AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

খুদে ছাত্রের বুকে লাথি


Ekushey Sangbad

০৬:১৮ এএম, জুলাই ২৪, ২০১৪
খুদে ছাত্রের বুকে লাথি

একুশে সংবাদ : সাড়ে তিন বছরের বাচ্চাটির উপর অন্ধ আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মহিলা। তাকে উল্টো করে ঝুলিয়ে আছড়ে ফেলল বিছানার উপর। তার পর সপাটে একের পর এক থাপ্পড়, ঘুষি। শিশুটি কোনও মতে নেমে কিছু বলার চেষ্টা করে। হাতজোড় করে ক্ষমা চায়। আর গোলাপি সালোয়ার-কামিজ পরা মধ্য তিরিশের মহিলা প্রায় ফুটবল খেলার মতো করে লাথি কষাতে থাকে তাকে। সিসিটিভি ফুটেজে এই দৃশ্য দেখে ভয়ে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন শালিনী অগ্রবাল। বন্ধ ঘরের ভিতরে কেন তাঁর শিশুপুত্রকে গৃহশিক্ষিকা এ ভাবে মারছে, সেটা কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না তিনি। যদিও বেশ কিছু ক্ষণ ধরেই ছেলের কান্নার আওয়াজ আসছিল। তার পর ওই দৃশ্য! বারবার দরজায় ধাক্কা দিয়েছিলেন মা, লাভ হয়নি। বেশ খানিক ক্ষণ পরে দরজা খুলতে দেখা যায়, বিছানার উপর নেতিয়ে পড়ে রয়েছে শিশুটি। শিক্ষিকার কাণ্ড! প্রথমে উল্টো করে ঝোলানো। তার পর আছড়ে ফেলে থাপ্পড়। শেষে বুকে লাথি। গৃহশিক্ষিকার হাতে এই নির্মম ছাত্র নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে লেকটাউন থানার দক্ষিণদাঁড়ি এলাকায়। মঙ্গলবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটার পরেও ভয়ে চুপ ছিলেন শিশুর বাবা-মা। শিক্ষিকার স্বামী তাঁদের হুমকি দিচ্ছিল বলে অভিযোগ। শেষমেশ বুধবার সকালে লেকটাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন শিশুর মা। তবে এ দিন রাত পর্যন্ত পূজা সিংহ নামে ওই গৃহশিক্ষিকার খোঁজ মেলেনি। তবে তার স্বামী চাঁদনি চকের একটি দোকানে কাজ করে বলে জানা গিয়েছে। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসি (সল্টলেক) দেবাশিস ধর বলেন, “অভিযুক্তের খোঁজে সম্ভাব্য সমস্ত জায়গায় তল্লাশি শুরু হয়েছে।” সাড়ে তিন বছরের বাচ্চাটি মৌলালির সেন্ট জেম্স স্কুলে নার্সারির ছাত্র। গত ১৫ জুলাই তার জন্য পূজাকে গৃহশিক্ষিকা হিসেবে রাখা হয়েছিল। শালিনীদেবী বলেন, “আমাদের এক নিকট বন্ধুর মাধ্যমে পূজার খোঁজ পেয়েছিলাম। ও যে এমন আমানবিক আচরণ করবে, তা স্বপ্নেও ভাবিনি। আজ আমার ছেলের সঙ্গে যা হয়েছে, এ রকম যেন কারও সঙ্গে না-হয়।” শালিনীদেবী এ দিন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার পড়াতে এসে পূজা তাঁকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। তার দাবি ছিল, মা ঘরে থাকলে ছেলে ঠিকমতো পড়াশোনা করবে না। শালিনী বেরিয়ে যেতেই দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেয় পূজা। শালিনী পরে সাংবাদিকদের বলেন, “কিছু ক্ষণ পর থেকেই ছেলের কান্নার আওয়াজ পাচ্ছিলাম। কেন কাঁদছে জিজ্ঞাসা করলে পূজা ভিতর থেকে বলছিল, ‘আপনি বাজারে চলে যাচ্ছেন ভেবে ও কাঁদছে।’ কিন্তু অনেক ক্ষণ ধরে কান্না শুনে সন্দেহ হয়েছিল। অগ্রবাল পরিবারের প্রতিটি ঘরেই নিরাপত্তার কারণে সিসিটিভি লাগানো রয়েছে। সন্দেহের বশেই ড্রয়িং রুমের কম্পিউটার খুলে সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখতে বসেছিলেন শালিনীদেবী। তখনই দেখতে পান তাঁর ছেলেকে কী নিষ্ঠুর ভাবে মারধর করছে পূজা। আতঙ্কিত মা দরজায় ধাক্কা মারতে শুরু করেন। কিন্তু দরজা খুলতে চায়নি পূজা। বেশ কিছু ক্ষণ পরে দরজা খোলে সে। শালিনীদেবী বলেন, “ঘরে ঢুকে দেখি বিছানার উপর ছেলেটা পড়ে আছে। পূজাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কেন ওকে মেরেছে? ও বলে, ‘না মারিনি, এমনি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।” শালিনীদেবীর অভিযোগ, তিনি যখন ছেলেকে বিছানা থেকে তুলতে যান, তখনই সুযোগ বুঝে চম্পট দেয় পূজা। ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলেন না শালিনীর স্বামী সঞ্জয় অগ্রবাল। তিনি তখন ব্যবসার কাজে রাশিয়া যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। খবর পেয়ে ৪টে নাগাদ তড়িঘড়ি বাড়ি চলে আসেন সঞ্জয়বাবু। তিনি বলেন, “এসে দেখি ছেলেটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পিঠে, মুখে, গায়ে আঘাতের দাগ।” তাঁর অভিযোগ, ৫টা নাগাদ পূজার স্বামী রোহিত সিংহ এসে হুমকি দেয়, ঘটনাটা যেন পুলিশ কিংবা অন্য কাউকে জানানো না-হয়। সঞ্জয়বাবুরা জানান, ভয়ে তাঁরা রাত পর্যন্ত কাউকে কিছু বলেননি। তবে রাতে একটু বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে বাচ্চাটিকে স্থানীয় নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন আত্মীয়-বন্ধুদের পরামর্শ মতো লেকটাউন থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন শালিনীদেবী। পুলিশ ওই শিশুর ডাক্তারি পরীক্ষা করতে তাকে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যায়। বুধবার দিনভর সংবাদমাধ্যমে সিসিটিভি ফুটেজটি দেখে শিহরিত হয়েছেন দর্শকরা। পূজা সিংহের শাস্তির দাবি উঠেছে সর্বত্র। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বর্বরোচিত ঘটনা। নিন্দার ভাষা নেই।” শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ঘটনাটি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁকে মৌখিক ভাবে সব জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার লিখিত রিপোর্ট দেওয়া হবে। এ দিন রাজ্যের শিশুকল্যাণ কমিটি এবং শিশু সুরক্ষা কমিটির প্রতিনিধিরা দক্ষিণদাঁড়িতে যান। বিকেলে অগ্রবাল পরিবারের ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটি তখনও আতঙ্কগ্রস্ত। তার থেকে বছর দুয়েকের বড় দিদির সঙ্গে এক ঘরে থাকে সে। এক আত্মীয় বলেন, “এখনও ওর জ্বর রয়েছে। মাঝেমধ্যেই কেঁদে উঠছে। মা-বাবার কাছে যেতেও ভয় পাচ্ছে।” এ দিন ওই বাড়িতে এসেছিলেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সুজিত বসুও। তিনিও আশ্বাস দিয়ে বলেন, “পুলিশকে বলেছি অবিলম্বে শিক্ষিকাকে খুঁজে বার করতে হবে।” কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে এক জন গৃহশিক্ষিকা এ ভাবে বাচ্চাকে মারধর করতে পারেন?মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম বলেন, “ছবি দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ওই মহিলার মানসিক বিকৃতি রয়েছে। স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে ও ভাবে এক শিশুকে লাথি মারা অসম্ভব।” নীলাঞ্জনা সান্যাল-প্রথমা চৌধুরীর মতো মনস্তত্ত্ববিদরাও বলছিলেন, কারও কারও মধ্যে এক ধরনের আগ্রাসী মনোভাব থাকে। তাঁরা আবেগ-উত্তেজনাকে বশে রাখতে পারেন না। এটা অসুস্থতারই লক্ষণ। শালিনীদেবীর কাছ থেকে পূজার ফোন নম্বর এবং বাড়ির ঠিকানা নিয়ে এ দিন দুপুরে পুলিশ বাগুইআটির বিদ্যাসাগর পল্লিতে গিয়েছিল। কিন্তু দেখা যায়, ওই এলাকায় ওই নম্বরের কোনও বাড়িই নেই। তবে এ দিন সন্ধ্যায় বাগুইআটির জর্দাবাগান এলাকায় গিয়ে জানা যায়, সেখানে একটি ফ্ল্যাটে বছর পাঁচেক আগে পরিবারের সঙ্গে থাকত পূজা। প্রতিবেশীরা জানান, পূজা নিজের আড়াই বছরের মেয়েকেও মারধর করত। স্বামীর সঙ্গেও তার রোজই হাতাহাতি হতো। ভাঙচুরও চলত। সেই শব্দ পড়শিরা শুনতে পেতেন। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৪-০৭-০১৪:
Link copied!