আগৈলঝাড়ায় দু’শতাধিক বছরের প্রাচীণ ঐতিহ্যবাহী কচ্ছপ মেলা বন বিভাগ ও প্রশাসনের কারণে পন্ড
অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় দু’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী কচ্ছপ মেলা বনবিভাগের কঠোরতার কারনে কচ্ছপ বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। এতে জনগনের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়। স্থানীয়সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের ত্রিমুখী বাজারে দু’শ বছরেরও আগে থেকে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তির দিনে কচ্ছপ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। হিন্দু অধ্যুষিত ওই এলাকায় স্থানীয় রেওয়াজ হিসেবে তারা পারিবারিকভাবে বিশেষ এই দিনে দূরে থাকা মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনীসহ নিকটাত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে কচ্ছপের মাংস দিয়ে আতিথেয়তা রক্ষা করে আসছিলেন। আন্ধারমানিক গ্রামের ৮০ বছরের প্রবীণ নিখিল দাস বলেন, আমার বাপ-দাদা বলেছেন তাদের বাপ-দাদার সময় থেকে মেলাটি এখন পর্যন্ত চলে আসছে। তাই মেলায় এসেছিলাম কচ্ছপ কিনতে। কিন্তু বন বিভাগ ও প্রশাসনের কঠোরতায় কচ্ছপ কিনতে না পেরে আজ আমাদের গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতি হারিয়ে গিয়ে আমরা আত্মীয়স্বজনদের আতিথেয়তার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। মেলায় শত শত নারী পুরুষ পার্শ্ববর্তী কোদালধোয়া, আন্ধারমানিক, বাটরা, বাহাদুরপুর, বাকাল, জলিরপাড়, পয়সারহাট, বড়মগরা, বাকাল, ফুল্লশ্রী, গৈলা, বুধার, জোবারপাড়, আস্কর, কাঠিরাসহ কোটালীপাড়া উপজেলার রামশীল, ভেন্নাবাড়ি, কদমবাড়ি, বান্ধাবাড়ি ও মাদারীপুর জেলার কালকিনি থেকে ক্রেতারা কচ্ছপের মাংস বা আস্ত কচ্ছপ কিনতে এসেছেন। ভোরবেলা থেকেই মেলার শুরু হয়। কয়েক বছর পূর্বেও তারা কচ্ছপ কিনে বাড়ি ফিরতেন। তবে এবছর মেলা শুরুর পুর্বে থেকে আগৈলঝাড়া বন বিভাগের উদ্যোগে কচ্ছপ ক্রয়-বিক্রয় কঠোর নজরদারি করেছে। না জেনে দূর-দূরান্তের অনেকেই কচ্ছপ কিনতে মেলায় গিয়ে খালি হাতে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। কচ্ছপ ব্যবসায়ীরা জানান, গত দু’তিন মাস আগ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তারা এ মেলায় বিক্রির জন্য কচ্ছপ সংগ্রহ করেছিলেন। তবে মেলায় কচ্ছপ বিক্রিতে না পারায় তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। মেলায় আগৈলঝাড়া পুলিশ প্রশাসনের সদস্যরা টহল দিয়েছে। এছাড়াও মেলায় আইন প্রয়োগ করার জন্য আগৈলঝাড়া বন বিভাগ কর্মকর্তা প্রদীপ চন্দ্র মন্ডল উপস্থিত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের ৩য় তফসিলের ৪র্থ ধারায়, এবং ২০১২ সালের সংশোধিত আইনে কচ্ছপ ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করে বিভিন্ন দন্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে বন বিভাগ ও প্রশাসনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও নজরদারির কারণে ঐতিহ্যবাহী কচ্ছপ মেলা শুধুমাত্র গ্রামীণ বৈশাখী মেলায় পরিণত হয়েছে। এতে এখন আর আগের মত কোন প্রাণ নেই।
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :