নিয়োগ জটিলতায় আটকে গেছে নবনির্মিত বিজয় একাত্তর হল
একুশে সংবাদ : হল উদ্বোধন হয়েছে প্রায় আট মাস আগে। নির্মাণ কাজ কিছুটা অসমাপ্ত থাকলেও সেটা শেষ হয়েছে প্রায় দুই-তিন মাস আগে। কিন্তু আটকে আছে হলের স্বাভাবিক কার্যক্রম। উদ্বোধনের আট মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত বিজয় একাত্তর হল।
জানা গেছে, হল নির্মানের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও কর্মচারী ও শিক্ষক নিয়োগ জটিলতায় এই প্রক্রিয়া আটকে আছে। হলের আবাসিক শিক্ষক থেকে শুরু করে কর্মচারী-কর্মকর্তা, দোকান, ক্যান্টিন, সেলুনসহ বিভিন্ন নিয়োগ কার্যক্রমের বেশিভাগই এখনো অসমাপ্ত রয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে সকল বাধাবিপত্তি পেরিয়ে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্তে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের পরেই হলের সিট বরাদ্দ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অনুমতি নিয়ে হাউজ টিউটর ও কর্মচারী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এছাড়া তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ১৬ জন সহকারী আবাসিক শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে কর্মচারী নিয়োগে এখনো জটিলতা রয়েছে বলে তিনি জানান। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে কিছু নিয়ম মানতে হয়। নিয়োমের বাইরে গিয়ে কিছু করা সম্ভব হয় না।
সূত্র জানায়, আবাসন সংকট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১১ সালের প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের মাঝামাঝি জায়গায় ১১তলা ফাউন্ডেশনের এক হাজার আসন বিশিষ্ট নবনির্মিত বিজয় একাত্তর হলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখেই ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর গত মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবনটির উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনের কিছুদিনের মধ্যেই হলটি শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও আটমাস পেরিয়ে গেলেও হল চালু নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়াই প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
তবে নবনির্মিত বিজয় একাত্তর হল চালু হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট কিছুটা লাঘব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হলটিতে সিট বরাদ্দের ক্ষেত্রে এক ধরনের ধুম্রজাল রয়েছে বলে জানা যায়। হলটিতে কোন শিক্ষার্থীদের তোলা হবে, তা নিয়ে প্রথম থেকেই ধোঁয়াশা ছিল।
এখন পরিকল্পনা করা হচ্ছে, শিগগিরই শুরু হতে যাওয়া চারটি হলের সংস্কার করার সময় সেখানকার কিছু শিক্ষার্থীকে বিজয় একাত্তর হলে সাময়িকভাবে ওঠানো হবে। সংস্কার হওয়া চারটি হলগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দ্যা সূর্যসেন হল, হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল, সার্জেন্ট জহুরুল হক হল এবং সলিমূল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল।
রেজিস্ট্রার ভবন সূত্রে জানা যায়, হলটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫৮ কোটি টাকা। এই হলের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো বেশ কয়েকটি ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে সিনিয়র শিক্ষকদের জন্য ফুলার রোডে শহীদ মুনীর চৌধুরী ভবন, জুনিয়র শিক্ষকদের জন্য আবুল খায়ের ভবন, এমবিএ নতুন ভবন, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য বঙ্গবন্ধু টাওয়ার, রোকেয়া হলের অভ্যন্তরে ৭ই মার্চ ভবন এবং মোকাররম হোসেন বিজ্ঞান ভবনের বর্ধিতাংশের সংস্কারকাজ উল্লেখযোগ্য। বিজয় একাত্তর হলের পাশাপাশি এসব ভবনেরও উদ্বোধন করা হয়েছিল।
হলের নবনিযুক্ত প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, আবাসিক শিক্ষক ও কর্মচারীর নিয়োগ নিয়ে হলের কার্যক্রম পিছিয়ে ছিল। তবে আবাসিক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন শুধু কর্মচারী নিয়োগ বাকি রয়েছে। তারপরেও ঈদের পর হলের সিট বরাদ্দের কার্যক্রম শুরু করা হবে।
কোন প্রক্রিয়ায় সিট বরাদ্দ দেয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আগামী ২৬ জুলাই হলের আবাসিক শিক্ষকদের এ বিষয়ে একটা জরুরি সভা রয়েছে। সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এখনো নতুন হলটিতে কর্মচারী নিয়োগ করা হয়নি। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদেরও বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কর্মচারী নিয়োগসহ অন্যান্য ছোটখাটো বিষয় সুরাহা করার পরই হলটি চালু করা হবে।
তবে তিনি ঈদের পর হলটি চালু করা হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২২-০৭-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :