তিস্তার পানি আবার কমলো
একুশে সংবাদ : ভারতের ভাওতা বাজিতে হঠাৎ করে গতকাল মঙ্গলবার তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়ে গেলেও আজ তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২৪২ কিউসেকে।
তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে মঙ্গলবার ৩ হাজার ৬ কিউসেক পানি ছাড়ে ভারত। তবে তার পরদিনই আজ বুধবার পানির পরিমাণ আবার কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৪২ কিউসেকে।
বুধবার দুপুর ১২টায় পানি মেপে এ তথ্য জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান।
পানি পেয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন প্রকল্প এলাকার কৃষকেরা। সেচ প্রকল্প ব্যারাজে প্রায় সাতগুণ পানি বেড়েছে। গতকাল ব্যারাজ এলাকায় পানিপ্রবাহ ছিল ৩ হাজার কিউসেক। এর আগেও ছিল মাত্র ৫০০ কিউসেক। পুরো প্রকল্পটি হয়ে পড়েছিল অকার্যকর। বোরো মৌসুমে পানি না পেয়ে দিশাহারা হয়ে উঠেছিলেন তিস্তা সেচ এলাকার চাষিরা।
তবে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া পানি থাকবে কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সবার। গত এক সপ্তাহ থেকে পানিপ্রবাহে তারতম্য শুরু হয়েছে। ২২ মার্চ সবেচেয়ে কম পানি ছিল ব্যারাজ এলাকায়থ মাত্র ৪৫৫ কিউসেক। নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা ব্যারাজের সেচ খালের পানি পুরোপুরি শুকিয়ে গিয়েছিল। গতকাল ছিল তার উল্টো চিত্র। সেচ খাল পানিতে ভরা।পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সূত্র জানায়, ১৩ এপ্রিল থেকে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের গেট দিয়ে কিছু পানি আসছে। এতে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছেন সেচের আওতায় থাকা চাষিরা। কিন্তু স্বস্তি যেন স্থায়ী হওয়ার নয়। ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত পানি বাড়লেও পরে আবার কমতে থাকে। পানিপ্রবাহ বেড়ে এক হাজার ৫০০ কিউসেক হয়েছিল। কিন্তু গত সোমবার আবার কমে হয় ৮৩০ কিউসেক এবং গতকাল মঙ্গলবার আবার বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার কিউসেকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান বলেন, ১৩ এপ্রিল থেকে পানি বাড়লেও সোমবার পানির পরিমাণ নেমে এসেছিল ৮৩০ কিউসেকে। মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ তা বেড়ে তিন হাজার ছয় কিউসেকে ওঠে। ভারত পানি ছেড়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয়তো গজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দেয়ায় পানি বেড়েছে।
গজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দেয়ায় পানি এসেছে কি-নাথ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো বলেন, হতে পারে, আবার উজানে বৃষ্টিপাত হলেও হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নীলফামারী জেলার বৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের আওতায় নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২টি উপজেলার এক লাখ ১১ হাজার ৪০৬ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালের জুন মাসে এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়। শুরুর দিকে ৭৯ হাজার হেক্টরে সেচ দেওয়া গেলেও তিস্তায় প্রয়োজনীয় পনির অভাবে প্রতিবছর সেচযোগ্য জমির পরিমাণ কমতে থাকে।
গত বছর ওই প্রকল্পের আওতায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হলেও এ বছর পানির অভাবে আরও ৫০০ হেক্টর জমি কমিয়ে নেয়া হয়। এবার এ পর্যন্ত ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে পালাক্রমে সেচ দেয়া সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নদী তিস্তার পানিপ্রবাহ ১৯৫৮ সালের পর এবারই প্রথম সর্বনিম্ন পর্যায়ে আসে। ফলে তিস্তা সেচ প্রকল্পের ওপর নির্ভরশীল উত্তরের তিন জেলা নীলফামারী, দিনাজপুর ও রংপুরের হাজার হাজার একর জমি পানির অভাবে চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়ে। পানিশূন্যতার কারণে তিস্তাপাড়ের কৃষি, মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। পানির স্তরও দ্রুত নেমে গেছে। সেচযন্ত্রেও পানি উঠছে না। ২৫ থেকে ৩০ ফুট গর্ত করে শ্যালো মেশিন বসালে তবেই পানি মিলছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, এ মৌসুমে তিস্তার পানি কমতে কমতে দাঁড়িয়েছিল ৪৫৫ কিউসেকে। অথচ স্বাভাবিকভাবে গড়ে ৫ থেকে৬ হাজার কিউসেক পানি থাকা প্রয়োজন, যা আগের বছরগুলোতে ছিল।
এ প্রকল্পে পানি হঠাৎ কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা প্রকল্পভুক্ত চাষীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও তা এখনও সেচ কাজে খুব একটা প্রভাব ফেলেনি। সবার মাঝে আতঙ্কথ আবার পানি কখন কমে যায়।
স্থানীয়দের ধারণা, বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলনের মুখে হয়তো ভারত কিছুটা পানি ছেড়েছে। তবে এটা কতটুকু ঠিক বলতে পারেননি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, ১৩ এপ্রিল থেকে পানি বাড়ছে এবং মাঝে আবার কমে গিয়েছিল।
একুশে সংবাদ ডটকম/এমকেএইচ/২৩-০৪-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :