AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

‘খুবই ছিমছাম, পাখির মত মৃদুভাষী নারীর মতই ছিলেন’ গর্ডিমার


Ekushey Sangbad

০৬:৫৯ এএম, জুলাই ১৯, ২০১৪
‘খুবই ছিমছাম, পাখির মত মৃদুভাষী নারীর মতই ছিলেন’ গর্ডিমার

একুশে সংবাদ : দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিশ্বের বর্ণবাদবিরোধী সোচ্চার যোদ্ধাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নাদিন গর্ডিমার। বর্ণবাদ লাঞ্ছিত দক্ষিণ আফ্রিকার জীবনকে সাহিত্যে অনন্যভাবে রূপায়িত করেন এই অসামান্য নারী। গর্ডিমার তার উপন্যাসে সে সমময়কার দক্ষিণ আফ্রিকার স্বৈরাচারী শাসন-নির্যাতন ও তার বিরুদ্ধে সংগ্রামী মানুষের কর্মকাণ্ডের একটি নিপুণ খণ্ডচিত্র তুলে ধরে দুনিয়াব্যাপী আলোচিত হন। বর্ণবাদ কেন্দ্রিক ও বর্ণবাদ-পরবর্তী সমাজে মানবজীবনের সমস্যা ও শঙ্কাগুলোকে তিনি সাহিত্যকর্মের উপজীব্য করেছিলেন। ১৯২৩ সালের ২০ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েটেনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। নাদিন গর্ডিমার ছিলেন ইউরোপ থেকে অভিবাসিত এক ইহুদি পরিবারের মেয়ে। ১৯৭৪ সালে দ্য ‌‌‌কনজারভেশনিস্ট’ উপন্যাসের জন্য তিনি বুকার পুরস্কার পান। ১৯৯১ সালে গর্ডিমার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। নোবেল কমিটি তাকে 'মহৎ ও মহাকাব্যিক উপন্যাস রচয়িতা' বলে আখ্যায়িত করে। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ আমলের সেন্সরশিপ ব্যবস্থায় তার তিনটি বই নিষিদ্ধ হয়। প্রথমটি ‘এ ওয়ার্ল্ড অব স্ট্রেঞ্জার্স,’ জোহানেসবার্গে ১৯৫০-এর দশকে এক অরাজনৈতিক ব্রিটিশ নাগরিকের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের বন্ধুত্বের গল্প। নিষিদ্ধ হয় ১৯৬৬-র ‘দ্য লেট বুর্জোয়া ওয়ার্ল্ড’ এবং ১৯৭৯-র ‘বার্গার্স ডটার।’ শেষ বইটিতে রয়েছে নিজের পরিচয় খুঁজে পেতে মরিয়া এক মহিলার গল্প। আফ্রিকার কালো লেখকদের একটি 'কবিতা সংগ্রহ' প্রকাশ করেছিলেন গর্ডিমার। ওই সংগ্রহটিও নিষিদ্ধ করে তৎকালীন বর্ণবাদী সরকার। শার্পভাইল গণহত্যার পর তিনি তখনকার নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে (এএনসি) যোগ দেন। ১৯৯০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে যে ক'জন ব্যক্তিত্বের সঙ্গে জেলগেটে দেখা করতে চেয়েছিলেন নাদিন গর্ডিমার ছিলেন তাদের একজন। মেধা আর ত্যাগকে ছাড়িয়ে গর্ডিমারের সাহসই মূলত তাকে সর্বজনগ্রাহ্য করে তোলে। তবে ব্যক্তিজীবনে গর্ডিমার খুবই কম কথা বলতেন। মার্কিন লেখিকা জানিকা হুরবিট মন্তব্য করে বলেন, ‘খুবই ছিমছাম, পাখির মত মৃদুভাষী নারীর মতই ছিলেন’ গর্ডিমার। উদারতা, ভদ্রতা আর তার সঙ্গে সংযম ও উচ্চ পরিশ্রম করার মত সক্ষমতা তার মানসিকতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। চল্লিশ বছর বয়সে যখন তিনি লিখতে শুরু করেন সে সময় তার সংবেদশীলতাকেও একটুখানি ঝালিয়ে নেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার একজন লেখক হিসেবে তার চারপাশের পরিস্থিতি, নানান পক্ষ-বিপক্ষ সম্পর্কে আবেগ-উত্তেজনা, আসা আর বাসনা নিয়েও বেশ সচেতন হন গর্ডিমার। আবার চারপাশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করতে পারেননি তিনি। গর্ডিমার যেমন বলেছেন, ‘স্বভাবত আমি কোনো রাজনীতিক নই।’ কিন্তু ‘আমি যেখানেই থাকি না কেন আমার লেখা রাজনীতির প্রতিফলন ঘটাবে নিসন্দেহে।’ নিউ ইয়র্ক টাইমস এক নিবন্ধে এভাবেই গার্ডিমারকে উদ্ধৃত করেছেন। শুধু রাজনীতিই নয়, শিল্প আর মানবিক সংবেদনশীলতাকে আঘাত করে সমাজ ও সংস্কৃতির নিগড়কেও তিনি তুলে ধরেছেন। ১৪ জুলাই সোমবার তার মৃত্যুর পর নিউ ইয়র্ক টাইমস গার্ডিমারকে স্মরণ করতে গিয়ে মন্তব্য করে বলেছে, ‘সামাজিক ইতিহাস এমনভাবে এগিয়ে গেছে তার চিত্রিত চরিত্রগুলোর মধ্য দিয়ে যেগুলো মূলত সাধারণ মানুষের ভেতের বিপুলভাবে প্রবাহিত হয়েছে। তবে কোনো কোনো সমালোচক মনে করেন, তার গল্পে ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক মুক্তির বিষয় উঠে এসেছে— যেটা তার দৃশ্যমান লড়াইয়েও প্রতিফলিত হয়েছে।’ ১৯৯৪-এ বর্ণবাদবিরোধী লড়াইয়ে ইতি টানেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা। সেই আন্দোলনের শরিক হয়েই গর্ডিমার যোগ দেন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে। ম্যান্ডেলার মুক্তির জন্য লড়াই শুরু তখন থেকেই। আর শুরু তাদের গভীর মিত্রতারও। পরিবারের বিবৃতি অনুযায়ী, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার সংস্কৃতি, মানুষ এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত করার যে নিরন্তর চেষ্টা, তার প্রতি অসম্ভব দরদী ছিলেন গর্ডিমার।’ তার বাবা কারাগারে মৃত্যুবরণ করে রাজনৈতিক নায়ক হয়ে যান। তার পরেই শুরু তাঁর লড়াই। গর্ডিমার সরব ছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জেকব জুমার প্রস্তাবিত এক আইনের বিরুদ্ধে। যাতে বলা হয়, যে তথ্য সরকারের কাছে স্পর্শকাতর বলে মনে হবে, তা ছাপা যাবে না। এর বিরোধিতায় গার্ডিমার বলেন, ‘ফের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে, এটা ভাবা যায় না। মানুষ নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেতে কী লড়াইটাই না করেছে।’ শ্বেতাঙ্গ হয়েও গর্ডিমার নিজের ‘আফ্রিকান’ ঐতিহ্য সম্পর্কে গর্বিত ছিলেন। প্রাণের শহর জোহানেসবার্গেই নিজেকে খুঁজে পেতেন। বলতেন, ‘অন্য শহরে কালো বন্ধুদের কাছে আমি নেহাতই এক ইউরোপীয়। শুধু এখানেই আমি একজন আফ্রিকান। শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকান।’ প্যারিস রিভিউ ১৯৮৬ এবং ৮৯-এ গার্ডিমারের সাহিত্যকর্ম নিয়ে খুবই ভাল কাজ করে। তাতে গর্ডিমারকে নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। ছোটগল্প এবং উপন্যাস দুই ক্ষেত্রেই সিদ্ধহস্ত ছিলেন গার্ডিমার। তার সৃষ্টিতে ঘুরে ফিরে এসেছে বর্ণবৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, নির্বাসন এবং বিচ্ছিন্নতার প্রসঙ্গ। তার চরিত্ররা কালো ও সাদা, দুই দুনিয়ারই বাসিন্দা। বর্ণবৈষম্যে টুকরো হয়ে যাওয়া সমাজে ভালবাসা, ঘৃণা এবং বন্ধুত্বের গল্প বলেছেন গর্ডিমার। শ্বেতাঙ্গ লেখিকার কলমে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের সেইসব গল্প সাদা-কালো পৃথিবীটা থেকে উত্তরণের দিশা খুঁজত। গর্ডিমার তাঁর— ‌‌আর্ট অব ফিকশন ইন্টারভউ’র শেষের দিকে নিজের সৃষ্টিশীল কর্ম নিয়ে মন্তব্য করেছেন। গর্ডিমার বলেন, ‘একটি উপন্যাস, কিংবা গল্প সম্পর্কে সাধারণভাবে আমি কি উপলব্ধি করি সে সম্পর্কে কিছু বলতে চাই’। কাফকা থেকে ধার করে নিজের কর্ম সম্পর্কে মূল্যায়ন করে তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে জমে থাকা বরফ সমুদ্র ভাঙতে বই হতে পারে একটি কুঠার।’ গর্ডিমার বিশ্বজুড়ে খ্যাত ছিলেন মূলত তার উপন্যাস ও ছোটগল্পের জন্য। বিশ্বের ৪০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে তার বই। ত্রিশটির অধিক বই রয়েছে তাঁর। এর মধ্যে উপন্যাস ১৫টি। সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সফল উপন্যাসগুলোর মধ্যে— বার্গার্স ডটার(১৯৭৯), জুলাই'স পিপল(১৯৮১), মাই সানস স্টোরি(১৯৯০), দি লাইং ডেইজ (১৯৫৩), আ ওয়ার্ল্ড অব স্ট্রেঞ্জার্স(১৯৫৮), দি কনজার্ভেশনিস্ট(১৯৭৪), আ স্পোর্ট অব নেচার, দি হাউজ গান(১৯৯৮), দি পিকআপ(২০০১), নো টাইম লাইক দ্য প্রেজেন্ট(২০১২) ইত্যাদি। এছাড়া তিনি প্রচুর ছোট গল্প, নাটক, ফিকশন ও প্রবন্ধও লিখেছেন। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৯-০৭-০১৪:
Link copied!