AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

নানা বিরম্বনায় শিকড়ের টানে ছুটছে মানুষ


Ekushey Sangbad

০৬:৫০ এএম, জুলাই ২৫, ২০১৪
নানা বিরম্বনায় শিকড়ের টানে ছুটছে মানুষ

একুশে সংবাদ : রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ছিল ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়। এতে সৃষ্টি হয় তীব্র জনজটের। মূলত ঈদের ছুটির সঙ্গে আগে ও পরে সরকারি ও অঘোষিত ছুটি মিলিয়ে নয় দিনের দীর্ঘ ছুটির কারণে এবার একটু আগে ভাগেই ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাতে শত দুর্ভোগ সঙ্গী করেই শিকড়ের টানে ঘরে ফিরছেন তারা। তবে বাড়িফেরার এই যাত্রার শুরুতেই বাস-ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বাস যাত্রীদের নির্ধারিত সময়েরও এক থেকে দুই ঘণ্টা বেশি অপেক্ষা করতে হচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির ফাঁদে না পড়লেও এবার ঘরমুখো যাত্রীদের রয়েছে পথে পথে নানা দুর্ভোগের দুশ্চিন্তা। বেহাল সড়ক আর যানজট নিয়ে শংকা তাদের। গত বছর দুই ঈদেই বিএনপি-জামায়াতের হরতালের ফাঁদে পড়ে রাজধানীবাসী। টিকিট কেটেও ৪০ ভাগ যাত্রীই টিকিট ফেরত দিয়েছিলেন। তাই দু'বছর পর এবার অনেকের কাছে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়ার আনন্দটাও যেনো দ্বিগুণ। ফলে পথের দুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় নিয়েই তারা যাত্রা শুরু করেছেন। রেলওয়ে, পরিবহন সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর হিসেব মিলেয়ে দেখা গেছে, এবার ঈদে সড়ক, রেল ও নৌপথে রাজধানী ছাড়বেন পৌনে এক কোটি লোক। গতকাল থেকে আগামী সোমবার পর্যন্ত পাঁচ দিন চলবে এই বাড়ি ফেরার ধুম। এই কয়েক দিনে প্রতিদিন ঢাকা ছাড়বে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। সবচেয়ে বেশি মানুষ যাতায়াত করবে সড়ক পথে। গণপরিবহন ছাড়াও ব্যক্তিগত গাড়িতে এবং অনেকে মাইক্রোবাস ভাড়া করে দেশের বাড়ি যাবেন। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, শুক্র ও শনিবার সবচেয়ে বেশি মানুষ রাজধানী ছাড়বে। তব ঈদের আগের দিন পর্যন্ত বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটবেন রাজধানীবাসী। গতকাল সর্বশেষ ট্রেন ও বিআরটিসি বাসের ২৮ জুলাইয়ের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে। ঈদ আনন্দ যাত্রার শুরতেই টিকিট নেই বললেই চলে। সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল রাজধানীর বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে সকালের দিকে যাত্রীর চাপ কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। দুপুর গড়াতেই রাজধানীর বাস টার্মিনাল গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ, কমলাপুর রেলস্টেশন এবং সদরঘাট নদী বন্দর মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এজন্য এসব এলাকার সড়কগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রচণ্ড গরমে ক্লান্ত যাত্রীরা এসব টার্মিনালে বিশ্রামের পর্যাপ্ত স্থান না পেয়ে আরও অস্থির হয়ে পড়েন। বেশ কয়েকটি বাস কোম্পানি যাত্রীদের জন্য বিশেষ বসার ব্যবস্থা করলেও তা ছিল অপ্রতুল। কয়েকটি বাস কোম্পানির ও ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে গতকাল। এজন্য কাউন্টার ও স্টেশনে যাত্রীদের অতিরিক্ত সময় বসে থাকতে দেখা গেছে। সকড়পথে ঈদযাত্রা: গতকাল সরেজমিনে রাজধানীর গাবতলি টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়। বিকালে এই ভিড় মারাত্মক আকার ধারণ করে। রাতে গাড়ি ছাড়ার সময় নির্ধারিত থাকলেও অনেকে বিকালের মধ্যেই বিভিন্ন বাস কাউন্টারে আসতে শুরু করেন। এ কারণে দুপুরের পর রাজধানীর কলেজগেট এলাকা থেকে গাবতলী, মিরপুর-১ থেকে টেকনিক্যাল মোড়, মিরপুর-১ থেকে মাজার রোড সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে অনেককে হেঁটে যেতে দেখা গেছে। এদিকে গাবতলি বালুর মাঠে কয়েকটি পরিবহন সার্ভিসের বাস কাউন্টার রয়েছে। সেখানে যাত্রীদের বসার জন্য সামিয়ানা টাঙ্গানো হয়েছে। সেখানে গতকাল সকাল থেকে শত শত যাত্রীকে বিভিন্ন গন্তব্যের বাসের জন্য অপেক্ষমাণ দেখা গেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ের একটু আগেই তারা কাউন্টারে পৌঁছেন। কিন্তু বাস সময়মত ছাড়ছে না। লাবনী খাতুন ও মেরিনা সুলতানা নামের সাতক্ষীরাগামী দুই যাত্রী ইত্তেফাককে জানান, 'তাদের একে ট্রাভেলসের বাসের টিকিট কাটা ছিল সোয়া ৮টায়। কিন্তু গাড়ি ছেড়েছে ৯টার পরে।' রাজধানীর সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালেও ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। যাত্রাবাড়ি চৌরাস্তা ও টার্মিনালের আশপাশ থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস যাত্রী পরিবহন করছে। গতকাল সায়েদাবাদে দূরপাল্লার বিভিন্ন বাসে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করা হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। ঢাকা বাস-ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশনের হিসাবে একেক দিনের জন্য আগাম টিকিট বিক্রি হয়েছে প্রায় তিন লাখ। এই যাত্রীদের অর্ধেকের বেশি উত্তরাঞ্চলের। এরপরই দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা রয়েছেন। তবে খেটে খাওয়া মানুষের বেশিরভাগ আগাম টিকিট কেনেননি। তারা টার্মিনালে এসে সাধারণ পরিবহনে ভ্রমণ করবেন। তবে আগাম টিকিটের চেয়ে এই শ্রেণির যাত্রীর সংখ্যা বেশি। এবার ঈদে সড়ক পথেই সবচেয়ে বেশি যাত্রী ভ্রমণ করবে বলে তাদের ধারণা। রেলপথে ঘরে ফেরা: পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঘরমুখো মানুষ ট্রেনে চড়ে বাড়ি ফিরছে আনন্দ নিয়ে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত ২২ টি ট্রেন রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। পূর্ব ও পশ্চিম রেলে সব মিলিয়ে ৩৩৫টি ট্রেনে পরিবহন করা হবে ঈদের যাত্রী। পূর্ব ও পশ্চিম রেলে ৮৮টি আন্তঃনগর ট্রেন, ৬২টি মেইল ও এক্সপ্রেস ট্রেন, ১৩ জোড়া বিশেষ ট্রেন যাত্রী পরিবহন করবে ৪০০ রেলস্টেশনে। এরমধ্যে কমলাপুর থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে ২৮টি আন্তঃনগর ট্রেন। গতকাল সকাল ৬টা ৫৫ মিনিটে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দিনের প্রথম ট্রেনটি ছাড়ে। সিলেটগামী এই ট্রেনের নাম পারাবত। যুদ্ধজয়ের মত করে গত ২০ জুলাই যারা আগাম টিকেট সংগ্রহ করেছিলেন তারা এই ট্রেনের যাত্রী। জানা গেলো, ট্রেনটি ৬টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ার কথা ছিল। তবে মাত্র ১০ মিনিট বিলম্ব মেনে নিয়েছেন যাত্রীরা। এরপর একটার পর একটা ট্রেন ছাড়তে শুরু করে। সুন্দরবন ট্রেনটি ৩৫ মিনিট দেরীতে স্টেশন ছাড়ে বলে রেলস্টেশন কর্মকর্তারা জানান। বাকি সব ট্রেনই যথাসময়ে স্টেশন ছেড়েছে। সকাল ১০টার দিকে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত ও টিকিট বিক্রি পরিদর্শন করেন রেলের মহাপরিচালক তোফাজ্জল হোসাইন। তিনি জানান, এখনো পর্যন্ত কোন যাত্রী ভোগান্তির অভিযোগ নেই। শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়রোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এবার টিকিট কালোবাজারি সম্পূর্ণ বন্ধ আছে। তাই মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারছেন। ঈদের ছুটি কাটাতে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে স্টেশনে ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। ঘরমুখো যাত্রী এবং টিকিট প্রত্যাশী মিলিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে এখন জনসে াত। যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ নিয়োজিত আছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার খায়রুল বশীর বলেন, ট্রেনগুলো সময়মত ছাড়া সম্ভব হচ্ছে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি এবার কম। যদি কোথাও বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় তবে সময়মত ট্রেন ছাড়ার ধারা অব্যাহত রাখা হবে। তিনি জানান, কমলাপুর স্টেশন থেকে স্ট্যান্ডিং টিকেট দেয়া হচ্ছে। শনিবার থেকে ৫ জোড়া অতিরিক্ত ট্রেনও চলবে। ঝুঁকি মাথায় নিয়ে নৌ-যাত্রা: অন্যান্যবারের মতো এবারও ঝুঁকি মাথা নিয়েই নৌ-পথে ঘরে ফেরা শুরু করেছেন যাত্রীরা। বর্ষার ভরা মৌসুমের কারণে মূলত এই ঝুঁকি। তবু নানা ভোগান্তি উপেক্ষা করে নৌপথে ঘরে ছুটছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। সদরঘাটে ঝামেলাহীন গন্তব্যে পৌঁছতে আগে ভাগেই লঞ্চে নিজের আসনটি দখল করতে ব্যস্ত যাত্রীরা। প্রতিটি লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী না থাকলেও ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনের সঙ্গে ঈদের ছুটি মিলে যাওয়ায় অনেক যাত্রীই অফিস ছুটির পর বাড়ির পথ ধরবেন। তাই রাতে লঞ্চে যাত্রীর চাপ বাড়বে। যাত্রী চাপ কমাতে নানা উদ্যোগ: এদিকে ঈদে যাত্রী পরিবহনে সব ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলায় স্বরাষ্ট্র, যোগাযোগ, রেলপথ, নৌ-মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বেশ কিছু প্রস্তুতি নিয়েছে। একইসঙ্গে বিপুল যাত্রীর চাপ কমাতে তৈরি পোশাক কারখানাগুলো ভিন্ন সময়ে ছুটি দেয়া হচ্ছে। মহাসড়কে যাতে যানজট সৃষ্টি না হয় সে জন্য পুলিশ গাড়ি থামাবে না। পরিস্থিতি তদারকি করতে শনিবার থেকে রাজধানীর এলেনবাড়ীতে চালু হচ্ছে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-মানিকগঞ্জ, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাসস্ট্যান্ড ও বাজার এলাকায় যানজট নিরসনে বিশেষ নজর রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ১২ জেলা প্রশাসনকে। ঈদে বাড়ি ফেরার ক্ষেত্রে বাস, ট্রেন ও লঞ্চে যাতে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা না হয় সেদিকেও বিশেষ নজর রাখবে পুলিশ, নৌ পুলিশ ও মোবাইল টিম। রাজধানীর সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, কাঁচপুর, গাবতলী, আমিন বাজার, টঙ্গী, জয়দেবপুর, চন্দ্রা এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশের বিশেষ টিম কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে গাবতলীতে ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। মহাসড়ক সচল রাখতে ঈদের তিন দিন আগে ও দুই দিন পরে তৈরি পোশাক, জ্বালানি ও পচনশীল খাদ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। ফেরিতে চাপ কমাতে ভারী যান পরিবহন বন্ধ থাকবে সাত দিন। এছাড়া রেলপথে পণ্যবাহী রেলও সাত দিন চলাচল বন্ধ থাকছে।  
Link copied!