AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

হারিয়ে যাচ্ছে রাজশাহীর ৭ নদী


Ekushey Sangbad

১০:৪৬ এএম, এপ্রিল ১২, ২০১৪
হারিয়ে যাচ্ছে রাজশাহীর ৭ নদী

একুশে সংবাদ : বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সাতটি নদনদী। নারদ, সন্ধ্যা, স্বরমঙ্গলা, দয়া, বারাহী, হোজা ও মুসা খান- এসব নদনদী শুধুই অতীত স্মৃতি। নতুন প্রজন্মের কাছে এগুলো এখন ইতিহাস। হারিয়ে যাওয়া এসব নদনদী দখলমুক্ত করা বা এগুলোতে পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনতেও নেই কোনো উদ্যোগ। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক নদনদীগুলোর মধ্যে নারদ একটি। এর তিনটি প্রবাহ। এর প্রথম প্রবাহ রাজশাহীতে, দ্বিতীয় ও তৃতীয়টি নাটোরে। রাজশাহী মহানগরী থেকে নয় কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে শাহপুর গ্রামে পদ্মা নদী থেকে নারদ নদের উৎপত্তি। প্রথম প্রবাহটি শাহাপুর থেকে কাটাখালী, কাপাসিয়া, জামিরা, হলিদাগাছি, মৌগাছি, পুঠিয়ার তাতারপুর, বিড়ালদহ, ভাড়রা হয়ে কান্দ্রা পর্যন্ত। দ্বিতীয় প্রবাহটি পীরগাছা হয়ে নাটোরের ভেতর দিয়ে নন্দকুজা নদীতে পড়েছে। নারদের তৃতীয় প্রবাহটি নাটোরের বাগাতিপাড়ার আটঘরিয়া গ্রামের নন্দকুজা নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে নাটোরের ধরাইল গ্রামে নারদের দ্বিতীয় প্রবাহের সঙ্গে মিলেছে। জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলে নারদের প্রায় ৩৫ কিলোমিটার প্রবাহপথে পাঁচটি নীলকুঠি ছিল। বর্তমানে এর উৎসমুখসহ প্রায় ১৫ কিলোমিটার অংশ সম্পূর্ণ বেদখল হয়ে গেছে। এসব স্থানে এখন ফসলি মাঠ ও বিভিন্ন স্থাপনা। বাকি অংশও মৃতপ্রায়। নদীর এ অংশ স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে দিঘিতে রূপান্তর করে মাছ চাষ করছেন। সন্ধ্যা নদী নারদের একটি শাখা। এটির উৎসমুখ পুঠিয়া উপজেলার রঘুরামপুর বাগিচাপাড়ায়। পুঠিয়ার শিবপুর বাজারের পাশ দিয়ে বাঁশপুকুরিয়া, নন্দনপুর হয়ে কান্তার বিলে পড়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ কিলোমিটার। মুসা খানের উৎসমুখ বড়াল নদ। নাটোরে বাগাতিপাড়া উপজেলার হাঁপানিয়া গ্রাম থেকে উৎপত্তি হয়ে নদীটি রাজশাহীর পুঠিয়ার ঝলমলিয়া, কানাইপাড়া, নাটোরের আগদিঘা, ছাতনী হয়ে ত্রিমোহনী নামক স্থানে গদাই নাম ধারণ করে আত্রাই নদীর সঙ্গে মিশে চলনবিলে ঠেকেছে। নদী গবেষকদের ধারণা, মুসা খান প্রাকৃতিক কোনো প্রবাহ নয়। ষোড়শ শতাব্দীর শেষে কিংবা সপ্তদশ শতাব্দীর শুরুতে ইশা খাঁর পুত্র মুসা খান বড়াল থেকে নারদ নদের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সামরিক প্রয়োজনে এটি খনন করেছিলেন। পরে ১৮৩৮ সালের প্লাবনে এটি পূর্ণ নদীর রূপ নেয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড মুসা খানের উৎসমুখ হাঁপানিয়া ও ভাটিতে বাকসর নামক স্থানে দুইটি স্লুইসগেট স্থাপন করে। ফলে প্রবাহ বিঘ্নিত হয়ে নদীটি ভরাট হয়ে যায়। মাহবুব সিদ্দিকীর গবেষণা গ্রন্থ ফিরিয়ে দাও সেই প্রবাহ থেকে জানা যায়, কথিত বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে পদ্মা নদীর তীর দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। মহানগরীর বুলনপুর এলাকা থেকে তালাইমারী পর্যন্ত ১২টি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। নদীগুলোর উৎসমুখেও এ গেট বসানো হয়। এর পর থেকে