AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ঈদের আনন্দ, ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ


Ekushey Sangbad

০৫:৪৭ এএম, জুলাই ২৬, ২০১৪
ঈদের আনন্দ, ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ

একুশে সংবাদ : আনন্দের ঈদযাত্রায় পথে পথে দুর্ভোগ পেরিয়ে ঘরমুখো হচ্ছে লাখো মানুষ। গতকাল ছুটির দিনে রাজধানীর রেল স্টেশন-বাস টার্মিনালে ছিল বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল। রাস্তার যানজট, বাস ও ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় এবং মহাসড়কের বেহাল দশায় ভোগান্তি পিছু ছাড়ছে না ঈদযাত্রীদের। ভোর থেকেই নগরীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে ছিল হৈচৈ, চিৎকার-চেঁচামেচির পরিবেশ। ফিরতি বাস সময়মতো না আসায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে পরিবার-পরিজন নিয়ে টার্মিনালে আসা মানুষের। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, পরিবহনকর্মীরা গন্তব্যভেদে দ্বিগুণ ভাড়াও আদায় করেছেন। টার্মিনালে উপচে পড়া ভিড়, ঠেলা-বিপত্তি উপেক্ষা করেই নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধরা বাড়ি যাওয়ার যুদ্ধে নেমেছেন। কমলাপুর স্টেশন থেকে প্রতিটি ট্রেন নির্ধারিত শিডিউলের অনেক পরে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। কোনোভাবে দরজা ঠেলে, জানালা দিয়ে ট্রেনের সিট পর্যন্ত যেতে পেরেই যুদ্ধজয়ের আনন্দে পরিতৃপ্তির হাসি হেসেছেন অনেকে। ভিতরে জায়গা না পেয়ে ট্রেনের ছাদে করেও বাড়ি ফিরেছে অসংখ্য মানুষ। গতকাল বেলা ১১টা ২০ মিনিটে গাবতলী বাস টার্মিনালে পৌঁছেই চোখে পড়ে রাজশাহীর যাত্রী আলী হোসেনের মলিন চেহারা। মডার্ন পরিবহন কাউন্টারের ঠিক সামনেই তিনি স্ত্রী, দুই শিশু সন্তান, বৃদ্ধা মা, এক বোন আর বেশকিছু বাক্স-পেটরা নিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন। চারপাশ ঘিরে থাকা কজন যানবাহনশ্রমিক নানা পরামর্শ দিচ্ছেন আলী হোসেনকে, কেউ কেউ শোনাচ্ছেন সান্ত্বনার বাণী। একটি সরকারি সংস্থায় সহকারী ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে নিয়োজিত আলী হোসেনের (৪০) বাড়ি রাজশাহীর তানোর এলাকায়। পরিবার-পরিজনসহ ঝামেলামুক্তভাবে বাড়ি যাওয়ার জন্য অগ্রিম টিকিট কেটে যথারীতি বেলা সোয়া ১১টার গাড়িতে গিয়ে ওঠেন। কিন্তু তার বরাদ্দ নেওয়া ডি-১, ডি-২, ডি-৩, ডি-৪ নম্বর সিটে অন্য দুজন ভদ্রলোকও বৈধ টিকিট (!) দেখিয়ে উঠে বসেন। সিটের দখল নিয়ে শুরু হয় বাদানুবাদ। একসময় তা হাতাহাতি পর্যায়েও গড়ায়। এরপরও সিট না পাওয়ার ব্যর্থতায় আলী হোসেনকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ব্যাগেজসহ গাড়ি থেকে নেমে আসতে হয়। ধস্তাধস্তির সময় নতুন কাপড়-চোপড় বোঝাই লাগেজটি তার খোয়া যায়। আলী হোসেনের স্ত্রী জানান, ওই লাগেজের ভিতরে গচ্ছিত ছিল টাকা-পয়সা। সাবধানতার জন্য তালা মারাও ছিল। অথচ পুরো লাগেজটাই যখন হাওয়া, তখন তালাবদ্ধ থাকা না থাকায় কিছু যায় আসে না। কত টাকা খোয়া গেছে- প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি আলী হোসেনের স্ত্রী। কিছুক্ষণ পর তিনি ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন আর বলেন, ঈদটাই যে মাটি হয়ে গেল। আলী হোসেন তখন কোনোরকমে বাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার চিন্তায় অস্থির হয়ে ওঠেন। কিন্তু গাড়ি পাওয়া কিংবা সিট ম্যানেজ করার কোনো উপায় খুঁজে পান না তিনি। বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টার থেকে একই সিট একাধিক যাত্রীর নামে বরাদ্দ দেওয়ার প্রতারণামূলক নজির দেখা গেছে অসংখ্য। এরপর সায়েদাবাদ টার্মিনালসংলগ্ন পরিবহন কাউন্টারগুলোয় নামিদামি গাড়ির জন্য উচ্চ দামে টিকিট বিক্রি হয়েছে কিন্তু যাত্রীদের তুলে দেওয়া হয়েছে রিজার্ভ করা লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা লোকাল বাসে। অগ্রিম টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে একই সিট একাধিক যাত্রীর নামে বরাদ্দ দেওয়ার বহু অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাড়ি যাওয়া নিশ্চিত করতে ওইসব যাত্রীকে আবারও টাকা গছিয়ে তারপর গাড়িতে ওঠা নিশ্চিত করতে হয়েছে। আবার একই সিটে একাধিক যাত্রী ভাগাভাগি করে বসতেও বাধ্য হয়েছেন অনেকে।সব মিলিয়ে একটানা নয় দিনের ছুটি পাওয়ায় আজ শনিবার, আগামীকাল রবিবারের মধ্যেই বেশির ভাগ মানুষ রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যাবেন। গ্রামে যাওয়ার আকাক্সক্ষা নিয়ে যারা এখনো ঢাকায় আছেন তাদের সবাই চলে যাবেন আগামীকালের মধ্যে। রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকার রাস্তাঘাট গতকাল ছিল ফাঁকা। ব্যস্ততায় ছোটাছুটি, হুড়োহুড়ি ছিল না বললেই চলে। তবে নগরীর যাবতীয় ভিড় জমে ওঠে কেবল ট্রেন স্টেশন, সদরঘাট নৌবন্দর আর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলোর প্রবেশমুখে। অনেকে বাস, লঞ্চ ও ট্রেনের কাক্সিক্ষত টিকিট না পেয়ে শেষ মুহূর্তে কার, মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়েই রাজধানী ছাড়ছেন। এই যাত্রা চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত।গতকাল সকালে রাজধানীর বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে টার্মিনালেই যাত্রীদের নাজেহাল অবস্থা। ভোররাতে সেহরি খেয়ে হাজার হাজার যাত্রী ছুটতে থাকেন টার্মিনাল অভিমুখে। বাস, লঞ্চ ও রেল স্টেশনের দিকে রওনা হন। সবাই নাড়ির টানে রাজধানী ছাড়ছেন। মহাসড়কে খানাখন্দ, নেই পর্যাপ্তসংখ্যক গাড়ি; নেই লঞ্চ, বাস, ট্রেনের টিকিটও। ট্রেনের টিকিট আগেই শেষ। শুক্রবারের ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীরা কমলাপুর স্টেশনে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই ছুটছিলেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে এ ঈদেও বাড়ি যাওয়া নিয়ে বিড়ম্বনা পিছু ছাড়েনি যাত্রীদের। গতকালও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনার কুটুম্বর থেকে সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া পর্যন্ত সড়কে ছিল তীব্র যানজট। এ ছাড়া গাজীপুর ও টাঙ্গাইল মহাসড়কে দিনভর থেমে থেমে যানজট লেগে ছিল। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে যান। তিনি যাত্রীদের খোঁজখবর নেন। এ ছাড়া নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এবারের ঈদযাত্রায় লঞ্চের ছাদে ভ্রমণ না করার জন্য যাত্রীদের অনুরোধ করেছেন। তিনি গতকাল সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল পরিদর্শন করেছেন।কমলাপুর রেল স্টেশনচট্টগ্রাম যাওয়ার তূর্ণা নিশীথা ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল বৃহস্পতিবার রাত ১১টায়। সে অনুযায়ী যাত্রীরা স্টেশনে হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু ট্রেন ছাড়ার সময় হলে স্টেশনে ঘোষণা দেওয়া হয় ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পৌঁছাবে রাত সোয়া ১২টায়। আর ট্রেনটি কমলাপুর থেকে যাত্রা করবে রাত সাড়ে ১২টায়। সরেজমিন সেখানে দেখা গেছে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ময়মনসিংগামী ময়মনসিংহ মেইল, বলাকা ও সুবর্ণা এক্সপ্রেসের খাবার ও নামাজের বগিতে যাত্রী তোলা হয়েছে। এ সুযোগে টুপাইস কামিয়ে নিয়েছেন রেল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। আখাউড়াগামী যাত্রী মামুন খন্দকার বলেন, ‘আমি সিট না পেয়ে রেল পুলিশকে ১৫০ টাকা দিয়ে খাবারের বগিতে সিট নিয়েছি।’ তার মতো কুলাউড়াগামী যাত্রী মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ঈদযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনের সময়সূচি ভেঙে পড়েছে। অনেকের রাত কাটছে স্টেশনে।গতকালও প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেন বিলম্বে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন বাড়ি ফেরা মানুষ। মান্ধাতা আমলের জোড়াতালি লাগানো ইঞ্জিন দিয়ে ঈদে রেলসেবা চালু রাখতে গিয়ে এভাবেই দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের। রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. তাফাজ্জল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঈদে প্রতিটি ট্রেন সঠিক সময়ে চালানোর জন্য তারা রাত-দিন তদারকি করছেন। ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ প্রতিদিনই বাড়ছে। যাত্রীসেবায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরেজমিন কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে আরও দেখা গেছে, গতকাল ভোররাত থেকে কমলাপুর স্টেশনে ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড় ক্রমেই বাড়তে থাকে। অনেক যাত্রীকে দেখা গেছে লাইনে দাঁড়িয়ে সিটবিহীন টিকিট সংগ্রহ করতে। বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্লাটফর্মে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। বাড়ি ফেরার আনন্দ তাদের ম্লান হয়ে গেছে বিলম্বের দুশ্চিন্তায়।সকাল সাড়ে ৯টায় কথা হয় সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের যাত্রী ওহাব খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সময়মতো টিকিট কাটতে না পারায় দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট কেটেছেন। কিন্তু স্টেশনে পৌঁছে জানতে পেরেছেন তার ট্রেনটি এক ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়বে। এ নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন। গতকাল চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতি দুই ঘণ্টা বিলম্বে, একতা এক ঘণ্টা, সিল্ক সিটি দেড় ঘণ্টা বিলম্বে ঢাকা ছেড়ে যায়।গাবতলী বাস টার্মিনালরেলের পাশাপাশি ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাসও এক থেকে দেড় ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়ে যায়। গতকাল গাবতলী থেকে খুলনার আনন্দ পরিবহনের বাস বেলা ১১টার পরিবর্তে দুপুর পৌনে ১২টায় ছেড়ে যায়। দুপুর ১২টায় মেহেরপুরগামী জেআর পরিবহনের বাস বেলা দেড়টায় ছেড়ে যায়। মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে যাত্রীতে পরিপূর্ণ। অনেকে তুলনামূলকভাবে যাত্রীচাপ কম থাকায় টিকিট কাউন্টার থেকে নির্ধারিত দামে টিকিট কিনতে পেরেছেন। বগুড়াগামী রয়েল পরিবহনের কর্মী খোরশেদ আলম বলেন, গতকাল ঈদ সার্ভিসের যাত্রী একটু কম ছিল। কিন্তু সকালের দিকে যাত্রীচাপ কিছুটা বেড়ে যায়। গতকাল রাত পর্যন্ত মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ৩২১টি বাস ছেড়ে যায়। গাবতলী থেকে একই সময়ে ৫১৭টি বাস বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়। পাশাপাশি সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ৬৩০টি বাস বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালগতকাল ভোর থেকেই সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ছিল ঈদে ঘরমুখো মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। গতকাল সায়েদাবাদ থেকে নিয়মিত ট্রিপের বাইরেও বিশেষ সার্ভিস চালু করেছেন বাস মালিকরা। বিলাসবহুল বাসের টিকিট আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেক যাত্রীই লোকাল সার্ভিসের ছোট মিনিবাসে করে বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে এসব বাসেরই আধিক্য দেখা গেছে বেশি। এখান থেকে মূলত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, গোপালগঞ্জ, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও বাগেরহাটের উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায়। ঘরমুখো মানুষের অভিযোগ, সবসময়ই বিলাসবহুল বাসের টিকিট আগেই শেষ হয়ে গেলেও গতকাল সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে বিভিন্ন ধরনের পরিবহনের টিকিট কাউন্টার থেকে কিনতে পাওয়া যায়। টিকিট পেয়ে অনেকে স্বস্তি প্রকাশ করেন। এ বছর এসব সেবা পাওয়া গেলেও বাস মালিকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বলে অনেকে অভিযোগ করেন। এ ছাড়াও প্রায় প্রতিটি বাসই নির্দিষ্ট সময়ের কমপক্ষে তিন ঘণ্টা পর টার্মিনালে উপস্থিত হচ্ছে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে। চট্টগ্রামের যাত্রী ইকবাল হাসান বলেন, ‘ভোর ৬টায় বাস পাব ভেবে আমি সেহরির পর সায়েদাবাদ চলে এসেছি। অথচ সকাল ৮টা বেজে গেলেও বাসের দেখা পাইনি।’ টার্মিনাল এলাকার অধিকাংশ পরিবহনের কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, অনেক যাত্রী সেখানে বাসের জন্য অপেক্ষমাণ।বাসের সময়সূচির বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে পরিবহন মালিকরা রাস্তাঘাটের বেহাল দশার দোহাই দেন। তারা জানান, মহাসড়কগুলোর অন্তত অর্ধশত স্থানে সড়কের বেহাল দশা ও যানজটের কারণেই বাসগুলো নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে পারছে না। শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার কর্মী হাশেম জানান, চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত রাস্তা পুরোপুরিই যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে কুমিল্লার গৌরীপুর থেকে গাড়ি কোনোরকমে পার হতে শুরু করে। আর যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রাম রোডের দাউদকান্দি পর্যন্ত যানজট ছাড়তে সময় লাগছে আড়াই থেকে চার ঘণ্টা। আবার রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড় যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত উড়ালসড়কের কাজ চলায় রাস্তা একদিকে যেমন এক লেনের হয়ে পড়েছে, তেমনি গাড়িগুলো ঘোরানোর জন্যও কোনো ব্যবস্থা নেই। এ জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম পাঁচ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে এখন ১০-১২ ঘণ্টা লাগছে বলে জানান তিনি। একই অবস্থা প্রায় প্রতিটি রুটের। রাজধানী থেকে বরিশাল-বাগেরহাট মহাসড়কেরও প্রায় ১৬ কিলোমিটার রাস্তা নষ্ট। কিশোরগঞ্জ রুটের অবস্থাও একই রকম। সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে সকালেই বিভিন্ন গন্তব্যে এস আলম, হানিফ, ইউনিক, সৌদিয়ার বাস ছেড়েছে। নির্ধারিত সময়সূচি মেনেই এ টার্মিনাল থেকে বাস ছেড়েছে বলে জানান হানিফ কাউন্টারের কর্মী জসিম। তবে কুমিল্লা অঞ্চলের যাত্রীদের বাসে ওঠা নিয়ে ভোগান্তি হয়েছে বলেও জানান তিনি। সায়েদাবাদে চাঁদপুরগামী পদ্মা পরিবহনের ব্যবস্থাপক উজ্জ্বল চৌধুরী জানান, গতকাল থেকে তারা অতিরিক্ত বাসে যাত্রী পরিবহন শুরু করেছেন। আজও বেশি ভিড় হবে বলে তার ধারণা।এদিকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে টার্মিনালে আসার পথে ট্যাক্সি ও অটোরিকশা না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। নোয়াখালীগামী যাত্রী মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা নূরে আলম খান ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরম বেড়ে যাওয়ায় সকাল ৬টায় ঘর থেকে বের হয়েছিলাম। সায়েদাবাদে আসার জন্য এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে। একটিও সিএনজি বা ক্যাব পাওয়া গেল না।’ উপায়হীন হয়ে সকাল ৭টার দিকে ৪০০ টাকা ভাড়ায় একটি ট্যাক্সিক্যাব ঠিক করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি রওনা দেন বলে জানান।ভেঙে পড়েছে ট্রেনের সময়সূচিপুরোপুরি ভেঙে পড়েছে ট্রেনের সময়সূচি। অনেক ট্রেন ঢাকা থেকে ছাড়ছে নির্ধারিত সময়ের দেড় থেকে তিন ঘণ্টা পর। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। এদিকে লঞ্চে যাত্রীদের চাপ অব্যাহত রয়েছে। তবে বাড়তি চাপ মোকাবিলায় গতকাল থেকে আরও বাড়ানো হয়েছে লঞ্চ ও ট্রিপের সংখ্যা। তবে সেখানেও অভিযোগ রয়েছে সময়সূচি বিপর্যয় ও অতিরিক্ত যাত্রী বহনের। ট্রেন ও লঞ্চে এ পরিস্থিতির মুখে সড়কপথে চাপ বাড়তে শুরু করেছে। আগামীকাল থেকে ভিড় আরও বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। এ ছাড়া যাত্রীদের চাপ না থাকায় যানজট নেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মহাসড়কে। তবে সাভার থেকে নয়াহাট পর্যন্ত সামান্য ভিড় আছে পোশাকশ্রমিকদের চলাচলের কারণে। অন্যদিকে যুদ্ধ করে ট্রেনের টিকিট কেটে শেষ সময় যাত্রীরা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন কখন ট্রেন আসবে। সকাল ৮টার ট্রেন এসে পৌঁছেনি ১১টা পর্যন্ত। দুই দিন আগেও ২০-৩০ মিনিট দেরি করে ট্রেন ছাড়লে এখন তা বেড়ে দেড় থেকে তিন ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে। আর আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য খ্যাতি রয়েছে নৌপথে। এ জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সদরঘাট লঞ্চঘাট। তবে যাত্রীদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই নৌযান এবং ট্রিপের সংখ্যাও গতকাল থেকে বাড়ানো হয়েছে।ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা : ফাঁকা হতে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকা। পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ বাড়ির দিকে। বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনালে এখন বাড়িমুখী মানুষের ঢল। তবে কিছুটা জটলা এখনো দেখা যায় রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোতে। আজকালের মধ্যে এসব মার্কেটও ফাঁকা হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে রাজধানীতে যাত্রীবাহী পরিবহনও অনেক কমে গেছে। ব্যস্ত সড়কগুলোতে নেই কোলাহল। প্রতি বছর ঈদে অন্তত ৭৫ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়েন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।রমজান উপলক্ষে স্কুল, কলেজ ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক মাস আগেই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ঈদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও গার্মেন্ট ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আজকালের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানও বন্ধের নোটিস আসবে। অবশ্য অনেকেই বাড়ি যেতে একদিন আগে থেকেই ছুটি নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। দেড় কোটি মানুষের বসবাসের রাজধানী ঢাকায় দু-একদিনের মধ্যেই জনসংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে। অবশ্য ঈদের পর আবার সেই আগের মতো ব্যস্ত হয়ে উঠবে ঢাকা। অগ্রিম টিকিট থাকায় গত কয়েক দিন ধরেই সাধারণ মানুষ সেহরি খেয়েই রওনা হয়ে যান নিজ গন্তব্যে। আর যাত্রীদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দিতে দূরপাল্লার বাস সার্ভিস, স্টিমার, লঞ্চ এবং ট্রেন বিশেষ প্রস্তুতি নিয়ে আছে। তবে যাত্রাপথে যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা শোনা যাচ্ছে। ভোর থেকেই সদরঘাট টার্মিনাল, কমলাপুর রেলস্টেশন ছাড়াও সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে ঘরে ফেরা মানুষের প্রচণ্ড ভিড়।রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এখন সুনসান নীরবতা। যেসব রাস্তায় সবসময় ভিড় লেগে থাকত সেখানেও কমে এসেছে যানজট। তবে ব্যতিক্রম শুধু টার্মিনালমুখী রাস্তাগুলো। এসব রাস্তায় ঘরমুখো মানুষের ঢল। দেশের প্রধান সড়কগুলোর অবস্থা বেহাল। পথে পথে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মহাসড়কে শুরু হয়েছে দীর্ঘ যানজট। ট্রেনের শিডিউলেও বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর জনশূন্য রাজধানীতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন সড়ক পরিদর্শন করছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। টিকিট কালোবাজারি এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ সব ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর নজরদারিও রয়েছে। তারপরও ঈদকে কেন্দ্র করে সড়ক, রেল ও নৌপথে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ যাত্রী-সাধারণের। দক্ষিণাঞ্চলের ৩০ জেলার মানুষের যাতায়াতের প্রধান বাহন লঞ্চ। রেলপথে তিন লাখের বেশি পরিবহনের টার্গেট নেওয়া হয়েছে। বাসে যাত্রী সংখ্যা ১৫ লাখ।প্রাইভেটকার ও আকাশপথসহ অন্যান্য মাধ্যমে তিন লাখের বেশি। ঈদ উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকিটের পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে সব ছাপিয়ে অন্তত ৭৫ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়েন বলে সূত্রে জানা গেছে। ঈদ সামনে রেখে বিআরটিসি স্বল্প ও দূরপাল্লার বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করেছে। ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-নেত্রকোনা, ঢাকা-যশোর রুটে বিআরটিসির ঈদ স্পেশাল সার্ভিস ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এবারের ঈদে বিআরটিসি শতাধিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস চালু করেছে। এসব বাসে ভাড়া অন্যান্য রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসের ভাড়ার সমান। যাত্রা নিরাপদ ও আরামদায়ক হওয়ায় শেষ সময়ে বিআরটিসি এসি বাসে যাত্রীদের ভিড় ব্যাপকভাবে বেড়েছে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৬-০৭-০১৪:
Link copied!