AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ধরেন আপনি আমার বাবা


Ekushey Sangbad

১১:১৩ এএম, এপ্রিল ১৬, ২০১৪
ধরেন আপনি আমার বাবা

একুশে সংবাদ :  তোর নাম কী? ওসি সাহেব লাঠি উঠিয়ে রুবেলের মাথায় বাড়ি দিবেন দিবেন করছেন কিন্তু দিচ্ছেন না। আমার নাম রুবেল। বন্ধুরা ডাকে পেপসি রুবলে বলে। পকেট মেরেছিস কতবার? তা ধরেন স্যার হাজার বার তো হবেই। বয়স কত? কত আর হবে? ২০/২১ হবে হয়তো। বয়সের হিসাব তো কোনোদিন রাখিনি স্যার। বেশি কথা বলে। বিড়বিড় করে বলছেন ওসি আব্দুল মজিদ। এসব চুরি ছ্যাচড়ামির মামলা লিখতে লিখতে তিনি  এখন ক্লান্ত। টেবিলের উপর লাঠি রেখে একেবারে ঝুঁকে পড়ে মামলা লিখছেন তিনি। বাড়ি কোথায়? এবার মুখ একটু বিকৃত করলেন ওসি। এর জবাব সে কী দিবে সেটা যেন তিনি আগে থেকেই জানেন। জানি না স্যার। এবার মাথা তুললেন ওসি। লাঠি হাতে নিলেন। রুবেলের পাছায় মৃদু বাড়ি দিলেন। শালা আমার সাথে মস্কারি? সব শালা একই কথা বলে। বাড়ির কথা জিজ্ঞাসা করলেই বলে, জানি না স্যার। শালা, ঠিকানা ছাড়া কি কোনো মানুষ আছে? বল, ঠিকানা বল। সত্যি বলছি স্যার জানি না। জন্মের পর থেকেই সেই রেলষ্টেশনে আছি। আবার লাঠি হাতে নিলেন ওসি। মামলা করতে হলে ঠিকানা একটা লাগবেই। বল একটা কিছু। রুবেল যেন একটু সুযোগ পেল। ঠিকানা যদি বানিয়ে একটা কিছু বলতেই হয় তাহলে বলার মতোই বলবে সে। লেখেন স্যার, বঙ্গভবন। লাঠি হাতে নিয়ে দাঁত কিড়মিড় করলেন আবদুল মজিদ। শালা, ঠিকানা লিখব বঙ্গভবন? আমার চাকরি খাওয়ার ব্যবস্থা করছিস? এবার একটু জোরে বাড়ি লাগালেন ওসি। রুবেল লাফ দিয়ে একটু দূরে সরে যাওয়াতে লাঠির বাড়িটা তেমন তার গায়ে লাগেনি। উসখুস করে রুবেল বলল, বঙ্গভবন না চললে লেখেন স্যার গণভবন। রাগে গদগদ হয়ে ওসি এবার লাঠি হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। রুবেলকে বাড়ি মারতে উদ্যত হলেন কিন্তু রুবেল তার লাঠির সীমানার বাইরে বিধায় বাড়ি লাগাতে পারলেন না। স্থির হয়ে বসলেন ওসি। বাবার নাম বল। জানিনা স্যার। মাথা চুলকাচ্ছে রুবেল। দৃষ্টি তার ওসির লাঠির দিকে। ওসি লাঠি হাতে নিলেই সে দূরে সরে যায়। সে জানে এ লাঠি তার পিঠে মারার জন্যই। বাবার নাম জানিস না? বেজন্মা নাকি? ধরেন আপনি আমার বাবা। এই কথাতে একেবারে কুপোকাত হয়ে গেলেন ওসি সাহেব। এবার লাঠি হাতে না নিয়ে মাথা তুলে রুবেলের দিতে তাকালেন। ভিতরে তার কেমন যেন তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। কোথায় যেন একটা মায়া জমে গেল রুবেলের প্রতি। কেউ কি আসলে তার বাবার নাম গোপন করে? ছেচরটা তার সাথে কৌশল অবলম্বন করছে না তো? নিজেকে সামলে নিলেন আব্দুল মজিদ। এটা থানা। আবেগ অনুভূতি প্রকাশের জায়গা এটা নয়। সত্যি সত্যি বাবার নাম জানিস না? একটু আগের রাগ এখন আর ওসির মধ্যে নেই। সত্যি বলছি স্যার। বাবার নাম জানি না। ঠিকানা একটা বানিয়ে বলতে পারবো, বাবার নাম পারবো না। মানসিকভাবে আরো দুর্বল হয়ে গেলেন ওসি সাহেব। তার লাঠির দপদপানিও কমে গেল। চোর, ছেচর, পকেটমার হলে যে সত্য কথা বলবে না এমন তো কোনো আইন নেই। আইনের ধারাগুলো মনে করার চেষ্টা করলেন ওসি সাহেব। কি জানি, রুবেলের কথা সত্যি হলেও হতে পারে। একমাত্র মা-ই জানে তার সন্তানের পিতা কে। সন্তানের পক্ষে তা জানা সম্ভব নয়। আমি কী জানি কে আমার পিতা? শালা, ছেচর দুইটাকে ধরে পড়লাম বিপদে। বাবার নামের জায়গায় আমার নাম লিখে দিলে আমার চাকরি কি থাকবে? অনুমানে একটা বাবার নাম বসিয়ে দিব? আমি কি করে জানবো যে সে লোকই ওর বাবা? কী যে বিপদে পড়লাম। একা একা গজগজ করছেন ওসি। রুবেলের সহযোগী সানি একটু দূরে গুটিসুটি মেরে ফ্লোরে বসে আছে। তাকেও রুবেলের সাথে গ্রেফতার করা হয়েছে। তোর কী অবস্থা? কড়া মেজাজে বললেন ওসি। নিজেকে প্রস্তুত করে নিল সানি। ওসি চেয়ার ছেড়ে উঠে এ পর্যন্ত না এলে লাঠির বাড়ি তার গায়ে লাগবে না। এতক্ষণ হালকা পাতলা যা গেছে রুবেলের উপর দিয়েই গেছে। লিখে দিন স্যার ঐ। ঐ মানে? বুঝলেন না স্যার? রুবেলের যে অবস্থা আমারও সে অবস্থা। সংক্ষেপে ঐ। শালারা তো আমাকে পাগল পেয়েছে আজ। অকারণে লাঠি দিয়ে ওসি টেবিলের উপর বাড়ি মারলেন। আর একটু হলেই টেবিলের ওপরের গ্লাস ভাঙতো। তোরও বাবার নাম জানা নেই? দুদিকে মাথা নেড়ে সানি জানান দিল তারও বাবার নাম জানা নেই। তবে এটা সে বুঝে গেছে, আজ ওসি তাকে মারবে না। কারণ রুবেলকে ওসি যেভাবে মেরেছে তা অন্য ওসিদের তুলনায় কিছুই না। বড়জোর মশা তাড়ানো বলা যেতে পারে। সেন্টি। একজন কনস্টেবল এসে ওসিকে স্যালুট দিয়ে দাঁড়াল। এই হারামী দুইটাকে হাজতখানায় ঢুকাও। দুপুরের পর ওদেরকে ধরবো। কনস্টেবল ধমকের সুরে বলল, চল। সানি চোখ বাঁকা করে কড়মড় দৃষ্টিতে ওসির দৃষ্টি এড়িয়ে কনস্টেবলকে বলল, ওসি সাহেব গায়ে হাত দেয় নাই, গায়ে হাত দিলে খবর আছে কিন্তু। কনস্টেবল সানির কথায় ভয় পেল কি না কে জানে। সে সানি বা রুবেলের গায়ে হাত দিল না। দুজনকে নিয়ে হাজতখানায় ঢুকিয়ে দিল। ভাবনায় ডুবে গেলেন ওসি সাহেব। এত চিকিৎসা করানোর পরও একটা সন্তানের মুখ দেখলেন না তারা। স্ত্রীর কত ভর্ৎসনা তাকে  হজমি টেবলেটের মতো হজম করতে হয়েছে। বয়স এখন পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই করছে অথচ ঘর শূন্য। একটা সন্তান হয়নি। রুবেল যখন বলল, ধরেন আপনি আমার বাবা তখন থেকেই তার মনটা উথাল-পাতাল করছে। আর সে সাথে বিখ্যাত এক নেতার একটা উক্তি তার মনে এসেও মনে পড়ছে না। যখন যা কিছু মনে পড়া দরকার তখন তা মনে পড়ে না। যা মনে পড়ার কোনো দরকার নেই সেসব এসে মনের দরজায় উঁকি দেয়। নিজের মনকেই মনে মনে গালমন্দ করলেন ওসি। একটা ঢোক গিললেন ওসি আব্দুল মজিদ। ঢোক গিললে তার ভুলে যাওয়া কথা মনে পড়ে। মনে পড়েছে। বঙ্গবন্ধু একটা কথা বলেছিলেন। আবছা আবছা কথাটা তার মনে পড়ছে। আর একটা ঢোক গিললেন ওসি। এবার তার গলা শুকিয়ে আসছে। মাথার উপর ভো ভো করে ফ্যান ঘুরছে কিন্তু বাতাস ঠা-া লাগছে না। ফ্যানের দিকে একবার