প্রাইমারী শিক্ষক পুলের ১৫ হাজার নিয়োগ পাচ্ছেন
একুশে সংবাদ : সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য গঠিত শিক্ষক পুলের (চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কাঠামো) ১৫ হাজার শিক্ষকের নিয়োগ জটিলতার অবসান হতে যাচ্ছে। নিয়মিত শিক্ষকদের ছুটিজনিত কারণে শূন্য পদ পূরণে শর্তসাপেক্ষে মাসিক ছয় হাজার টাকা সম্মানী ভাতায় পুলভুক্ত শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর ফলে শিক্ষক পুল নিয়ে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা শিক্ষক আন্দোলনসহ জটিলতার অবসান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আপাতত ছয় মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে তাদের নিয়োগ দেয়া হবে। এ জন্য নীতিমালাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ ফলে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা বিষয়টির নিষ্পত্তি হচ্ছে। শীঘ্রই এ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। জানা গেছে, ২০১২ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ফল প্রকাশের পর উত্তীর্ণ ১২ হাজার ৭০১ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। অবশিষ্ট প্রার্থীদের মধ্য থেকে ১৫ হাজার ১৯ জনকে উপজেলা বা থানাভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষক পুল (চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কাঠামো) গঠনের জন্য নিয়োগের সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র না পাওয়ায় ঝুলে যায় শিক্ষক পুলের নিয়োগ প্রক্রিয়া। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ছুটি, সরকারী কাজে অন্য জায়গায় ব্যস্ত থাকা এবং ৭০ ভাগ নারী শিক্ষকের মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ বিভিন্ন কারণে শিক্ষক সঙ্কটে পাঠদান ব্যাহত হওয়া থেকে মুক্তির জন্য শিক্ষক পুল গঠন করা হয়েছিল। শিক্ষক পুল গঠনের লক্ষ্য ছিল সাময়িক শিক্ষক ঘাটতি পূরণে বর্তমানে কর্মরত শিক্ষকদের বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে ‘লিভ রিজার্ভ’ পদ তৈরি। কিন্তু পরীক্ষা দিয়েও নিয়োগ না পাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন পুলভুক্ত প্রার্থীরা। সম্প্রতি এসব শিক্ষক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন, আগামী মাসের মধ্যে নিয়োগ না পেলে অনশনসহ কঠোর আন্দোলনের নামবেন তারা। পুল শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত সাদিয়া শবনম বলছিলেন, ২০১২ সালের ফেব্র“য়ারি মাসের ২৪ তারিখ ১৫ হাজার ১৯ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে পুল শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরও আমরা নিয়োগ পাইনি। নিয়োগ না পাওয়ার কারণও এখন পর্যন্ত আমরা জানি না। মাঝে মাঝে শুনি নিয়োগ নাকি হবে না। প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হলেও কোন ধরনের সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানান পুল শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিতরা। আগামী মাসের মধ্যে নিয়োগ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধও করেন তারা। পুলভুক্ত শিক্ষকরা বলছেন, পরীক্ষা দিয়েও নিয়োগ না পাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন পুলভুক্ত শিক্ষকরা। ইতোমধ্যে তাঁদের অনেকেরই চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতর বলছে, এই সঙ্কটের অবসান হচ্ছে। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষক পুল নীতিমালা-২০১৪ প্রণীত হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়, এসব শিক্ষকের নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতি উপজেলা বা থানায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি থাকবে। তবে সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা) নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিটি হবে। এসব কমিটি পুলের শিক্ষকদের সাময়িক শূন্যপদে নিয়োগ সুপারিশ করলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাময়িক শূন্যপদের বিপরীতে নিযুক্ত করবেন। নীতিমালা অনুযায়ী পাঁচ শর্তে শিক্ষকরা নিযুক্ত হবেন জানিয়ে বলা হয়, পুলের শিক্ষকদের নিযুক্তির সময় দেড় শ’ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে একটি চুক্তিতে সই করতে হবে। শর্তগুলো হলো, সম্মানী ভাতা হবে মাসে ছয় হাজার টাকা, নিয়োগের মেয়াদ হবে ছয় মাস, তবে প্রয়োজনে মেয়াদ নবায়ন করা যাবে। এই নিয়োগ নিয়মিত হবে না এবং এটি স্থায়ী হওয়ার নিশ্চয়তা দেবে না। তাঁরা সরকারী ছুটি ছাড়া অন্য কোন প্রকার ছুটি দাবি করতে পারবেন না। তবে অসুস্থতা বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে সাত দিন ছুটি নিতে পারবেন। আর কোন শিক্ষক কর্মস্থলে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকলে তাঁর সম্মানী ভাতা থেকে টাকা কাটা হবে। এ ছাড়া কেউ অনুমতি না নিয়ে টানা সাত দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে তাঁর নিয়োগ বাতিল হবে বলে শর্তে উল্লেখ করা হয়। নিয়োগবিধিতে নির্ধারিত যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে ন্যাশনাল সার্ভিসের সদস্যদেরও এই পুলে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। তবে পুলে অন্তর্ভুক্ত শিক্ষকের সংখ্যা সারাদেশে সর্বোচ্চ ২০ হাজারের বেশি হওয়া যাবে না। নীতিমালা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি উপজেলা বা থানার জন্য রাজস্ব খাতে সৃষ্ট সহকারী শিক্ষকদের মোট পদের অনধিক ১০ শতাংশ পদের সমন্বয়ে ‘উপজেলা/থানা প্রাথমিক শিক্ষক পুল’ গঠিত হবে। তবে পুলের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানার বাইরের কোন প্রার্থীকে বিবেচনায় আনা হবে না। পুলের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছর সরকারী হওয়া প্রায় ২৬ হাজার বিদ্যালয় বাদে আগের সরকারী ৩৭ হাজার ৬৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক লাখ ৮০ হাজার সহকারী শিক্ষক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ নারী। নারী শিক্ষকদের ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি রয়েছে। সব শিক্ষকেরই প্রশিক্ষণের ছুটি, সরকারী কাজে অন্যখানে যাওয়াসহ নানা কারণে পাঠদান ব্যাহত হয়। শিক্ষক যখন অনুপস্থিত থাকেন তখন পুলের শিক্ষক দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। শিক্ষক পুলের সঙ্কট সমাধানের বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ বলেন, তাঁদের শীঘ্রই নিয়োগ দেয়া হবে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শর্তসাপেক্ষে তাঁরা নিয়োগ পাবেন। এর ফলে দীর্ঘদিনের এ সঙ্কটের অবসান হবে বলে আশা মহাপরিচালকের।
একুশে সংবাদ ডটকম/এমপি/১৬-০৪-১৪
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :