সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়ায় অগ্রগতি নেই
একুশে সংবাদ : রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ২৬ কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার (অফলোড) সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। এ সংক্রান্ত পরিকল্পনা ঘোষণার প্রায় ৫ বছর পর মাত্র একটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং একটি তালিকাভুক্তির আবেদন করেছে। এ ছাড়া আগে থেকে তালিকাভুক্ত ৫ কোম্পানি অতিরিক্ত শেয়ার বিক্রি করেছে। বাকি কোম্পানিগুলোর আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তালিকাভুক্ত হতে পারবে কি-না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি আইসিবি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর শেয়ার অফলোড সংক্রান্ত সর্বশেষ অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সভায় উপস্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারি নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নে বেশিরভাগ কোম্পানি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে না। এর উদাহরণ হিসেবে বৈঠকে একটি কোম্পানির প্রতিনিধির মন্তব্যের ওপর গুরুত্ব দেয় সূত্র।
সরকারি এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিটেডের জিএম খন্দকার একরামুল কবির জানান, এ মুহূর্তে তার কোম্পানির শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির প্রয়োজন নেই। এর কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, কোম্পানিটি প্রতি বছর সরকারকে ৩৭ শতাংশ হারে লভ্যাংশ প্রদান করছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে হবে। এতে সরকার বড় রাজস্ব হারাবে।
সূত্র আরও জানায়, সভায় আমন্ত্রণ জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট ৭ কোম্পানি কোনো প্রতিনিধি পাঠায়নি। কোম্পানিগুলো হলো_ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন, হোটেল ইন্টারন্যাশনাল ও বাংলাদেশ সার্ভিসেস।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগ সংস্থা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) এমডি মো. ফায়েকুজ্জামানের সভাপতিত্বে আইসিবি কার্যালয়ে ওই সভায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অপর ১৩ কোম্পানির মোট ১৮ জন কর্মকর্তা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ে একমাত্র বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল তালিকাভুক্ত হয়েছে। এছাড়া এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জে সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে শেয়ার বিক্রির জন্য আবেদন করেছে। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত যমুনা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন এবং রূপালী ব্যাংক সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আরও সরকারি শেয়ার বিক্রি
সম্পন্ন করেছে।
প্রসঙ্গত ২০১০ সালে ২৬ কোম্পানির শেয়ার অফলোডের পরিকল্পনা ঘোষণা করে সরকার। এরপর ২০১২ সালের ৭ নভেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় এক সভায় ২১ কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে শেয়ার অফলোড করতে এবং ইতিমধ্যে তালিকাভুক্ত ৫ কোম্পানিকে আরও শেয়ার বিক্রির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নানা জটিলতার প্রশ্ন তুলে অধিকাংশ কোম্পানি সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে টালবাহানা করছে। বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণে স্বয়ং অর্থমন্ত্রী হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, যারা সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাধা হিসেবে কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অর্থমন্ত্রীর ওই হুমকিতেও কাজ হচ্ছে না। সর্বশেষ অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় আগামী জুনের মধ্যে কোম্পানিগুলোকে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এদিকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না থাকায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ বিষয়টি তদারক করার তাগিদ দিয়েছেন। জানতে চাইলে উপসচিব নাসির উদ্দিন সমকালকে বলেন, 'মন্ত্রণালয় থেকে বার বার তাগাদা দেওয়া হলেও কাজ হচ্ছে না। অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী শিগগির সংশ্লিষ্টদের একটি সভায় আহ্বান করা হবে।'
অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডেসকো ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানিকে আগামী জুনের মধ্যে যথাক্রমে ১০ শতাংশ ও সোয়া ১৬ শতাংশ শেয়ার বিক্রির বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন এবং সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। অন্য কোম্পানিগুলোকে একই সময়ের মধ্যে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে তাগিদ
দেওয়া হয়েছে।
একুশে সংবাদ/mp
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :