শিক্ষার্থী ঝরে পড়া কমছে না
একুশে সংবাদ : শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ করা যাচ্ছে না। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ স্তরে ঝরেই যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সরকারের নানা উদ্যোগের পরও থামছে না ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বৃদ্ধির হার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো'র (ব্যানবেইস) তথ্য অনুযায়ী, এখনো প্রাথমিকে ২৬ দশমিক ২ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। এর মধ্যে মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের ঝরে পড়ার সংখ্যা বেশি। আর মাধ্যমিকে প্রায় ৪৬ ভাগ এবং কলেজ পর্যায়ে প্রায় ২২ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। প্রাথমিকে ছেলেদের ঝরে পড়ার সংখ্যা বেশি হলেও মাধ্যমিক ও কলেজে মেয়েদের ঝরে পড়ার সংখ্যা বেশি।
ব্যানবেইস বলছে, ২০০৮ সাল পর্যন্ত ঝরে পড়ার হার ছিল প্রায় ৫০ ভাগ। এখন এ ঝরে পড়ার হার প্রায় ২৪ ভাগ কমেছে। ব্যানবেইস-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ২৬ দশমিক ২ ভাগ। এর মধ্যে ছেলেদের ঝরে পড়ার হার ২৮ দশমিক ৩ ভাগ এবং মেয়েদের ঝরে পড়ার হার ২৪ দশমিক ২ ভাগ। তবে এখনও ভোলায় ৪২ ভাগ ছেলে এবং ৩৫ ভাগ মেয়ে ঝরে পড়ছে। আর সিরাজগঞ্জে ঝরে পড়ছে ৪১ ভাগ ছেলে এবং ৩৯ দশমিক ৩০ ভাগ মেয়ে। সবচেয়ে কম ঝরে পড়ছে ১২ ভাগ ছেলে এবং ১৪ ভাগ মেয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে ৬ দশমিক ৩ ভাগ, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩ দশমিক ৫ ভাগ, তৃতীয় শ্রেণিতে ৫ দশমিক ১ ভাগ, চতুর্থ শ্রেণিতে ১০ ভাগ এবং ৫ম শ্রেণিতে ১ দশমিক ৯ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। ঝরে পড়ার বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রণালয় বলছে, যদিও শিক্ষার্থী ভর্তির হার বেশি, কিন্তু ঝরে পড়ার হার এবং নিম্নমানের শিক্ষা উপকরণ প্রাথমিক শিক্ষার জন্য চ্যালেঞ্জ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভিভাবকদের সচেতনতা ও উপবৃত্তির কারণে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার কমছে। মাধ্যমিক স্তরের ক্ষেত্রেও প্রাথমিকের মতো দৃশ্যমান পরিবর্তন আনা হলে এ স্তরেও মেয়েদের ঝরে পড়ার হার কমে যাবে। মাধ্যমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে লেখাপড়া বন্ধ করে দেয়া হয়। মাধ্যমিক পর্যায়ে উপবৃত্তির নীতিমালায় যে শর্তারোপ করা হয়েছে তাতে দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বৃত্তি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে বৃত্তি না পাওয়ার কারণে স্কুলে আসছে না মাধ্যমিক ও কলেজে যাওয়ার উপযোগী মেয়েরা। এ কারণে এই দুই স্তরে মেয়েদের ঝরে পড়ার হার ছেলেদের চেয়ে বেশি।
অন্যদিকে মাধ্যমিক পর্যায়ে এখনও ৪৬ দশমিক ৭০ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। এর মধ্যে ৪০ দশমিক ৪৪ ভাগ ছেলে এবং ৫১ দশমিক ৮৩ ভাগ মেয়ে। ঝরে পড়ার মধ্যে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ৪ দশমিক ৫৯ ভাগ, সপ্তম শ্রেণিতে ৫ দশমিক শূন্য ২ ভাগ, ৮ম শ্রেণিতে ২০ দশমিক ৩৫ ভাগ, নবম শ্রেণিতে ৭ দশমিক শূন্য ৬ ভাগ এবং দশম শ্রেণিতে ৭৯ দশমিক শূন্য ৭ ভাগ ঝরে পড়েছে। আর কলেজ ও মাদ্রাসা পর্যায়ে ২১ দশমিক ৮ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। এর মধ্যে ২০ দশমিক ৩১ ভাগ ভাগ ছেলে এবং ২৩ দশমিক ২৯ ভাগ মেয়ে।
সমপ্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদনে ঝরে পড়া রোধে কিছু সুপারিশ তুলে ধরে। এতে বলা হয়, প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আরো বেশি সময় স্কুলে ধরে রাখার উপর জোর দিতে হবে। এদের মধ্যে প্রণোদনা সৃষ্টি করতে পারলে তা শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপনে উদ্বুদ্ধ করে তুলবে। প্রতিটি শিশু যাতে শিক্ষণের আওতায় এসে একটি মজবুত ভিত গড়ে তুলতে পারে সে জন্য উদ্যোগ ও দক্ষতা বাড়াতে হবে। আর এটি করতে হলে প্রয়োজন লক্ষ্যমুখী পরিকল্পনা। যে সব শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ে শিক্ষায় তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানো সূত্র খুঁজে বের করতে হবে। এসব গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে বস্তিবাসী, প্রতিবন্ধী এবং শিক্ষণে প্রতিবন্ধকতার শিকার শিশুরা। এছাড়া উচ্চশিক্ষাকে সুলভ করে তোলার উপায় বের করতে পারলে তা আরো নাগালের মধ্যে চলে আসবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার দ্রুতগতিতে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে। ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা সম্ভব। এদের আবার শিক্ষার কক্ষপথে ফিরিয়ে আনতে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় 'আনন্দ স্কুল' কাজ করছে। এর বাইরে কর্মজীবী শিক্ষার্থীদের জন্যও আলাদা কাজ চলছে।
একুশে সংবাদ ডটকম/এমপি/১৯-০৪-১৪
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :