড় তুলে চলে গেলে? অথবা কী ক্ষণে এলে গো তুমি, কোন অভিমানে। সেই চোখে, কী ছিল তবে, অথবা কার ছবি আঁকা ছিল, কেমন করে? আজও হয়নি জানা, হবার তো আর নেই তেমন কোনো সুযোগও। অথবা সুযোগ এলে তাকে ব্যবহার না করার বোকামির দণ্ডও এটা হতে পারে। দণ্ড তো অন্যায়ের শাস্তি। ক্ষমা পাবার প্রক্রিয়া মাত্র। তবে অন্যায় থেকে মুক্তি কিসে? কোন আলোর অবগাহনে মুক্তি মেলে, পেছনে ফেলে আসা সেই সব দিন, সময় কেমন করে আবার ফিরে আসে, শুধু স্মৃতি হয়ে। স্মৃতি তো নিকট অথবা দূর অতীত। কতক্ষণ বেঁচে থাকে, কার মনে, প্রাণে, কেমন করে? কেন থাকে? এই তো সেদিন এবড়োথেবড়ো পাথর বিছানো গলির পথ ধরে এগোনোর সময় জানালা খুলে যাবার শব্দে দাঁড়িয়ে পড়া, বিনম্র লাজুকতায় মুখ তুলে দেখার চেষ্টা। সেই চোখ, যার অপেক্ষায় ঘটেছে সর্বনাশ অথবা সর্বনাশের প্রক্রিয়া। কিছু একটা চুরি করে বেড়ালের লাফিয়ে পড়ায়, হতাশা চেপে বসলেও, লাঠি হাতে বেড়ালকে তাড়া করতে করতে অবশেষে জানালায় সেই চোখ, দুচোখ চার চোখ হয়ে আটকে যায় চোখের মাঝে। সামনে তো আগাতে হবে। পা যেন কেউ মাটির সাথে আটকে রেখেছে সেই আজন্ম ধরেই। গাছের মতোই দাঁড়িয়ে থাকা। কেন এমন হয়েছিল? এগিয়ে এসে একদিন যখন প্রশ্নবাণে বিদ্ধ, সত্যিই কি চলে যাবে, অথবা যেতে হবে?যাওয়া মানে তো আর ফিরে আসা নয়। তবে কেন যাবে? জলপাইগুঁড়ি তো ভিনদেশ অতিথির কাছে, তার কাছে। অতিথি আর কত সময় পার করবে, কত দিন থাকবে এই পরদেশে, কী ভরসায়, কার লাগি? এভাবে কতটা সময় থাকা যায়, কেমন করে? তবে একি ছিল বিদায়ের সম্ভাষণ, না থেকে যাবার আমন্ত্রণ? কেন থাকা হলো না অথবা আমন্ত্রণ গ্রহণের সাহস দেখানো গেল না? আমন্ত্রিত অতিথি তো অনাহারে ফিরে না কখনো, বরং ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ফিরে আসে আবার আমন্ত্রণের প্রতীক্ষায়। কোনো কিছুই আজও পরিষ্কার হয় না নিজের কাছেই। অমীমাংসিত প্রশ্নগুলো মীমাংসার পথ খুঁজে পায় না। প্রশ্নে ভরা জীবন, সমাধান না পেয়ে নতুন প্রশ্নকে যদি এড়াতে চায়, তবে কার কী তাতে, কী আসে যায়? সেদিনের মতো, সেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার শেষ হয়নি আজ অবধি। কেমন যেন, কার অপেক্ষায় আজও দাঁড়িয়ে থাকা। মাঝখানে শুধু পাল্টেছে স্থান, কাল আর সীমানা, বেড়েছে বয়স। মন আর হৃদয়ের পরিধি তো বাঁধা নেই, কে তাদের আটকাতে পারে, কীভাবে আটকাবে? শেষবার শেষ বিদায়ের লগ্নে গলির শেষ মাথায়, শেষ দেখা, সেই শেষ ছবি। আহা, এলোমেলো চুল! লাল চোখ যেন কত দিন হয়নি ঘুম! নীল ওড়নায় পেঁচানো মাথা। মুখ যেন সেই কবে থেকে নির্বাক, কত দিন হয়নিকো কথা, কারো সাথে। আজও মনে হলে চমকে উঠি। পেছনে ফিরে যাই, সেই সময়, সেই মুখচ্ছবি, আর কাব্যময় করুণ চাহনি। সেদিন কি আকাশভরা সূর্য ছিল অথবা আকাশভরা আলো। কিছুই মনে করতে পারি না, অথবা সেসব মূল্যহীন ছিল সময়ের বিবেচনায়। এবার তাহলে সত্যিই এল বিদায়ের বেলা। থাকবে না যদি তবে এলে কেন বিদায়ের বেলায়? লাল পাসপোর্টের ভিসার মেয়াদ শেষ। আবার নতুন করে ভিসা পেলে, হয়তো হতে পারে আবার দেখা। নতুন করে। সময় তো কারো হাতে বন্দি নয় অথবা অপেক্ষারও তো শেষ থাকে। কার জন্য কে অপেক্ষায় পার করবে তার জীবনের সোনালি সময়। ভালোবাসা, ভালো লাগা মানে তো পকেট পুরে ঘরে নিয়ে বাক্সবন্দি করা নয়। থাক না কিছু স্মৃতি, গল্প অথবা কাব্য, না হলে জীবন কিসের? সেই থেকে অনেক চেষ্টার পর আজও মেলেনি যাবার সুযোগ। তাই আর হয়নি যাওয়া। শুধু মনে মনে নিত্য আসা-যাওয়া। কে রোধে তাহার গতি। শুনেছি সেই গলিটা এখন চকচকে, পাথর সরিয়ে পিচঢালা হয়েছে। মানুষ আর গাড়িঘোড়ার পদভারে ব্যস্ত জনপথ, গলি। আমার সেই দাঁড়িয়ে থাকার চেনা গলিটা, অচেনা এখন, বয়স্ক রমণীর মতোই হয়তো আমার কাছে। গলির পাশের ঝোপঝাড়গুলো উধাও হয়েছে, যেখানে ঝিঁঝি পোকা অথবা জোনাকিরা আলো জ্বেলে অপেক্ষার প্রহর পার করত। শুনেছি দ্বিতল বাড়িটাও হয়েছে অনেক উঁচু। এই সাথে পাল্টে গেছে বাড়ির বাসিন্দা। মুছে গেছে সব পুরোনো স্মৃতি, পায়ের চিহ্ন, পেনসিলে আঁকা দেয়াল, নতুন রঙের প্রলেপে। বিড়াল আর জানালা খোলার শব্দ আজ হয়তো মূল্যহীন। অথবা কারো পথ আগলে দাঁড়ানো, এসব কি হয় আজকাল? এই আলোকিত যুগে। ওখানে এখনো সকাল হয়, আগের মতোই। জীবন চলে জীবনের মতো স্বাভাবিক নিয়মে। কেউ হয়তো আজও কারো জন্য দাঁড়িয়ে থাকে, পথের কিনারে, অপেক্ষা করে অথবা নিজের সর্বনাশ আবিষ্কার করে কার চোখে চোখ রেখে। সব পাল্টে গেলেও শুধু আজও পাল্টায়নি চোখের ভাষা, থেকে গেছে অমলিন, রয়েছে আগের মতোই। এ নেশায় মগ্ন সবাই, হাজার বছর ধরে। সময় পেলে আবার আসব আমি। মগ্ন নেশার ঘোর কাটাতে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৮-০৪-০১৫:
Link copied!