AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

'যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই শিয়া-সুন্নিতে দ্বন্দ্ব বাধানোর ষড়যন্ত্র করেছে‌'


Ekushey Sangbad

১০:০০ এএম, জুলাই ১৭, ২০১৪
'যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই শিয়া-সুন্নিতে দ্বন্দ্ব বাধানোর ষড়যন্ত্র করেছে‌'

একুশে সংবাদ : অসাধারণ এক ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মরুহুম ইমাম খোমেনী (র.)। মজলুম মানুষের সঙ্গে সুগভীর সম্পর্কের কারণেই তিনি তাদেরকে নিয়ে ইসলামী বিপ্লবের সংগ্রামে নেমেছিলেন। জনগণের আকীদা বিশ্বাস, তাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিকসহ যাবতীয় বিষয়কে তিনি নিজের মতো করে দেখেছেন। জনগণের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে তিনি সংগ্রাম করেছেন। আল্লাহর ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রেখে তিনি মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন বলেই ইসলামী বিপ্লবে সফল হয়েছিলেন। মহান নেতা মরহুম ইমাম খোমেনী(র.) এর মৃত্যু বার্ষিকীতে এসব কথা বলেন রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন খান। তার সাক্ষাতকারটি এখানে উপস্থাপন করা হলো। রেডিও তেহরান: ৪ ঠা জুন হচ্ছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম ইমাম খোমেনী (র.)র মৃত্যুবার্ষিকী। বিশ্ব ও ইসলামের ইতিহাসের হাজার বছরের বিস্ময় এই মহাপুরুষ সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই অনেক পড়াশুনা করেছেন। তাই প্রথমেই আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কেমন মানুষ ছিলেন? ফরিদ উদ্দিন খান: দেখুন গত ১৪০০ বছরের ইতিহাসে মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) এক অনন্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন অসাধারণ এবং অনন্য। যদি তিনি অসাধারণ এবং অনন্য না হতেন তাহলে তার যে পরিচিতি আজ সারা বিশ্বে আমরা পাই সেটা দেখতে পেতাম না। ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি ইসলাম নির্দেশিত পথের বাইরে চলেন নি। নীতি-নৈতিকতা থেকে শুরু করে যাবতীয় ব্যাপারে তিনি পরিপূর্ণ আদর্শ একজন মানুষ ছিলেন। 'ইনসানে কামেল' হওয়ার জন্য তার ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন এককথায় সব দিক থেকে তিনি পূর্ণ মানুষ ছিলেন। ইমাম খোমেনী (র.)র সামগ্রিক জীবন সম্পর্কে তার ঘনিষ্টজনেরাসহ তার ছাত্রদের অনেক লেখালেখি রয়েছে যা প্রকাশিত হয়েছে এবং বিশ্বময় প্রচারও হয়েছে। রেডিও তেহরান: ইমাম খোমেনী (র.)এর নেতৃত্বে ইরানে ইসলামী বিপ্লব সফল হয়েছে। বিপ্লবের দিনগুলোতে আপনি ইরানে ছিলেন এবং এরপর তার মৃত্যু পর্যন্ত তেহরানে থেকে তার নেতৃত্ব দেখার সুযোগ আপনার হয়েছে। তো কিভাবে তিনি এত বড় একটা বিপ্লব সফল করলেন, উনার নেতৃত্ব সম্পর্কে কিছু বলেন। ফরিদ উদ্দিন খান: ইমাম খোমেনী(র.)এর নেতৃত্ব আসলে ইসলামেরই একটি মূর্ত প্রতীক। আম্বিয়া কেরামের যে পথ, তাঁরা যেভাবে ইসলামের নেতৃত্ব দিয়েছেন তাছাড়া তাঁদের স্থলাভিষিক্ত আউলিয়া কেরাম আহলে বাইতগণ যে পথ দেখিয়েছেন এবং যেসব যোগ্যতা তাদের মধ্যে ছিল ঠিক তাদেরই উত্তরসূরি ছিলেন ইমাম খোমেনী (র.)। তাঁদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেকে সেভাবে গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। রাসূল (সা.) এর পুরো জীবন চিত্র ইমাম খোমেনী(র.)এর সামনে ছিল। তাছাড়া হযরত আলী (আ.)এর জীবনসহ আহলে বাইতদের জীবনের সবকিছুকে তিনি নিজের জীবনের সামনে রাখতেন। ইমাম তার জীবনের প্রতিটি পদে তাঁদেরকে পুরেপুরি অনুসরণের চেষ্টা করেছেন। আর সেই পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি সব সময় আল্লাহপাকের ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস-আস্থা ও ভরসা রাখতেন। শুধু তাই নয় ইমাম খোমেনী (র.) এর এলমী এবং এরফানি যোগ্যতাও একইরকম ছিল। নিজেকে গড়ে তোলার যোগ্যতা ও চেষ্টাও ছিল তার মধ্যে সমধিক। ইসলামী বিপ্লব সফলের ক্ষেত্রে তাঁর অনেক বড় একটি যোগ্যতা ছিল। আর সেটি হচ্ছে আম্বিয়া কেরাম ও আউলিয়া কেরামগণ জনগণের সঙ্গে যেভাবে সম্পর্ক রাখতেন ঠিক সেভাবে তিনি মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন। বিশেষ করে মজলুম মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে ইমামের কোনো তুলনা ছিল না। আর সে কারণে জনগণ তার খুব কাছাকাছি এসেছিলেন এবং অতি নিকট থেকে তারা ইমামের নেতৃত্বকে দেখেছিলেন ও পরখ করেছিলেন। জনগণের আকীদা বিশ্বাস, তাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিকসহ যাবতীয় বিষয়কে তিনি নিজের মতো করে দেখেছেন। আর সেভাবেই জনগণের পক্ষ থেকে সব সময় কথা বলার চেস্টা করেছেন এবং কথা বলেছেন। জনগণের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে তিনি সংগ্রাম করেছেন। রেডিও তেহরান: ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার হযরত ইমাম খোমেনী(র.)মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা মেটানোর সাথে সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিকেও গুরুত্ব দিতেন। তিনি পৃথিবী থেকে দারিদ্রকে নির্মূল করার জন্য গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের কথা বলতেন। তো, তাঁর অর্থনৈতিক দর্শন সম্পর্কে আপনি শ্রোতাদের কিছু বলবেন কী? ফরিদ উদ্দিন খান: ইমাম খোমেনী(র.) অর্থনৈতিক দর্শন ছিল ইসলামী অর্থনৈতিক দর্শনেরই রূপ। পৃথিবীতে অন্যান্য মতবাদীদের যে অর্থনৈতিক দর্শন ছিল তিনি তার বিপরীতে ছিলেন। স্পষ্ট করে বলা যায় ইমাম খোমেনীর অর্থনৈতিক মতাদর্শ ছিল সম্পূর্ণ ইসলামের প্রতিফলন। ইসলাম যে পরিপূর্ণ জীবনাদর্শ। মানবজীবনের সবক্ষেত্রে ইসলাম যে পূর্ণাঙ্গ একটি বিধান তাছাড়া আম্বিয়া কেরাম ও আউলিয়া কেরমাগণ যে জীবন দর্শন দিয়ে গেছেন সেখানে যে অর্থনীতি আছে সেই অর্থনীতির কথা বলেছেন ইমাম খোমেনী (র.)। ইসলামী অর্থনীতি মানুষের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে ইসলামী অর্থনীতির বিষয়টি বলা আছে। পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ যেভাবে তাদের অর্থনৈতিক দর্শনকে ব্যাখ্যা করেছে এবং তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে ইমাম খোমেনী (র.) সেব্যাপারে খুবই সচেতন ও সজাগ ছিলেন। পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদীদের অর্থনৈতিক দর্শনের বিরোধীতা করেই কুরআন নির্দেশিত ইসলামী অর্থনীতিকে তিনি মানুষের সামনে এনেছেন। ইমাম খোমেনী (র.) তার রচিত অনেক বইয়ের মধ্যে আল্লাহ পাক নির্দেশিত ইসলামের যে মালিকানা ব্যবস্থা, আমানতদারি, ভোগ এবং অর্জনের সীমারেখা ইত্যাদি বিষয়গুলোকে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখা বিশ্লেষণ করেছেন। ইমাম খোমেনী (র.) রাজনৈতিক চিন্তা ও আধ্যাত্মিকতা থেকে অর্থনৈতিক দর্শন বিচ্ছিন্ন কোনো কিছু নয়। রেডিও তেহরান: ইমাম খোমেনী শুধু একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বই ছিলেন না, তিনি একজন বড় আলেম এবং আধ্যাত্মিক নেতা। এ পর্যায়ে তাঁর ব্যক্তিত্বের এই আধ্যাত্মিক দিকটা সম্পর্কে জানতে চাই। ফরিদ উদ্দিন খান: ইমাম খোমেনী (র.) এর আধ্যাত্মিকতা বুঝতে হলে তাঁর রচিত যেসব বই রয়েছে যেমন- আদাবুস সালাত, আরবাইন হাদীস, মিসবাউল হেদাইয়াসহ আরো যেসব বই রয়েছে সেগুলো পড়লে বোঝা যাবে আসলে তাঁর আধ্যাত্মিকতা কত গভীরে! আমাদের সমাজে বিশ্বের যে প্রচলিত আধ্যাত্মিকতা তার চেয়ে অনেক উর্ধ্বে ছিল ইমামের আধ্যাত্মিকতা। প্রচলিত সমাজের চেয়ে চেয়ে অনেক গভীরে ছিল তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা। মারেফাত সম্পর্কে, আল্লাহ পাক, রাসূল পাক (সা.) পয়গম্বরে আজম সম্পর্কে তাঁর যে ধ্যান-ধারণা তা প্রচলিত দর্শন এবং ধ্যান-ধারণা থেকে অনেক উর্ধ্বে। ইমাম খোমেনীর বক্তৃতা, বিবৃতি এবং বইগুলোতে তাঁর আধ্যাত্মিকতার চিত্র স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি মনে করতেন যে খাতেমুল আম্বিয়া রাসূলে পাক(সা.) এবং তাঁর আহলে বাইতের আধ্যাত্মিকতা থেকে তিনি তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা পেয়েছেন। তাঁদেরই প্রদর্শিত পথ, মত ও জ্ঞান প্রজ্ঞার আলোকে তিনি উপলব্ধি করার এবং তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন। রেডিও তেহরান: ইমাম খোমেনীর ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্ব থেকে মুসলিম বিশ্বের পণ্ডিতদের অনেক কিছু শেখার আছে- এমনটি অনেকেই বলে থাকেন। তো আপনি এ সম্পর্কে কি বলবেন? ফরিদ উদ্দিন খান: দেখুন বিশ্বে অনেক আন্দোলন হয়েছে, ইসলামী বিশ্বেও অনেক আন্দোলন হয়েছে গত কয়েক শতাব্দীতে। এমনকি বিশ শতকেও নানা সংগঠনের নানা আন্দোলন দেখেছি। তবে ইমাম খোমেনী (র.)এর আন্দোলন এবং বিপ্লব সেসব আন্দোলন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। ইমাম খোমেনীর আন্দোলনের পথ ছিল নবী-রাসূল ও আহলে বাইতদের নির্দেশিত পথ। নবী-রাসূলগণ ও আহলে বাইতের সদস্যরা যে পথ দেখিয়েছিনে ইমাম খোমেনী সেই পথের কথাই বলতেন। পার্থিব নানা পথ ও মতকে তিনি আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন নি। তিনি জগতের প্রচলিত মত ও পথ সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। ইমাম খোমেনী (র.) এর ইসলামী আন্দোলন, রাষ্ট্রচিন্তা ও দর্শন ছিল আল্লাহ পাক নির্দেশিত পবিত্র কুরআনের দর্শন। পবিত্র কুরআনে মানবজাতির জন্য আল্লাহ পাক যে জীবন বিধান দিয়েছেন সেই আলোকে তিনি ইসলামী আন্দোলনের সুকঠিন পথে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। ইমাম খোমেনী(র.) বলেছিলেন, যদি কোনো পদ ও পদবী গ্রহণ করতে চাও তাহলে সবার আগে অন্তরের বিশুদ্ধতা বা পবিত্রতা অর্জন কর। অন্তর পবিত্র না হলে পদ ও ক্ষমতা একদিকে যেমন দুনিয়ার জীবনকে ধ্বংস করে দেবে একইসাথে আখেরাতকেও শেষ করে দেবে। এই যে ইসলাম, কুরআন এবং আল্লাহ সম্পর্কে একটা পরিপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীপোষণ করা, আল্লাহ পাকের সব নির্দেশকে সেইভাবে উপলব্ধি করা এবং নিজের মধ্যে ধারণ করা- এটি ছিল ইমাম খোমেনী (র.) এর অনন্য দৃষ্টান্ত। শুধু মাত্র ইমাম খোমেনীর পক্ষেই এটি সম্ভব ছিল। যে কারণে তিনি ইতিহাসের পাতায় অনন্য ব্যক্তিত্ব ও আদর্শের অধিকারী। ইসলামের ইতিহাসের পাতা উল্টালে হয়তো আরো অনেক ব্যক্তিত্ব পাওয়া যাবে তবে তারা একেক জন একেক দিকের দিকপাল ছিলেন। তবে ইমাম খোমেনীর মতো সব দিকের আদর্শ দিকপাল অন্য কেউ ছিলেন না। তিনি তার চিন্তা ও দর্শনকে কাজে পরিণত করেছেন। এতদৃঢ় সংকল্পের অধিকারী অন্য কেউ ছিলেন না। রেডিও তেহরান: আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, সাম্রাজ্যাবাদী শক্তি ও তাদের দালালরা শিয়া ও সুন্নী মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। তাদের ষড়যন্ত্রের কারণে প্রায় প্রতিদিনই শিয়া মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে। তো, সাম্রাজ্যবাদীদের এ ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় এবং মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় ইমাম খোমেনী কি অবদান রেখে গেছেন? ফরিদ উদ্দিন খান: দেখুন সাম্রাজ্যবাদী বা উপনিবেশবাদী শক্তিগুলোই কেবল শিয়া-সুন্নীর বিরোধ ও দ্বন্দ্বকে জিইয়ে রেখেছে তেমনটি নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে সব ধরণের শয়তানি শক্তি ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাজতন্ত্রের নামে বা অন্য কোনো নামে যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই শিয়া-সুন্নিতে দ্বন্দ্ব বাধানোর ষড়যন্ত্র করেছে। এমনকি শিয়াতে শিয়াতে, সুন্নিতে সুন্নিতে দ্বন্দ্ব বাধিয়ে তাদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টির গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়েছে প্রতিমূহুর্তে। তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে শয়তানি কর্মকাণ্ডকে টিকিয়ে রাখা। জনগণের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করে রাখা, অসচেতন করে রাখা এবং তাদের দুরভিসন্ধিগুলোর যাতে তারা মোকাবেলা করতে না পারে সে চেষ্টা করা। শয়তানি শক্তির এই চেষ্টা সব সময় ছিল এবং বর্তমানেও আছে। বিশেষ করে ইরানে ইসলামী বিপ্লব সফল হওয়ার পর থেকে শয়তানি শক্তির এই চেষ্টা সারা বিশ্বব্যাপী আবার নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। শুধু তাই নয় সেই অপশক্তিগুলো তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে। আর শয়তানি শক্তির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে হযরত ইমাম খোমেনী(র.) প্রথম থেকেই খুবই সজাগ ও সচেতন ছিলেন। তিনি শিয়া-সুন্নির ঐক্যের ব্যাপারে সবসময় বলে এসেছেন। ইসলামী বিপ্লবের পর পরই ইমাম খোমেনী(র.) প্রথম যে যে হজবাণী দিয়েছিলেন-সেখানে শিয়া সুন্নীর ঐক্যের বিষয়টি খুবই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন। আমার খুব স্পষ্ট মনে আছে- সে সময় তেহরানে কম্পিউটারে বাংলা টাইপের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। আমরা তখন ইমাম খোমেনীর সেই হজবাণী বাংলায় অনুবাদ করে হাতে লিখে 'জমহুরি' ইসলামী পত্রিকায় ছেপেছিলাম। সেই হজবাণীতে ইমাম খোমেনী(র.) নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, হজে যারা ইমাম থাকবে তাদের পেছনে সবাইকে নামাজ পড়তে হবে। সেখানে শিয়া সুন্নি বলে কোনো রকম পার্থক্য করা যাবে না। শিয়া-সু্ন্নি ভাই হিসেবে সেখানে চলতে হবে। তাছাড়া ইসলামী ঐক্য সপ্তাহার ঘোষণা দিলেন। পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে রাসূল (সা.) পবিত্র জন্ম দিন। সুন্নিদের মতে ১২ ই রবিউল আউয়াল রাসূলে পাক (সা.) জন্মদিন। অন্যদিকে শিয়া মতবাদের বেশিরভাগের মতে ১৭ ই রবিউল আউয়াল তাঁর জন্মদিন। ইমাম খোমেনী (র.) ১২ ই রবিউল আউয়াল থেকে ১৭ ই রবিউল আউয়াল পর্যন্ত এই দিনগুলোকে তিনি ইসলামী উম্মাহর ঐক্য সপ্তা হিসেবে পালনের ঘোষণা দিলেন। তিনি শিয়া-সুন্নির মিলনের জন্য এই ঐক্য সপ্তাহ উদযাপনের কথা বললেন। আর ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর ইমাম খোমেনী(র.) এর ঘোষণার সময় থেকে এই ঐক্য সপ্তাহ পালনের মাধ্যমে ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে। সেখান থেকে শুরু করে প্রতিবছর ইরানে খুব বড় বড় সম্মেলন হয়েছে। শুধু ইরানে নয়- সারাবিশ্বেও মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যের জন্য 'ঐক্য সপ্তাহ' পালনে সম্মেলনের আয়োজন করেছে ইরান। মুসলমানদের মধ্যে যেন ফেরকাবাজি এবং মাজাহাবি দ্বন্দ্ব না থাকে সেজন্য এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তবে শয়তানি শক্তিগুলোও বসে নেই। তারাও মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করার জন্য নানারকম ষড়যন্ত্র করছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, পাকিস্তান, ইরাক ও সিরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এ ধরণের ষড়যন্ত্র চলছে এবং নানা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছে। রাজতান্ত্রিক প্রতিক্রিয়াশীল পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো সহযোগি হয়ে এতে ইন্ধন যোগাচ্ছে। শয়তানি শক্তিগুলো মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে সত্যিকারার্থে যারা মুসলমান ও ঈমানদার তাদেরকে এর বিরুদ্ধে চেষ্টা চালাতে হবে। ইমাম খোমেনী(র.) যে কথা বলেছেন যে, শিয়া-সুন্নীদের মধ্যে যারা দ্বন্দ্ব ও অনৈক্যের সৃষ্টি করে- তারা শিয়াও নয় সুন্নীও নয়, তারা প্রকৃতপক্ষে খান্নাস বা শয়তান। আর এই খান্নাসদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদেরকে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। তাছাড়া এই শয়তানদের সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। কখনও কখনও হয়তো ছোটো-খাটো বিষয়ে শিয়া-সুন্নিদের মধ্যে বা মাজহাবগুলোর মধ্যে গরমিল থাকতে পারে। যেমনটি একটি ঘরের মধ্যে ভাইয়ে-ভাইয়ে বা ভাই-বোনদের মধ্যে মতামতের ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে সেগুলো খুব বড় কোনো ব্যাপার নয়। ইসলামের যে মূলনীতি সেখানে আমাদের ঐক্য রয়েছে এবং আমরা একই জিনিষ বিশ্বাস করি। ফলে ইসলামের সামগ্রিক বিষয়ের ভিত্তিতে শিয়া-সুন্নী এক থাকতে হবে, এক হতে হবে। ইমাম খোমেনী(র.)সহ ইরানের ইসলামী বিপ্লবের অন্যান্য নেতারা এ ব্যাপারে বারবার আহবান জানিয়েছেন এবং উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ইরানের বর্তমান রাহাবার আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীসহ অন্যান্য নেতারা ইসলামী ঐক্যের ব্যাপারে ফতোয়া দিয়েছেন। তাদের সেসব ফতোয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়গুলোকে আমাদের অনুসরণ করতে হবে এবং সামনে রাখতে হবে। আমরা আশা করব ইরানের এই উদ্যোগ ইসলামের উম্মতের কল্যাণের জন্য। আর এর ফায়দা সারা বিশ্ববাসী পেতে পারে যদি আমরা সেই ঐক্য বজায় রাখতে পারি। রেডিও তেহরান: সবশেষে জানতে চাইব-ইমাম খোমেনীর ব্যক্তিত্ব ও তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের কোন দিকটি আপনাকে বেশি আকৃষ্ট করেছে? ফরিদ উদ্দিন খান: ইমাম খোমেনী (র.) আর ব্যক্তিত্ব ও তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের দুটো প্রধান দিক আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে। প্রথমত হচ্ছে তাঁর আধ্যাত্মিকতা। আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণভাবে যে আত্মসমর্পন করা, আল্লাহকে জানা এবং আল্লাহর মারেফাতের ব্যাপারে ইমাম খোমেনী ছিলেন আপোষহীন। তাছাড়া রাসূল (সা.) যে ইসলাম প্রচার করে গেছেন সেই ইসলামকে বাস্তবায়নে নিজের জীবন বাজি রেখে আপোষহীনভাবে তিনি সংগ্রাম করেছেন। তিনি যে ইসলামী নীতি ও দর্শনে বিশ্বাস করতেন, যে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিশ্বাস করতেন সে ব্যাপারে তিনি ছিলেন অনড়, অটল ও অবিচল। তাঁকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। নির্বাসনের আগে ইমামকে জেলে বন্দি করে রাখা হয়। তারঁ অনুসারী এবং ছাত্রদের হাজারে হাজারে হত্যা করা হয়েছে। তিনি যখন নির্বাসনে ছিলেন তখন তাঁর পরিবারের ওপর জুলুম ও অত্যাচার করা হয়েছে। তার বড় সন্তানকে শহীদ করা হয়েছে। এতসব বিষয়কেও তিনি মোটেই তোয়াক্কা করেন নি। তিনি সবসময় জনগণের স্বার্থ, জনগণের কল্যাণ এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং কষ্ট সয়েছেন। তবে তিনি অন্যদের মতো শ্লোগানভিত্তিক বা দাবি ভিত্তিক যে আন্দোলন সেইভাবে ইসলামী রাষ্ট্রের ঘোষণা দেন নি বা আন্দোলন করেন নি। তিনি জনগণের সঙ্গে থেকে শয়তানি বা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। তাগুতি শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অনন্য শক্তি ছিল ইমাম খোমেনী (র)'র। তিনি ছিলেন আপোষহীন। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের লোভনীয় আকর্ষণগুলো ইমামকে আকৃষ্ট করতে পারেন নি। তিনি নো ইস্ট, নো ওয়েস্ট- ইসলাম ইজ দি বেস্ট এই শ্লোগানের ভিত্তিতে এগিয়েছেন। তিনি বলেছেন আমরা একমাত্র ইসলামকে নিয়ে থাকব। আমরা কারো ওপর নির্ভর করব না আমাদের নির্ভরতা একমাত্র আল্লাহর ওপর। ইমাম খোমেনী(র.) এই আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক দিক দুটো আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে। আমি রেডিও তেহরানকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি-ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) এর মৃত্যু বার্ষিকীতে আমাকে কথা বলতে দেয়ার জন্য। আমি এ প্রসঙ্গে আরো একটু বলতে চাই আর সেটি হচ্ছে- মহান ইমাম খোমেনী(র.) কে অনেক কাছ থেকে দেখার ও জানার সুযোগ আল্লাহ পাক আমাকে দিয়েছিলেন। এমনকি পবিত্র ধর্মনগরী কোমে মহান ইমামের সুরাত মুবারকে চুমু দেওয়ারও সৌভাগ্য আমার হয়েছিল- আমার প্রতি এটাও আল্লাহ পাকের অশেষ রহমত। সেই সব ঘটনাগুলো এখনও আমাকে খুবই উজ্জীবিত রাখে। ইমাম খোমেনী (র.)এ যতদিন পর্যন্ত জীবিত ছিলেন তখন আমরা চেষ্টা করেছি প্রেম নিয়ে কাজ করার। আর সেই সুযোগও আল্লাহ পাক আমাকে দিয়েছিলেন। আর সেজন্য আমরা আল্লাহাতায়ালার কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া জানাই। আমরা যেন ইমাম খোমেনীর নির্দেশিত পথে প্রকৃত ইসলামের পথে থাকতে পারি। ইরানের জনগণ এবং ইরানের নেতারা যেন তাদের বিজয় পতাকাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন এবং বিশ্ববাসীকে সত্যের পথ দেখাতে পারেন সেই কামনা করি। রেডিও তেহরানের বাংলা অনুষ্ঠানও যেন এই পথে সব সময় শরীক থাকতে পারে এবং সেই তৌফিক পায় মন থেকে সেই কামনাও করি। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৭-০৭-০১৪:
Link copied!