AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

চলনবিলের একফসলী জমি বহুফসলীতে রূপান্তরে


Ekushey Sangbad

১১:৫৪ এএম, জুলাই ১৭, ২০১৪
চলনবিলের একফসলী জমি বহুফসলীতে রূপান্তরে

একুশে সংবাদ ডেস্ক : চলনবিলের শাহজাদপুর উপজেলার রাউতারা থেকে তাড়াশ উপজেলার নিমাইচড়া পর্যন্ত মাত্র ৫৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধ স্থায়ীভাবে নির্মাণ ও সংস্কারের অভাবে এ অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক বিপ্লব মারাত্বকভাবে বাধাগ্রস্থ্য হচ্ছে। স্থায়ীভাবে ওই বাঁধটি নির্মান বা সংস্কার না করায় প্রতি বছর বন্যার পানির প্রবল তোড়ে বাধটি ভেঙ্গে যাওয়ায় সরকারের প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যাচ্ছে। অথচ মাত্র ৫৪ কিলোমিটার ওই বাঁধ নির্মান ও সংস্কারের মাধ্যমে স্থায়ীকরন করা হলে শাহজাদপুরসহ চলনবিলের ৪ লাখ ২২ হাজার ৫শ’৬০ হেক্টর এক ফসলী আবাদী জমিত তিন ফলসীতে উপনীত হতো। এতে বৃহত্তর এ অঞ্চলে ১২ মাসই বহু ধরনের ফসল উৎপাদন সম্ভব হতো যা কৃষিনীর্ভর এ অঞ্চলের প্রায় অর্ধকোটির অধিক জনগোষ্ঠির কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটানোর মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করতো। গত ২৪ ফেব্র“য়ারী চলনবিলের শাহজাদপুর অংশের বি¯তৃর্ণ বাথান এলাকা পরিদর্শনকালে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি বৃহত্তর চলনবিল এলাকার কৃষি সেক্টরে বিপ্লবের জন্য রাউতারা-নিমাইচড়া বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধ ও রাউতারা স্লুইটগেট জরুরী ভিত্তিতে স্থায়ীভাবে নির্মাণের গুরুত্ব অনুধাবন করে বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে গুরুত্বসহকারে অবহিত করার আশ্বাস প্রদান করেন। এছাড়া বাধটি স্থায়ীভাবে নির্মাণে তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রীকেও সরেজমিন নিয়ে আসার আশ্বাস প্রদান করেন। মিল্কভিটার চেয়ারম্যান হাসিব খান তরুন জানান,,‘অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ ওই বাধটি স্থায়ীভাবে নির্মিত হলে বৃহত্তর চলনবিলের লাখ লাখ কৃষক এক ফসলী জমিতে সারাবছরই বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করতে পারবে। একফসলী জমি উপনীত হবে তিন ফসলী জমিতে।এতে এ অঞ্চলের প্রায় অর্ধকোটি জনগোষ্ঠি অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে যা জাতীয় অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করতে নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জানাযায়,‘ বাথান এলাকার জমি প্রায় ৬ মাস পানির নীচে থাকে। এটি বৃহত্তর সমবায়ীদের জন্য একটি বিরাট সমস্যা। এ সমস্যা উত্তরণে বৃহত্তর চলনবিল অঞ্চলের বৃহৎ জনগোষ্ঠির কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে রাউতারা এলাকায় একটি স্লুইচগেট ও রাউতারা-নিমাইচড়া বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধ স্থায়ীভাবে নির্মাণ অতীব জররী হয়ে পড়েছে।’ জানা গেছে,চলনবিল এলাকার কৃষিখাতের উন্নয়নে এক ফসলী লাখ লাখ হেক্টর চাষযোগ্য জমিতে বহু ফসল উৎপাদনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড গত ১৯৭৭ সালে ৪৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যায়ে শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ীস্থ মিল্কভিটা কারখানার পশ্চিম ও বড়াল নদীর উত্তর পার্শ্ব থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার নিমাইচড়া এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৫৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মানকাজ শুরু করে। ওই বাঁধটি নির্মানের উদ্দেশ্য ছিল বিশাল চলনবিল এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রন,পানি নিষ্কাষন ও সেঁচ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ১২ মাসেই এক ফসলের পরিবর্তে অধিক ফসল উৎপাদন করা।ওই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য বাঘাবাড়ী মিল্কভিটা কারখানা থেকে তাড়াশের নিমাইচড়া পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মানের পাশাপাশি বিশাল চলনবিল এলাকার পানি নিষ্কাষনের জন্য রাউতারা এলাকায় একটি স্লুইচ গেট ও বিভিন্ন স্থানে ২৪টি ফার্ম ইনলেট নির্মান করা হয়। কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ওই জনগুরুত্বপূর্ণ বাঁধটি নির্মাণের পর থেকেই রাউতারা স্লুইচগেটের পশ্চিম অংশসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানির প্রবল তোড়ে প্রতি বছর ভেঙ্গে বন্যার পানি প্রবেশ করে লাখ লাখ হেক্টর আবাদী জমিতে রোপিত বিভিন্ন ধরনের ফসলের মারাত্বক ক্ষতিসাধন করে।এছাড়া ওই বাঁধের অভ্যা—রে শাহজাদপুরের বাথান এলাকায় লালন পালন করা লাখ লাখ গবাদীপশু ও লাখ লাখ হেক্টর আবাদী জমিতে রোপিত ইরি-বোরো ধান রক্ষার্থে প্রতি বছর সাময়িকভাবে রিং বাঁধ নির্মাণ করা হয়।প্রতি বছরই ওই রিং বাঁধ ভেঙ্গে একদিকে যেমন ফসল তলিয়ে কৃষকের কোটি কোটি টাকা লোকসান হতে থাকে,অন্যদিকে রিং বাঁধ নির্মান ও সংস্কারের নামে প্রতি বছর পাউবো এর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পকেট ভারী হয়ে থাকে। ফলশ্র“তিতে,প্রকৃত অর্থে ওই রিং বাঁধটি চলনবিল অঞ্চলের লাখ লাখ কৃষকের কোন উপকারেই আসছে না। ওই রিং বাঁধটি প্রতি বছর ভেঙ্গে যাওয়ায় বিস্তৃর্ণ চলনবিলে প্রবেশ করা বন্যার পানি নামতে অনেক বিলম্বিত হয়।ফলে শাহজাদপুরসহ চলনবিলের ৪ লাখ ২২ হাজার ৫শ’৬০ হেক্টর আবাদী জমিতে একটি ফসলের অধিক ফসল উৎপাদন করতে পারছে না কৃষকেরা।অথচ আধুনিক পদ্ধতিতে চলনবিল এলাকার আবাদী জমিকে বন্যার পানি থেকে রক্ষায় ওই বাঁধটি স্থায়ীভাবে নির্মান-সংস্কার করা হলে এ এলাকার প্রায় অর্ধকোটি জনগোষ্ঠির কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হতো।পুরো প্রকল্পটি স্থায়ীভাবে বাস্তবায়ন করা হলে প্রতি বছর রিং বাঁধ মেরামতের নামে কোটি কোটি সরকারি অর্থের অপচয় রোধ হতো। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২শ’ ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে চলনবিলের উন্নয়নে ‘চলনবিল সমন্বিত পানিসম্পদ ব্যাবস্থাপনা ও বিল-হালট উন্নয়ন’ নামক বহুমূখী উন্নয়নের পরিকল্পনার জন্য চারটি সংস্থার জরিপের ভিত্তিতে পাউবো একটি পকল্পর প্রস্তাবনা তৈরি করে।এজন্য,রাজশাহী,নাটোর,নওগাঁ,বগুড়া,সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলায় ব্যাপক জরিপ চালানো হয়।পাউবো,বিইটিএস,ডিপিএসসি, ইপিসি ও ক্রান্তি এ্যাসোসিয়েট যৌথভাবে ওই জরিপ চালায়।ওই জরিপ সূত্রে জানা গেছে,চলনবিলের মোট এলাকা ৫ লাখ ৬৬ হাজার ১শ’ ৪৬ হেক্টর।তন্মদ্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনায় পড়েছে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৫২ হেক্টর। সেঁচ সুবিধার আওতায় রয়েছে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৭শ’ ৫১ হেক্টর জমি।চলনবিলে রয়েছে করতোয়া,বড়াল,নন্দকুজা,বেশানী,আত্রাই,গুমানী,গুর,ফকিরনী,শিববারনই, নাগর,ছোট যমুনা,মুসাখান,নারদ ও গদাই নামের বেশকিছু নদনদী।বর্ষাকালে মাছের বিচরণ ক্ষেত্র ২ লাখ ৯হাজার ৩’শ ১৪ হেক্টর এলাকা।মাছ সংগৃহিত হচ্ছে ৬৫হাজার ৬শ’ চোদ্দ টন।এ অঞ্চলে ৫২ লাখ ৮৪ হাজার নারী পুরুষ শিশু কিশোর বসবাস করছে। চলনবিলাঞ্চলের প্রায় অর্ধকোটি নারী পুরুষের সিংহভাগই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। প্রতি বছর বন্যার পানির সাথে পলিমাটি জমে চলনবিলের জলরাশীর বিস্তৃতি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ায় ১৯০৯ সালে চলনবিল অঞ্চলকে আবাদযোগ্য করে গড়ে তুলতে ইতিপূর্বে নানা পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছিল।এ অঞ্চলে গৃহিত পরিকল্পনার আলোকে পাবলিক ওর্য়াকস্ ডিপার্টমেন্ট পৃথক চলনবিল সাব ডিভিশন গঠন করে।এরপর থেকে চলনবিলে বহুমূখী উন্নয়নের পরিকল্পনা করা হলেও আজও বাধটি স্থায়ীভাবে নির্মাণ না করায় কৃষির ওপর নীর্ভরশীল এ অঞ্চলবাসীর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হচ্ছে না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চলনবিলাঞ্চলকে বন্যার হাত থেকে রক্ষার জন্য ‘বাঘাবাড়ী-নিমাইচরা বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ’ নির্মানের নির্দেশ দিয়েছিলেন।পরবর্তীতে এ অঞ্চলের উন্নয়নে ক্ষমতার পালা বদলে পাউবো ও চারটি সংস্থার জরিপকৃত ও প্রস্তাবিত বিভিন্ন প্রকল্প ফাইলবন্দী হয়ে পড়ে।ফলে ওই প্রস্তাব ভেস্তে যাওয়ায় এ অঞ্চলের চাষযোগ্য আবাদী ৪ লাখ ২২ হাজার ৫শ’৬০ হেক্টর ফসলি জমিতে বছরে একবার ইরি-বোরোর চাষ করা হয়। প্রতি বছর বন্যার পানির প্রবল চাপে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে সে ফসলও ব্যাপক ক্ষতি হয়।বন্যার পানিতে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকের পড়ে মাথায় হাত।তাদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়। অভিজ্ঞ মহলের মতে, যেমন করে ‘পাবনা সেঁচ প্রকল্প’র মাধ্যমে পাবনা জেলার ইছামতি নদীতে সেঁচ খাল হিসাবে ব্যাবহার করে স্লুইচ গেটের মাধ্যমে বন্যার পানিকে নিয়ন্ত্রন ও পাম্পিং করে বছরের ১২ মাসই বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ করায় ওই এলাকার কৃষকদের ভাগ্য দ্রুতগতিতে বদলে গেছে। তেমনি মাত্র ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মাণপূর্বক চলনবিলাঞ্চলের পাশ দিয়ে ও অভ্যান্তরে প্রবাহিত নদীগুলোকে সেঁচখাল হিসাবে ব্যবহার করে বন্যার পানি নিয়ন্ত্রনের সুব্যবস্থা গ্রহন করা হলে এ অঞ্চলে ১২ মাসই বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে বৃহত্তর চলনবিলাঞ্চলের প্রায় অর্ধকোটি জনগোষ্টির ভাগ্যোন্নয়ন সম্ভব যা জাতীয় অর্থনীতিকেও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
Link copied!