জীবনের প্রয়োজনে ওরা ‘ময়লাওয়ালা
একুশেসংবাদ : ‘এই ময়লা, ময়লা…! ময়লা ঠিক কইরা রাহেন, লইয়া যাইতেছি’। আজিমপুর সরকারি কলোনিতে ময়লা সংগ্রহ করে রাসেল রহমান। বয়স ১২। সারাদিনই নিজের থেকে একটা বড় ঝুড়ি নিয়ে বাসাবাড়িতে গিয়ে গিয়ে ময়লা সংগ্রহ করে বেড়ায় সে। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই রাসেল এ কাজই করে যাচ্ছে।
ছোট্ট রাসেলের এই উপার্জনের দিকে তাকিয়ে থাকে তার ছোট ভাই ও রোগাক্রান্ত মা। মা-ভাইয়ের মুখে ভাত তুলে দেয় তার এ উপার্জন। কখনো ভাত, ডাল, তরকারি, কখনো বা শুধুই শাক-ভাত। অবশ্য ঊর্ধ্বগামী বাজার দরের ঠেলায় তাদের পাতে এখন আর ডাল জোটে না। তারপরও এটাই রাসেলের জীবন।
শুধু রাসেলই নয়, এ নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য যারা কাজ করে যাচ্ছে তাদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। জীবনের প্রয়োজনে যাদের দিন কাটে নোংরা-আর্বজনার সঙ্গে। আর প্রতিনিয়ত নিজের নামটির বদলে তাদের শুনতে হচ্ছে ‘ময়লাওয়ালা আসছে’ উপাধিটি। সেই সঙ্গে জুটে মানুষের ঘৃণাভরা দৃষ্টি।
ময়লা সংগ্রহের বিষয়ে রাসেল তার অভিজ্ঞতার কথায় বলে, ‘প্রত্যেক দিন সহালে বাঁশি লইয়্যা, তিরিশটা থেকে চল্লিশটা বাড়িত গিয়া ময়লা তুলি। হেরপর একটা ঝুড়ি ময়লা বোঝাই কইরা ভ্যান গাড়িতে করে রাস্তার পাশের ডাস্টবিনে থুইয়্যা আহি। সারাদিন এইসব করতে করতে পচা-ময়লা আমার মাথায়, চুলে মাখামাখি হইয়্যা যায়।’
এমন অভিজ্ঞতা নগরীর হাজার হাজার শিশুশ্রমিকের। একমুঠো ভাতের জন্য তারা স্বাস্থ্যঝুঁকি মাথায় নিয়ে মলমূত্র, আর্বজনা পরিষ্কারের কাজ করে। আর বছরের পর বছর অর্জন করে নিদারুণ অভিজ্ঞতা। আবার কেউ কেউ আক্রান্ত হয় জটিল রোগে। তীব্র অসম্মান আর অমর্যাদাকর এই কাজের পর যা অর্থ মেলে তা খুবই সামান্য। কাজের পর প্রতিদিন মাত্র ৬০ টাকা করে পায় বলে জানায় শিশু রাসেল।
রাসেলের খারাপ লাগে যখন সে বাসাবাড়িতে ময়লা নিতে গেলে তাকে ‘ময়লাওয়ালা’ বলে ডাকা হয়। সেই সঙ্গে সবাই তাদের খুব নোংরা দৃষ্টিতে তাকায় বলে জানায় সে।
এ ময়লা আবর্জনা অপসারণে আজিমপুরের দায়িত্বে থাকা লেবার ইনচার্জ আক্তার হোসেন বলেন, ‘আশেপাশের এলাকার সব ময়লা লেবারদের ভ্যানে করে ডাস্টবিনে জমা করে রাখা হয়। আবার লেবারদের সাহায্যে ময়লা ট্রাকে তোলা হয় এবং তা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে ফেলা হয়। এ লেবার হিসেবে কাজ করে সব বয়সী লোকজনই।’
শিশুদের এ কাজে নিয়োগ দেয়া হয় কেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এরা সবাই অনেক গরীব। এ কাজ করে চারটা পয়সা পায়, তাতেই তাদের দিন চলে।’
এদিকে এক গবেষণায় জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজের সঙ্গে সম্পৃক্তদের প্রায় ৭০ শতাংশই শিশু। আর প্রতিনিয়ত তারা শিকার হচ্ছে তীব্র শোষণ আর বঞ্চনার। এমনকি তারা ঠিক মতো মজুরিও পায় না।
তারপরও জীবনের তাগিদে ও আর্থিক প্রয়োজনে দেশে অসংখ্য শিশু এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে জড়িয়ে পড়ছে। ২০১১ সালের সরকারি একটি জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৭৯ লাখ। এর মাঝে ১৫ লাখ শিশুশ্রমিক শহরে এবং ৬৪ লাখ রয়েছে গ্রামাঞ্চলে। এই শিশু শ্রমিকদের ৪৫ লাখ ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত। তার মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত প্রায় ১৩ লাখ শিশু।
একুশেসংবাদ.ডটকম/আর কে/২.৫.১৫
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :