‘মেয়ের হাড়-হাড্ডি পেলেও শান্তি লাগত’
গাইবান্ধা প্রতিনিধি ঃ সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির দুই বছর পূর্ণ হল ২৪ এপ্রিল। কিন্তু নিখোঁজ অনেকের মতোই গাইবান্ধার গার্মেন্টসকর্মী বিথী খাতুনের (২১) খোঁজ এখনো মেলেনি। বিথী বেঁচে আছে, নাকি মারা গেছে তাও নিশ্চিত নন তার পরিবারের সদস্যরা।নিখোঁজ বিথীর পরিবারের লোকজন সরকারি বা বেসরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাননি। এমনকি কেউ কখনো পরিবারটির খোঁজও নেয়নি।বিথীর বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের মধ্য ভাঙ্গামোড় গ্রামে। বিথী ওই গ্রামের দরিদ্র কৃষক আবদুল বারীর মেয়ে।সংসারে অভাব-অনটনের কারণে রানা প্লাজা ধসের এক বছর আগে বিথী চাকরির উদ্দেশে সাভারে যান। সেখানে গিয়ে রানা প্লাজার তৃতীয় তলায় ওয়াশিংয়ের কাজ নেন তিনি। মাস শেষে বেতন পেয়ে বাড়িতে টাকা পাঠাতেন। এভাবে ভালই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ হন বিথী।সরেজমিন বৃহস্পতিবার বিকেলে বিথীর বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার মা অঞ্জুয়ারা বেগমের সঙ্গে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘ঘটনার এক সপ্তাহ আগেও বিথী ফোন করে জানায়, মা তোমরা চিন্তা করো না, এবার এসে নতুন ঘর বানাব। কিন্তু সেই নতুন ঘর আর বানানো হল না।’তিনি আরও বলেন, ‘মেয়ে হামার বেঁচে আছে না মরে গেছে, তাও জানি না।’মেয়ের ছবি হাতে নিয়ে এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। মেয়ের লাশ না হোক তার শরীরের হাড় বা হাড্ডিও যদি পেতাম তাতে শান্তি লাগত।’বিথীর বাবা আবদুল বারী জানান, দুই মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে তাদের সংসার। বিথী আমার বড় মেয়ে। তার ছোট মেয়ে ফাইমাকে কষ্ট করে বিয়ে দিয়েছেন। এখন সংসারের ছোট ছেলে আশিকুর বাড়ির পাশে একটি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। সংসারে সব সময় অভাব অনটন লেগেই থাকত। সংসার চালানোর জন্য মেয়েকে গার্মেন্টসে পাঠাইছিলাম। কিন্তু তাকে গার্মেন্টসে পাঠিয়ে আমার সব শেষ হয়ে গেল। এখন মেয়ে বেঁচে আছে না মরে গেছে তাও জানি না।’রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সরকারি হিসাবমতে গাইবান্ধা জেলার নারীসহ ৪৯ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। এর মধ্যে নিখোঁজ রয়েছেন ১১ জন। আহত অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন। এ ছাড়াও অনেক পরিবারের হতাহতের কোনো খোঁজখবর নেয়নি সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থা।
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :