AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

পাহাড়ী পথে একমাত্র বাহন ‘চান্দের গাড়ি’


Ekushey Sangbad

০৭:০৯ এএম, জুলাই ১৬, ২০১৪
পাহাড়ী পথে একমাত্র বাহন ‘চান্দের গাড়ি’

একুশে সংবাদ : খাড়া পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে চলেছে সাঙ্গু নদী। আর সাঙ্গুর বুক চিড়ে অভিযাত্রীর দল নিয়ে উজানে চলছে সরু, ছোট্ট নৌকাটি। রুমা বাজার পৌঁছেই চোখে পড়ল নানা প্রকার পাহাড়ী ফল যেমন- কমলালেবু, গোমাইত্যা, লটকন, আম, আনারস ইত্যাদি। গাইডের সহায়তায় সেনাক্যাম্পের আনুষ্ঠানিকতা সেরে পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পাহাড়ী পথে একমাত্র বাহন ‘চান্দের গাড়ি’। এই গাড়ির জান সাংঘাতিক শক্ত! এই গাড়িতে চেপে চলে এলাম উঁচু এক পাহাড়ের গোড়ায়। সেখান থেকে শুরু হলো আমাদের উপরের দিকে হাঁটা। খাড়া পথ ধরে হাঁটা ভীষণ কষ্টকর! পাহাড়ের উপর অবস্থিত পার্বত্য জেলা বান্দরবানের একমাত্র প্রাকৃতিক লেকের নাম ‘বগালেক’। আমরা সেখানেই যাচ্ছি। ঘণ্টাখানেক ট্রেকিং করে পাহাড়ে উঠতেই চোখের সামনে ভেসে উঠল টলটলে স্বচ্ছ পানির সরোবর। আহ! এই বগালেকের নাম কত যে শুনেছি। এখন আমি সেই লেকের পাড়েই দাঁড়িয়ে আছি। লেকের পূর্ব পাশে ছাইকত পাহাড়। পাহাড়টি যেন দুই বাহু প্রসারিত করে লেক ঘিড়ে দাঁড়িয়ে আছে। এর পেছনেই বহুদূরে অস্পষ্ট কেওক্রাডাং। পাহাড়ের গোড়ায় অর্থাৎ লেক কেন্দ্র করে বানানো হয়েছে ছবির মতো সুন্দর ছোট ছোট ঘড়। প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রাকৃতিকভাবে বগালেকের সৃষ্টি হয়েছিল। এর আয়তন ১৫ একর। সমুদ্র সমতল থেকে উচ্চতা ২৭০০ ফুট। লেক ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে অনেক কিংবদন্তি রয়েছে। তাদের বিশ্বাস এই জলে রয়েছে ড্রাগন দেবতার বাস। লেকের গঠনশৈলী দেখে বিশ্লেষকদের ধারণা- এটা আসলে একটা মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ। বছরে একবার (এপ্রিল- মে) প্রাকৃতিকভাবেই এই লেকের পানি ঘোলাটে হয়ে যায়। এ নিয়েও তাদের মধ্যে নানা কৌতূহল রয়েছে। সেনাক্যাম্প হয়ে লেক সাইডে যেতে হয়। বাম পাশে বেশ নিচে সরোবরের অসাধারণ নিস্তব্ধতা, ডানে খাড়া পাহাড়ী প্রাচীর। পাথরের গায়ে ঝুলে আছে টকটকে লাল আর সাদা অজস্র ফুল। স্থানীয়রা সেগুলোকে ‘জাপানি লতা’ বা ‘লতা ফুল’ বলে। সেখানকার ঘড়গুলো শক্ত খুঁটির উপর বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি। আমাদের থাকার ব্যবস্থা হলো এমনই এক ঘড়ে। ঘরের পেছনের বারান্দা লেকের জলের উপর অনেকটা বেরিয়ে এসেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে পুরো লেক দু’চোখ মেলে দেখা যায়। আর ঘরের সামনে সবুজ ঘাসের খোলা প্রান্তর। বগালেক থেকে কেওক্রাডাংয়ের পথে যেতে পড়বে চিংড়ি ঝিরি (ঝর্ণা)। এমন নামের প্রমাণ তৎক্ষণাৎ আপনি পাবেন, যখন সেখানে পানিতে অসংখ্য চিংড়ি সাঁতার কাটতে দেখবেন। একসঙ্গে এতো চিংড়ি মাছ আমি কখনও দেখিনি। ক্ষণে ক্ষণে মেঘ এসে অদৃশ্য করে দেয় চলতি পথ। আর সেই মেঘ কেটে পাহাড়ী পথে অগ্রসর হওয়ার অনুভূতি সত্যিই অকল্পনীয়! কেওক্রাডাংয়ের আগে দার্জিলিংপাড়া; সেখানে চায়ের তেষ্টা মেটানোর জন্য দেখলাম গোটা দুয়েক দোকানও রয়েছে। সুতরাং এই সুযোগ হাতছাড়া করতে মন চাইল না। চা পান শেষে আমাদের যাত্রা পুনরায় শুরু হলো। কখনও জুম ক্ষেতের ভেতর দিয়ে কখনও ক্ষেতের পাশ দিয়ে সরু চলার পথ ধরে আমরা এগুতে থাকলাম উঁচু থেকে আরো উঁচুতে। এবং এক সময় পৌঁছে গেলাম ৩১৭২ ফুট উচ্চতার পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডাংয়ের ওপর। চারপাশে পাহাড় চূড়া মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সেগুলো যেন সবুজ মখমলে ঢাকা। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ! অদূরেই বমদের পাশিংপাড়া। সেখানে বাঁশের পাইপ দিয়ে জল সরবরাহের সুব্যবস্থা দেখে চমৎকৃত হলাম। ওই জলেই তাদের নিত্যদিনের কাজকর্ম করতে হয়। রাতে থাকার জন্য এটি অত্যন্ত উপযোগী একটি জায়গা। পরের দিন প্রায় সমস্ত পথ পাহাড়ের শরীর বেয়ে এগিয়েছি। সরু পথ, নিচের দিকে তাকালে কালচে সবুজ আর মিহি সাদা মেঘের চাদর ছাড়া কিছু চোখে পড়ে না। মাথার ওপর দৈত্যাকৃতির একেকটা গাছ। এগুলো সব পাহাড়ী গাছ। লতাগুলো ভয়ানক আকৃতি নিয়ে ঝুলে রয়েছে। পথে হঠাৎ গয়াল (পাহাড়ী গরু) দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। দেখতে ভয়ানক না হলেও আকৃতিতে এরা বিশাল। ভয়ের কারণটা এখানেই। কিন্তু আকৃতিতে ভয় জাগানিয়া হলেও এরা স্বভাবে ঠিক তার উল্টো। মজার ব্যাপার হলো, গয়াল পালনে স্থানীয়দের তেমন বেগ পেতে হয় না। গভীর অরণ্য থেকে এক-দেড় মাস বয়সের বাচ্চা ধরে এনে মাস দুয়েক বেঁধে রাখলেই পোষ মেনে যায়। জঙ্গলে খায়, সারা রাত জঙ্গলেই থাকে, সকাল হলে লোকালয়ে চলে আসে কেবল লবণ খাওয়ার জন্য। হাতের তালুতে লবণ নিয়ে বাড়িয়ে ধরলে চেটে চেটে খায়। সন্ধ্যা নেমে এলে পুনরায় জঙ্গলে ফিরে যায়। প্রাতাপাড়ার সাং ক্লীং বমের কাছ থেকে অনেক কিছু জানলাম। যতই জানি আমাদের ততই বিস্ময় জাগে! রাতে সাং ক্লীং বমের বাড়িতে থাকার নিমন্ত্রণ। গাইড বন মোরগের ব্যবস্থা করল। পাহাড়ীরা ভীষণ অতিথিপরায়ণ। তার প্রমাণ মিলল রাতের খাবার শেষে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। চিনি ছাড়া রঙ-চা এবং স্থানীয় ক্ষুদ্রাকৃতির পানে সাং ক্লীং এর সঙ্গে জমে উঠল তুমুল আড্ডা। কথাপ্রসঙ্গে জানলাম, অধিকাংশ পাড়ায় শৌচাগার নেই। সুতরাং খোলা আকাশ এখানে একমাত্র বিকল্প। জনবসতিগুলোয় শূকর কমবেশি থাকে। হাতে বদনা, ঘটি জাতীয় কিছু দেখলেই তারা পিছু নেয়, এই পরিস্থিতিতে লাঠি অন্যতম ভরসা। ভোরবেলা রওনা দিলাম দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিনডংয়ের উদ্দেশ্যে। চোখের সামনে শৃঙ্গটা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল। আমরা অনেক কষ্টে তাজিনডং- এ আরোহণ করলাম। এমন বিশেষ অর্জনের পর সাধারণত কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন- উত্তেজনায় হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, আনন্দে উচ্চহাসি পাওয়া, বিস্ময়ে বাক রুদ্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। আমাদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হলো না। ‘তাজিনডং’ এখন পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এটি কেওক্রাডাং পর্বত রেঞ্জের একটি শৃঙ্গ। ১৯৯৬ কি ৯৭ সালে তৎকালীণ সরকার এই শৃঙ্গের নামকরণ করে ‘বিজয়’। তাজিনডং মারমা শব্দ। এর বাংলা অর্থ ‘গভীর অরণ্যের পাহাড়’। এই নাম তাদের ভাষা সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কীত। সুতরাং নামটি পরিবর্তন করার মধ্যে কোনো ধরনের স্বার্থকতা বা কৃতিত্ব আছে কিনা খুঁজে পেলাম না। এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রকারান্তরে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক মানসিকতারই পরিচয় বহন করে। ব্রিটিশরা কারাকোরাম, নন্দাদেবী এবং কাঞ্চনজংঘার নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছিল। মাউন্ট এভারেস্টকে তিব্বতী এবং নেপালীরা যথাক্রমে ‘চোমোলংমা’ ও ‘সাগরমাতা’ বলে। ১৮৫২ সালে ভারতীয় গণিতবিদ এবং জরিপ কর্মকর্তা রাধানাথ শিকদার মাউন্ট এভারেস্টই যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শৃঙ্গ এটি প্রমাণ করেছিলেন। অথচ এর নামকরণ হয় এক ইংরেজের নামে (জর্জ এভারেস্ট, তৎকালীণ জরিপ বিভাগের প্রধান)। আমাদের অনেক কাজের স্বীকৃতি আমরা পাইনি। যেভাবে যেতে হয় : রাজধানীর ফকিরাপুল ও কলাবাগান থেকে সোহাগ পরিবহন, সৌদিয়া, এস আলম বা অন্য কোনো বাসে বান্দরবান যেতে হবে। সেখান থেকে মিনি বাস অথবা রিজার্ভ জীপে রুমা বাজার। তারপর চান্দের গাড়ি করে বগালেক স্ট্যান্ড। এরপর বাকি পথ পায়ে হেঁটে যেতে হবে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৬-০৭-০১৪:
Link copied!