AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ওই লোমহর্ষক ঘটনার রহস্য আজও উন্মোচিত হল না।


Ekushey Sangbad

০৫:৫৮ এএম, জুলাই ২৪, ২০১৪
ওই লোমহর্ষক ঘটনার রহস্য আজও উন্মোচিত হল না।

একুশে সংবাদ : এক বিশিষ্ট ব্যক্তি তাঁর দুই ছেলেমেয়েকে বিদেশে ফেরত পাঠিয়ে পরদিন এসে সহকর্মীদের মিষ্টি করে বললেন, ‘‘একই গন্তব্যে যাবে যদিও, তবু দুই ফ্লাইটে পাঠালাম। আমার তো দু’জনই আছে। কোনো কারণে একটা ফ্লাইটে যদি কিছু ঘটেও, অন্যটায় নিশ্চয়ই ঘটবে না। একজন অন্তত থাকবে।’’ এমন দারুণ সতর্কতা যার, তিনি বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী এসএএমএস কিবরিয়া। তাঁর ছেলেমেয়ে দুজনই বেঁচে আছেন, মাঝখান থেকে তিনি নেই। না, কোনো বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়নি তাঁর। মৃত্যু হয়েছে নিজ নির্বাচনী এলাকায় সভাশেষে বেরিয়ে আসার পথে তাঁর ওপর পরিচালিত গ্রেনেড হামলায়। বয়স হয়েছিল মি. কিবরিয়ার। কিন্তু অমন মৃত্যু কাম্য ছিল না কারও। কোনো প্রসঙ্গে তাঁর কথা মনে এলেই এটা ভেবেও দুঃখ হয় যে, ওই লোমহর্ষক ঘটনার রহস্য আজও উন্মোচিত হল না। আমাদের আরেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানও মারা গেছেন দুর্ঘটনায়। সেটি অবশ্য ছিল সড়ক দুর্ঘটনা। এঁরা দু’জন এত ফ্লাই করেছেন যে, বিমান দুর্ঘটনায়ও মারা যেতে পারতেন। এমন দুর্ঘটনার হার অবশ্য কম; কালক্রমে এটা আরও কমে আসছে। তাতে কী? ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীসহ বিভিন্ন সহিংস গোষ্ঠী তো তৎপর রয়েছে বিশ্বের নানা স্থানে। উত্তর ইউক্রেনের আকাশ থেকে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী বিমান ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে নামানোর দিন আমিও কয়েক প্রিয়জনকে সেলফোন, জিমেইল বা ফেসবুকের মাধ্যমে এ উদ্বেগ জানিয়েছি যে, বিমানে যাত্রী হওয়াটা অত নিরাপদ নয়। যাদের বেছে বেছে ওই কথা লিখেছি, কাজের সূত্রে তাদের ঘন ঘন বিমানে উঠতে হয়। কী করবেন তারা? দ্রুত দূরের গন্তব্যে পৌঁছার আর কোনো ব্যবস্থা তো নেই। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ওই ফ্লাইটে বাংলাদেশের কোনো যাত্রী ছিল না। থাকলে তাকে ও তার স্বজনদের নিয়ে আমরা হয়তো বিশেষভাবে নিউজ করতাম। এটাই স্বাভাবিক। তা সত্ত্বেও ‘ওদের’ খবরে চোখ বুঁজে থাকতে পারছি না আমরা। এ ধরনের ঘটনায় কোন দেশের কোন পরিবারটি শেষ হয়ে গেল বা কে শেষ মুহূর্তে উঠলেন না ওই বিমানে, তার চেয়েও বড় আকর্ষণের বিষয় হয়ে উঠেছে এর রাজনীতি। ইউক্রেনে সক্রিয় রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরাই ‘ভুল করে’ ওই অপকর্ম করেছে, এটা এখন প্রায় নিশ্চিত। এমন অভিযোগও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না যে, ইউক্রেন সরকারের অনুগত বাহিনীও কাজটি করে থাকতে পারে– প্রতিপক্ষের ঘাড়ে দোষ চাপাতে। যে ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে বিমানটি ধ্বংস করা হয়েছে, তা রয়েছে ইউক্রেন সরকারের হাতেও। এক আকাশপথে, প্রায় একই সময়ে রাশিয়ান নেতা ভ্লাদিমির পুতিনও নাকি ফিরছিলেন লাতিন আমেরিকা থেকে। বলা হচ্ছে, তাঁকে বহনকারী জেট ভেবেই নাকি ছোঁড়া হয় ক্ষেপণাস্ত্র আর এটা আঘাত হানে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সে। স্পষ্টতই এ ধরনের প্রচারণার টার্গেট হল ইউক্রেনের উগ্র জাতীয়তাবাদীরা। ইউক্রেনের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে চাওয়া বিদ্রোহীদেরও ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে রাশিয়ান ফেডারেশন বা রাশিয়া। রাশিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় ঘটেছে বলে এমন অভিযোগও শুরুতে উঠেছিল যে, রাশানরাই ঘটাল কিনা। এসব খুব চলছে এখন মালয়েশিয়ার ওই বাণিজ্যিক ফ্লাইটটি বিধ্বস্ত হয়ে ক্রুসহ ২৯৮ জনের করুণ মৃত্যু ঘটার পর। মানুষের এ ধরনের মৃত্যু হলে আমরা আর আগ্রহী থাকি না তাদের বহনকারী যানটির বিষয়ে। জানতে চাই না, এতে ওই বিমান সংস্থার কী ক্ষতি হল; তার ব্যবসা বসে পড়ল কিনা। মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত খবর কিন্তু রয়েছে। এর আগে একই বিমান সংস্থার আরেকটি যাত্রীবাহী বিমান জাস্ট হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সেটির অস্তিত্ব বা ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়নি। পরবর্তী ঘটনায় অবশ্য সান্ত্বনা রয়েছে বিমানের ধ্বংসাবশেষ ও হতভাগ্যদের লাশ খুঁজে পাওয়ার। হোক ছিন্নভিন্ন, তবু লাশ তো। বিমানযাত্রী শিশুদের পুতুল পাওয়া গেছে ইউক্রেনের গম ক্ষেতে। তরুণ বয়সে আমরা যারা কমিউনিস্ট হয়েছিলাম, তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ইউক্রেন নিয়ে অনেক গর্ব করতাম। ভালোবাসার তোড়ে বলে ফেলতাম, ইউক্রেন হল পৃথিবীর ‘শস্য ভাণ্ডার’। কথাটা একেবারে মিথ্যে নয়। গম উৎপাদনে ইউক্রেনের জুড়ি মেলা ভার। ওখানে উৎপাদন মার খেলে আন্তর্জাতিক গমের বাজারে তার সরাসরি প্রভাব পড়ে। যাহোক, সেই গম ক্ষেতে সিটবেল্ট বাঁধা এক হতভাগ্যের খণ্ডিত মৃতদেহের পাশে পড়ে ছিল একটা আইফোন। বিশ্বে কেবল আইফোনের মতো কমিউনিকেশন টুলস তৈরি হচ্ছে না, তৈরি হচ্ছে ভূমি থেকে দূর আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র। কত উঁচু দিয়ে যাবে? ৩০-৩২ হাজার ফুট তো? সেখানেও তোমার ওপর সফলভাবে হামলা চালাব আমি! ইউক্রেনের বিদ্রোহীরা কিছুদিন আগেই নাকি ওই অঞ্চলে সরকার অনুগত বাহিনীর দুটি সামরিক বিমান ভূপাতিত করেছিল। তাতেও নিশ্চয়ই মারা গিয়েছিল কিছু লোক। সেটা বড় খবর হয়নি অবশ্য। ওটা তো যুদ্ধের মধ্যেকার ব্যাপার! যুদ্ধে সবই নাকি সিদ্ধ। ইউক্রেনে কী নিয়ে যুদ্ধ বেঁধেছে, তা আমরা কমবেশি জানি। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের একাংশ আর ‘ব্যাকগিয়ার’ থেকে উঠে আসতে চাওয়া রাশিয়াও খেলছে ওখানে। মুশকিল হল, খেলতে খেলতে ইউক্রেনে মনে হয় সরাসরি জড়িয়ে পড়ল রাশিয়া। শেষ পর্যন্ত যদি প্রমাণ হয়, ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীরাই ওই ঘটনা ঘটিয়েছে আর তা ঘটানো হয়েছে রাশিয়ার সরবরাহকৃত অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে, তাহলে? রাশিয়ার ওপর বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ক্রমে বাড়ছে। এতে দেশটির অবশ্য তেমন যায় আসে না। রাশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা এখন মন্দ নয়। তাছাড়া সে বেশি ব্যবসা করে জার্মানিসহ ইউরোপের সঙ্গে। এ অবস্থায় নিষেধাজ্ঞা সর্বব্যাপী হয়ে না উঠলেই হল। রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ও প্রভাবের বিষয়টি অবশ্য উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রাশিয়াও সেটি দিচ্ছে না বলে ইউক্রেনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্তে তারা সহায়তা জোগাচ্ছেন। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা অবশ্য ভালো আচরণ করেনি। যতটুকু করেছে, ততটাও করত না তাদের মুরুব্বির সবুজ সংকেত না পেলে। ইউক্রেনে সংঘটিত ওই ঘটনায় শেষ পর্যন্ত কী হয়, তা দেখার অপেক্ষায় আমরা থাকব। তবে নিহতের স্বজনরা ঘটনাটির ‘ট্রমা’ কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলেই মঙ্গল। ইউক্রেন পরিস্থিতির সঙ্গে কোনোভাবে সম্পর্কিত না থেকেও ওই বিমানের যাত্রীরা যেভাবে মারা পড়ল, তাতে এত দূর থেকে আমরাও কিন্তু বিপন্ন বোধ করছি। বিপন্নতাটা ওখানে যে, আমাদেরও এক কোটির মতো লোক মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে থাকে, যাতায়াত করে। এদেশে এমন বেশ কিছু পরিবার রয়েছে, যাদের সন্তানরা মাসে অন্তত একবার বিমানযোগে কোথাও না কোথাও যায়। তাদের কেউ যদি কোনোদিন কোথাও এমনিভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়ে! বিচ্ছিন্নতাবাদী বা বিদ্রোহী তৎপরতা তো কেবল ইউক্রেনে চলছে না। মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক স্থানে ভয়াবহ যুদ্ধ-বিগ্রহ চলছে এখন। বাংলাদেশি কর্মজীবীরা এর মধ্যে কোথাও কোথাও আটকে পড়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে দেখে তারা ওখানে গিয়েছিল রোজগার করতে। সেটা দ্রুতই আবার অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে গণতন্ত্র আসবে বলে আমরা উৎসাহী হয়ে উঠেছিলাম, সেসব স্থানেও পরিস্থিতি এখন কমবেশি অস্বাভাবিক। সিরিয়া ঘিরে চলছে ভয়াবহ যুদ্ধ। ওটা প্রভাব ফেলেছে ইরাকে। ওখানেও একই ধর্মাবলম্বীর মধ্যে জাতপাতের বিদ্বেষ তীব্র হয়ে উঠেছে আর বইছে রক্তের নদী। ওইসব স্থানেও যুদ্ধরত বাহিনী বা গোষ্ঠীগুলোর হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র। যত অত্যাধুনিক অস্ত্রই হোক, চাহিদা থাকলে তা কিন্তু জোগাড় হয়ে যাচ্ছে। বিরোধ উস্কে দিয়ে শেষ বিচারে ব্যবসায়িক ফায়দা লুটতে বিনামূল্যেও মারণাস্ত্র জোগাচ্ছে শক্তিধর দেশ ও মহল। ইউক্রেন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কী ওই বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে হয়েছিল? কেনার প্রয়োজন নেই বোধহয় এজন্য যে, তারা তো রাশিয়ার হয়েই লড়ছে। এসব মারণাস্ত্র বানানোর প্রযুক্তিও গোপন থাকছে না। গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী হামাস যেসব রকেট ছুঁড়ছে ইসারয়েল ভূখণ্ডে, সেগুলো নাকি তাদেরই বানানো। অবরুদ্ধ হয়ে থাকায় তারা মানসম্মত ক্ষেপণাস্ত্র জোগাড় করতে পারছে না। পার্শ্ববর্তী কোনো আরব রাষ্ট্রই দৃশ্যত আর আগ্রহ দেখাচ্ছে না তাদের লড়াইয়ে। হামাস অর্থ সঙ্কটেও রয়েছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার মুখে নিজ কর্মচারীদের বেতনও জোগাতে পারছে না তারা। এরই মধ্যে তো শুরু হয়ে গেল পুরোদস্তুর যুদ্ধ। ওইসব অঞ্চলের আকাশপথ কি বাণিজ্যিক ফ্লাইটের জন্য নিরাপদ, কার্গো বিমানের জন্য? পাকিস্তান-আফগানিস্তানের যেসব অঞ্চলে মনুষ্যবিহীন বিমান বা ‘ড্রোন’ হামলা চালায় আমেরিকা, সেসব অঞ্চল? কিংবা মালির ওই অংশে, যেখানে ফরাসিরা গিয়ে বিদ্রোহ দমনে শামিল হয়েছে? কিংবা নাইজেরিয়ার যে অঞ্চলে বোকো হারাম (অর্থ, ‘পশ্চিমা শিক্ষা হারাম’) শক্তিশালী? তারা কী রকম ভয়ঙ্কর, সেটি বুঝিয়ে দিয়েছে দলে দলে স্কুলছাত্রী অপহরণ করে। এদের ইচ্ছেমতো বিয়ে করেছে তারা; বেচেও দিয়েছে সহযোগী বিদ্রোহীদের কাছে। এদের পক্ষে মনে হয় সবই সম্ভব। পশ্চিমা সংস্থার কোনো যাত্রীবাহী বিমান উড়িয়ে দিয়ে হয়তো নির্বিকারভাবে বলবে, এদের বিমানে চড়া হারাম! দুর্ভাগ্যজনক হল, আইফোনের যুগে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের গোষ্ঠীর উদ্ভব হচ্ছে। কেন হচ্ছে, তার রয়েছে নানা ব্যাখ্যা। এ ক্ষেত্রে কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্বও কার্যকরভাবে উপস্থিত। শক্তিধর দেশ বা মহলের ভূমিকার বিষয়ে রয়েছে নানা জল্পনা। কিন্তু বাস্তবতা হল, তারাই এখন পর্যন্ত মূলধারার বৈশ্বিক ঘটনাবলীর নিয়ন্ত্রক। এদের কাছেই আবার প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি। সব মিলিয়ে পরিস্থিতিটা বিভ্রান্তিকর ও লজ্জাজনক। প্রাত্যহিক জীবনে নিজ নিজ বৃত্তে ব্যস্ত থেকে এটা অবশ্য ভুলে থাকি আমরা। নড়েচড়ে উঠি, যখন ইউক্রেনের আকাশে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে। দেখা যায়, এর নেপথ্যে আছে আঞ্চলিক রাজনীতি। মধ্যপ্রাচ্যের গণতন্ত্রের অভিজ্ঞতাহীন দেশগুলোকে অবশ্য মাফ করে দিতে হয়। প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্নকারী সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ইউক্রেনে সম্প্রতি যা ঘটল, তার প্রেক্ষাপটেই বলছি এটা। বড় লজ্জা হচ্ছে। কারণ আমরাও সমাজতন্ত্রী হয়েছিলাম। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে দেশে দেশে ‘নতুন ধরনের মানুষ’ তৈরি হচ্ছে বলে বিশ্বাস ও তা প্রচার করতাম আমরা। সমাজতন্ত্র ধসে পড়ার পর দেখছি তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে উগ্র জাতীয়তাবাদ, জাতপাত, ধর্মান্ধতা এবং আরও নিকৃষ্ট জিনিস। তাদের মধ্যে যে পুঁজিবাদ দেখছি, সেটিও ভীষণ দুর্বৃত্তায়িত। কোথাও কোথাও আবার সমাজতান্ত্রিক আমলাতন্ত্রের ভেতর ঘটানো হচ্ছে পুঁজিবাদের বিকাশ। সেটি নিয়ে গর্বও করা হচ্ছে! মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে ধ্বংসের জন্য অবশ্য কেউ গর্ব করবে না। রাশিয়াও বলবে, এ রকম বেপরোয়া ব্যবহারের জন্য ওগুলো দেওয়া হয়নি তাদের। অনেকে বলেন, বিধিবদ্ধ বা নিয়মিত বাহিনীর হাতে এসব ক্ষেপণাস্ত্র থাকলে সমস্যা নেই। সমস্যা হয় বিদ্রোহী বা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে এসব চলে গেলে। এতটা সরলভাবে বলা যায় কী? কিছুটা ভিন্নধর্মী হলেও এ ধরনের ঘটনা তো এই প্রথম ঘটল না। ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখছি, সত্তর-আশি ও নব্বই দশকে ছোট-বড় বেসামরিক বিমানে এ প্রকৃতির হামলা আরও বেশ কয়েকটি ঘটেছে। শুধু ‘দায়িত্বহীন’ জঙ্গি গোষ্ঠী বা সরকার নয়, পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত অনুগত বাহিনীও ক্ষেপণাস্ত্র বা ফাইটার জেট থেকে গুলি ছুঁড়ে যাত্রীবাহী বিমান ধ্বংস করেছে। এজন্য পরে ‘ভুল’ স্বীকারপূর্বক কোনো কোনো পক্ষ সম্মত হয়েছে ক্ষতিপূরণ দিতেও। সুতরাং বড় কথা কেউ বলতে পারবে না। সর্বসাম্প্রতিক ঘটনায় যে ইউক্রেন সরকার সাধুর মতো কথা বলছে, তার সেনারাও রাশিয়াগামী একটি সাইবেরিয়ান বেসামরিক বিমান গুলি করে নামায় ২০০১ সালের অক্টোবরে আর তাতে সব যাত্রী মারা যায়। এ অঞ্চলে, শ্রীলঙ্কায়ও একদা সক্রিয় তামিল বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যাত্রীবাহী বিমান ধ্বংসের অভিযোগ রয়েছে। জানি না, আমাদের দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়া এসব ঘটনার জন্য অভিযুক্তরা কখনও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কোনো আদালতে দণ্ডিত হবে কিনা। তার চেয়ে বড় কথা, এসব অস্ত্রের বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়া রোধ হবে কীভাবে? বোদ্ধারা বলেন, এটা প্রায় অসম্ভব। অভিজ্ঞতাও তাদের বক্তব্য সমর্থন করে। তাহলে? তাহলে তো শান্তি আন্দোলনকারীদের ওই কথাই মানতে হয় যে, এগুলোর উৎপাদনই বন্ধ করতে হবে। মানববিধ্বংসী কোনো অস্ত্রই উৎপাদন করা যাবে না– এটা নিজের কানেই আবার আপ্তবাক্যের মতো শোনাচ্ছে। আর কী বিকল্প আছে, সেটাও অস্পষ্ট। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৪-০৭-০১৪:
Link copied!