আজ উল্লাপাড়া প্রতিরোধ যুদ্ধ দিবস
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি ঃ আজ ২৪ এপ্রিল উল্লাপাড়া প্রতিরোধ যুদ্ধ দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার করতোয়া নদীর উপর ঘাটিনা রেল সেতুতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের এই স্থানটি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে একটি দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে স্বীকৃত। জেলার শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি ঘাটে বাধা পেয়ে পাকবাহিনী কাশিনাথপুর ও পাবনা ঘুরে ঈশ্বরদী গিয়ে ট্রেন যোগে সিরাজগঞ্জ প্রবেশের পরিকল্পনা করে। আগেই গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সিরাজগঞ্জের তদানীন্তন মহকুমা প্রশাসক (এসডিও) কে.এম শামসুদ্দিন আহমেদ ও পলাশ ডাঙ্গা যুব শিবিরের পরিচালক উল্লাপাড়ার ছাত্রনেতা আব্দুল লতিফ মির্জার নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা রেল সেতুর কয়েকটি রেল খুলে নদীতে ফেলে দেয়। তারা সকাল থেকে নদীর পূর্বপাড়ে শাহজানপুর গ্রামের পাশে বাংকার করে খুঁড়ে তার ভেতর সশস্ত্র অবস্থান নেয়। বেলা আড়াইটার দিকে পাকবাহিনী বহনকারী একটি ট্রেন ঈশ্বরদী থেকে এসে এই সেতুর পশ্চিম প্রান্তে দাঁড়ায়। এ সময় পাক সেনারা সেতুর অবস্থা দেখতে ট্রেন থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই পূর্বপাড় থেকে ওঁত পেতে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের রাইফেলগুলো একসঙ্গে গর্জে ওঠে। শুরু হয় ব্যাপক যুদ্ধ। প্রায় ৩ ঘন্টার এই যুদ্ধে ১৫ জন পাকসেনা মারা যায়। আহত হয় শাহজাহানপুর গ্রামের ২৫/৩০ জন নারী শিশু ও পুরুষ।
রাতে বিরতি দিয়ে পরদিন ২৫ এপ্রিল সকালে আরেক দফা যুদ্ধে হেরে যায় মুক্তিযোদ্ধারা। নিরুপায় হয়ে স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয় তারা। ওই দিনই পাকবাহিনী ঘাটিনা সেতুতে নতুন রেল বসিয়ে ট্রেন পাড় করে সিরাজগঞ্জে চলে যায়। যাবার সময় তারা রেলপথের দু’পাশের শতাধিক গ্রাম পুড়িয়ে দেয়। হত্যা করে অনেক নারী-পুরুষ। বস্তুত: ২৫ এপ্রিল (১৯৭১) থেকে সিরাজগঞ্জের পুরো এলাকা পর্যায়ক্রমে পাকবাহিনী দখলে চলে যায়। স্বাধীনতার পর উল্লাপাড়া থানা পরিষদ ঘাটিনা রেল সেতুর পূর্বপাড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের এই ঐতিহাসিক স্থানটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এখানে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করেছে। এ অঞ্চলের মানুষের কাছে এটি এখন একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত।
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :