AB Bank
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

নারীকে সর্বোচ্চ সামাজিক মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম


Ekushey Sangbad

০৬:৫৫ এএম, এপ্রিল ১৬, ২০১৪
নারীকে সর্বোচ্চ সামাজিক মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম

একুশে সংবাদ : অস্বীকার করার উপায় নেই সমাজে বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হয়ে আছে নারীরা দীর্ঘকাল থেকেই। বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসনের বেড়াজালে পঙ্গুপ্রায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের জীবন। পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট আচরণ হয়েছে তাদের সঙ্গে। এমনকি কোনো কোনো দার্শনিক প্রশ্ন তুলেছেন, নারীরা মনুষ্য প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত কি না? বিভিন্ন প্রাচীন ও বৈদিক ধর্মে নানাভাবে তীব্র বৈষম্যের শিকার হয়েছে তারা। পরস্পর বিরোধী দুই প্রান্তিকতার মাঝে আজ সময় এসেছে চিন্তা করার। নারী ও পুরুষ এই যে মনুষ্য প্রজাতির দু’টো সমান্তরাল বহমান ধারা, এদের পারস্পরিক সম্পর্কটা কি দ্বান্দ্বিক না, এরা একজন আরেক জনের পরিপূরক-এই বিষয়টি চিহ্নিত করার ও নিরসনের মাঝে রয়েছে মানব সভ্যতা টিকিয়ে রাখার মূল সমাধান। নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্ককে যদি আমরা দ্বান্দ্বিকতার দিকে নিয়ে যাই তবে কী চরম অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলার সূত্রপাত হবে তা ভাবাও যায় না। আমার মা, যিনি সব ধরনের কষ্ট স্বীকার করেছেন আমার জন্য, আমার সঙ্গে তার সম্পর্ক কী করে দ্বান্দ্বিক হবে একজন নারী হিসেবে। আমি কি আমার মায়ের বা আমার মা কি আমার বিপক্ষে দাঁড়াবেন? কল্পনা করা যায়? আমার কন্যার সঙ্গে দ্বন্দ্বমূলক সম্পর্ক হবে আমার বা তার আমার সঙ্গে? আমার বোন, আমার ফুফু, আমার খালা, দাদী, নানী এ ধরনের চিন্তা করলে ভিরমি খেতে হবে। আমার প্রেমময়ী স্ত্রী আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ? এই লিঙ্গ সাম্প্রদায়িকরা কোথায় নিয়ে যেতে চায় আমাদেরকে? আমাদের পৃথিবীকে ? উৎপাদনের ক্ষেত্রে যেমন শ্রেণী সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে পৃথিবীকে এগিয়ে নেওয়া যায়নি, কোনো কল্যাণ হয়নি পৃথিবীর, তেমনি লিঙ্গ সাম্প্রদায়িকতাও কারো কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না, আনতে পারে না। ইসলাম আল্লাহপাকের রাহনুমায়ী ও হেদায়েতের আলোকে সব ধরনের সাম্প্রদায়িক হীনমন্যতাবোধ ও প্রান্তিক চরম পন্থা থেকে পৃথক এক অসাম্প্রদায়িক মধ্যমপন্থী জীবনাদর্শ। আল্লাহপাক মহাবিশ্ব, এই প্রকৃতি খোদ এই মনুষ্য জাতিসহ সবকিছুর স্রষ্টা। তিনি জানেন, কার কী চাহিদা, কার কী মেজাজ, কার কী স্বভাব, কার কী প্রয়োজন, আর কী ক্রমে কিভাবে হবে এর সমাধান। ইসলাম দ্বান্দ্বিকতাকে, জাত্যামানতাকে উৎসাহ দেয় না। প্রকৃতির আপাত দ্বান্দ্বিক ক্ষেত্রসমূহেও সাযুজ্যের সমম্বয়ের এক ফল্গুধারা প্রবহমান। যা সব দ্বান্দ্বিকতার সুষম সমাধান দেয় এবং প্রকৃতির শান্তিময়তার নিশ্চয়তা বিধান করে।