তাকিয়ে ঢোকের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্বার করে হাতে মোবাইল নিলেন ওসি। এত ঢোক গেলাগিলির কী আছে? তার চাচাত শ্যালক একটি বিখ্যাত জাতীয় দৈনিকে চাকরি করে। ঔ শালা এমন কিছু নেই যা সে জানে না। তাকে একটা ফোন করলেই সব ল্যাঠা চুকে যায় বঙ্গবন্ধু কী বলেছিলেন। অফিসেই ছিল সাংবাদিক চাচাত শ্যালক সোবাহান। সামনের সপ্তাহের ফান ম্যাগাজিনের কাজ নিয়ে সে মহা ব্যস্ত। ওসি দুলাভাই এর নাম্বার দেখে ফোন রিসিভ করে সোবাহান বলল, কী খবর বলুন দুলাভাই? কোনো কেস পেলেন? কী করছো এখন? গম্ভীর গলায় বললেন ওসি। আমার যা কাজ। সামনের সপ্তাহের ফান ম্যাগাজিনের কাজ করছি। রাখ তোমার ফান ম্যাগাজিন। ঢোক গিলতে গিলতে আমার জীবন যায় আর তুমি শালা ফান করছো? তো আমি কী করবো বলুন? ঢোক গিলছেন কেন? কোনো সমস্যা? সমস্যা মানে? বিরাট সমস্যা। থানায় একটু আসতে পারবে এখন? দুলাভাই, এখন যদি বের হই তো হাতের কাজ শেষ করতে পারবো না আজ। আপনার কাছে যেতে পথেই দিন শেষ হয়ে যাবে। ফোনে বলা যায় না? যাবে না কেন? অবশ্যই যাবে। আমি যা জানতে চাই যদি তার উত্তর দিতে না পারো তো তুমি শালা কেমন সাংবাদিক আমি দেখে নিবো। বঙ্গবন্ধু একটা উক্তি করেছিলেন, এতগুলো ঢোক গেলার পরও উক্তিটি মনে করতে পারছি না। ইচ্ছে করে ঢেকুর দিলাম। তা-ও শালা মনে আসে না। উক্তিটি কী? প্রশ্ন করলো সোবহান। উক্তিটি কী সেটাই তো মনে করতে পারছি না। পারলে তোমাকে ফোন করলাম কেন? বঙ্গবন্ধু তো কত উক্তিই করেছিলেন; আপনি একটু সূত্র ধরিয়ে দিলেই আমি বাকিটা বের করতে পারবো। এই জন্যই শালা তোমাকে আমি এত পছন্দ করি। তা না হলে হাতেনাতে আসামী ধরে ছেড়ে দেই? সূত্র? আমি তোমাকে সুত্র ধরিয়ে দিব। কথাটা কিন্তু আমার বের করতেই হবে ভাই। আমাকে আবার আসামী বানালেন কেন? ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা করবে না শালা। তিনদিন আগে বিকাল পাঁচটা এগারো মিনিটে টিএসসির সড়ক দ্বীপে একটি সুন্দরী মেয়ের খুব কাছাকাছি বসে...। আমাকে দেখে তুমি পেপার দিয়ে মুখ ঢেকে রাখোনি? ঘটনা সত্য না মিথ্যা? ঘটনা সত্য কিন্তু আপনি? শালা, পুলিশের চোখ কয়টা জানো? বাদ দাও সেসব। আর একটা ঢোক গেলার পরে বঙ্গবন্ধুর উক্তিটি আংশিক মনে পড়েছে। বাকিটা তুমি বের করবে। বলুন। আমি কাগজ কলম নিয়েছি। ‘তোমরা মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষিতা...’ ঢোক গিললেন ওসি। আর বলতে পারলেন না। আর তো মনে করতে পারছি নারে ভাই। ঢোক গিললে হয়তো আর এক দুই শব্দ মনে করতে পারবো। তুমি থাকতে আমি খালি পেটে ঢোক গিলে কষ্ট করবো, সেটা কি তুমি চাও? না। আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না। বিষয়টি আমারও কিছুটা জানা আছে। আমার সহকারীরা আমাকে সাহায্য করলে এক ঘণ্টার মধ্যে আমি আপনাকে পুরো বিষয়টি জানাতে পারবো। আপনি নিশ্চন্ত থাকুন। বাঁচালে ভায়া। এই না হলে সাংবাদিক? তোমার আগামী সংখ্যা ফান ম্যাগাজিনের সব কপি আমি কিনে নিবো। আর শোন, কথা শেষ করলেন না ওসি। আর শুনতে পারবো না দুলাভাই। বেশ কিছু কাজ টেবিলে জমে আছে। কাজগুলো শেষ করেই আমি আপনাকে ফোন করবো। লাইন কেটে দিল সোবহান। বিরক্তিকর দৃষ্টিতে মোবাইল সেটের দিকে তাকিয়ে টেবিলের ওপর মোবাইলটি রাখলেন ওসি। চেয়ারে একটু আরাম করে হেলান দিয়ে কী যেন ভেবে উঠে গিয়ে হাজতখানায় আসামী দুজনকে এক নজর দেখে এসে আবার চেয়ারে বসলেন। স্ত্রীর সাথে কথা বলা দরকার। সে রাজী থাকলে ওদের দুজনকেই তিনি দত্তক নিবেন। ভেবে নিলেন তিনি। হোক পকেটমার, মানুষ তো? নিজের মত ওদেরকে গড়ে নিবেন। স্ত্রী রতœাকে ফোন করলেন ওসি। দুপুরের খাবার পাঠানোর জন্য এমনিতেই তিনি এখন বাসায় ফোন করতেন। যেদিন দুপুরের খাবার সময় থাকেন না, সেদিন যেখানে থাকেন সেখান থেকে ফোন করে বলে দেন খাবার পাঠাবে কি পাঠাবে না। আজ এখনো বাইরে যেতে হয়নি তাকে। এখনো বাইরে কোনো অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি। শোন। থানায় একটু আসতে পারবে? দুপুরে তিনজনের খাবার দিবে। ফোস করে উঠল রতœা। একসাথে দুটি অবান্তর কথা। থানায় আসবো কেন? থানায় থাকবে চোর-ডাকাত-পুলিশ। তিনজনের ভাত পাঠাতে হবে কেন? উত্তরটা এমনই হতে পারে তা ওসি সাহেবের জানাই ছিল। তারপরেও তাকে না জানিয়ে তিনি পারছেন না। পকেটমার দুটোর যখন বাবার পরিচয়ই জানা নেই, মায়ের পরিচয় আর কী করে থাকে? লালন পালন করে মানুষ করতে পারলে সন্তানের অভাব কি কিছুটা হলেও পূরণ হতে পারে না? কথা শুনেই ফোস করে উঠলে বলি কী করে? গলার স্বর নরম করলেন আব্দুল মজিদ। তোমার মুরদ তো আমার জানা আছে, বল কী বলতে চাও। বাজখাই গলা রতœার। পুলিশ আজ দুটো পকেটমারকে ধরছে। মামলা লেখার সময় বাবার নাম জিজ্ঞাসা করলে বলে, তারা বাবার নাম জানে না। ধমক দিয়ে আবার জিজ্ঞাসা করলে বলে, ধরেন আপনি আমার বাবা। মনটা গলে গেল। চাইলে আমরা দুটোকেই দত্তক নিতে পারি। ২০/২১বছর করে বয়স হবে। বয়স তেমন কিছু না। তোমাকে মা ডাকবে, আমাকে বাবা। আমাকে তো বাবা বানিয়েই ফেলেছে। কী? দুটো পকেটমার তোমার সন্তান? ছিঃ ছিঃ শেষ পর্যন্ত আমাকে এসব কথাও শুনতে হলো? আসো আজকে বাসায়। ঘাবড়ে গেলেন ওসি। কী বলতে কী বলে তালগোল পাকিয়ে ফেললেন কে জানে? এবারো ঝাঁজালো গলা রতœার। পকেটমার ছেচরদের জন্য আমি ভাত রান্না করে পাঠাবো? তোমার জন্যওআজ ভাত পাঠাবো না। হোটেল থেকে খেয়ে নিবে, বুঝেছো? ঠিক আছে তোমার কিছু করতে হবে না, যা করার আমিই করবো। ঠিক নাই। বলো, পকেটমার তোমার সন্তান হলো কী করে? বিয়ের আগে তো তোমার চরিত্র ভালো ছিল না। বিয়ের আগে যে আমার চরিত্র ভালো ছিল না সেটা তুমি কী করে জানলে? তোমার সাথে তো বিয়ের আগে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না। আমাকে বলেছে একজন তোমার চরিত্র সম্পর্কে। কোনো আপদ নিয়ে যদি বাসায় হাজির হও, তবে বাসা থেকে বের করে দিবো। আমি আসছি থানায়। শেষ পর্যন্ত পকেটমারের বাবা হয়েছো? আমাকে তো সন্তান দিতে পারলে না। একজন কনস্টেবল দুজন পকেটমারকে জামার কলারে ধরে টানতে