আস্তে আস্তে নদীগুলোর উৎসমুখ মরে যেতে থাকে। একপর্যায়ে নদীগুলোর পরিচয় হারিয়ে যায়। বর্তমানে নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় পদ্মার তীরে ব্লক বসিয়ে পাকা করে দেওয়া হয়েছে। এর ভেতরেই ঢাকা পড়ে যায় এক সময়ের প্রমত্তা নদীগুলোর উৎসমুখ। রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারী এলাকায় স্বরমঙ্গলা নদীর উৎসমুখ ছিল। খরস্রোতা এ নদীটি মহানগরীর কাজলা-জামালপুর ও নামোভদ্রা এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হতো। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) জামালপুর মৌজায়। রুয়েট  ক্যাম্পাসের উত্তর-পূর্ব অংশ এখনো নাওডোবা নামে পরিচিত। এখনো নিচু জলাভূমি চোখে পড়ে। স্বরমঙ্গলা নদীটি রাজশাহীর পবা এলাকার ললিতাহার, ভালুকপুকুর, রামচন্দ্রপুর হয়ে ফলিয়ার বিলে মিলেছে। এখন নদী বলে এর কোনো পরিচয় নেই। বারাহী নদীর উৎসমুখ রাজশাহী মহানগরীর ফুদকিপাড়া মহল্লায়। মহানগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিনটি নদীর এটি অন্যতম। নদীটি পবা উপজেলার মহানন্দখালী গ্রামে বারনই নদীতে গিয়ে পড়েছে। উৎস থেকে প্রথম পাঁচ কিলোমিটারে নদীর কোনো অস্তিত্ব নেই। ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীর বাকি অংশও মৃত। এর মোহনায় একটি স্লুইসগেট নির্মাণ করে নদীর মৃত্যু ডেকে আনা হয়েছে। দয়া স্বরমঙ্গলা নদীর একটি শাখা। দয়ার উৎপত্তি বর্তমান রুয়েট এলাকাতে। উত্তর-পশ্চিমমুখী হয়ে রুয়েট এলাকায় প্রবেশের ২০ থেকে ২৫ গজ আগে দয়া নদীর জন্ম। এখান থেকেই দয়া উত্তরমুখী হয়েছে। নদীটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম দেয়াল ঘেঁষে উত্তর বরাবর বয়ে গেছে। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম দেয়ালের পাশে তাকালে নদীর রেখা বোঝা যায়। রেললাইনের উত্তর পাশে দয়া নদীর খাতটি এখনো বেশ স্পষ্ট। সমতল থেকে প্রায় চার ফুট গভীর ও প্রায় ২৫ গজ প্রশস্ত এ জলাভূমিতে বছরের ছয় মাস পানি থাকে। জলজ উদ্ভিদও রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এটি খনন করে একটি পুকুরের আকার দিয়েছে। নদীটি রাজশাহীর মেহেরচণ্ডী, খড়খড়ি বাজার, কুখুণ্ডী, বামন শিকড়, মলিকপুর, তেবাড়িয়া, সারাংপুর হয়ে ঘোলহারিয়া গ্রামে ফের স্বরমঙ্গলার সঙ্গে মিলিত হয়ে সম্মিলিত প্রবাহে ফলিয়ার বিলে পতিত হয়। ফলিয়ার বিল থেকে স্বরমঙ্গলা ও দয়া নদীর সম্মিলিত প্রবাহটি হোজা নাম ধারণ করে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার পলাশবাড়ী গ্রামের মধ্য দিয়ে পূর্ব দিকে তিন কিলোমিটার বয়ে গেছে। এরপর উত্তরমুখী হয়ে বর্ধনপুর, চৌপুকুরিয়া, সিঙ্গা, দুর্গাপুর, পনানগর, দমদমা, চকপলাশী, গাংধোপাপাড়া, গণ্ডগোহালি, গোবিন্দনগর হয়ে পুঠিয়ার কানাইপাড়ার মধ্য দিয়ে মুসা খান নদে পতিত হয়েছে। এ নদীর দমদমা থেকে কানাইপাড়া পর্যন্ত নয় কিলোমিটার এলাকা বেদখল হয়ে গেছে। নতুন প্রজন্মের কেউ জানেন না যে, এই নয় কিলোমিটার এলাকায় নদী ছিল। নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী জানান, এ সাতটি নদনদীর বেদখল হয়ে যাওয়া জমিগুলো উদ্ধার ও খনন করে বর্ষার পানি ধরে রেখে কৃষিকাজে ব্যবহার করা সম্ভব। একই সঙ্গে খুলে দিতে হবে এ নদীগুলোর উৎসমুখ। প্রবাহ ফিরিয়ে দিয়ে নদীগুলো শাসন করা সম্ভব বলেও মনে করেন মাহবুব সিদ্দিকী। একুশে সংবাদডটকম/এমপি/১২-০৪-২০১৪
Link copied!