প্রকৃতির আর সব ক্ষেত্রের মত নারী-পুরুষের সম্পর্ককেও ইসলাম দ্বান্দ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে না। ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একজন আরেকজনের প্রতিদ্বন্দ্বী নয় বরং পরিপূরক। সৃষ্টি বৈচিত্র্যের মেলায় বেশকিছু ক্ষেত্রে পুরুষ অপূর্ণ, নারীর ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। এই অপূর্ণতা নিরসনে একজনকে আরেকজনের পরিপূরক করে সৃষ্টি করা হয়েছে। নানা রঙ্গের ফুলের বাহারে যেমন একটা স্তবক গড়ে উঠে মনোহরী অবয়বে তেমনিভাবে নারী-পুরুষ মিলেই মনুষ্য একক গড়ে উঠে বাহারী মাত্রায়।মা-ছেলে, বাবা-ছেলে, ভগ্নি-ভ্রাতা এ সম্পর্ক তো দ্বান্দ্বিকতার কল্পনারও বাইরে। এ ক্ষেত্রে তো মায়ের পায়ের নীচে ছেলের বেহেশত সংস্থাপন করে মায়ের আনুগত্য ছাড়া ছেলের অন্য কিছু চিন্তারও অবকাশ নেই। হাদিসে পাকে হেদায়াত দেওয়া হয়েছে বাবাকে স্পষ্ট ভাষায়, বাইরে গেলে ছেলে-মেয়ের জন্য কিছু নিয়ে আসবে, আর ঘরে এসে মেয়ের হাতেই আগে তুলে দিবে সেই উপহার। কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে আসমান থেকে প্রেরিত হন এক পবিত্র দূত ফেরেস্তা যিনি এই পরিবারের উপর রহমত ও বরকতের আশীষ নাযিল করেন বিশেষভাবে। পুত্র জন্মানোর ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। শুধু কি তাই! কন্যা সন্তান লালনপালনের ক্ষেত্রে বিশেষ করে জামানত দেওয়া হয়েছে জান্নাতের। মাকে, কন্যাকে, ভগ্নিকে সামাজিক মর্যাদাদানের যে এই তুঙ্গস্পর্শী আবেদন তা সহজেই অনুমেয়। কারণ সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ভিন্ন কোনো আইনী প্রক্রিয়া কখনো কোনো অধিকার প্রতিষ্ঠায় সফল হয় না, হতে পারে না। তাই ইসলাম সামাজিক মূল্যবোধের অঙ্গ হিসেবে মাকে, কন্যাকে, ভগ্নিকে প্রতিষ্ঠিত করেছে আগে। নারী-পুরুষ সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্ত্রী-স্বামীর ক্ষেত্রে আপাত দ্বান্দ্বিকতার কল্পনা হয়ত হতে পারে। এ সম্পর্ক মা-ছেলে, বাবা-মেয়ে, ভ্রাতা-ভগ্নীর মতো জন্মজ ও স্বভাজ সুসম্পর্কভিত্তিক নয়। এ সম্পর্ক অর্জিত, গড়ে তোলা সমঝোতা। এই ক্ষেত্রেও ইসলাম পরস্পর সম্পর্ক গড়ে তুলেছে পরস্পর অবিচ্ছেদ্য পরিচ্ছদ হিসেবেব। আল কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা তাদের পরিচ্ছদ আর তারা তোমাদের পরিচ্ছদ।’ স্পষ্টভাবে ঘোষিত হয়েছে, এই সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে মাওয়াদ্দাত ভালোবাসা এবং রহমত দয়া। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের নিজেদের থেকেই তোমাদের জোড় বানিয়েছেন যেনো তোমরা চিত্ত প্রশান্তি লাভ কর তার কাছে আর তোমাদের পরস্পরের মাঝে স্থাপন করেছেন মাওয়াদ্দাত ভালোবাসা এবং রহমত-দয়া।’ (সূরা রূম, আয়াত : ২১) অর্থাৎ এ সম্পর্কের ভিত্তি টানা-হেঁচড়া, দর কষাকষি ও দ্বান্দ্বিকতা নয়। এ সম্পর্ক হল প্রেমময় ভালবাসার, একজন অন্যজনের প্রতি রেহেম অর্থাৎ নাড়িবন্ধনজনিত দয়ার। এখানে শব্দ দু’টির প্রয়োগ খুবই লক্ষণীয়। আরবী শব্দ থেকে গঠিত অর্থ শুধু ভালোবাসা নয়। বলা হয় অন্তর নিহিত ভালোবাসা হ্নদয় উৎসারিত ভালোবাসা। স্বামী-স্ত্রীর জীবন মেকী ভালোবাসায় আবর্তিত নয় তা হবে অন্তর নিহিত হৃদয়  স্পন্দিত প্রেমময় ভালোবাসায় আবর্তিত। রহমত শব্দটা রহম শব্দ থেকে গঠিত রহম হল মায়ের জঠর। কেবল পরস্পর দায়ের সম্পর্ক নয়, এমন দয়া নাড়ির টানে সৃষ্ট, জঠরজাত। কী মহান-অভিব্যক্তিতে আপ্লুত এই শব্দ। এর মাঝে ঘূর্ণায়মান হবে তোমার পারিবারিক জীবন, স্বামী-স্ত্রীর সংসার। চলতে গেলে ভুল বুঝাবুঝি হতে পারে কোথাও কোন ত্রুটি পরিলক্ষিত হতে পারে। কিন্তু একজন আরেকজনের প্রতি ভালবাসায়, জঠরজাত অনুকম্পায় তা অতিক্রম করে যাবে। পরস্পর হৃদ্যিক বৈশিষ্ট্যের প্রতি ইঙ্গিত করেই ক্ষান্ত হয়নি ইসলাম। রাসুল (সা.) আরও এগিয়ে দিলেন কয়েক কদম। ঘোষিত হয়েছে নববী যবানে, ‘তোমাদের মধ্যে উত্তম সে, যে তার পরিবারের কাছে, স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ স্বামীকে সাধুবাদ গ্রাহ্যতার জন্য স্ত্রীর স্বতঃস্ফূর্ত সার্টিফিকেট লাগবে। কেবল অধিকার আদায় যথেষ্ট নয়। আইনী চুক্তিতে তা হওয়ার নয়।  তুমি ভাল না মন্দ, সাধু না অসাধু, তা তোমার বিষয়ে সবচেয়ে কাছে থেকে যার অভিজ্ঞতা সে স্ত্রীর নিকট থেকেই নিতে হবে সাধুতার সনদ। কেউ বলতে পারে এটা তো একটা নৈতিক বয়ান নৈতিক বিধান। কিন্তু সকলেরই জানা থাকা দরকার, ইসলামে নৈতিক নির্দেশের মূল্য আইন থেকেও বহু ঊর্ধ্বে। আর এর উপরই বয়ে চলে মুসলিমের জীবন। এখন যদি অধিকারের আলোচনা, আসি তবে বলতে হবে, ইসলাম নারীকে সর্বক্ষেত্রেই অধিকার দিয়েছে বেশি আর পুরুষকে দায়িত্ব দিয়েছে বেশি। আজকের যুগে সমঅধিকার বলে নারীর উপর অন্যায় যুলুম চালানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। অথচ তাদের তো অগ্রাধিকার প্রাপ্য। প্রথমে মা। আমরা মা থেকেই শুরু করি। নবীজীকে (সা.)এক সাহাবী (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহের রাসূল! আমার উপর কার অধিকার বেশি? নবীজী (সা.) বললেন, মার। আবার ওই সাহাবী একই প্রশ্ন করলেন। নবীজী (সা.) উত্তর দিলেন, মার। আবার সাহাবী একই কথা জানতে চাইলেন। নবীজী (সা.) উত্তর দিলেন, ‘লি উম্মিকা’ তোমার মার। সাহাবী (রা.) পুনর্বার চাইলেন একই বিষয়ে। নবীজী (সা.) বললেন, ‘লিআবীকা’ তোমার বাবার।’ এতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, মার অধিকার বাবার উপর ৩:১ অনুপাত। এখানে বাবার চেয়েও মা অগ্রাধিকার রাখেন। সমঅধিকারের দাবিদাররা এবার কী করবেন? কন্যা হিসাবে দেখা যাক। নবীজী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা যখন কিছু নিয়ে ঘরে আসবে তখন প্রথমে কন্যার হাতেই তুলে দিবে সে উপহার।’ এ ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে পুত্রের অগ্রেই অবস্থান করছে কন্যা। আমরা জানি আলে রাসুল (সা.) নবী বংশ শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা রাখে নিঃসন্দেহে। আর নবী বংশের ধারা তো কোনো পুত্রের মাধ্যমে আসেনি। এসেছে নবী দুহিতা হযরত ফাতিমা (রা.)-এর মাধ্যমেই। সব পুরুষতান্ত্রিক বংশধারা এখানে এসে হেট হয়ে যাওয়া ছাড়া আর উপায় থাকে না। কন্যাকে কী অধিকার স্থাপন করা হয়েছে তা বুঝতে কি আইনের কিতাব ঘাটতে হবে কারো? পুত্র সন্তানের ক্ষেত্রে বাবার দায় গ্রহণ করতে হয় তার সাবালক হওয়া পর্যন্ত। পক্ষান্তরে কন্যা সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষা, ভরণ-পোষণসহ যাবতীয় দায়ভার গ্রহণ করতে হয় স্বেচ্ছায় সুসম্মতিতে তার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত। বাবা তার অসম্মতিতে কোথাও বিয়ে দিয়ে নিজে নিজে দায়মুক্ত হয়ে যাবে- এই অধিকারও বাবাকে দেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রেও কন্যা অগ্রাধিকার সংরক্ষণ করে। এবার ভগ্নি হিসেবে দেখা যাক। যীরেহেম হিসাবে বাবার যাবতীয় দায়িত্ব ভ্রাতার উপরই আবশ্যকীয় হিসাবে আইনত বর্তায়। নবী (সা.) তো তার এক দুগ্ধভগ্নির সম্মানার্থে তার কওমের বিরাট সংখ্যক যুদ্ধ বন্দিদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। কোনো নারীকে স্ত্রী হিসেবে দেখলে তো দেখা যায় ইসলামী আইনে সব অধিকার স্ত্রীর। শরীয়া আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, যৌন আহবানের অধিকার ছাড়া স্ত্রী থেকে আর কিছু নেই স্বামীর। একজন স্ত্রীকে কেবল তখনই নাশেযা বা অবাধ্যচারী হিসেবে বিচারের সম্মুখীন করা যাবে যখন ওজর ব্যতীত স্ত্রী স্বামীর যৌন আহবানে সাড়া না দেয়। এক্ষেত্রেও অগ্রে মোহরানা প্রদান শর্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর নির্ধারিত মোহরানা আদায় না করা পর্যন্ত স্ত্রী ওজর ছাড়াও স্বামীর আহবানকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে। তাছাড়া খোরপোষ ও রক্ষণাবেক্ষণসহ যাবতীয় দায়িত্ব স্বামীকেই বহন করতে হবে। এমনকি স্ত্রী যদি ধনিও হয়, সে ক্ষেত্রেও স্বীয় ভরণ-পোষণের জন্য তাকে একটা আধুলিও ব্যয় করতে হবে না। সবকিছু স্বামীর উপরই বর্তাবে। সন্তান-সন্তুতিদের ভরণ-পোষণ, লালন-পালন, শিক্ষা-দীক্ষা, রক্ষণা-বেক্ষণসহ যাবতীয় দায়িত্ব স্বামীর উপর ন্যস্ত। মা তার সন্তানকে দূগ্ধ দানেও বাধ্য নন। ক্ষেত্র বিশেষে এমনকি স্বীয় সন্তানকে দুগ্ধদানের বিনিময়ে সন্তানের বাবা থেকে ন্যায্য সম্মানীও দাবি করতে পারেন জন্মদায়িনী মা। সর্বোচ্চ সামাজিক মর্যাদা দান করা হয়েছে নারীকে ইসলামে। এই ক্ষেত্রে অনেক সময় বহু নারী পুরুষদেরও অতিক্রম করে যেতে পারে। মুসলিম সমাজ হযরত খাদীজা, ফাতিমা, মরয়াম, রহিমা, এমন গুণবতী নারীদের সামাজিক মর্যাদা কত উচ্চে তা আমরা সকলেই জানি। কুরআন মাজীদে এক স্থানে হযরত মারয়ামের মা যখন কন্যা সন্তান প্রসব করায় আফসোস করছিলেন তখন এর জবাবে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন। ‘পুরুষ সে তো মর্যাদায় নারীর মতো নয়।’ বিয়ের অধিকারের ক্ষেত্রে তো ইসলামী আইনে নারী সম্পূর্ণ স্বাধীন। এমনকি বাবা-মাতাও তাকে এই বিষয়ে কোনোরূপ চাপ প্রদানের ক্ষমতা রাখে না। নবী (সা.) এর যুগে একবার এক কন্যাকে তার বাবা সম্মতি না নিয়েই স্বীয় পছন্দমত বিয়ে দিয়ে দেয়। তখন সেই কন্যা মসজিদে নববীতে সকলের সামনে এসে নবী (সা.) এর নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, এ তোমার অধিকার। ইচ্ছা করলে বাবার পছন্দকে গ্রহণ করতে পার আর না চাইলে তা প্রত্যাখ্যানও করতে পারে। তখন এই নারী বললেন, ‘আমি আমার বাবাকে বিব্রত করব না। তবে এখন এসেছি কিয়ামত পর্যন্ত নারীদের অধিকারকে স্পষ্ট করার জন্য।’ মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রেও নারীদের স্বাধীন অধিকার প্রদান করা হয়েছে। জাতীয় মহা-সংকটকালেও নবীজী (সা.) নারী সাহাবীদের মতামত গ্রহণ করেছেন। হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় সাহাবিরা যখন ইহরাম খুলতে অগ্রসর হচ্ছিলেন না তখন উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামার (রা.) মত গ্রহণ করে তিনি নিজে আগে ইহরাম খোলেন। ফলে সাহাবিরাও তার অনুসরণ করেন। শিক্ষার ক্ষেত্রেও ইসলাম নারী-পুরুষে তারতম্য করেনি। উম্মে সুলাইম (রা.) নামক এক আনসারী নারীর শিক্ষার আগ্রহের তারিফ খোদ নবীজী (সা.) নিজে করেছেন। শিক্ষামূলক কোনো বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে তিনি তথাকথিত সামাজিক লজ্জাকে স্থান দিতেন না। পুরুষদের সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষামূলক মজলিসে নারীরা শরীক হতেন। এছাড়াও নবীজী (সা.) তাদের জন্য সপ্তাহে একটা দিন আলাদা করে নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশাকে (রা.) তো তিনি নিজে গড়ে তুলেছিলেন। ফলে শুধু ধর্মতার ক্ষেত্রেই নয়, কুরআন, হাদীস তাফসীরসহ ইতিহাস এমনকি চিকিৎসার বিষয়েও তিনি অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছিলেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে সাহাবিগণের খুব কমজনই ছিলেন তার সমকক্ষ। এমনকি রাজনৈতিক মতামত দানের ক্ষেত্রেও তিনি বহুবার নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা পালন করেছিলেন। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষে কোন তারতম্য নেই ইসলামে। আমরা জানি অর্থনৈতিক ক্ষমতা ছাড়া সামাজিক মূল্যায়ন অনেক সময় প্রতিষ্ঠিত হয় না। তাই এক্ষেত্রেও নারীদেরকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে। এমনকি স্বাধীনভাবে তাদের জন্য নিজেদের পেশা বেছে নেওয়ার অধিকার স্বীকৃত। সাহাবী নারীগণের অনেকেই তৎকালে প্রচলিত বহু পেশা স্বাধীনভাবে অবলম্বন করেছিলেন। নারীর উপার্জনে স্বামী, বাবা, ভাই, ছেলে কারোরই হস্তক্ষেপের অধিকার দেওয়া হয়নি। নারী যা উপার্জন করবে তা তার, এ কথা কুরআন মজীদে একাধিকবার উল্লেখ রয়েছে। উপার্জনের ক্ষেত্রে যেমন তার পূর্ণ অধিকার তেমনি ব্যয়ের ক্ষেত্রেও তাকে পূর্ণ অধিকার প্রদান করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্বামী, বাবা বা অন্য কোনো পুরুষের অনুমতি নেওয়ার কোনো প্রয়োজন রাখা হয়নি। তবে হালাল-হারামের গণ্ডি পুরুষের মতো নারীর ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। নারীর সম্পর্দ অর্জনের উপায় তিন ধরনের এক, নিজ উপার্জিত সম্পদ। দুই, মোহরানাপ্রাপ্ত অর্থ। তিন, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অর্থ। এক্ষেত্রে নারীরা অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। কারণ, পুরুষের ক্ষেত্রে সম্পদ অর্জনের মাত্র দু’টো পথই রয়েছে। এক, স্ব-উপার্জিত সম্পদ। দুই, উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ। তৃতীয় কোনো সোজা পথ তার নেই। উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রেও নারীদের মূলত লাভবান করা হয়েছে। ইসলামের উত্তরাধিকার ক্ষেত্রে মূলত তিন ধরনের উত্তরাধিকার সূত্র রয়েছে। এক, যাবিল ফুরূয। অর্থাৎ কুরআন মজীদে যাদের নির্ধরিত হিস্যা উল্লেখ করা হয়েছে। এইক্ষেত্রে মোট বার শ্রেণীর নির্ধারিত হিস্যার কথা বলা হয়েছে। তন্মধ্যে নারীদের কথা বলা হয়েছে পাঁচটি শ্রেণীতে। (১) মা, (২) স্ত্রী, (৩) কন্যা, (৪) বোন, (৫) যীরেহেমরূপে। এ ক্ষেত্রে পুত্রের হিস্যার কথা, কোনো উল্লেখ নেই। দুই, যাবিল আরহম। তিন, তাছীব যাবীল ফুরূযগণের হিস্যা প্রদানের সঙ্গে যারা হিস্যা পেয়ে থাকেন। যেমন, পুত্র, ভাই, ক্ষেত্র বিশেষে বোন ইত্যাদি। ফারায়েজ অনুসারে মেয়েদের প্রাপ্য ১. মৃত ব্যক্তির ছেলে না থাকা অবস্থায় এক মেয়ে থাকলে সমুদয় সম্পদের অর্ধেক পাবে। ২. দুই বা ততোধিক মেয়ে থাকলে সমুদয় সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ পাবে। ৩. ছেলে সঙ্গে আসলে মেয়ে পাবে ছেলের অর্ধেক। স্ত্রীর প্রাপ্য ১. সন্তান না থাকলে স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পদের এক-চতুর্থাংশ পাবে। ২. সন্তানাদি থাকলে এক-অষ্টমাংশ পাবে। মায়ের প্রাপ্য ১. মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে কিংবা ভাই-বোনদের মধ্য থেকে দু’জন বা ততোধিক থাকলে মা এক-ষষ্ঠাংশ পাবে। ২. মৃত ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে বাবা-মাতা আসলে স্বামী বা স্ত্রীর অংশ দেওয়ার পর মা বাকি সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ পাবে। ৩. উল্লেখিত অবস্থা ছাড়া মা পুরো সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ পাবে। বোনের প্রাপ্য ১. ভাই না থাকা অবস্থায় বোন একজন হলে অর্ধেক পাবে। ২. ভাই না থাকা অবস্থায় দুই বা ততোধিক হলে দুই-তৃতীয়াংশ পাবে। ৩. মৃত ব্যক্তির ভাই থাকলে বোন পাবে ভাইয়ের অর্ধেক। ৪. বোন যদি মৃত ব্যক্তির মেয়ের সঙ্গে আসে তবুও হবে। ৫. মৃত ব্যক্তির বোন যদি তার ছেলে অথবা ছেলের সঙ্গে আসে, তেমনিভাবে বাবা-দাদার