এ কোন পাষাণ্ডর কাজ, মাকে ফেলে দিলো রাস্তায়?
একুশে সংবাদ : বাংলা বা বাঙালী সমাজ এ ধরনের অনাচার কখনোই বর্দাস্ত করে না এটা যেমন সত্য। তেমনই এ খটনাও সত্য যে এক পাষাণ্ড বর্বর সন্তান তার বৃদ্ধা মাকে বস্তায় ভরে রাস্তায় ফেলে গেছে।
যে মা একদিন সন্তানের মুখে খাবার যোগাতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছে। সেই মাকেই আজ আবর্জনা তুল ভেবে রাস্তায় ফেলে দিলো ছেলে, ছেলের বৌ।
এমন বর্বর বৈচাশিক ঘটনা ঘটেছে রাজধানী ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জে। বৃদ্ধা ও অক্ষম মাকে আর সৈয্য হচ্ছিল না ছেলের। তাই একেবারে সোঝা সাপটা বুদ্ধি আটলো। ঝামেলা এড়াতে ছেলে ছোটন ও তার স্ত্রী বস্তায় ভরে রাস্তায় ফেলে দিলো মাকে।
পরে স্থানীয় লোকজন বৃদ্ধার মুখের কথা শুনে একটি গণমাধমে সংবাদ দেয়। সংবাদটি দেখে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাউছুল আজম ফতুল্লার শাসনগাঁও এলাকার একটি সড়ক থেকে বৃদ্ধা হাসিনা বেগমকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান।
গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশিত হলে বৃদ্ধার সহযোগিতায় হাত বাড়িয়েছেন অনেকেই। খন্দকার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে হাসিনা বেগমকে বিছানা, কাপড় এবং চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। ফাউন্ডেশনের পরিচালক খন্দকার সাইফুল ইসলাম মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতালে উপস্থিত উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা গাউছুল আজমের হাতে এ সাহায্য তুলে দেন। আট দিন ধরে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ৩০৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১৬ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন হাসিনা বেগম। এছাড়া ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আগামী এক বছর হাসিনা বেগমকে প্রতি মাসে চার হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলেও জানান সাইফুল ইসলাম। সাহায্য পেয়ে বৃদ্ধার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু।
এর আগে মানবিক সাহায্য সংঘ ৫ হাজার টাকা সাহায্য দিয়েছে। হাসিনা বেগমের পক্ষে হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার আসাদুজ্জামান এ অর্থ গ্রহণ করেন। আরো কয়েকজন সহৃদয়বান মানুষ তাকে সাহায্য দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করেছেন।
সাহায্য গ্রহণ করে ইউএনও গাউছুল আজম বলেন, আবারও প্রমাণিত হলো মানুষ মানুষের জন্য। এ ধরনের অসহায় মানুষের জন্য একটি আশ্রম তৈরির জন্য বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
কোমরের একটি হাড় ভেঙে যাওয়ায় হাসিনা বেগম এখনো এক পা নাড়াতে পারছেন না। ধারণা করা হচ্ছে তাকে ফেলে যাওয়ার সময়ই তার বৃদ্ধার কোমরের হাড় ভেঙে যায়। তবে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরের অবস্থা অনেকটাই ভালো। চিকিৎসক কামরুজ্জামান জানান, হাড় ভাঙার চিকিৎসা এ হাসপাতালে সম্ভব নয়। তাই তাকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হবে।
তিনি জানান, শোকে হাসিনার স্মৃতিশক্তি কিছুটা লোপ পেয়েছে। তার গ্রামের নাম বলতে পারলেও বাড়ির ঠিকানা বা তার ছেলেরা কোথায় কাজ করেন, তা মনে করতে পারেননি।
অস্পষ্ট স্বরে হাসিনা জানান, তার দুই ছেলে ছোটন মিয়া ও লাল মিয়া। পুত্রবধূরা জানিয়েছে, বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানো যাবে না। অন্যের বাড়ি গিয়ে খাবার চেয়ে এনে খেতে হবে। ঝামেলা এড়াতে বড় ছেলে ছোটন ও তার স্ত্রী একটি বস্তায় ভরে তাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গেছে।
তবে আশা ছাড়েননি হাসিনা! এখনো তিনি বিশ্বাস করেন তার ছেলেদের ভুল ভাঙবে। ছেলেরা এসে নিয়ে যাবে তাকে। তার সঙ্গে কেউ দেখা করতে এলে সরলবিশ্বাসে বলছেন, 'আমার পোলার লগে দেখা হইলে কইও আমি হাসপাতালে, আমারে নিয়া যাইতে।'
একুশে সংবাদ ডটকম/প্রতিনিধি/এমকেএইচ/২৩-০৭-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :