AB Bank
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

এখন চলচ্চিত্রনির্মাতারা ভিন্ন কিছু খুঁজে বেড়ায় না : প্রবীর মিত্র


Ekushey Sangbad

০৭:১৬ এএম, আগস্ট ৮, ২০১৪
এখন চলচ্চিত্রনির্মাতারা ভিন্ন কিছু খুঁজে বেড়ায় না : প্রবীর মিত্র

একুশে সংবাদ : এখনো সংলাপ বলেন দৃঢ়তা নিয়ে। চোখেমুখের অভিব্যক্তিতে চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলেন দারুণ দক্ষতায়। এই বয়সেও তাকে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে দেখলে মনে পড়ে ঢাকাই ছবির সোনালি অধ্যায়। তিনি প্রবীর মিত্র। কীভাবে আপনার অভিনয় জীবন শুরু? প্রবীর মিত্র : একবার হঠাৎ করেই ঘোষণা দেওয়া হলো, স্কুলের ছেলেদের নিয়ে একটি নাটক হবে। এ ঘোষণা শুনেই আমার নাটকে অভিনয় করার ইচ্ছা হয়। যদিও এর আগে কখনোই নাটক করিনি। খেলাধুলা করতাম আর একটু দুষ্টু প্রকৃতির ছিলাম। আমার ১০-১২ জনের একটি টিম ছিল। আমার মনের কথা তাদের জানালে বন্ধুরা পাত্তা দেয়নি। অবশেষে আমার জেদের কাছে সবাই হার মানে। সবাই মিলে নাটকের ক্লাসে গেলাম। ক্লাসে এলেন হেড স্যার। ক্লাসে ঢুকে আমাকে দেখেই চটে গেলেন তিনি। জানতে চাইলেন, এ ক্লাসে আমি কেন। আমার আগ্রহের কথা শুনে আরো চটে গেলেন স্যার। আমাকে ক্লাস থেকে বেরও করে দিতে চাইলেন তিনি। কিন্তু নাটকটির নির্দেশক স্যারের বদৌলতে রক্ষা পাই। কারণ তিনি এ নাটকের ‘প্রহরী’ চরিত্রের জন্য আগে থেকেই আমাকে পছন্দ করেছেন। অবশেষে হেড স্যার শর্ত সাপেক্ষে রাজি হলেন। আর বললেন, ‘নাটক করবি ঠিক আছে, কিন্তু আমি কোনো অভিযোগ শুনতে পারব না।’ তারপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাকঘর নাটকের প্রহরী চরিত্রে অভিনয় করি। সেই থেকে শুরু হয় অভিনয়ের পথ চলা। আপনার পরিবার কি খুব রক্ষণশীল ছিল? প্রবীর মিত্র : আমার এমনটা কখনোই মনে হয়নি। এটা ছিল ষাটের দশকের শুরুর দিকের ঘটনা। আমরা পুরান ঢাকার মানুষ। রণেন কুশারী, সে সময়ের নামকরা রেডিও প্রডিউসার। তার সহকারী ছিলেন সুভাষ দত্ত। তিনি একটি নাটক করার সিদ্ধান্ত নেন। আর নাটকের রিহার্সেল মানেই তো সন্ধ্যা। একদিন রিহার্সেলে যাওয়ার সময় বাবা এসে পথ রোধ করলেন। জানতে চাইলেন, কোথায় যাচ্ছি। আমি বললাম, রণেন দার কাছে। তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, রিহার্সেলে যাওয়া হবে না। তিনি চাইতেন, পুরোমাত্রায় আমি পড়াশোনা করি। কিন্তু তা আর হয়নি। বরং অভিনয়েই নিয়মিত হয়ে যাই। অবশ্য পরে আর কোনো আপত্তি করেননি তিনি। চলচ্চিত্রের সঙ্গে কীভাবে জড়ালেন? প্রবীর মিত্র : আমার সঙ্গে নাটক করতেন এইচ আকবর সাহেব। একদিন জানালেন, তিনি ছবি বানাচ্ছেন। শুটিং সেটে যাওয়ার জন্যও বললেন তিনি। তার অনুরোধে একদিন আমার গ্রুপের হুমায়ূন কবির (চলচ্চিত্র নির্মাতা) সাহেবকে নিয়ে ছবির সেটে গেলাম। সেদিন শুটিং ছিল পুলিশ হাসপাতালে। আমরা বসে বসে শুটিং দেখছিলাম। হঠাৎ এইচ আকবর সাহেব আমাকে বললেন, একজন অভিনেতা আসেননি। তাই ডাক্তারের চরিত্রটি যেন আমি করি। আমার পরনে ছিল পায়জামা আর পাঞ্জাবি। বললাম, এ পোশাকে কী করে হবে? তিনি জানালেন, আমি রাজি থাকলে সব ব্যবস্থা হবে। ‘হ্যাঁ’ বলার সঙ্গে সঙ্গে কেউ আমাকে জুতো দিলেন, কেউ শার্ট। আবার কেউ এনে দিলেন টাই। আমি তার ওপর একটি অ্যাপ্রোন জড়িয়ে নিলাম। চলচ্চিত্রটির নাম ছিল জলছবি। সেটি ছিল এইচ আকবর সাহেবের প্রথম সিনেমা। তা ছাড়া আমিসহ এ সিনেমার মাধ্যমেই চলচ্চিত্রে আসেন ফারুক এবং আমার বাল্যবন্ধু এ টি এম শামসুজ্জামান। সেটাই ছিল আমার চলচ্চিত্রে প্রবেশ। এরপর আমি এইচ আকবর সাহেবের জীবন তৃষ্ণা সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করি। জীবন তৃষ্ণা সিনেমায় আপনি কি নায়ক ছিলেন? প্রবীর মিত্র : না। নায়ক ছিলেন রাজ্জাক সাহেব। আর আমি অভিনয় করি প্রধান চরিত্রে। এই সিনেমায় কাজ করার পর আমি পরিচিতি পেয়ে গেলাম। লোকে আমাকে চিনতে শুরু করল। জীবন তৃষ্ণা ছবিতে আপনি কী ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেন? প্রবীর মিত্র : সেখানে আমি একজন অন্ধ যুবকের চরিত্রে অভিনয় করি। এক ভাই আর এক বোনের টানাপোড়েনের সংসার। এতে আমার বোনের চরিত্রে অভিনয় করেন সুচন্দা ম্যাডাম। এই দুজনের সংসার নিয়েই মূল গল্প। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭২ সালে। তবে শুটিং হয়েছিল স্বাধীনতার আগে। আর জলছবি’তে অভিনয় করি ১৯৬৮ সালে। সেটি মুক্তি পায় ১৯৬৯ সালে। এরপর আপনি কী ধরনের ছবিতে কাজ করেন? প্রবীর মিত্র : এরপর আমি হিরো হিসেবে অনেক ছবিতে অভিনয় করেছি। তবে সেসবকে ছাপিয়ে আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল ঋত্বিক ঘটকের চলচ্চিত্র তিতাস একটি নদীর নাম। এই ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়া হচ্ছে আমার জীবনের পরম পাওয়া। এ ছবিতে কাজ করার পরে আমাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ হলো কী করে? প্রবীর মিত্র : আমি যখন জীবন তৃষ্ণা ছবিতে অভিনয় করি তখন তার সহকারী পরিচালকরা একদিন শুটিং দেখতে আসেন। তিতাস একটি নদীর নাম সিনেমায় আমি যে চরিত্রে অভিনয় করি সেই চরিত্রটিতে প্রথম অভিনয় করার কথা ছিল ওপার বাংলার সরকার কবীরের। কিন্তু তথ্য মন্ত্রণালয় এতে অনুমতি না দেওয়ায় ঋত্বিক ঘটক একজন অভিনেতা খুঁজছিলেন। তার সহকারীরা আমার জীবন তৃষ্ণায় অভিনয় দেখে গিয়ে তাকে আমার কথা বলেন। তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি সেখানে যাওয়ার পরে আমাকে দেখেই পছন্দ করে ফেললেন তিনি। এই তো। তিতাস একটি নদীর নাম-এর মতো আইকনিক সিনেমায় অভিনয় করার পর আপনার ক্যারিয়ার কোন দিকে মোড় নেয়? প্রবীর মিত্র : এ ধরনের সিনেমায় আর কাজ করা হয়নি। তবে এরপর আমি দুর্দান্ত দাপটের সঙ্গে বাণিজ্যিক সিনেমায় অভিনয় করতে থাকি। এমন হয়েছে, আমি এক দিনেই তিন-চারটি সিনেমায় অভিনয় করেছি। আর সবাই বলত, আমি নাকি অভিনয়টা ভালোই করি। সেই রেশ ধরে এখনো সমান তালে অভিনয় করছি। আমি এখনকার মতোই চরিত্রনির্ভর অভিনয় করতাম। সে সময় এমনও হয়েছে, আমাকে ভেবেই চলচ্চিত্রের চরিত্র লেখা হতো। এমন অনেক চরিত্রেই আমি অভিনয় করেছি। আপনার অভিনীত সিনেমার সংখ্যা কত এবং গত এক বছরে কয়টা ছবিতে কাজ করেছেন? প্রবীর মিত্র : হিসাব করলে প্রায় ৪৫ বছর ধরে কাজ করছি। এই সময়ের মধ্যে কত সিনেয়ায় অভিনয় করেছি, আমি সেটা বলতে চাই না। এ নিয়ে আমার আলাদা কোনো ভাবনা নাই। আর এর মধ্যে মুক্তি পেয়েছে মাই নেম ইজ খান ছবিটি। এ ছাড়া আছে দেহরক্ষী, রাজত্ব, শাহাদাৎ হোসেন লিটনের তোমার কাছে ঋণী, আবুল কালাম আজাদের অনেক সাধনার পর, কালাম কাওসারের তোমার আছি তোমারই থাকব প্রভৃতি। বর্তমানে চলচ্চিত্রে যে বাঁক দেখা যাচ্ছে এটা কি ইতিবাচক বলে মনে করেন? প্রবীর মিত্র : অবশ্যই এটা ইতিবাচক। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে যে ছবিগুলো হচ্ছে সেখানে সাউন্ড-লাইট-ছবি খুবই ঝকঝকে। দর্শক এ ধরনের ছবি দেখে খুব সন্তুষ্ট। তারা এখন আর থার্টি ফাইভ মিলিমিটারে ছবি দেখতে চান না। এর আগে আমাদের ল্যাবে নানা ধরনের সমস্যা ছিল, সেটা ডিজিটাল সিনেমার ক্ষেত্রে নেই। এটা খুবই ইতিবাচক। আপনি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এ দেশের চলচ্চিত্রকে দেখছেন। এখন নতুন অনেক মুখ আসছে চলচ্চিত্রে। তাদের মধ্যে সম্ভাবনা কতটুকু? প্রবীর মিত্র : এখন যারা সিনেমায় বিভিন্ন ধাপে যুক্ত হচ্ছে, তারা ভবিষ্যতে খুব ভালো করবে। কেননা এখন যারা এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, তারা শিক্ষিত পরিবার থেকেই আসছে। তা ছাড়া নিজেরাও চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনা করছে। এখন তো বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্রের ওপরে নানা ধরনের কোর্সও করানো হচ্ছে। তাই আমার মনে হয়, এরা প্র্যাকটিক্যালি না হলেও থিওরিটিক্যালি বেশ স্ট্রং হয়েই আসছে। এদের শুধু প্র্যাকটিক্যালভাবে কাজটা আয়ত্তে আনতে হবে। যে দীর্ঘ সময় ধরে আপনি কাজ করছেন, সেই সময়ের মধ্যে আপনার মতে কোন সময়টি আমাদের চলচ্চিত্রের সেরা সময়? প্রবীর মিত্র : এটা সবাই জানে। সেভেনটিজ থেকে শুরু করে নাইনটিজের মাঝামাঝি যে সময়টা, এটাই আমাদের জন্য সেরা সময় ছিল। এই সময়টাতে সবাই তাদের পুরো পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখতে যেতেন। তারা সে সময় মাসের বাজেটেই একটা-দুটো ছবি পুরো পরিবার নিয়ে দেখার পরিকল্পনা রাখতেন। যার জন্য সে সময় ছবিগুলো ব্যবসায়িক সফলতাও পেত। সে সময়ের চলচ্চিত্রনির্মাতারা গল্প, চিত্রনাট্য, গান, এডিটিং প্রভৃতির জন্য আলাদা আলাদা করে সময় দিতেন। সবই করতেন সময় নিয়ে যত্ন সহকারে। খুব ধরে ধরে, মেপে ছবিগুলো বানাতেন। এখন সেসবের খুব অভাব। সবারই তাড়াহুড়ো