একুশে সংবাদ : ১. স্ত্রীবাচক কবিতা
নারীর প্রসঙ্গ উঠলেই আমরা পরস্ত্রীর দিকে তাকাই।
রাত হলেই নগরীর ব্রথেলগুলো খুলে যায় গণিকার ঘাগরায়। ভেলভেটের গন্ধে মাতে নর্তকীর বনসাই কোমর। ক্লিওপেট্রার উরুতে বাজে মধ্যরাতের প্রণয়সুর।
বিছানায় সকল রমণীই এক চৌকষ উকিল। তবু নির্বোধ প্যারিসেরা আত্মসমর্পন করে হেলেনের জানালায়। আফ্রোদিতির পাথরস্তনে ফোঁটায় লেবুগন্ধ বকুল।
স্ত্রী আর পরস্ত্রী। মাঝখানে কিছু মুখস্ত খোলস। নিয়ন আলোয় উভয়েই এক নীল প্রজাপতি। মৃত্যুর পর উভয়ের দেহই পোঁকায় খাবে সমান বুভুক্ষায়।
২.রাতের ছায়া
হাওয়ার প্ররোচনায় ভবঘুরে দিন উড়ে গেলে থেকে যায় নাটকীয় রাত। আমাকে কেবলই ডেকে যায় হেঁয়ালি অন্ধকার।
বেআব্রু নক্ষত্রের চোখে ঘুমসিগন্যাল।পরে থাকে ছায়াহীন শহর। তুমি বলো, রাত মাত্রই নীলগন্ধ রুমাল। রুমালের মধ্যে একটি হলুদ ফুল। ফুলের মধ্যে এক টুকরো আগুন। আগুনের ভেতর কিছু অযাচিত অন্ধকার...
আমি বলি, প্রতিটি রাত এক একটি রেললাইন। রেললাইনের উপর একটি ধূসর ট্রেন। ট্রেনের ভিতর একজন নিঃসঙ্গ যাত্রী। যাত্রীর চোখে পরাবাস্তব ঘুম...
ঘুম আর অন্ধকারে মিলিয়ে যায় রাতের ছায়া। আমি তখন বিষন্ন বিড়ালের চোখে খুঁজি সরাইখানার রাস্তা।
৩.দ্বিধা
হাওয়ার সাথে দর কষাকষি শেষ হলে বেঁচে দেব কাঠঠোকরার কবন্ধ ভাষা।
আমার উঠোনে ঘর পালানো রোদ; জন্মান্ধ ফড়িংয়ের উড়াউড়ি। হলুদ পাতার দিনে এসে ভিড় করে লাল নীল অবৈধ চিঠি।
স্মৃতি মাত্রই অতীত নয়। কিছু হয় প্রশ্নাতীত। কিছু প্রশ্ন উত্তরাতীত।
অতীত ও স্মৃতির দ্বিধায় কেটে গেছে সকল প্রশ্নবিদ্ধ দিন। তবু উত্তরের ত্রিবেণী গিঁট খোলার সাহস হয়নি শুধু এই ভেবে- আমি শুধু প্রশ্নেই ছিলাম; উত্তরে নয়।
৪. দ্বিতীয় জন্ম
মৃত্যুর পর মানুষ জেনে যায় পূর্ব জীবনের সকল গোপনীয়তা।
অতীত বিষয়ক বিলবোর্ডে তাকিয়ে দেখি চিত্রল নিয়তির সাথে চলে জীনগ্রস্থ আবেগের অবিরাম জুয়া। অবিশ্বাসের ত্রিভূজ আঙিনার দিকে বেঁকে যায় সকল বাউরি সম্পর্কের রাহস্যিক ঠিকানা। স্মৃতির নাভিমূলে ভেসে থাকা এঁটো প্রেম বাজায় তীক্ষ্ণ খুঁনসুটির বেহালা।
হেঁয়ালীপনার এক অবাক উপস্থিতি টের পাই বস্তুপৃথিবীর ভুলগুলির মাঝে। পরজন্মে যদিও আমি এক উনগল্পের ফেরিওয়ালা, তবুও চোখের ককপিটে ভেসে থাকে তোমার কৃষ্ণকুমারী দেহকল্প। আমার পকেটভর্তি রকমারী সত্য মিথ্যা নিয়ে ফেরি করি তোমার আমার পূর্বজন্মের বায়বীয় গল্প।
মোড়ক দেখেই মজেছিলাম পণ্যের প্রেমে। তোমার বানিজ্যিকতা টের পেলে, আমিও হতাম এক ধুর্ত মহাজন।
৫.মাতাল কাব্য
এই তিমিশিকারী রাতে তুই জলপিপি। মখমল বাতাসে তোর অলৌকিক প্রণয়। অধিকারে নিয়েছিস নক্ষত্রের ঝিলিক যৌবন। তবু আলো বিলোচ্ছে বোকা চাঁদ।
লবনশাদা জোছনায় পানশালা থেকে ফিরছে এক উপেক্ষিত মাতাল। তার মুখের গন্ধে ভেসে আসা সিরামিক ভয় অনুবাদ করে পার্কের রাতপরীরা দেয় প্রণয়ের অধিকার।
প্রেম মূলতঃ এক ধাতব অজগর; মিশে থাকে প্রেমিকার কামুক বক্ষবন্ধনীতে।
কলঘরে অবগাহন শেষে প্রচ্ছদ খুলে ফেললে ভাবিস- মাতালের একাকীত্বে মিশে আছি তোর রৌদ্রজ্বলা বক্ষবন্ধনীর রঙে
একুশে সংবাদ ডটকম/এমপি/১৮-০৪-১৪
আপনার মতামত লিখুন :