AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

'প্রথম গান গেয়ে ৫ টাকা বকশিশ পাই'


Ekushey Sangbad

১০:২২ এএম, জুলাই ২১, ২০১৪
'প্রথম গান গেয়ে ৫ টাকা বকশিশ পাই'

একুশে সংবাদ :কুমার বিশ্বজিত বাংলা গানের কিংবদন্তি। তার অজ¯্র গান রয়েছে কালজয়ী। তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে, তুমি রোজ বিকেলে আমার বাগানে, চন্দনা গো, সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে ইত্যাদি। সিনেমায় শত শত প্লেব্যাকের পাশাপাশি তার একক অ্যালবামের সংখ্যা প্রায় পঁচিশটি। ঐতিহ্যাশ্রয়ী এই শিল্পী মানুষ হিসেবেও যে কত গভীর ও নিবিড় তা অনেকেই জানেন। সারা জীবন খাঁটি শিল্পী জীবন যাপন করে যাচ্ছেন তিনি। ঈদসংখ্যার পাঠকদের সঙ্গে তার সংযোগ ঘটাতে সম্প্রতি ঢাকাটাইমস হাজির হয়েছিল তার উত্তরা এগার নম্বর সেক্টরের বাড়িতে। যেই বাড়ি একাধারে তার স্টুডিও ও বাসস্থান। শৈশব, বেড়ে উঠা, সংগীতের প্রতি টান, স্ট্রাগল, স্মৃতি ও সফলতা ইত্যাদি নিয়ে দোতলায় বসার ঘরের আলো আঁধারিতে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন জাহেদ সরওয়ার। ঢাকাটাইমস : আপনার শৈশব সম্পর্কে কিছু বলুন। কুমার বিশ্বজিত : আসলে আমার শৈশব সম্পর্কে ইতোমধ্যে জেনেছে সবাই। তেমন বলার কিছু নেই। যাই হোক আমার শৈশব কেটেছে সীতাকু-ে। গ্রামের নাম আমিনাবাদ। প্রাইমারি স্কুলে পড়া ওখানেই। আম্মা ছিলেন টিচার। সীতাকু-ে আমার সেভেন পর্যন্ত কেটেছে। এরপর আমরা চট্টগ্রামে চলে আসি। যে সময়টায় আমার জন্ম হয়েছে সে সময় সত্যিকার অর্থে যেটাকে গ্রাম বুঝায় সেই গ্রামের জীবনটা আমি উপভোগ করতে পেরেছি। যেটা হয়ত আজকের প্রজন্ম বুঝতে পারবে না। সেদিক থেকে আমি অনেক বেশি লাকি। জাম্বুরা দিয়ে বল খেলেছি। ঘুঘু পাখি ধরা, মাঠে গিয়ে মটরশুঁটি ভেজে খাওয়া, পকেটে লবণ নিয়ে কাঁচা আম শিকার করা ও হাঁটতে হাঁটতে বা স্কুলের মাঠে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়া, পুকুরে সাঁতার কাটাÑ একেবারেই গ্রাম্য পরিবেশে যা এখন বইয়ের মধ্যেই কেবল সীমাবদ্ধ, সেই জীবনটা আমি পার করে এসেছি। বলব আমার শৈশবটা অনেক সুন্দরভাবে কাটিয়েছি সীতাকু-ে। তো এই-ই আমার শৈশব। সীতাকু- প্রাইমারি স্কুলে যখন ক্লাস ফোরে পড়ি তখন বাংলাদেশের জন্মের সময়। একাত্তরের যুদ্ধের সময় আমরা চলে গেলাম ফেনী সাবরুং বর্ডার দিয়ে, বিলোনিয়া সীমান্ত দিয়ে গিয়ে আমরা ওপারে একটা ক্যাম্পে ছিলাম। ওই ক্যাম্পের নাম ছিল বিদ্যা বাজার ক্যাম্প। ক্যাম্পের জীবন আমার জন্য একটা ঐতিহাসিক । পাশাপাশি অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতাও হলো। বয়স এমন ছিল যে, তখন সবকিছুই বুঝতাম কিন্তু যুদ্ধে যেতে পারছিলাম না। ক্যাম্পের একটি ঘটনা বলি, যেটা অনেকেই জানে না। আমার পিতা ছিল ওই ক্যাম্পের ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে। ক্যাম্প বানানো থেকে শুরু করে সবকিছুই তাকে দেখাশোনা করতে হতো। রেশন ডিস্ট্রিবিউশন সবকিছু ওনার আন্ডারে ছিল। ওনি ভালো স্টেনোগ্রাফার ছিলেন। যুদ্ধের সময় ওনাকে নিয়ে যাওয়া হলো নিউজগুলো কালেক্ট করার জন্য। ইন্ডিয়ান আর্মিরা নিয়ে যেত। ক্যাম্প থেকে কিছু ছেলে যারা ইয়াং ছিল তাদের নিয়ে যুদ্ধের ফ্রন্ট লাইনে দেয়া হতো। ওটার দায়িত্বে ছিলেন আমার বাবা। অনেকে যুদ্ধে গিয়ে মারা যেত। তখন তার পরিবারের লোকজন আমার বাবাকে দোষারোপ করত। বলত তুমি সিলেক্ট না করলে হয়ত আমার ছেলে যুদ্ধে যেত না। আসলে এ ব্যাপারে বাবার কোনো কিছু করার ছিল না। আমরা তখন ইন্ডিয়ার আন্ডারে ছিলাম। ওদের আর্মিরা যা বলত তাই করতে হতো। মুক্তিযোদ্ধারা যখন আসত তখন গানের আসর বসত। আমার মনে আছে প্রথম শরণার্থী শিবিরে গান গেয়ে পাঁচ টাকা পেয়েছিলাম। ঢাকাটাইমস : ওটাই কী ছিল আপনার প্রথম পারফরমেন্স? কুমার বিশ্বজিত : ওটা আসলে আমার প্রথম গান নয়। প্রথম গান আমি চিটাগাংয়ে গাই মুসলিম হলে। তবে ৫ টাকা পাওয়া ওটা আমার জীবনে প্রথম। ওটা স্বাধীন বাংলা বেতারের গান ছিল। তখন মুভমেন্টই ছিল অন্যরকম। আর এমন জায়গায় ছিল ক্যাম্পটা, ফেনী সাবরুং থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা যখন শেল মারত তখন আমাদের ক্যাম্পেই এসে পড়ত। ক্যাম্পে অনেক মানুষ মারাও গেছে। ক্যাম্পে প্রচুর লোক আমাশয় আর ডায়রিয়ায় মারা গেছে। যাহোক ওই ৫ টাকা দিয়ে আমি একটা প্যান্ট কিনেছিলাম, কারণ আমার ছেঁড়া প্যান্ট ছিল। আমার মনে আছে আমি পেছনে হাত দিয়ে গান গেয়েছিলাম। কারণ প্যান্টটা রিপু করা ছিল। তাই একটা প্যান্ট আর দুটি কবুতর