AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ভয় দেখিয়ে দুর্নীতি দমন


Ekushey Sangbad

১১:০৯ এএম, এপ্রিল ২৩, ২০১৫
ভয় দেখিয়ে দুর্নীতি দমন

ঢাকা: ওয়াং কিশানের সবচেয়ে প্রিয় অস্ত্র ভয়। চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও বহুমুখী দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। সেই অভিযানের অন্যতম সারথি ওয়াং। তিনি প্রায়ই তাঁর তদন্ত কর্মকর্তাদের ভয়ের মধ্যে রাখেন। সম্প্রতি দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকীর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ওয়াং ২০১২ সালের নভেম্বরে দলের কেন্দ্রীয় কমিশন ফর ডিসিপ্লিন ইন্সপেকশন (সিসিডিআই) এর দায়িত্বভার নেন। এর পর থেকে সরকারের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাঁকে যমের মতো ভয় করে। অনেকে আবার দুর্নীতির দলিলপত্র জমা দিয়ে তাদের অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে। আপাতভাবে মনে হয়, ওয়াংয়ের প্রধান লক্ষ্য ভয় দেখিয়ে শাসন করা। উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতি আবরণ উন্মোচন করতে ব্যর্থ হলে, তা দায়িত্ব পালনে অবহেলা হিসেবে গণ্য করা হয় বলে কর্মকর্তাদের তিনি সতর্ক করেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে এমন সরব ব্যক্তিটির কাছে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানটি কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পর অধিকতর গুরুত্বের বিষয় ছিল না। এক সময়ের ব্যাংকার ও বেইজিংয়ের সাবেক মেয়র ওয়াং গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ২০০৩ সালে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্স ভাইরাস রোধে ও ২০০৮-০৯ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা থেকে চীনকে রক্ষা করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। নেতৃত্বে পেশাদারির গুণের কারণে ওয়াং সজ্জন হিসেবে পরিচিত। কেউ কেউ এখন অভিযোগ করার মতো সাহস দেখাচ্ছেন। ৬৬ বছর বয়সী ওয়াং পলিটব্যুরোতে তিনি ষষ্ঠ ঊর্ধ্বতন সদস্য। তিনি ক্ষমতা বিস্তার বিবেচনা করলে তাঁর চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিনের পরই তাঁর অবস্থান। তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায় বলে মনে করা হয়। ওয়াং আমলাতন্ত্র ও রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যবস্থাপনার মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছেন। দুর্নীতির তদন্তে ওয়াংয়ের সঙ্গে দলের কয়েক শ হাজার তদন্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তাদের যেকোনো ধরনের আইনি বাধ্যবাধকতা ছাড়াই সন্দেহভাজনদের আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে। এমনকি দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপকরণ ও পিপল লিবারেশন আর্মি কর্মকাণ্ড হিসেব থেকে বাদ যাচ্ছে না। সরকার নিয়ন্ত্রিত ও সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানও তাঁদের তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে না। দুর্নীতির কারণে দেশটির এক-তৃতীয়াংশের বেশি প্রদেশের দলের ঊর্ধ্বতন নেতারা পদচ্যুত হয়েছেন। দুর্নীতির দায়ে কয়লা খনি অধ্যুষিত শানজি প্রদেশের দলের ১৩ নেতা পদচ্যুত হয়েছেন। শুধু এখানেই শেষ নয়। ওয়াং তাঁর ২০০ দুর্নীতি তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তির অনুমোদন দিয়েছেন। চীনের সবচেয়ে বড় তেল কোম্পানি চীনের জাতীয় পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দুর্নীতির দায়ে পদচ্যুত হয়েছেন। আরও অনেকে ওয়াংয়ে দুর্নীতি বিরোধী থাবায় পরিণত হওয়ার অপেক্ষার রয়েছেন। দুর্নীতি বিষয়ের স্বীকারোক্তি আদায়ে তাঁদের ওপর চাপ প্রয়োগসহ নির্যাতন করা হয়েছে। গোপনে নির্যাতন করে তথ্য বের করার আইন বহির্ভূত এ পদ্ধতিটি ‘শুয়ানংগগি’ নামে পরিচিত। বেশ কিছু জেনারেল ও দলের অনেক সাবেক সহায়তাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দলের কর্মকর্তাদের দীর্ঘ সময় ধরে ভয় দেখানোর শুয়ানংগগি পদ্ধতি নির্মম বলে অভিহিত করা হচ্ছে। অনেক কর্মকর্তার বলেন, তাঁরা ওয়াংয়ের চেয়ে শয়তানের মুখোমুখি হতে অধিক পছন্দ করবেন। আমলাদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। দলের পক্ষে জানানো হয়েছে, অনেক কর্মকর্তা এ অভিযানে এতটাই ভড়কে গেছেন যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় তাঁরা এড়িয়ে যান। গত ছয় মার্চ শানজি প্রদেশের দলের প্রধান জানান, দুর্নীতির তদন্ত কর্মকর্তাদের অভিযানে প্রদেশের প্রায় ৩০০টি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি শহরের ঊর্ধ্বতন দলের কর্মকর্তার পদও শূন্য রয়েছে। শানজি প্রদেশের দুর্নীতির দুর্নামের কারণে অনেক কর্মকর্তারাই এ পদগুলোর জন্য আবেদনে অনিচ্ছুক। ওয়ান ও শি এমন স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের সাময়িক সমস্যার ব্যাপারটি আগেই বিবেচনায় রেখেছিলেন। ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকে দল থেকে দুর্নীতি দূর করার ঘোষণা দেন। হত্যার হুমকি পাওয়ার পরও তিনি দমে যাননি। শি এর আগের প্রেসিডেন্টরা দুর্নীতি দূর করার ব্যাপারে এমন প্রতিশ্রুতি দিলেও শি সম্ভবতই ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরেই চীনে প্রায় ১০ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আইনি কাঠামোর দুর্বলতার সুযোগে অনেকেই প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ব্যাপারটি এখন বৃহত্তর রাজনৈতিক উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধারা অব্যাহত রাখতে অর্থনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দুর্নীতির এ বিস্তৃত জাল প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, বিরোধী দুর্নীতি তদন্ত সংঘাত ছড়াচ্ছে। কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের সংস্কারের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। এত কিছুর পরেও রাষ্ট্র মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলো দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে, সেগুলোকে লক্ষ্য করে এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এসব কাজের জন্য শি ও ওয়ান তাঁদের আশপাশের লোকজনদের কাছ থেকেও সহযোগিতা পাচ্ছেন। দলের দলের সর্বোচ্চ ক্ষমতাসীন পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটির অন্য পাঁচ সদস্য ঝু ইয়ংকংয়ের শাস্তির বিষয়টি অনুমোদন করেছেন। ঝু অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার সাবেক প্রধান ছিলেন এবং ২০১২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। সামরিক বাহিনীর হাই কমান্ডের অবসরপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান জু কাইহোকেও গত বছর শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁর পরবর্তী অবসরপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান গু বোজিংও শাস্তির অপেক্ষায় রয়েছেন। এমন উচ্ পদস্থ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে শি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটি আরও সুদৃঢ় করেছেন। শি এর এমন কর্মকাণ্ডে এলিট শ্রেণির একটি অংশ মহাবিরক্ত। বিতর্ক রয়েছে চীনের নেতৃত্ব নিয়েও। দলের নেতৃত্বের একটি অংশ দ্রুতই দুর্নীতিবিরোধী এ অভিযানের অবসান চান। তাঁদের দাবি, এমন অভিযান আমলাতন্ত্রের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত দলীয় চাপে শি দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে কতটুকু সফল হতে পারবেন, সেটাই দেখার বিষয়।
Link copied!