সঙ্গে আসলেও কিছুই পাবে না। দাদী/নানী ১. দাদী বা নানী এক-ষষ্ঠাংশ পাবে। সমস্ত দাদী বা নানী মায়ের বর্তমানে বাদ পড়ে যাবে। ২. মাইয়েতকে যাদের দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয়। যেমন : যে সকল দাদা-দাদী বা নানা-নানী মীরাছ থেকে বাদ পড়ে যায়। ৩. যাদেরকে মৃতের বাবা-মাতার দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয়। যেমন : বোনের সন্তান, ভাইয়ের কন্যা, মা শরীক ভাইয়ের সন্তান। ৪. যাদরকে মৃতের দাদা-নানা, বা দাদী-নানীর দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয়। যেমন : ফুফু, মামা, খালা-খালু। সম্পদের আয় ও ব্যয়ের ক্ষেত্রেও নারীর পূর্ণ অধিকার বিদ্যমান। আয়ের ক্ষেত্রে যেমন নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি সুবিধা পায় তেমনি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ধরতে গেলে নারীদের কোনো বাধ্যতামূলক ব্যয়ই নেই। পক্ষান্তরে পুরুষকে তার আয়ের বিরাট অংশই বাধ্যতামূলকভাবে ব্যয় করতে হয়। যেমন : (১) তার নিজের খোরপোষ, (২) সন্তানাদির লালানপালন ও খোরপোষসহ যাবতীয় ব্যয়, (৩) বাবা-মাতার খোরপোষসহ যাবতীয় ব্যয়, (৪) স্ত্রীর সহায়তা, (৫) বিয়ের ব্যয়, ওলীমা ইত্যাদি, (৬) স্ত্রীর খোরপোষসহ যাবতীয় ব্যয়, (৭) বাবার অবর্তমানে ভাই-ভগ্নির খোরপোষ, (৮) যাকাত ইত্যাদি। কিন্তু নারীকে স্বীয় উপার্জন থেকে নিজের খোরপোষের জন্যও ব্যয় করতে হয় না। অবস্থাভেদে বাবা, পুত্র, ভাই ও স্বামীর উপরই তা বর্তায়। যাকাত প্রদান ব্যতীত কোনো বাধ্যতামূলক ব্যয় তার নেই। সে যদি স্বীয় সম্পদ থেকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে সন্তান, স্বামী বা বাবা-মাতার জন্য ব্যয় করে তবে সে সদকার ছোয়াব পাবে। এর জন্য তার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ছিলেন দারিদ্র। তার স্ত্রী ছিলেন পেশাজীবী এবং ধাত্রী। নবী করীম (সা.)-এর কাছে এসে তিনি বললেন, হে রাসূল! আমার স্বামী দারিদ্র। আমার নিজের আয়-রোজগার আছে। আমি কি স্বামী, সন্তানদের জন্য ব্যয় করলে কিছু পাব? নবীজী (সা.) বললেন, তুমি দু’টি সদকার ছোয়াব পাবে। বর্তমানে সাধারণ মানুষ ও ইসলাম অজ্ঞ সাধারণ শিক্ষিতরা ইসলাম সম্পর্কে জানা না থাকায় পাশ্চত্যজনদের মত মনে করে, ইসলাম বুঝি ইয়াহুদী, খৃষ্টান ধর্মের মত নারীদের বঞ্চিত করেছে। এটা তাদের অজ্ঞতা বৈ কিছুই নয়। ইসলাম সম্পর্কে তাদের জ্ঞান সাত অন্ধের হাতি দেখার মতো। এমনকি উত্তরাধিকার ক্ষেত্রে একজন পুরুষ দু’জন নারীর সমান ছাড়া আর কোনো আয়াত সম্পর্কে শুনেছে বা পড়েছে বলে মনে হয় না। আর ইসলামের উত্তরাধিকার আইন গাণিতিক সূত্রে গাঁথা। ফাঁক-ফোকরের অবকাশ নেই। সরল অংক যেমন একবার কোথাও ভুল হলে জীবনেও মিলানো সম্ভব নয় এখানেও তাই। তাই সরলীকৃত সূত্রে এখানে এগুতে হয়। তাবেই দেখা যাবে এরচেয়ে ইনসাফপূর্ণ সুষম ও যৌক্তিক গাণিতিক বিধান আর কিছুই হতে পারে না। একুশে সংবাদ ডটকম/এমপি/১৬-০৪-১৪ৃ
Link copied!