করে। কীভাবে দুটো পয়সা পাওয়া যায়, কত কমে ছবিটা শেষ করা যায়- এই প্রবণতা। যেটা খুব খারাপ লাগে। আর্টিস্টকে কম পয়সা দিয়ে, কম বাজেটের মধ্যে ছবি করা এখন মূল লক্ষ্য। এখন ছবি করার মতো সাংস্কৃতিমনা লোকের খুব অভাব। এখন তো এমনও দেখা যাচ্ছে, দু-একটা সিনেমায় কাজ করেই অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক চাচ্ছেন। অভিনয় করার চেয়ে অর্থের প্রতি তাদের নজরটা বেশি। আপনি প্রথম কত টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন? প্রবীর মিত্র : আমি প্রথম পারিশ্রমিক পেয়েছিলাম আড়াই হাজার টাকা। আর এখন যা রটে তার পুরোটাই ঠিক না। নতুনরা যে ৫-৭ লাখ পারিশ্রমিক চায়, এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়। নতুনদের মধ্যে এমনও আছে, যারা নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে অভিনয় করে। এমনও দেখেছি, প্রযোজককে পটিয়ে, পরিচালকের মন জয় করে, অনেক সময় নিজের টাকা বিনিয়োগ করে অভিনয় করছে। একমাত্র শাকিব খান ছাড়া এখন যারা অভিনয় করছে তাদের পারিশ্রমিক খুব বেশি নয়। এটা আরো সম্মানজনক হওয়া উচিত। নায়কদের ধাপের পরে শিল্পীদের যে পারিশ্রমিক, তা খুবই লজ্জার। একটা সময় চলচ্চিত্রের গল্প ছিল জীবনঘনিষ্ঠ। নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত পর্যন্ত নানাভাবে সমাজের ছবি ফুটে উঠত চিত্রনাট্যে। এখন সেটি দেখা যায় না আমাদের ছবিতে। আপনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে এটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? প্রবীর মিত্র : এখন চলচ্চিত্রনির্মাতারা ভিন্ন কিছু খুঁজে বেড়ায় না। তামিল, তেলেগু, মুম্বাইয়ের ছবি, কলকাতার ছবি, ইংলিশ সিনেমা দেখে একটা মিক্সচার বানিয়ে কিছু একটা ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এই ছবিগুলোও যে চলে না তা কিন্তু নয়। এই সিনেমার নামে মিক্সচার বানানোর প্রবণতা আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে। এখন বলতে পারো, এর কারণ কী? এর কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে দেখতে হবে, সরকার যে ছবির জন্য অনুদান দেয় তা মুক্তি পর কয়েকটা দিন হলে চলে, তারপর আর চলে না। এটা কীসের অনুদান? তারা কি ইনকারেজ করে? শুধু কি বিদেশ থেকে পুরস্কার আনার জন্য এই ছবিগুলো, নাকি অন্য কিছু? এই কথাগুলো শুনলে অনেকেই আমার ওপর রাগ করবেন। তবে এতে করার কিছু নেই। সরকার অনুদান দিচ্ছে ভালো। তবে অনুদান দেওয়ার আগে দেখে-বুঝে দিক। প্রুভ ছবিটাকে পৃষ্ঠপোষকতা করুক। আর ছবি অনুদান দেওয়ার চাইতে যদি তা ট্যাক্স ফ্রি করে দেয়, সেটাই বেশি কাজে লাগবে। আর অনুদান দেওয়ার জন্য সরকার যে টাকা দেয় তা দিয়ে তো ছবি বানানোও শেষ হয় না। অন্য একজন লগ্নিকারীর টাকাও এতে যোগ করতে হয়। শেষ পর্যন্ত অনুদানের ছবি মানেই ফলাফল জিরো। এভাবে না করে ছবি বানানো পর তা দেখে, যাচাই-বাছাই করে তার পর সেটা মূল্যায়ন করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে বলেই আমার মনে হয়। আপনি এই দীর্ঘ সময়ে অনেকের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। আপনার সহশিল্পীদের সম্পর্কে মূল্যায়ন কেমন? প্রবীর মিত্র : সেটা বলতে গেলে আমি গোল্ডেন পিরিয়ডের কথাই বলব। আর সে সময় সহশিল্পী বলে কোনো কিছু ছিল না। আমরা ছিলাম একাত্ম। সবাই সবার সঙ্গে একই বন্ধনে আবদ্ধ ছিলাম। সে সময় একই সঙ্গে ১০-১২ জন হিরো কাজ করত। তাদের একে অন্যের সঙ্গে এত ভালো সম্পর্ক ছিল, তা না দেখলে বলে বোঝানো যাবে না। কারোর কোনো হিংসা ছিল না। একজন হয়তো অনেক বেশি কাজ করছে, তাকে দেখে যে কম কাজ করছে সে কখনোই হিংসা করত না। কারো পেছনে কেউ লাগতে যেত না। একে অন্যের কোনো ক্ষতি করার কথা ভাবতেই পারত না। তবে সবার মধ্যে ভালো করার প্রবণতা ছিল। কাজ দিয়ে অন্যকে টপকে যাওয়ার বিষয়টিই বেশি ছিল। এখন যা একেবারেই নেই। এখন একজনই হিরো, শাকিব খান। তার তো আর কাউকে দাবিয়ে রাখার প্রয়োজন পড়ে না। এরপর যারা আসছে তারা কেমন করে, এখন সেটা দেখার বিষয়। তার মানে আপনি বলতে চাইছেন সামনে নতুন আরেকটি যুগের সূচন হচ্ছে। যা-ই হোক, আপনাদের সময় একটি চরিত্রকে নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা করা হতো। সময় নিয়ে চরিত্র বিশ্লেষণ করা, রিহার্সেল করা বিষয়গুলো খুবই স্বাভাবিক। এখন তো একটি সিনেমার কাজ শেষ না করতেই অন্য ছবির সেটে গিয়ে কাজ করছেন শিল্পীরা। এ বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন? প্রবীর মিত্র : শুধু যে চরিত্র বিশ্লেষণ করা, রিহার্সেল করা বিষয়গুলো ছিল, তা কিন্তু না। এ ছাড়া পরিচালকদের সঙ্গে চরিত্র নিয়ে আলাপ করা, সহশিল্পীদের পরামর্শ নেওয়া ছিল খুবই স্বাভাবিক। একমাত্র প্রচেষ্টা ছিল কীভাবে চরিত্রকে পর্দায় যথাযথভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়। সে সময় আমরা একজন আরেকজনের ওপর খুব নির্ভর করতাম। আর তখন তো এ লাইনে এত কাঁচা পয়সা ছিল না। আমাদের চাহিদাও ছিল লিমিট। আর অভিনয়ই ছিল ধ্যানজ্ঞান। যে পারিশ্রমিক পেতাম তা দিয়ে কোনোরকমে চলতাম। কিন্তু কাজের প্রতি ভালোবাসাটা ছিল অসীম। কাজটা ঠিকভাবে করার জন্য প্রযোজকদের যে চেষ্টা, পরিচালকদের যে প্রয়াস, অভিনেতারা তা জান দিয়ে করার চেষ্টা করত। সম্প্রতি তথ্যমন্ত্রী এক সিনেমার মহরত অনুষ্ঠানে তার বক্তৃতায় বলেছেন, আমাদের এখানে কোনো আদর্শ সিনেমা হয় না। সিনেমার নামে যা হয় তা হলো, যাত্রা বা নাটক। আপনার মতে আদর্শ সিনেমার সংজ্ঞা কী? প্রবীর মিত্র : আমার মতে, তথ্যমন্ত্রী সাহেব যা বলেছেন ভালোই বলেছেন। তবে ইদানীংকালের ছবিগুলোর সঙ্গে ওনার পরিচিতি কম বলেই আমার মনে হয়। কেননা এখন নাটকও হচ্ছে না, যাত্রাও হচ্ছে না। এখন যা হচ্ছে সেটা সিনেমাই হচ্ছে। এখন টিভিতেই নাটক হয়। আর যাত্রা দেখার জন্য