কিনেছিলাম। এই হচ্ছে আমার মোটামুটি শৈশবের ঘটনা। আর স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে যখন সীতাকু-ে ফিরি, আমার একটা কুকুর ছিল। দেখলাম আমরা পুরো ফ্যামিলি বাসে যাচ্ছি আর কুকুরটা দৌড়াচ্ছে। দৌড়াতে দৌড়াতে অনেক দূর আসার পর দেখলাম সে মিলিয়ে গেল। আমাদের বাসও চলে এলো গ্রামে। বাসে সারাক্ষণই একই চিন্তা ছিল, কুকুরটা বাঁচবে কি না। যখন বাড়িতে প্রথম পা রাখলাম তখন মনে হলো একটা শত্রু সম্পত্তি। পুরো বাড়ি খালি, যেমন বাড়ির ছাদে টিন নেই, ইট নেই সব খুলে নিয়ে গেছে। বাড়ির উপরে টিন ছিল বাকিটা পাকা ছিল। পুরো বাড়ি খালি থাকলেও বারান্দায় শুধু কুকুরটা আমাকে দেখে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। পরে শুনেছি কুকুরটা বাইরে খেয়ে আসত আর ঘুমাত বাড়িতে এসে। আর এসব কিছু ছিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘটনা অল্প সময়ের মধ্যে তুলে ধরলাম। ঢাকাটাইমস : ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ছিল? কুমার বিশ্বজিত : আমি যখন সীতাকু-ে থাকতাম বাবা তখন চট্টগ্রামে ব্যবসা করতেন। তখন সাপ্তাহিক বন্ধ ছিল রোববার। প্রতি সপ্তাহে বন্ধের সময় Ÿাবা গ্রামের বাড়িতে আসতেন। পুরো সপ্তাহের দুষ্টামি, বাদরামি সবই জমিয়ে রাখত মা বাবার জন্য, আর বলত তোর বাবা আসুক। স্বাভাবিকভাবেই বাবার সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি হলো। সেই দূরত্বটা বাবার মৃত্যুর কিছুদিন আগে, এই তো ’৯০ সালে বাবা মারা গেলেন। কলকাতায় ওপেন হার্ট সার্জারি হলো। আপনি জানেন ওপেন হার্ট সার্জারির পরে রোগীকে হাঁটাতে হয়। তখন আমার কাঁধে ভর করে হাঁটত বাবা। ১৫ দিনের মধ্যেই বাবার সঙ্গে ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেল। ১৫ দিন পরেই আইস সুগারের জন্য অসুস্থ হয়ে তিনি মারা গেলেন। এটা আরেকটা স্মৃতির কথা বললাম। বাবার সঙ্গে দূরত্বটা আমার বরাবরই বেশি ছিল, সেটা ভয়ের কারণে। ঢাকাটাইমস : বাবাকে নিয়ে বিশেষ কোনো স্মৃতি? কুমার বিশ্বজিত : জীবনের বেশিরভাগই সময় তো দুঃখ থাকে মানুষের। সুখ-দুঃখ মিলিয়েই মানুষ বাঁচে। তবে কিছু স্মৃতি আছে যেটা আমার বাবার মৃত্যুর ঘটনার পরে। আমার বাবা চাননি যে, আমি সংগীতে আসি। তখন আসলে এটাকে প্রফেশন হিসেবে নেওয়ার অবস্থা ছিল না। তখনকার দিনে গান-বাজনা করা মানে উচ্ছন্নে যাওয়া। তবে মা চাইতেন যে ওনার একটা ছেলে হয়ত গান-বাজনা নিয়ে থাকুক। মা প্রচ-ভাবে ব্যাকআপ দিয়েছেন ঢাকায় আসার জন্য। ঢাকায় স্যাটেল হওয়ার ব্যাপারে। বাবা পরবর্তী সময়ে এটা মেনে নিয়েছিলেন। দেখলেন যে, বন্ধু-বান্ধবরা বলছে আপনার ছেলে ওরকম এরকম। তখন তিনি খানিকটা গর্ববোধ করতেন। বাবার মৃতদেহটা যখন কলকাতা থেকে আনতে গিয়েছিলাম তখন কলকাতা-চিটাগাং সরাসরি ফ্লাইট হয়নি। ঢাকা হয়ে যেতে হতো। ঢাকায় যখন নামলাম একটা মাইক্রো ঠিক করলাম আমরা। তখন ঢাকা-চিটাগাং রোডে ফেরি ছিল। মাইক্রোতে আমার মা, আমি, আমার চাচা, ফুফি-ফুফা ছিলেন। আমরা ফেরির ওখানে গিয়ে নামলাম, ফেরি আসতে দেরি হচ্ছিল। নামার পরে আস্তে আস্তে একজন-দুইজন করে প্রচুর লোক মানে দুই থেকে আড়াইশ লোক জড়ো হয়ে গেল। সবার মুখে একই কথা, কেমন আছেন। আমি বললাম সঙ্গে আমার বাবার লাশ। ওনারা বলেন একটা ছবি তুলব। ছবি তোলার হিড়িক পড়ে গেল। একটি লোকও বুঝতে চায়নি যে, আমি আমার বাবার লাশ বয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এটা একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা। মা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে সম্মতি দিলেন যে, অসুবিধা নেই, তোর বাবার আত্মা হয়ত শান্তি পাবে। এটাই হয়ত সত্যি। মান্না দের একটা গান আছেÑ শিল্পের জন্যই শিল্পী। শিল্পীদের কোনো ব্যক্তিগত জীবন থাকে না। ওই স্মৃতিটা আমার খুব বেশি মনে পড়ে। ঢাকাটাইমস : আপনারা কয় ভাই-বোন? কুমার বিশ্বজিত : আমরা এক ভাই দুই বোন। এক বোন ঢাকায় থাকে। আরেক বোন মাইগ্রেটেড হয়ে গেছে ইন্ডিয়ায়, যেহেতু তার হাজবেন্ড ওখানে থাকে। ঢাকাটাইমস : ঠিক কখন থেকে গানের প্রতি টান অনুভব করলেন? কুমার বিশ্বজিত : আসলে গানের প্রতি টান আমার যখন সেন্স হয়েছে তখন থেকেই। আমি যেই জায়গায় বড় হয়েছিÑ সীতাকু-ে। সেখানে পূজার ঠাকুরঘরে কীর্তনের আসর হতো আমাদের বাড়িতে। কীর্তনিয়ারা এসে গান করত। আবার চাচা-চাচি, ফুফু সবাই মিলে একটা সাংস্কৃতিক পরিবেশ। এখনও আমি সেটা মনে করি। ফিল্মে দেখি না বৈরাগীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কীর্তন গায় এবং গান গেয়ে তাদের আহারের সংস্থান করে। মেলা হয় সেখানে, বহু বাউল আসে। এই যে একটা সংগীতে বসবাস। আর জায়গাটা হচ্ছে একদিকে পাহাড় আর অন্যদিকে সাগর। আর এই লোকেশনে এমন একটা সাংস্কৃতিক পরিবেশে থাকলে কে শিল্পী হবে না। ঢাকাটাইমস : না সীতাকু-ে অন্য যুবকরা তো শিল্পী হয়নি। হয়ত আপনি বেরিয়ে এসেছেন বলেই সম্ভব হয়েছে? কুমার বিশ্বজিত : সীতাকু- থেকে বেরিয়ে আসাটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো কালচারাল অ্যাকটিভিটিজটা অনেক বেশি ছিল। সেখানে মৃণাল কান্তি বড়াল যিনি আমার টিচার ছিলেন আরও অনেক শিল্পী রেডিওতে তখন গান গাইত। সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে আমরা অনেক বেশি অ্যাকটিভ ছিলাম। এখন আমি জানি না হয়ত নাও হতে পারে। এখন তো অসুরের যুগ, প্রতিযোগিতা করে আসতে হয়। আমার বোনের জন্য যখন টিচার রাখা হয় তখন আমি পাশে বসে থাকতাম। কারণ আমি এত ছোট ছিলাম যে, ওরা ফিল করত ওকে আর কি গানে দিব। টিচার চলে যাওয়ার পর গানগুলো তুলে গাইতাম। গ্রামে হতো কি, টিচারের ঝুলিতে কিন্তু গান কম থাকে। একটা গান দিয়ে এক মাস চালাতে পারলে ওদের বেতনটা হালাল হয়ে যেত। পিক করার পাওয়ারটা আমার খুব বেশি ছিল। আমি গান শুনলেই মুখস্থ করে ফেলতে পারতাম। তখন অনুরোধের আসর হতো এবং পূজায় সে গানগুলো হতো। পূজায় মান্না দে, শ্যামল মিত্র, কিশোর কুমারের গানগুলো হতো। আমি রেডিওতে শুনেই লিখতাম এবং গানগুলো তোলা হয়ে যেত। স্বাভাবিকভাবেই আমার সে পাওয়ারটা বলতে গেলে আগ্রহটা থাকার কারণেই একজন টিচার যাওয়ার পরই আমি সেই গানগুলো গাওয়া শুরু করতাম। এগুলো আমার বয়োজ্যেষ্ঠ যারা আছেন আমার দাদা, মা দাঁড়িয়ে দেখতেন এবং বলতেন আরে সে এগুলো কেমন করে করলো। তখন তারা বললেন ঠিক আছে তুই কালকে থেকে টিচারের কাছে বসবি। বসার পর আমি তো খুচিয়ে খুচিয়ে টিচারের কাছ থেকে লেসন নিতাম। এভাবে আমি ১৫ দিনেই ওনার ভা-ারে থাকা ৪০-৫০টা গান শেষ করে ফেললাম। টিচার আর আসেন না। তখন আমার দাদু বললেন, তুই কি বেয়াদবি করছিস নাকি। টিচার আসেন না কেন। টিচার আবার আমাদের গ্রামের আরেকজনকে গান শেখাতেন। আমার দাদু একবার ওনাকে পেয়ে বললেন, কি ব্যাপার আপনি আমার নাতিকে গান শেখানো বন্ধ করেছেন কেন? তখন ওনি বললেন আপনার নাতিকে শিখাতে হলে আমাকে আবার গান শিখতে হবে। কারণ আমার গানের ভা-ার যা ছিল আপনার নাতি তুলে ফেলেছে। এভাবেই আমার গান গাওয়া শুরু। তবে ঠিক কীভাবে আমি গানে ইনভলব হলাম তা পরিষ্কার নয়। মনে হচ্ছে ৪-৫ বছর বয়স থেকেই শুরু হয়েছে। গান ছাড়া আমার কাছে অন্য কোনো অপশন ছিল না এবং বিশেষ দিনগুলোতে যেমন পূজা পার্বণ, ঈদ উৎসবে সবার বায়না ছিল কাপড়-চোপড়। কিন্তু আমার বায়না কাপড়-চোপড় ছিল না, আমি বলতাম যখনই পার আমাকে একটা গিটার কিনে দিবা আর একটা কি বোর্ড চাই, একটা ড্রাম সেট চাই, তখন ব্যান্ড গড়ার একটা স্বপ্ন ছিল। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে এসে এই স্বপ্নটা আরো দানা বাঁধতে থাকল। ঢাকাটাইমস : কীভাবে জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যমে যুক্ত হলেন? কুমার বিশ্বজিত : ১৯৭৭ সালে এসে প্রথম ব্যান্ড করলাম। আমরা কজন গান করতে থাকলাম। তখন আমার বয়স ১৫। এরপর বিটিভিতে জয়েন করলাম। তখন মফস্বলে কিছু আঞ্চলিক গানের প্রোগ্রাম হতো। ওখানে গাইতাম। তারপর রেডিওতে আবু সাইয়িদ ভাই বললেন তোমার অডিশন লাগবে না, তুমি এসে নিয়মিত গান গাও। বয়সের দিক দিয়ে ঠিক ম্যাচিউড হইনি কিন্তু আমি রেডিওতে নিয়মিত শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হলাম। ঢাকাটাইমস : এছাড়া অন্য কোথায় কোথায় গান করতেন? কুমার বিশ্বজিত : তারপর আমরা একটা ব্যান্ড করলাম, যেটাতে এখন জেমস আছে সেটা আমারই দেওয়া নাম। বাচ্চু ছিল আমার সঙ্গে, বান্দরবানের মঞ্জুও ছিল। সে মারা গেছে। আমরা আবার ইংলিশ নম্বর ইনস্ট্রুমেন্টালগুলো করতাম। তখন আমাদের অ্যাকটিভিটিজ শুরু হলো। আমরা হোটেলগুলোতে গাইতে লাগলাম। ওখানে শুধু ফরেনাররা থাকত। সেখান থেকে একবার মনে হলো, না এভাবে স্বল্প পরিসরে আর নয়, ঢাকায় যেতে হবে। তখন লাকি (লাকি আখন্দ) ভাই আর হ্যাপির সঙ্গে পরিচয় হলো। ভৌতিক ছবি করতে তারা সেখানে গেল। তখন সারাদিন হ্যাপির (হ্যাপি আখন্দ) সঙ্গে কক্সবাজারে ছিলাম। তার সঙ্গে ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেল, তুই-তোকারি সম্পর্ক। আমার গান সে খুব পছন্দ করল। তখন সে বলল তুই আয় ঢাকায়, আমি হেল্প করব। লাকি ভাইয়ের কম্পোজিশনে চারটি গান করলাম। তখন শাকিলা সরোয়ার ছিলেন বিটিভির পরিচালক। সেখানে বশির ভাই ছিলেন চিত্রকর। বশির ভাই বললেন তোমার গানগুলো এ জায়গায় আছে, এখানে অনেক প্রডিউসার আসে তারা শুনলে তোমার লাভ হবে। ঠিক এক সপ্তার মধ্যে আল মনসুর বললেন তোমাকে আমি ব্রেক দিব না, তোমাকে আমি এক্সেলেটর দিব। ব্রেক দিলে তুমি থেমে যাবা। তুমি কালকে এসে দেখা করো। আমি মাকে বললাম আমি ঢাকায় যাব, হোটেলে থাকতে হবে, টাকা লাগবে। মা বললেন আমি এসব জানি না, তোর বাবাকে বল। মনে আছে আমার মা বাবার টাকা চুরি করে আমাকে দিয়েছিলেন। এলাম ঢাকায়। আসার পরই এটা নিয়ে অনেক হইচই। তখন আমাদের আর্নিং থাকলেও ইচ্ছা ছিল ইনস্ট্রুমেন্ট কিনব। কারণ একেবারেই আনকোরা টাইপের জিনিস নিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম। ঢাকাটাইমস : এই যে বিভিন্ন জায়গায় গান করতেন। ওখান থেকে ইনকাম হতো না? কুমার বিশ্বজিত : তখন আমাদের স্বপ্ন ছিল একটা ড্রাম কেনা, একটা কি বোর্ড কেনা। ওই গান গেয়ে ইনকামের তেমন কিছু হতো না। যা হতো তখন আমরা ৫-৬ জন ছিলাম, সবাই ভাগ করে বঙ্গবাজারে গিয়ে একটা ড্রেস কিনতে পারতাম। ঢাকায় এসে আল মনসুর যুবমেলা করলেন। ওখানে গান গাইলাম ১৯৮১ সালে। তখন নজরে পড়তে থাকলাম সবার। ১৯৮২ তে মনে হলো যে একটি বড় পরিসরে গান করি। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। তখন পুতুলের মতো গানটা করলাম। ’৮২ সালেই চলচ্চিত্রে গান করলাম, প্রথম আলাউদ্দিন আলী ডাকলেন। পাকিস্তানের আলমগীরের সঙ্গে গান করলাম প্রথম। আলমগীরেরও প্রথম বাংলা গান, আমারও প্রথম ফিল্মের গান। ওই ছবির গানগুলো আলমগীরেরই গাওয়ার কথা ছিল। আলমগীর তখন পাকিস্তানে সুপারহিট। আমি গাওয়ার পর সবাই ডিসাইড করল সব গানই আমি করব। তখন থেকেই শুরু হলো। আলাউদ্দিন আমাকে সন্তানের মতো ব্যাকআপ দেওয়া শুরু করলেন। আমি একনাগাড়ে ওনার ৪০০-৫০০ গান গেয়েছি। সেই থেকে আমার প্লেব্যাক করা শুরু, আজ পর্যন্ত চলছে। তারপর আর কিছু বলার নেই, কারণ ’৮২-র পর সবারই জানা। দেখতে দেখতে ৩২ বছর পার হয়ে গেল। ঢাকাটাইমস : এ পর্যন্ত কত গান করেছেন? কুমার বিশ্বজিত : জীবনে কত গান করেছি তার হিসাব আমার কাছে নেই। এসব গণনার মধ্যে আমি নেই। ৩২ বছরের জীবনে ৩২টা গান করতে পেরেছি এইটুকুই যথেষ্ট। আমি কত হাজার গান গাইছি তাতে কিছু আসে যায় না। আমি কি অর্জন করেছি বা কি পুরস্কার পেয়েছি সেটা তো কোনো বিষয় নয়। কারণ কেউ কারো বাসায় এসে এগুলো দেখে না। কিন্তু কোনো সৃষ্টি মানুষের ভালো লাগলে ওটার চেয়ে বড় পুরস্কার আর কিছু নেই। ঢাকাটাইমস : আপনি কি কোথাও জব করেননি তখন? কুমার বিশ্বজিত : আমি কোথায়ও জব করিনি। ’৮২ সালে পুতুলের মতো গান গাওয়ার পর আমার পর পর গানগুলো হিট হতে লাগল। পুতুলের মতোর পর যেমন স্বপ্ন আমার, সংসার সুখের হয় রমণীর গুনে, চন্দনা গো, তুমি রোজ বিকেলে এই যে শুরু হলো একনাগাড়ে চলতেই থাকল। আমার আর পেছনে তাকাতে হয়নি। আমি বলতে পারি হয়ত আমার বাবার কাছে থাকলে আরো ভালো লাইফ লিভ করতে পারতাম কিন্তু এ জীবনে আজকের দিন পর্যন্ত আমি যা এচিভ করেছি তার সবই আমার সংগীত থেকে। সুতরাং আমাকে কোনো সেকেন্ড অপশন চিন্তা করতে হয়নি। কোনো চাকরি বলেন, কোনো ব্যবসা বলেন কিছুই নয়। ঢাকাটাইমস : প্রথম একক অ্যালবাম সম্পর্কে বলেন। কুমার বিশ্বজিত : প্রথম অ্যালবামও আমার বের হয় ’৮২ সালে। পুতুলের মতো হিট হওয়ার পর একনাগাড়ে ৬-৭টি গান হিট হয়ে গেল। বাংলাদেশে প্রথম পরিকল্পনা করি আমি নিজের অ্যালবাম করার। আমি আর সোহেল আমরা দুইজনই আর্টিস্ট ছিলাম। ডিসকোর শাহিন ভাই আমার আর সোহেলের একসঙ্গেই অ্যালবাম রিলিজ দেওয়ার কথা। প্রথম পরিকল্পনা তো বাংলা গান শুনবে কি না একলা দিয়ে কি হবে সোহেল ভাইয়েরটাসহ দেই। টেপের ফিতায় কয়টা গান ধরে? ১২টা গান। ৬০ মিনিটে ১২টা গান হলেই হবে। তখন থেকেই এটা ফরমেট হয়ে গেল আর কি। তবে আমি যদি চিটাগাং থাকতাম আমার আর সোহেলের গ্যাপ মনে হয় হতো না। ২০ দিন বা ১ মাসের গ্যাপ হলো। সোহেলেরটা আগে বেরিয়ে গেল। তাতে বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় দ্বিতীয় ক্যাসেট হচ্ছে আমারটা। এটা হচ্ছে ক্যাসেটের চিত্র। তাই দর্শকদের ভালোবাসা ছাড়া আর অন্য কোনো অপশনের চিন্তা আসেনি। একটা নতুন কালচার অ্যাস্টাবলিস্ট হওয়া, একটি মাত্র চ্যানেল এখানে কম্পোজার পাওয়া অনেক টাফ। একটা আর্টিস্ট সেই রকম কোয়ালিফাইড না হলে বিটিভির মতো জায়গায় গান গাওয়া অনেক টাফ ব্যাপার। ওই সময়ে কেউ ফিল না করলে এটা বুঝতে পারবে না টেলিভিশন কি জিনিস ছিল। এখন তো প্রাইভেট চ্যানেল অহরহ যে যখন খুশি তখন গান গাইতে পারছে। তবে আমরা তো একটা প্লাটফর্ম তেরি করেছি। প্লাটফর্মে যদি ২০ জন মানুষ থাকে এর মধ্যে তো আমি একজন। স্বাভাবিকভাবে যে প্লাটফর্ম তৈরি করে তাদের তো স্ট্রাগল করতেই হয়। আমরা অনেক বাড়িতে প্রোগ্রাম করেছি পেমেন্টের কথা বলিনি। আমার মনে আছে, চিটাগাংয়ে আমাদের ক্ষেত্র ছিল বিয়ে বাড়ি, সুন্নত, গায়ে হলুদ এসব। বিয়ে বাড়িতে গান গাইতে হলে বরযাত্রী আসত ২০ ট্রাক, তাদেরকে ঘুমাতে দেবে কোথায়, তাই রাত ৮টা থেকে শুরু করে সকাল ৮টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা একনাগাড়ে গান। কারণ তাদের ব্যস্ত রাখতে হবে। সকালে নাস্তা খেয়ে তারা চলে যাবে। এবং তাদের নানা রকম চাওয়াÑ কেউ মান্না দে, কেউ কিশোর কুমার, কেউ রফিকুল আলম। মোট কথা তাদের সেটিসফাইড করতে হবে। তখন পেমেন্ট ছিল ৫০০ টাকা। আমি যখন চলচ্চিত্রে প্রথম গান গাই তখন আমার আর কিশোর দার পেমেন্ট ছিল ৮০০ টাকা। পুরো দিন রিহার্সেল। তিন ধরে বাসায় রিহার্সেল। ৮০ বা ৯০ বার করে গাইতে হয়েছে। সে তো এখনকার ছেলেদের বলে লাভ নেই। তবে এগুলো করেছি বলেই এখনো গান গেয়ে যাচ্ছি। কারণ আমার সামনে অনেক আসছে আবার গেছে। ঢাকাটাইমস : কখনো ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে ছিলেন কি না? বিশেষ করে আপনাদের বেড়ে উঠার সময়টা তো উত্তপ্ত ছিল।   কুমার বিশ্বজিত : আমার বন্ধু-বান্ধবরা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। যেহেতু আমি মুক্তিযুদ্ধ স্বচক্ষে দেখেছি হয়ত মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ না করার দুঃখটা রয়ে গেছে। সেই দুঃখটাও নিবারণ করছিলাম কোনো না কোনোভাবে। আমরা যখন ফিরে আসি আমার এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন মফিজ কাকু, উনি এখনো বেঁচে আছেন। বনানী ক্লাবে আছেন। আমরা যে জায়গাটায় ছিলাম সেখানে ৪-৫ জন পাঞ্জাবি স্যারেন্ডার করার পর তখনো তুলে দেওয়া হয়নি। আটকে রাখা হয়েছিল। আমরা জানালা দিয়ে দেখতাম। আমার মনে আছে আমি একটা পাথর মারছিলাম জানালার ভেতর দিয়ে এবং ওটা এক পাকিস্তানির মাথায় লেগেছিল। আমার জেদটা ওখান থেকেই যে, আমি যুদ্ধে যেতে পারিনি। সুতরাং ওই পরিবেশে যুদ্ধ নিজের চোখে দেখা আমি তো আর গল্প পড়ে মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনিনি। আমার মনের মধ্যে দেশের প্রতি কত ভালোবাসা ও আকর্ষণ। আমি রাজনীতি বুঝি না। আর ওই রাজনীতি আমি বুঝতেও চাই না, যে রাজনীতিতে এত বেশি রাজ। সেখানে নীতিটা বেশি থাকলে ভালো লাগত। এখন তো নীতি কম রাজ বেশি। আমি জানি এ দেশে আমার জন্ম এটা আমার ভাষা। ত্রিশ লাখ লোকের আত্মাহুতি যার জন্য অনেক ক্ষতি হয়েছে মানুষের। অনেক কিছুর বিনিময়ে এ দেশটা আমরা পেয়েছি। সুতরাং এটা ছাড়া আমি আর অন্য কিছু বুঝি না। এদেশের সার্বক্ষণিক মঙ্গল কি বলব এটা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দেশ হোক এটাই আমার স্বপ্ন। এর চেয়ে বড় রাজনীতি আর অন্য কিছু নেই। ঢাকাটাইমস : প্রথম প্রেম সম্পর্কে বলেন। কুমার বিশ্বজিত : আমার আসল প্রেম বলতে বরাবরই ছিল সংগীত। আমার প্রথম প্রেম সংগীত, দ্বিতীয় প্রেম সংগীত। আমার আমৃত্যু প্রেম থাকবে সংগীতের সঙ্গে। আমি এখন তো আর অন্য কোনো প্রফেশনে যেতে পারব না। সংগীতবিহীন আমি একটি মুহূর্তও বাঁচতে পারব না। ঢাকাটাইমস : এখনো কি গান শুনেন নিয়মিত? কুমার বিশ্বজিত : যেকোনো প্রফেশনে থাকলে আপনাকে চর্চা করতে হবে। আমি এখনো শুনি। কারণ একজন আইনজীবী তাকে আইনের প্রফেশনে থাকতে হয়। তাকে পৃথিবীর অনেক রেফারেন্স খুঁজতে হয়। তার মানে তাকে সারা পৃথিবীর যত কেস আসে সেগুলো পড়তে হবে। আপনি যখন সংগীতে থাকবেন সারা পৃথিবীর সংগীতে কি হচ্ছে সেটা আপনাকে জানতে হবে। কোন সংগীত এখন চলছে, কেন চলছে, কারা শুনছে, ডেপথ কতটুকু। আমি আমার জায়গায় থেকে, দায়িত্ববোধ থেকে, আমার শিকড়ের অবস্থান, আমার ঐতিহ্য কতটুকু বজায় থাকছে, আমি বাইরের সংস্কৃতি কতটুকু আনলে আমার সংগীতটা চাপা পড়বে নাÑ সবকিছু মিলিয়ে চিন্তা করতে হয় আমি আসলে আমার সংগীত করছি। তা না হলে আমি শুধুমাত্র সিঙ্গার। আমার যতগুলো অ্যালবাম হয় প্রতিটি গানে আমার শ্রম সাধনা আছে, হয় সুরের দিকে অথবা কথার দিকে। প্রতিটি গান নিজে হয়ত লেখিনি, প্রতিটি গানের থিম কিন্তু আমার করা। প্রতিটি রিদম কম্পোজিশন আমার করা। ওই রিদমের ওপর প্রতিটি পিস চয়েস করা আমার। সুতরাং আমি মনে করি গান বাজনা শোনা উচিত এবং যারা গান বাজনা করে সবারই শোনা উচিত। আর এখন তো অনেক ইজি। ঢাকাটাইমস : আপনাদের সময়ে গান শোনার জন্য এত রেকর্ড কোথায় পেতেন? কুমার বিশ্বজিত : তখন তো আর ইন্টারনেট ছিল না, রেকর্ডও পাওয়া যেত না। তখন গুলশান এক নম্বরে একটা দোকান ছিল। নিউ মার্কেটের পাশে যেখানে অ্যাম্বাসির লোকজন পুরনো জিনিসপত্রগুলো বিক্রি করতে আসতেন। আমরা ওখান থেকে রেকর্ড সংগ্রহ করতাম। আর আমি চট্টগ্রামে থাকার সময় আলকরনে থাকতাম। ওটা আবার পোর্টের কাছে। সেখানে সি ম্যানরা আসত। তাদের কাছে অনেক রেকর্ড থাকত, সেখান থেকে কালেক্ট করতাম। তো শোনার ব্যাপারটা সারা জীবনই থাকতে হবে। সংগীত নিয়ে কিছু করতে চাইলে আপনাকে শুনতে হবে। এর বিকল্প নেই। ঢাকাটাইমস : আপনার আইডল বা আইকন কারা ছিলেন তখন? কুমার বিশ্বজিত : আইডল, আইকন সারা জীবন একই থাকে বলে মনে হয়। আমার একদিকে ছিলেন কিশোর কুমার, অন্যদিকে ছিলেন মান্না দে। এই দুইজন মানুষ আমার সংগীতের দুই মেরু। আর যেটা প্রভাবিত করত আমাকে বিশেষ করে গানের স্টাইলটা, সেটা হচ্ছে আর ডি বর্মণের কম্পোজিশন। সেটা এখনো আমি মনে করি যে, তার ধারেকাছে কেউ নেই। ঢাকাটাইমস : বর্তমান মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে বলেন? কুমার বিশ্বজিত : বর্তমান মিউজিকের অবস্থাটা অবশ্যই করুণ। এখানে অনেক কারণ আছে। যা বললে একটা বই-ই লিখতে হবে আসলে। তবে আমি এত বলতে পারব না। এখন প্রযুক্তি চেঞ্জ হয়েছে। আমরা যখন শুরু করি তখন ছিল ক্যাসেট। তখন ক্যাসেট পাইরেসি হওয়া শুরু করল। কপিয়ার মেশিন সবাই কিনল গ্রামগঞ্জে। তখন কপিয়ার মেশিনের দাম ছিল পঞ্চাশ হাজার টাকা। আর এখন সিডি ডিভিডি রাইটার আরও কত কি। আপনার ল্যাপটপে কপি করতে পারছেন, আপনার পিসিতে করতে পারছেন। আর সিডি রাইডার যেগুলো আপনি ৩ হাজার টাকায়ও পাবেন। আর ইন্টারনেটে ইলিগ্যাল ওয়েবসাইটগুলো। যার ফলে লিসেনার বাড়ছে। কিন্তু প্রডিউসারের হাতে পয়সাটা আসছে না। সুতরাং আপনাকে অন্য টেকনোলজিতে যেতে হবে। যেমন এই সাইটগুলো বন্ধ করতে হবে। জেনুইনলি যারা স্টক হোল্ডার তাদের হাতে টাকাটা যেতে হবে। মার্কেটে যে পাইরেসিগুলো হচ্ছে ওপেন বাজারে যেমন ১০ টাকা দিয়ে ১০০টা গান ডাউনলোড করা এগুলো বন্ধ করতে হবে। আমি কলকাতায় দেখেছি ওদের কপিরাইট সোসাইটি আছে। আমাদের তা এখনো হয়নি। কপিরাইট সোসাইটি হচ্ছে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সব ক্ষেত্র মিলে যেমন প্রডিউসার থাকবে, গীতিকার থাকবে, সিঙ্গার থেকে একজন থাকবেÑ এরা সবাই মিলে একটি সোসাইটি করবে। ওরা যেখানেই গান বাজবে, রেডিওতে গান বাজছে, কার গান কত চলছে আমাদের হিসাব দাও, ওখান থেকে আমাকে রেভিনিউ দাও, বাসে গান চলছে, এক সঙ্গে অনেক লোক শুনছে প্রডিউসারকে পয়সা দিতে হবে। এ রকম সব জায়গা থেকে কালেক্ট করে তারা একটা সিদ্ধান্ত নেয় গীতিকার কত পাবে, প্রডিউসার কত পাবে, সিঙ্গার কত পাবে। এগুলো সিস্টেমওয়াইজ না হওয়া পর্যন্ত প্রফেশনালিজম গড়ে উঠবে না। একটা হচ্ছে টেকনোলজির ব্যাপার, আরেকটা হচ্ছে সিস্টেমাইজ হওয়া। এটা না হওয়া পর্যন্ত এ সেক্টরে খুব একটা উন্নতি হবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ এখন যা-ই হচ্ছে খুব কম লোকই আছে যাদের অ্যালবাম বের হয়। মেক্সিমামই দেখা যায় সিঙ্গার নিজেরাই পয়সা দিয়ে বের করছে। আমার মনে হয় কোনো উপমা বা উদাহরণ না দেওয়াই ভালো। ঢাকাটাইমস : এখন তো দেখা যাচ্ছে গায়কের সংখ্যাধিক্য। যাদের কোনো মিউজিক সেন্সই নেই তারাও কণ্ঠশিল্পী। কুমার বিশ্বজিত : সংগীত এমন একটা বিষয়, এখানে আপনি বললেই কি আর আমি বললেই কি। যেমন আমি যদি বলি আমার গান শ্রেষ্ঠ, আমার গান ‘ফাটাইয়া’ ফেলছে অথবা আমি তিন সপ্তাহ ধরে এক নম্বর সিঙ্গার এতে কিছু আসে যায় না। বাংলাদেশ অনেক বড়, গান যদি বেঁচে থাকে ১০ বছর পর, ১২ বছর পরও কথা বলবে। সুতরাং কে কে টিকবে সময়ই বলে দেবে, আমাদের কিছু বলার দরকার নেই। যার যার কাজ তারে করতে দেন। যার যার গলাবাজি তারে করতে দেন। কোনো অসুবিধা নেই। ঢাকাটাইমস : আপনার প্রিয় শহর কোনটা? কুমার বিশ্বজিত : আমার প্রিয় শহর বলতে সীতাকু-ে দেশকু- নামে একটা জায়গা আছে যা পাহাড়ের একদম পাশে, ওখানে একটা পুকুর আছে, পুকুরে একটা ঘাট আছে, ঘাটের পাশে আমার বাবার সমাধি। পুকুরপাড়টা আমার সবচেয়ে প্রিয়। ওইখানে এখনো আপনি পাখির ডাক শুনতে পাবেন। এককথায় অন্যরকম একটা নৈসর্গিক পরিবেশ। কমপেয়ার করলে ওই জায়গাটাকে আমার কাছে মনে হয় সুইজারল্যান্ড। আমি ওখানে প্রায়ই যাই, গিয়ে বসে থাকি। ঢাকাটাইমস : আপনার সংসার সম্পর্কে কিছু বলুন। কুমার বিশ্বজিত : আমার একটি ছেলে সিক্স-এ পড়ে। সংগীতের প্রতি তার ভীষণ ইন্টারেস্ট। আগে টুকটাক গান গাইত। এখন তার মনে হচ্ছে বাবার মতো সিঙ্গার হতে পারবে না, তাই সে এটা বাদ দিয়েছে। সে পিয়ানো শিখছে। সে মিউজিক ডাইরেক্টর হবে বা কম্পোজার হবে। আমার মতে, এভাবে যদি সে রপ্ত করতে পারে হয়ত সে কিছু একটা হবে কিন্তু আমি ফোর্স করি না। একজন টিচার আছে, সে বাসায় এসে শিখায়। ঢাকাটাইমস : অনেক স্টাইলিশ গায়কই গানের ফাঁকে অভিনয় করছে। আপনার অভিনয় করার ইচ্ছা হয়েছিল কী কখনো? কুমার বিশ্বজিত : অভিনয় করার প্রচুর অফার আমার এসেছে। এমনকি এখনো আসছে। আমি যেহেতু অভিনয় জানি না, তাই অভিনয় করার স্বপ্নও দেখি না। অভিনয়ে আমার অভিজ্ঞতা নেই, অভিনয় করার স্বপ্নও ছিল না। আমি একটা জিনিস করতে পারি আর তা হলো গান। আমি বলব গান গাওয়া ছাড়া আর কোনো যোগ্যতা আমার নেই। ঢাকাটাইমস : কলকাতার বাংলা গান শুনেন কি? ওরা অনেক ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করে যদিও। তবুও কলকাতার সিনেমার গানে বম্বের গানের দেখাদেখি সম্ভবত যেভাবে ইংরেজি-হিন্দি জায়গা করে নিচ্ছে। এতে গান কি নিজস্বতা হারায় না? কুমার বিশ্বজিত : কলকাতার অনেক গান আমি শুনি। মনে হয় ওরা অনেক ডেভেলপ করেছে। এখন ওদের বলিউডের কাছাকাছি বলা যায়। এটা একটা ভালো দিক। আর সংগীতের যে প্রভাবটা এটা কিন্তু সারা পৃথিবীতে সবাই সবার আইডেনটিটি নিয়ে একটু কনফিউজড। এখন হয় কি যেহেতু সারা পৃথিবী মিলে গ্লোবালি একটা কান্ট্রি হয়ে গেছে, তার একটা প্রভাব পড়েছে। কিন্তু এটা কালচারালি ভালো লাগে না। কালচার হচ্ছে নিজের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। আমার কাছে কালচারটা হচ্ছে যেমন আমি আমার মাকে সারা জীবন দেখেছি শাড়ি পরা, হাতে চুড়ি, মাথায় টিপ, কানে দুল এখন আমি আমার মাকে অতি আধুনিক করতে গিয়ে যদি তাকে শর্ট সালোয়ার-কামিজ আর গেঞ্জি পরিয়ে দেই তাহলে ভালো লাগবে না। কারণ সারা জীবন যেভাবে দেখেছি ওটাই আমার মধ্যে ঢুকে গেছে। আধুনিক করতে গিয়ে মাকে অন্যরকম জিনিসপত্র পরাতে পারি কিন্তু তার যে গ্যাটআপ সেটা কিন্তু চেঞ্জ করতে পারি না। গ্যাটআপ হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতির শিকড়, আমাদের ঐতিহ্য। যতই আধুনিক হোক আপনি দেখেন বাংলাদেশে এখনো ঈদের সময় ঢাকা শহরে একটা মানুষ থাকে না। নাড়ির টানে সব চলে যায় গ্রামে। সুতরাং আপনি যতই আধুনিকতা দেখান, আমাদের একটা নিজস্ব ভেল্যু আছে। এটাই হচ্ছে আমাদের প্রাইড। এটা পৃথিবীর কোথাও নেই। একান্নবর্তী পরিবার পৃথিবীর কোথাও পাবেন না। যদিও এখন ভেঙে যাচ্ছে। পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থাকি, কেউ কাউকে চিনি না। বাঙালি জাতির মা দিবস লাগে না, পিতা দিবস লাগে না। সারা দিন আমরা মা-বাবার সঙ্গেই থাকি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, বাংলাদেশে বৃদ্ধাশ্রমও শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশে বৃদ্ধাশ্রম হবে এটা কখনো ভাবিনি। সুতরাং যত বেশি অন্য কালচারে যাবেন তত বেশি...। যেটা বলছিলাম আমাদের সবচেয়ে প্রাইড এটা সারা পৃথিবীর মানুষ স্বীকার করে যে, তোমরা একসঙ্গে থাক, এতজন মিলে এক সঙ্গে। এই ব্যাপারগুলো পৃথিবীর কোথাও নেই। আমি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গেছি, মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা আশ্চর্য হয়ে যায়। পরে বলে আসলে আমরা বাঙালি হলে ভালো হতো। ওরা এদিকে আসতে চায়, আর আমরা ওদিকে যেতে চাইÑ এটাই দুঃখজনক। যা হয় আর কি। ড. মুহম্মদ শহীদ্ল্লুাহর একটা উদ্ধৃতি দিতে ইচ্ছে করছে। মানুষ যদি বিদেশে যায় তাহলে সে বুঝতে পারে নিজের দেশটা কি। বাইরে গেলে বোঝা যায় আমার অবস্থানটা কি, আমি এদেশে কীভাবে থাকি। আর ওই দেশে আমি তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক এবং আমার দেশে আমি ফার্স্ট ক্লাস নাগরিক। তাছাড়াও নিজের ভূমির একটা অন্যরকম পাওয়ার থাকে। দেখবেন যারা বিদেশে থাকে তারা সারাক্ষণ দেশ নিয়ে ভাবে। তারা দেশের পত্রিকা পড়ছে, নাটক দেখছে, রাজনীতি নিয়ে কথা বলছে মানে দেশটির প্রতি বিশেষ আকর্ষণ তাদের। আর আমরা যারা এখানে থাকি তারা বিদেশ প্রেম নিয়ে বেশি ব্যস্ত। তবে একটা জিনিস বলতে হয়, একটা দেশের বড় আইডেন্টিটি সে দেশের কালচার। আমার আইডেন্টিটিটা কি, আমি কে? আমি যদি স্পেনিস হয়ে যাই, আমি যদি লাতিন হয়ে যাই, আমি যদি মেক্সিকান হয়ে যাই, আমি যদি ওয়েস্টার্ন কালচারে ঢুকে যাই, আমি বিজাতীয় একটা জিনিসে ঢুকে পড়ি সেখানে আমার আইডেন্টিটিটা কী আমার সংস্কৃতি। আর এমন তো নয় আমার সংস্কৃতি তো এত দুর্বোহ সংস্কৃতি। আপনি চিটাগাংয়ে যান, মাইজভান্ডারী একটা জিনিস, রংপুরে যান ভাওয়াইয়া, ওদিকে সিলেট যান নানা রকম বাউল, মহাজন, হাছন রাজা, শরীয়তি, মারফতি, মুর্শিদী কি নেই আমাদের দেশে। এত বড় ভ্যারাইটি কালচার থাকতে আমরা কেন চর্চা করছি অন্য কালচার। হ্যাঁ যেহেতু বিশ্বায়নের যুগ, আমি সব দেশের কালচার দেখছি, তাই আমার কালচারের সঙ্গে একটা মিক্সড থাকতে পারে। কিন্তু আমার কালচারকে মাথায় রাখতে হবে। আমার কালচারকে সবচেয়ে প্রায়োরিটি দিতে হবে। প্রফেশনালি যদি ধরি বিদেশি কালচার যদি আমি নেই ২০ পার্সেন্ট, আমার কালচার থাকতে হবে ৮০ পার্সেন্ট। সেটার সঙ্গে আমি সংমিশ্রণ করব। সংমিশ্রণ হলে কিন্তু কালচার আরো রিচ হয়। তবে অন্য কালচার ঢুকলে আমাদেরটা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে এটাকে আমি ভয় পাই না। হয়ত ধূলিসাৎ হয়ে যাবে কিছু দিনের জন্য। অথবা একটা প্রজন্ম মিসগাইড হবে। একেবারে ধূলিসাৎ হবে না। এজন্য আমি বললাম যে, প্রতিটি মানুষ একটা ধর্মীয় উৎসবে যেমন রোজার ঈদ, কোরবানির ঈদ বলেন, সবাই গ্রামে ফিরে যায়। এই মানুষজনকে আপনি কত আধুনিক বানাবেন। তবে এখন যারা নতুন প্রজন্ম তারা মিসগাইড হবে। যে জায়গায় যে ভূমিতে জন্ম, সে ভূমিকে অস্বীকার করার মতো মানুষ পৃথিবীতে নেই। তার জন্মভূমি, তার পূর্বপুরুষের কালচার সেটা একদিনের জন্য হলেও ফিল করবে। করতে হবে। কারণ সে যখন পরদেশে যাবে পরদেশের নাগরিকত্বও যখন নিবে পরদেশের নাগরিকের সঙ্গে যখন বৈবাহিক সম্পর্ক হবে এরপরও তার পূর্বপুরুষ বাংলাদেশের একথা তাকে বলতেই হবে। এটা আমার দেশ এটা আমার কালচার এটা ভোলা যায় না। তবে তার থার্ড জেনারেশন যখন বড় হবে তখন সে ওই দেশের আলো বাতাসে বড় হবে। তারা অতটা স্মরণ নাও করতে পারে। ইংরেজি বলুক। ইংরেজি বলতে বাধা নেই কিন্তু নিজের ভাষাটাকে ইগনোর যেন না করে। বাংলা ভাষায় অনেক কিছুই সম্ভব না এটা ঠিক নয়। যেমন এখন যদি আমি বিজ্ঞান বিষয়ে কিছু জানতে চাই, এটা আসলে বাংলায় তরজমা করা নেই, সেক্ষেত্রে ইংরেজির সাহায্য নিতে কোনো বাধা নেই। বাংলা ভাষার ব্যাপারে আমার কোনো অবলিগেশন নেই। জ্ঞানী হতে গেলে আপনাকে ভাষা সম্পর্কে জানতে হবে। ভাষা জানুক, ভাষা কিন্তু জ্ঞান নয়, ভাষা একটি মাধ্যম। আমি ইংরেজি জানলাম বলে আমি জ্ঞানী হয়ে গেলাম তা নয়। জ্ঞান হচ্ছে অন্য জিনিস। আপনি জ্ঞান অর্জন করুন। নিজের দেশকে জানুন, নিজের ঐতিহ্যকে জানুন, নিজের ভাষাকে সমুন্নত রাখুনÑ সেটাই হবে আপনার বড় জিনিস। আমারটা বাদ দিয়ে আপনি অন্যটা নিলে আমার কিছু বলার নেই। লজ্জা বরং আপনার। তবে একটা সময় রিয়েলাইজেশনটা আসে। হয়ত মনে করে অন্য ভাষায় কথা বললে আমি বড় কিছু একটা হয়ে গেলাম। সব ভাষাই জানবে, জানতে কোনো অসুবিধা নেই কিন্তু নিজের ভাষাকে অবজ্ঞা করে নয়। ঢাকাটাইমস: রিসেন্টলি কোনো অ্যালবাম বের করবেন কী? কুমার বিশ্বজিত : একটা অ্যালবাম তো বেরই করলাম দুই মাস আগে ‘প্রিয় অনুভব’। আমি খুব তাড়াতাড়ি গান বানাইতে পারি না, আমার সময় লাগে। তাই তিন-চার বছর পর পর একটা অ্যালবাম বের করি। আমার নিজের ভালো না লাগলে আমি সেদিকে অগ্রসর হই না। অ্যালবাম করার দিকে ধাবিত হই না। ঢাকাটাইমস : আধুনিক ছাড়া অন্য কোনো গান করার পরিকল্পনা আছে কী? কুমার বিশ্বজিত : আমি রবীন্দ্রনাথের গান করেছি। একটা অ্যালবামে গানটা সংযোজনও করা হয়েছে। আমার জীবনের শুরুই কিন্তু হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের গান দিয়ে। তবে পুরো অ্যালবাম করার ইচ্ছা নেই। যেটা আমার ট্রাক নয় সেদিকে আমি যেতে চাই না। শখে করেছি, ভালো লাগলে আবার করব একটা গান, কিন্তু পুরো অ্যালবাম করার পরিকল্পনা আমার নেই। ঢাকাটাইমস : সম্প্রতি কোন কোন ছবিতে প্লেব্যাক করলেন? কুমার বিশ্বজিত : মৌসুমীর ‘শূন্য হৃদয়’ ছবির প্লেব্যাক করলাম। আরেকটার তো এখনো শুটিং শুরু হয়নি ‘প্রতিরোধ’। অন্য একটি ছবির গানও করেছি নাম মনে নেই। এটার মিউজিক ডিরেক্টর হুমায়ুন। ঢাকাটাইমস : আপনি কি নিয়মিত প্র্যাকটিস করেন? কুমার বিশ্বজিত : এখন এমন হয়ে গেছে প্র্যাকটিস একদিন না করলে মনে হয় কি যেন করিনি। এখনো প্রতিদিন ১ ঘণ্টা আমার প্র্যাকটিস করতে হয়। যেকোনো কিছুই চর্চার বিকল্প নেই। ঢাকাটাইমস : এতক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য পাঠকের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ। কুমার বিশ্বজিত : আপনাকে এবং আপনাদের মাধ্যমে আমার শ্রোতাদের ঈদের শুভেচ্ছা জানাই। সবাই ভালো থাকুক। বাংলাদেশ ভালো থাকুক। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২১-০৭-০১৪: সূএ: ঢাকাটাইমস ডটকম
Link copied!