টানতে ওসির সামনে নিয়ে এলো। হাঁপাতে হাঁপাতে সে বলল, মৌচাক মোড় থেকে ধরেছি স্যার। একবারে হাতে নাতে। ডেনজারেস আসামি স্যার। পুলিশের দিতে তেড়ে এসেছিল। পাছার ওপর দিয়েছি কয়েকটা। চোখ তুলে ওসি আসামী দুটোর দিকে তাকালেন। কনস্টেবেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, বাবার নাম জানা আছে? বাবার নাম জানা থাকলে হাজতে ঢুকিয়ে দিন। জানা না থাকলে ছেড়ে দিন। সচকিত হলো আসামী দুজন। থানায় এসে ওসির মুখে এমন কথা শুনবে তারা তা কল্পনাও করতে পারেনি। তারা ভেবেছিল বরাবর যা হয় তাই হবে। কোর্টে চালান হবে, ১/২ মাসের জেল হবে, তারপর ছাড়া পাবে। ধমকের সুরে ওসি একজনের দিকে তাকিয়ে বললেন, বাবার নাম জানা আছে? বাবার নাম জানা থাকলে কি আর পকেটমারের কাজ করতাম স্যার? ওসি বললেন, হুম। অন্যজনের দিকে তাকিয়ে ওসি বললেন, তোরও কি একই অবস্থা? তড়িৎ জবাব, ওর বাবার নাম জানা না থাকলে আমার বাবার নাম জানা থাকে কী করে স্যার? ওসি বললেন, হুম। দুইজন দুইজনের কানে ধরে ১০ বার ওঠবস করবি। এরপর রমনা এলাকা ছেড়ে চলে যাবি। যদি আর একবার এই এলাকায় দেখি তো সোজা গুলি করবো। পড়ি কি মরি করে পকেটমার দুটো দৌড়ে চলে গেল। হাজতখানায় উঁকি দিলেন ওসি আব্দুল মজিদ। রুবেল ও সানি জড়োসড়ো হয়ে ফ্লোরে বসে আছে। মনে মনে তার স্ত্রীর ভয়। কী সব বাজে মন্তব্য করেছে সে। এখন যদি এসে দেখে যে পকেটমারদের সাথে আলাপ করছি, তাহলে আবার থানার মধ্যেই কোন কেলংকারী করে বসে কে জানে? তোদের দুইজনকেই যদি আমি দত্তক নেই, যাবি আমার সাথে? বিস্ফারিত দৃষ্টিতে রুবেল ও সানি ওসির দিকে তাকাল। এটা তারা কী শুনছে? ওসি সাহেব তাদের সাথে মস্করা করছে না তো? সত্যি কি তোদের মা-বাবা নেই রে? রুবেল ও সানি মাথা নেড়ে না বলল, সত্যি তাদের মা বাবা নেই। রুবেল বলল, জন্মের পর থেকেই রেল স্টেশনে বড় হয়েছি স্যার। ষ্টেশনই আমাদের মা-বাবা। বড় করে নিশ্বাস ছাড়লেন ওসি। আচ্ছা, আমি দেখছি কী করা যায়? কোর্টে চালান দিবেন না স্যার? বলল সানি। কেন? এখানে ভালো লাগছে না? জেলে ঢুকালে খাবারটা তো অন্তত পেতাম, রুবেল বলল। দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা আমি করবো। একটু অপেক্ষা কর, আমার এক সাংবাদিক শ্যালক ফোন করবে আমাকে। ওর ফোনের জন্য অপেক্ষা করছি। ওর সাথে কথা সেরেই খাবারের ব্যবস্থা করবো। বিরক্ত হলো রুবেল। মুখ বাঁকা করে সে বলল, আমরা কোনো সাংবাদিককে সাক্ষাতকার দিতে পারেবো না স্যার। একই কথা বহুবার বলেছি, আর বলতে পারবো না। যত্তসব। অবাক বিস্ময়ে ওসি রুবেল ও সানির দিকে তাকালেন। মোবাইল বেজে উঠল তার। মনিটরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন সোবহানের নাম্বার। হাজতখানা থেকে বের হয়ে তিনি চেয়ারে গিয়ে বসে ফোন রিসিভ করলেন। গেটের কনস্টেবল হাজতখানার তালা মেরে দিল। বল সোবহান, পেয়েছো? হ্যাঁ পেয়েছি। না পেলে তো বলতেন কিসের সাংবাদিতা করি, কাগজ কলম নিন। আমি কাগজ কলম নিয়ে প্রস্তুত হয়েই আছি, বল তুমি। লিখুন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “তোমরা মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষিতা সকল মেয়েদের বাবার নামের জায়গায় আমার নাম লিখে দাও আর ঠিকানা লিখে দাও ধানমন্ডি ৩২।”  ঠিক আছে না? একদম ঠিক আছে ভায়া, আরো দশটা ঢোক গিললেও আমি মনে করতে পারতাম না। বড়ই কঠিন কথা। রাখি তাহলে। সোবহান তাড়াহুড়ো করছে। তার হাতের কাজ এখনও শেষ হয়নি। একজন সহকারীকে দিয়ে সে বঙ্গবন্ধুর এই বক্তব্যটি বই ঘেঁটে বের করিয়েছে। শোন, তুমি ব্যস্ত মানুষ জানি। অফিস শেষ করে আমার এখানে চলে এলে, খুব খুশি হবো  আজ। অফিস শেষ করে আমার এক জায়গায় যাওয়ার কথা দুলাভাই। জানি তো কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে। অমি হোন্ডা দিয়ে পৌঁছে দিব তোমাকে। আপনি কীভাবে জানেন? পুলিশেরা সব জানে। সোবহানের বলতে ইচ্ছে করছে পুলিশেরা জানে কচু কিন্তু সে কথা সে বলছে না। শত হলেও আব্দুল মজিদ তার বয়সে বড় এবং সম্পর্কে দুলাভাই। আচ্ছা আমি আসবো। ফোন রেখে আব্দুল মজিদ বঙ্গবন্ধুর উক্তিটি নিয়ে গভীর ভাবনায় তলিয়ে গেলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ৭/৮ বছর। সে বয়সে তার যুদ্ধে যাওয়া সম্ভব ছিল না। বর্তমানে মানবতাবিরোধীদের বিচার কার্য দেখে তিনি বেশ খুশি। এত বছর পর হলেও মুখোশধারীদের আসল চেহারা বের হয়ে আসছে। তার কেবলই বলতে ইচ্ছে করছে, “পিতৃপরিচয়হীন সকল পকেটমারের বাবার নামের জায়গায় তোমরা আব্দুল মজিদের নাম বসিয়ে দাও আর ঠিকানা লিখে দাও রমনা থানা, ঢাকা।” একজন লোক তার পিতার নাম জানবে না, তার কোনো ঠিকানা থাকবে না, এটা কেমন কথা? কোন দেশে বাস করছি আমরা? একজন লোক যত অপরাধীই হোক তার বাবা মায়ের নাম থাকবে, তার একটা ঠিকানা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। অথচ মামলা লিখতে গেলেই আসামীরা বলে তারা তাদের বাবার নাম জানে না, ঠিকানা জানে না। একজন কনস্টেবল এসে ওসিকে বলল, স্যার খচ্চর দুইটা খাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে গেছে। মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে ওসি বললেন, যাও তিনজনের খাবার নিয়ে এসো। তিনজনের খাবার কেন এটা কনস্টেবল বুঝতে পারছে না। যদিও সেটা তার না বুঝলেও চলবে। সিঁড়ি বেয়ে কনস্টেবল নেমে যাবার সময় ওসি পিছন থেকে তাকে ডাক দিয়ে থামিয়ে বললেন, চারজনের খাবার এনো সবুর। তুমি আর বাদ যাবে কেন? সবুরের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠল। হাজীর বিরিয়ানীর দোকানটা বেশী দুরে নয়। হেঁটেই সে যেতে পারবে। ম্যাচের খাবার খেতে খেতে পেটে চর পড়ে গেছে। শালা ভিআইপি পকেটমার। সবুর মনে মনে ওসিকে সন্দেহ করলো। এই পকেটমার দুটোর সাথে ওসি সাহেবের বিশেষ কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে। তা না হলে তাদেরকে কোর্টে চালান না করে বিরিয়ানীর ব্যবস্থা কেন? নিজের গালে থাপ্পর দিল সবুর। এত বেশি বোঝ কেন মিয়া? একটু পরে তো তুমিও হাজীর বিরয়ানী খাবে। উপলক্ষ তো ঐ ভিআইপি পকেটমার দুটোই। অলস সময় কাটাচ্ছেন ওসি আবদুল মজিদ। রমনা এলাকার সব লোক ভালো হয়ে গেছে। গত দুঘণ্টায় এ এলাকার কোনো অঘটনের খবর থানায় আসেনি। হন্তদন্ত হয়ে সোবহান এসে ওসির সামনের চেয়ারে ধপাস করে বসে পড়ল। বলুন দুলাভাই, আপনার কাহিনি বলুন। ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে সোবহান। হাজতখানায় দুজন আসামী আছে। ওদেরকে একটু দেখে এসো। তারপর বলছি। আসামী দেখার ইচ্ছে সবুরের নেই। থানার হাজতে আসামী থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। অনিচ্ছা সত্বেও হাজতখানায় উঁকি দিয়ে এসে সোবহান বলল, দেখেছি দুলাভাই, এবার আপনার কাহিনি বলুন। আমার একটু তাড়া আছে, সেটা তো জানেন। মনে আছে আমার। আমি তোমাকে পৌঁছে দিবো। আমার ডিউটি আজকের মতো শেষ। তোমার সাথে কথা বলেই আমরা বের হয়ে যাবো। কাহিনি তেমন কিছু নয়। আজ প্রচ- রকম একটা ধাক্কা খেলাম, এই আসামী দুটোকে নিয়ে। কী রকম? আগ্রহ প্রকাশ করলো সোবহান। চেয়ারে সে একটু নড়েচড়ে বসলো। এ রকম ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। বিশেষ করে পকেটমার, ছেচ্চর, ভবঘুরেদের সঠিক নাম ঠিকানা পাওয়া যায় না, যার কারনে এদের অপরাধ গুরুতর হলেও মামলা তেমন শক্ত করে করা যায় না। কোর্টে চালান দিলেও এদের জন্য তদবির করতে কেউ আসে না। ফলে ভবঘুরেদের মামলাও চলে তেমনই ঢিলেঢালা গতিতে। আজকের আসামী দুইটার মধ্যে একটার নাম রুবেল। মামলা লেখার সময় বললাম, ঠিকানা বল। বলে, ঠিকানা জানি না স্যার। ধমক দিয়ে বললাম, আন্দাজে একটা বল। কী যেন ভেবে, বলে, লিখুন স্যার বঙ্গভবন। জোরে ধমক দিলাম। এরপর বলে, বঙ্গভবন না চললে লিখুন, গণভবন-নগর ভবন যে কোনো একটা। আমি তো ওর কথা শুনে থ খেয়ে গেলাম। কাহিনি কি এ পর্যন্তই? সামান্য বিরক্ত সোবহান। কাহিনী যদি এই পর্যন্তই হয়ে থাকে তা হলে ওসি সোবহানকে না ডাকলেও পারতেন। সে ধরে নিল, এটা পকেটমারদের একটা কৌশল মাত্র। সোজাসোজি সোবহানের চোখের দিকে তাকিয়ে ওসি বললেন, আরে না। আসল কথাই তো বলিনি এখনো। বাবার নাম জিজ্ঞাসা করতেই বলে, বাবার নাম জানি না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, বেজন্মা নাকি? তৎক্ষনাত ছেলেটা বলে ফেলল, ধরেন আপনি আমার বাবা। এরপরই আমার সব তালগোল পাকিয়ে গেল। কলম আর চলছিল না। সন্দেহের দৃষ্টিতে সোবহান ওসির চোখের দিকে তাকাল। নিজের বাবার নাম বাদ দিয়ে সে ওসিকে কেন তার বাবার নামের জায়গায় বসাবে? আপনার তোলগোল পাকানোর কারণ কী? আমার তো কোনো ছেলেমেয়ে নেই সেটা জান। ছেলেটা আমাকে ওর বাবা সম্বোধন করাতে আমার হৃদয়টা কেমন যেন হা হা করে ওঠল। একটি সন্তানের অভাব যেন আমাকে তীব্র যন্ত্রণাকতর করে তুললো। ওসিকে এবার সত্যি সত্যি বিধ্বস্ত দেখা যাচ্ছে। চেয়ার ছেড়ে সোবহান হাজতখানায় উঁকি দিয়ে আসাসী দুটোকে দেখল। এরপর সে ওসির দিকে ভালো করে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো, একেবারে অন্ধকার রাতে স্টিমারের সার্চ লাইটের মতো। সে কি আসামীদের সাথে ওসির চেহারার কোনো মিল খুঁজছে? কী দেখলে সোবহান? নীচু কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন ওসি। না তেমন কিছু না। বঙ্গবন্ধুর উক্তিটি কেন আপনার দরকার হলো সেটা তো বললেনন না? শোন তাহলে, রুবেলের সাথে অন্য আসামীটির নাম সানি। ওকে জিজ্ঞাসা করলাম তোর কী অবস্থা, বল। সে জবাব দিল ‘ঐ’। ঐ মানে? বিস্ময় প্রকাশ করলো সোবহান। বাববার সে মোবাইলের মনিটরের দিকে তাকাচ্ছে। এখনই বোধহয় শৈলির ফোন আসবে। ঐ মানে হচ্ছে রুবেলের যে অবস্থা তারও সে অবস্থা, ঠিকানা জানে না, বাবার নাম জানে না। জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা সেই রেলষ্টেশনে। এরপর শোন, একটু আগে একজন কনস্টেবল আরো দুটো পকেটমারকে ধরে এনেছে। তারাও তাদের পরিচয়, বাবার নাম কিছুই জানে না। তাহলে মামলা নিবো কিসের ভিত্তিতে? কোর্টে এসব মামলা টিকেই না। অযথা সময় নষ্ট। যার জন্য দুটোকে দিয়ে দুটোর কান ধরিয়ে ছেড়ে দিয়েছি। দেশে পিতৃ পরিচয়হীন লোকের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে সোবহান। ওসির এবারের কথাটা বেশ ভারিক্কী মনে হলো সোবহানের কাছে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সে ওসির দিকে তাকাল। আপনি এখন ওদেরকে নিয়ে কী করতে চান? আমি ওদেরকে দত্তক নিতে চাই আর ঘোষণা দিতে চাই যে,“তোমরা সকল পিতৃ পরিচয়হীন পকেটমারদের বাবার নামের জায়গায় আমার নাম লিখে দাও আর ঠিকানা লিখে দাও রমনা থানা, ঢাকা।” হো হো করে হেসে ওঠে সোবহান চেয়ার ছেড়ে প্রায় দাঁড়িয়ে বলল, বঙ্গবন্ধু হতে চান দুলাভাই? ভারী গলায় ওসি বললেন, বঙ্গবন্ধু হতে চাইবো কোন যোগ্যতায় সোবহান কিন্তু দায়িত্ব তো কাউকে না কাউকে নিতে হবে? যেভাবে প্রতিদিন পিতৃপরিচয়হীন লোকের সংখ্যা বাড়ছে, এভাবে বাড়তে থাকলে তো জাতি একদিন তাদের পিতার নামই হারিয়ে ফেলবে। চোর-ডাকাত নিয়েই তো পুলিশের এক জীবন কাটিয়ে দিলাম, দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় যা দেখলাম তাতে তো সমস্যার কোনো সমাধান দেখছি না সোবহান। পকেটমার কারো পরিচয় হতে পারে না। এর জন্য আমরা কেউ না কেউ দায়ী। এই অবস্থার নাগাল টেনে ধরতেই হবে নতুবা আগামী প্রজন্ম কেউ তার বাবার নাম বলতে পারবে না। আমি বুঝতে পারছি না এসব কী করে ঘটে। আপা কী বলে? তিনি কি রাজী হবেন পকেটমারদের দত্তক নিতে? তোমার আপার কথা আর বলো না। তুমি যেমন খাজতখানায় ওদেরকে উঁকি দিয়ে আবার আমার চেহারার দিকে গভীরভাবে তাকিয়েছো, ওদের চেহারার সাথে আমার মিল আছে কি না, তোমার আপাও আমাকে এমনই সন্দেহ করেছে। লজ্জা পেল সোবহান। ভীষণ লজ্জা পেল সে। পুলিশের চোখ যে এটা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সেটা তার আগে জানা ছিল না। সোবহানের মোবাইল বেজে ওঠল। মনিটরে লক্ষ করে সে দেখল শৈলির নাম্বার। যাবার জন্য সে অস্থির হয়ে গেল। একুশে সংবাদ ডটকম/এমপি/১৬-০৪-১৬
Link copied!