গ্রামেগঞ্জ আছে। ডিজিটাল ফরমেটের যে ছবিগুলো বাচ্চা বাচ্চা ছেলেরা তৈরি করছে, তা আসলেই সিনেমা। তারা বিদেশ থেকে ট্রেনিং নিয়ে এসেছে, লেখাপড়া করে এসেছে। তারা অত্যাধুনিক ক্যামেরা ও ইকুইপমেন্ট দিয়ে সিনেমা করছে। আপনি তো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এ ব্যাপারে কিছু বলুন। প্রবীর মিত্র : আমি একবারই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। এটা ১৯৮২ সালে। ছবির নাম বড় ভালো লোক ছিলো। এটি মরহুম মহিউদ্দীন সাহেবের ছবি। এতে আমি সেরা পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে এই জাতীয় পুরস্কার পাই। এ ছাড়া আরো বহু পুরস্কার পেয়েছি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য : তিতাস একটি নদীর নাম-এর জন্য জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার, সুভাষ দত্তের আবদারে জন্য পেয়েছি প্রডিউসার-ডিস্ট্রিবিউটর অ্যাওয়ার্ড, আমার উস্তাদ আকবর এইচ এর ছবি সীমার-এর জন্য জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার পেয়েছি। চঞ্চল বড়ুয়ার একটি ছবির জন্য দর্শক ফোরামের পুরস্কার পেয়েছি। আমার কাছে সব অ্যাওয়ার্ডই মূল্যবান। সিনেমা নিয়ে এখনো দর্শকদের একটা মূল্যায়ন আছে। সিনেমার দর্শকদের বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন? প্রবীর মিত্র : মাঝখানে দর্শক সিনেমা থেকে মুখ সরিয়ে নিয়েছিলেন। এখন আবারও দর্শক হলে আসছেন সিনেমা দেখতে। তবে হলগুলোকে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। সরকার বিভিন্ন শপিং মলগুলোতে হল করার একটা নীতিমালা করছে। এটা করলে আবারও হল বাড়বে। আর হল বাড়লে দর্শক সিনেমা দেখতে আসবেনই। তবে যারা সিনেমা করছেন তাদের আমি বলব, কেউ কেউ টেলিফিল্ম বানিয়ে তা সিনেমা বলে চালাচ্ছেন। এতে দর্শকরা সিনেমাবিমুখ হয়। দর্শক নষ্ট হয়। তারা সিনেমা হলে গিয়ে নাটক দেখতে চায় না। নাটক দেখার জন্য টিভি আছে। আমাদের দেশে যারা সহশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন, হিরো-হিরোইনের বাইরে তাদের তেমনভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন? প্রবীর মিত্র : আমি বলব, পরিচালক-প্রযোজকরা হিরো-হিরোইনের চাহিদা পূরণ করতে সহশিল্পীদের সেভাবে মূল্যায়ন করে না, তা বলব না। আসলে তাদের সামর্থ্য এতটাই কম থাকে যে এদিকে নজর দিতে তারা পারে না। তাদের বাজেট এতটাই কম থাকে যে যেখানে যে শিল্পীকে নেওয়া প্রয়োজন, সেখানে যোগ্য শিল্পীকেই কাস্ট করতে পারে না। কম টাকার শিল্পী খুঁজতে গিয়ে তারা এই জায়গায় ছাড় দিতে বাধ্য হয়। এতে কিন্তু ছবির মান কমে যায়। কিন্তু বাহিরের সিনেমাগুলোতে ক্যারেক্টার আর্টিস্টদেরকেই সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন করা হয়। আমাদের এখানে ঠিক তার উল্টো। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/০৮-০৮-০১৪:
Link copied!