AB Bank
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

মাথাব্যথা হতে পারে বিপজ্জনক


Ekushey Sangbad

০৫:২৩ এএম, জুলাই ২৪, ২০১৪
মাথাব্যথা হতে পারে বিপজ্জনক

একুশে সংবাদ ডেস্ক : মাইগ্রেন কি ও কেন হয়: ইংরেজি ‘হেডেক’ শব্দটি এখন প্রায় মাথাব্যথার চলতি নাম হয়ে গেছে। হেডেক বা মাথাব্যথা দৈনন্দিন জীবনে খুব পরিচিত একটি সমস্যা। নিউরোলজি ক্লিনিক বা জেনারেল ফিজিশিয়ানের চেম্বারে প্রতিদিন বহু রোগী মাথাব্যথার সমস্যা নিয়ে আসা-যাওয়া করে। মাথাব্যথার রোগীরা নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয় জানতে চায়। তাদের মাথাব্যথার অন্তর্নিহিত কারণ ঠিক কি? অন্য কোনো ভয়ংকর রোগের উপসর্গ হিসেবে মাথাব্যথা দেখা দিয়েছে কি না? রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি কি? মাথাব্যথার উপশম কীভাবে করা হয়, কি ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে? এটা বংশগত অসুখ কি না? এর সঙ্গে মানসিক রোগের যোগাযোগ রয়েছে কি না ইত্যাদি। তাদেরকে আশ্বস্ত করা যায় যে, মাইগ্রেন কোনো মানসিক রোগ নয়। এটা এক ধরনের মস্তিষ্কের অসুখ। আগে ধারণা করা হতো যে, মস্তিষ্কের ভেতরকার রক্তবাহী নালিকার সংকোচন ও প্রসারণগত কারণে মাইগ্রেন হয়। এখন ধারণাটা পাল্টেছে। আধুনিক গবেষণায় জানানো হচ্ছে যে, মস্তিষ্কের ত্বরিত প্রবাহজনিত কিছু অস্বাভাবিকতার কারণে মাইগ্রেনের সূচনা হয়। মাথাব্যথার ধরন: মাইগ্রেন উইদ অরাতে যে মাথাব্যথা হয় তার একটি নির্দিষ্ট ধরন আছে। এ মাথাব্যথায় রোগীর মাথা দপ দপ করতে থাকে। দেখা গেছে, প্রতিটি হৃদস্পন্দনের সঙ্গে সঙ্গে মাথার মধ্যে একটা ধড়ফড়ানি হচ্ছে। ব্যথার পরিমাণ খুব বেশি বলে এ সময় রোগীর কষ্টও বেশি হয়। অনেক সময় ব্যথার তীব্রতা এত বেশি হয় যে, রোগী কর্মক্ষেত্র ছেড়ে বাড়ি চলে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে। এ ধরনের মাথাব্যথার সঙ্গে আরও দুটি উপসর্গ যুক্ত হয়। আলো ও শব্দে রোগীর বিরক্তি আসে। একে ফোটোফোবিয়া ও ফোনোফোবিয়া বলে। আলো ও শব্দ সহ্য করতে পারে না বলে রোগীরা আলো বন্ধ করে, শব্দকে এড়িয়ে শুয়ে পড়ে। এর পর অনেকের বমি হতে শুরু করে এবং সে পর্যায়টি অনেকক্ষণ ধরে চলে। দেখা গেছে, সব পর্যায় মিলে মাইগ্রেন উইদ অরার সমস্যা কমপক্ষে ৪ ঘণ্টা ধরে চলে। এটা ২৪ বা ৪৮ ঘণ্টা ধরেও চলতে পারে। মাইগ্রেনের ব্যথা সেরে যাওয়ার পর রোগী ১ সপ্তাহ থেকে ২ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। তবে আবার যখন সমস্যা শুরু হয় তখন প্রথমে অরা তার পর দপ দপ মাথাব্যথা ফোটোফোবিয়া, যে ফোটোফোবিয়া এবং একেবারে শেষে বমি এই পর্যায়গুলো পর পর অনুসৃত হতে থাকে এবং এভাবেই একটা পর্যায়ক্রমিক চক্র চলতে থাকে। মাইগ্রেন উইদাউট অরা : মাইগ্রেনের উপসর্গে কখনো কখনো মাইগ্রেন উইদ অরার সবকটি উপসর্গ দেখা যায় না। এ ধরনের মাইগ্রেনকে মাইগ্রেন উইদাউট অরা বলে। এ ক্ষেত্রে সরাসরি মাথাব্যথা দিয়ে উপসর্গ শুরু হয়ে বমি দিয়ে শেষ হয়। মেনস্টুয়াল মাইগ্রেন : অনেক মহিলার এ রোগ হয়। মাসিক ঋতু¯্রাবের ২-৩ দিন আগে থেকে শুরু হয়ে এটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই মাথাব্যথা হতে থাকে। মাসের অন্য সময় কিন্তু এ ধরনের মাইগ্রেনের ব্যথা হয় না। এদের মেনস্টুয়াল মাইগ্রেন বলে। অন্যান্য মাইগ্রেন: বিশেষ ধরনের আরও কয়েকটি মাইগ্রেন অরা রয়েছে। মাইগ্রেন অরা মানুষের দৃষ্টিশক্তি অনুভূতি ইত্যাদিকে প্রভাবিত করতে পারে। যেমনÑ অনেকে এই সময় নানা ধরনের গন্ধ, বিশেষ করে পারফিউমের গন্ধ, পোড়া গন্ধ বেশি করে পেতে থাকে। অলফ্যাক্টরি অরা হলে অনেকের শরীর ঝিমঝিম করতে থাকে এবং শেষে একটা অসাড় অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা অবশ্য কিছুক্ষণ পর ঠিক হয়ে যায়। অলফ্যাক্টরি অরা বংশগত। এই রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী একটি জিনের সন্ধান পাওয়া গেছে। অন্য মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কোনো জিন আবিষ্কৃত না হলেও গবেষণা চলছে। হয়ত ভবিষ্যতে নতুন কিছু জিন আবিষ্কৃত হবে। চিকিৎসা :মাথাব্যথার চিকিৎসা করতে গেলে মাথাব্যথার উপসর্গ, কোন ধরনের মাথাব্যথা, কতদিন ধরে মাথাব্যথা ইত্যাদি বিষয় অর্থাৎ রোগের প্রাথমিক ইতিহাস জানাটা আবশ্যক। এ সব না জেনে শুধু ওষুধ দিলে কাজ তো হয়-ই না বরং ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় অন্য ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। আর উপকার না হওয়ার কারণে রোগীও উপসর্গের জটিলতায় কষ্ট পায়। সুতরাং সব ধরনের মাথাব্যথার ক্ষেত্র বিশেষ করে প্রাইমারি হেডেকের ক্ষেত্রে রোগীর বিস্তারিত ইতিহাস জেনে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাই বাঞ্ছনীয়। রোগ নির্ধারণ করতে নয়, মূলত কিছু রোগের সম্ভাবনাকে বাতিল করতে মাথাব্যথার চিকিৎসায় কিছু পরীক্ষাÑ যেমন সিটি স্ক্যান, এমআরআই কিংবা অনেক সময় ইইজি করা হয়। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। এপিলেপসির প্রাথমিক পর্যায়ের অন্যতম উপসর্গ হলো মাথাব্যথা। কয়েকবার মাথাব্যথা হয়ে যাওয়ার পর রোগীর এপিলেপটিক ফিট হওয়া শুরু হয়। অর্থাৎ রোগের অভিমুখ অন্যদিকে সরে যায়। সেক্ষেত্রে মাথাব্যথার চিকিৎসা করে যাওয়া বোকামি। সুতরাং কি কারণে মাথাব্যথা হচ্ছে তা প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জেনে রাখবেন, মাইগ্রেন অনুসন্ধানের জন্য প্রচলিত কোনো অনুসন্ধান করা হয় না। সব কিছু শনাক্ত হয়ে যাওয়ার পরই চিকিৎসা শুরু করা দরকার। স্পেসিফিক অ্যান্টি মাইগ্রেন ড্রাগ: নির্দিষ্টভাবে মাইগ্রেনের চিকিৎসা করতে স্পেসিফিক অ্যান্টি মাইগ্রেন ড্রাগ দেওয়া হয়। এরা বেদনানাশক নয়। মাইগ্রেন সৃষ্টির উৎসে কাজ করে এই ওষুধগুলো মাইগ্রেনের অস্বাভাবিকতা কমাতে সাহায্য করে। এই পর্যায়ে যে ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয় তা চিকিৎসা বিজ্ঞানে ট্রিপটান শ্রেণির মধ্যে ফেলা হয়। এরা ট্রিপামাইনভিত্তিক ওষুধ পরিবারের সদস্য। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮-৯ রকমের ট্রিপটান পাওয়া গেলেও ভারতের বাজারে মাত্র ৩ ধরনের ট্রিপটান চালু আছে। এরা হলো সুমাট্রিপটান, জোলমাট্রিপটান এবং নারাট্রিপটান। ট্রিপটান ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে। যখন অরা শেষ হয়ে আসছে এবং মাথাব্যথা শুরু হতে চলেছে, তখন এই ওষুধ দিতে হয়। একবার ব্যথা শুরু হয়ে গেলে এই ওষুধে কাজ হয় না। ট্যাবলেট বা ইনজেকশনের আকারে ট্রিপটান পাওয়া যায়। ইদানীং স্প্রে হিসেবেও পাওয়া যায়। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: ট্রিপটানের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। যেসব মানুষের উচ্চ রক্তচাপ, কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা কিংবা ইসকিমিক হার্ট ডিজিজ রয়েছে তাদের পক্ষে এই ওষুধ ব্যবহার না করাই ভালো। ট্রিপটান মস্তিষ্কের মতো হৃৎপি-ের রক্তপ্রবাহকেও সংকুচিত করে। সুতরাং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো মতেই ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। ওষুধের দোকান থেকে নিজে থেকে কিনে নিয়ে এই ওষুধ খেলে উপকারের পরিবর্তে অপকারই হতে পারে বেশি। নিজে থেকে ওষুধ কিনে খাবেন না: আমাদের কাছে যে সব রোগী মাথাব্যথার সমস্যা নিয়ে আসে তাদের মধ্যে প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ দোকান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে ওষুধ কিনে খায়। এদের ক্ষেত্রে দুটি মাইগ্রেন পর্যায়ের মধ্যবর্তী সময়কাল কমতে শুরু করে। এই অবস্থাকেই ক্রনিক মাইগ্রেন বলে। দিনে ২০টা করে ওষুধ খেতে হয় এমন রোগীর সন্ধান পাওয়া কোনো বিস্ময়ের ব্যাপার নয়। এরা হয়ত দিনে একটা ওষুধ দিয়ে শুরু করেছিলেন, কালক্রমে সেটাই এই বিপুল সংখ্যায় এসে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং আমি অনুরোধ করব যে, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনের বাইরে যেন কোনো ওষুধ নিজে থেকে কিনে খাওয়া না হয়। আমাদের দেশে ওষুধের দোকানে বিনা প্রেসক্রিপশনে ওষুধ কেনার সুযোগ রয়েছে। এই প্রবণতা অনেক সময় বড় বিপদ ডেকে আনে। মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে বিনা প্রেসক্রিপশনে ওষুধ কিনে খেলে রোগটি ক্রনিক পর্যায়ে চলে যেতে পারে। তখন এ রোগের চিকিৎসা করা শক্ত ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
Link copied!