মৃতপ্রায় সুরমার মাটি-বালু নিয়ে হরিলুট, দেখার কেউ নেই
একুশে সংবাদ : নাব্যতা হারিয়ে ধীরে ধীরে মরতে বসেছে সুরমা। এক সময়ের খরস্রোতা নদী সুরমার বুকে এখন পানি নেই বললেই চলে। এখন শিশুদের খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে নদীটির মধ্যভাগ। ৯০-এর দশকের পর থেকে ক্ষমতাসীন সরকার বারবার ড্রেজিংয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও তার বাস্তবায়ন আজও দেখেনি সিলেটবাসী। উল্টো চলছে নদীর পাড় কাটা ও অবৈধ ড্রেজিংয়ের মহোৎসব।
নদী পাড়ের বাসিন্দা সুরুজ মিয়ার মানসপটে আজো ভেসে ওঠে নদীর সেই গর্জনের স্মৃতি। সুরুজ মিয়া এখন যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যে পড়েছে। দেখেছেন নদীর এপাড় ভাঙ্গা-ওপাড় গড়ার খেলা। তিনি জানান, এক সময় এই নদী দিয়ে বারো মাস ভারত-বাংলাদেশের বড় বড় জাহাজ যাতায়াত করতো। কিন্তু এখন তা শুধুই অতীত। সুরমার বেশিরভাগ শুকিয়ে পরিণত হয়েছে খেলার মাঠে।
সুরমার দক্ষিণ তীরে কুশিঘাট এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুরমার বুক শুকিয়ে সেখানে বিশাল মাঠে পরিণত হয়েছে। এই মাঠে শিশুরা ক্রিকেট খেলায় ব্যস্ত। আর নদীতে যতটুকু পানি রয়েছে তাতে মানুষ হেটেই যাতায়াত করছে। সিলেটবাসী দীর্ঘদিন ধরে সুরমা নদী খননের দাবি জানিয়ে আসলেও বাস্তবে তা হয়নি। বরং চলছে অবৈধ ড্রেজিং। কোথাও কোথাও ভূমি খেকোরা নদীর পাড় কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। এমন একটি এলাকা দক্ষিণ সুরমার কুশিঘাট।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড় কেটে ট্রাক দিয়ে মাটি নেয়া হচ্ছে। পাড় কাটার সময় শ্রমিকদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা উপরের নির্দেশ ছাড়া মিডিয়ার সামনে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এর পাশেই রয়েছে দুটি অবৈধ ড্রেজার। অপরিকল্পিতভাবে নদী তীর কেটে মাটি তোলা হচ্ছে ড্রেজারের সাহায্যে। এটি যেন দেখার কেউ নেই। মাটি কাটা বন্ধের দাবি জানাতে গিয়ে অনেককেই প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়তে হয়েছে। প্রতিবাদী গ্রামবাসীকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি কাউকে কাউকে প্রাণে মারাও হুমকি দেয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গঙ্গানগর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দ জানান, রাত ১২টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত ড্রেজার দুটি অনবরত নদী থেকে বালু তোলে। এরপর আবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে অবৈধ ড্রেজিং। প্রাণের ভয়ে তারা কিছুই বলতেও পারছেন না। এই ড্রেজিংয়ের সাথে ‘আফতাব’ নামের একজন প্রভাবশালী জড়িত বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করা হয়।
ড্রেজার দিয়ে কাউকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হয়নি বলে জানান পিডিবি’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও সুরমা নদী খননের জোর দাবি জানিয়ে বলেন, শুধু সুরমার নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য নয়, বর্ষা মৌসুমে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সুরমা নদী খনন। তা না হলে নগরীর ছড়া-খাল উদ্ধারের সুফল পাবে না নাগরিকরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আপাতত নদীটি খননের কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। তবে, খননের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। আর খননের পর নদীর নাব্যতা ধরে রাখতে পুরো নদী একসাথে খনন করতে হবে বলে জানান তিনি।
একুশে সংবাদ ডটকম/এমপি/১৯-০৪-১৪
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :