সাইনোসাইটিস হওয়ার কারণ ও চিকিৎসা
একুশে সংবাদ : সাইনোসাইটিস অতি পরিচিত একটি সমস্যা। মুখমন্ডল তথা মাখার খুলির চারদিকে চার জোড়া বায়ুভর্তি কুঠুরি থাকে। এ কুঠুরিগুলোকেই বলা হয় সাইনাস। সাইনাসগুলোর বিভিন্ন নাম আছে। সাইনাসের অভ্যন্তরীণ আবরণ হিসেবে থাকে এক ধরনের ঝিল্লি। এ ঝিলি্লর প্রদাহকেই বলা হয় সাইনোসাইটিস। সাইনোসাইটিস সাধারণত ঠান্ডা ও ভেজা পরিবেশ, ধোঁয়া, ধুলোবালি ইত্যাদি পরিবেশ সাইনোসাইটস হওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ হিসেবে বিবেচিত। মাথার খুলিতে অবস্থিত এ সাইনাসের বিভিন্ন কাজ রয়েছে। বলা হয়ে থাকে এসব সাইনাস নাকের মধ্যস্থিত বাতাসকে উষ্ণ ও আর্দ্র রাখে। মাথাকে হালকা রাখে এবং খুলির বিভিন্ন অঙ্গকে রক্ষা করে।
সাইনোসাইসের কারণ : সাইনোসাইটিস অনেক কারণে হয়ে থাকে। সাধারণভাবে যেসব কারণে হতে পারে সেগুলো হচ্ছে-নাকের ইনফেকশন, নাকের প্যাক, নাকের বাঁকা হাড়, নাকের মাংস ফুলে বড় হয়ে যাওয়া (হাইপারট্রফাইড ইনফিরিয়র টারবিনেট), নাকের পলিপ ইত্যাদি। দূষিত পানি কিংবা উচ্চমাত্রার ক্লোরিনযুক্ত পানিতে গোসল করলে পানি সাইনাসে প্রবেশ করে ইনফেকশন করতে পারে। আবার যে কোনো আঘাতের কারণে সাইনাস ছিদ্র হয়ে উন্মুক্ত হলে ইনফেকশন হতে পারে। দাঁতের ইনফেকশন মাড়ির একদম শেষ প্রান্তের দুটি দাঁত তুলে ফেলার সময় দাঁতের গোড়া দিয়ে সাইনাস উন্মুক্ত হয়ে পড়তে পারে এবং ইনফেকশন হতে পারে।
উপসর্গ : সাইনোসাইটিসের মূল উপসর্গ মাথাব্যথা। এ ব্যথা চোখের নিচে এবং কপালে থাকে।
এছাড়া মুখম-ল ও মাথার বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যথা হতে পারে। কোন সাইনাসে ইনফেকশন হয়েছে সে অনুযায়ী এ ব্যথার অঞ্চল পরিবর্তিত হয়। তবে ব্যথা নাকের গোড়ায়, উপরের চোয়ালের উপরে, চোখের নিচে, কপালে ও মাথার পেছন দিকে যে কোনো স্থানে হতে পারে। ফুলে যেতে পারে চোখের নিচের কিংবা উপরের অংশের পাতা। চিবুক কিছুটা লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে। নাকের ভেতরের পুঁজ একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যাবে। নাকের ভেতরের মাংসগুলো ফোলা থাকতে পারে। নাকের হাড় বাঁকা থাকতে পারে। নাকের পেছনে নাসাগলবিল অঞ্চলে অর্থাৎ আলজিভের পেছন থেকে আঠালো ঘন পুঁজ বেয়ে নেমে যাচ্ছে-এমনটি দেখা যাবে। শারীরিক উপসর্গের মধ্যে রয়েছে- গা ম্যাজম্যাজে ভাব, জ্বর, শরীর ব্যথা ইত্যাদি।
চিকিৎসা : শুধু এক্সে করেই সাইনোসাইটিস সম্পর্কে জানা যায়। সাইনোসাইটিস চিকিৎসার উদ্দেশ্য হচ্ছে নাকের মধ্যে সাইনাসের বহির্গমনের রুদ্ধ পথগুলো খুলে দেয়ার মাধ্যমে সাইনাসের বহির্গমন পথকে সুগম রাখা। সে সঙ্গে সাইনাসের ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ করা। ইনফেকশনজনিত ব্যথা থাকলে তা কমিয়ে আনা। এসব কিছু করার জন্য যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন পড়ে। নাকে বিশেষ ধরনের ড্রপ দিতে হয়, অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেতে হয়। ব্যথার জন্য দেয়া যেত পারে ব্যথানাশক।
হঠাৎ তীব্র কিংবা ক্রনিক বা বারবার হওয়া সাইনোসাইটিস যাই হোক না কেন প্রথমে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করতে হয়। ওষুধে না সারলে অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করতে হয়। এক সময় এ সমস্যার জন্য সাইনাস ওয়াশ করা হতো। এখন যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য সাইনাস ওয়াশের প্রয়োজনীয়তা কমে এসেছে। এছাড়া প্রচলিত সাইনাসের অপারেশনের পরিবর্তে অ্যান্ডোস্কোপিক সার্জারি খুব গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। সবদিক বিবেচনায় কার্যকর ও রোগীর কম ভোগান্তির জন্য ফাংশনাল অ্যান্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখন সাইনোসাইটিস নিয়ে অযথা ভুগতে হয় না। তবে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না নিলে হতে পারে বিভিন্ন জটিলতা। সুতরাং জটিলতা এড়াতে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২০-০৭-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :