বাকৃবির বোটানিক্যাল গার্ডেনের দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণ
একুশে সংবাদ : বোটানিক্যাল গার্ডেনের পরিসর সীমিত হলেও বাংলাদেশের আনাচে কানাচে থাকা হরেক রকমের উদ্ভিদ এখানে স্থান পেয়েছে। এখানে সুন্দরবন জোনসহ মোট ৫৩টি জোনে বিভক্ত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ঔষধি, ফুল, ফল, মসলা, টিম্বার, বাঁশ, বেত, ক্যাকটাস, অর্কিড, পাম, ফাইকাস, বিরল উদ্ভিদ ও বনজ উদ্ভিদ জোন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এসব জোনে রয়েছে সহস্রাধিক প্রজাতির উদ্ভিদ। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, গজারী, চিরহরিৎ বনায়ন, ঝাউ-থুজা কর্ণার প্রচলিত ও অপ্রচলিত উদ্ভিদসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন অঞ্চলের বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে।
দেশের মূল্যবান উদ্ভিদ প্রজাতি বিশেষ করে বিরল প্রজাতির হার্বজাতীয় ঔষধি ও সুগন্ধি জাতীয় উদ্ভিদ সংরক্ষণের জন্য রয়েছে পট হাউজ নামে বিশেষ সংরক্ষণাগার। ঔষধি জোনে রয়েছে ৪৮ প্রজাতির উদ্ভিদ। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অশ্বগন্ধা, ব্রাউনিয়া, কর্পুর, আগর, উলটচণ্ডাল, অঞ্জন, অ্যানথেরিয়াম ইত্যাদি। ক্যাকটাস ও অন্যান্য সংবেদনশীল উদ্ভিদ সংরক্ষণের জন্য দুটি বড় গ্রিন হাউজ রয়েছে গার্ডেনটিতে।
বিভিন্ন ধরনের ফুলের মধ্যে রয়েছে-জেসিয়া, সিলভিয়া, হৈমন্তি, ক্যামেলিয়া, আফ্রিকান টিউলিপ, ট্যাবেবুইয়া, রাইবেলী, অ্যাস্টার, কসমস, ডায়ান্থাস, রঙ্গণ ইত্যাদি।
ফলের মধ্যে রয়েছে- স্টার আপেল, আমেরিকান পেয়ারা, কমলা, আঙুর, প্যাসান ফল এবং বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফল।
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে- ডেফল, নাগলিঙ্গম, কালাবাস, কারিলিফ, ফলসা, মনহোটা, পেয়ালা, মাক্কি, বনডুবি, লোহাকাট, উদাল, পানবিলাস, অর্জুন, বয়রা, হরতকি, কাটাসিংড়া, টিকমা, প্যাপিরাস, রাইবেলী, স্ট্যাভিয়া, হিং, পেল্টোফোরাম ইত্যাদি।
ক্যাকটাস হাউজ- ৭২ ফুট লম্বা ও ৩৪ ফুট চওড়া বিশিষ্ট নিসর্গ (ক্যাকটাস হাউজ) নির্মাণ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগৃহীত বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় অনেক প্রজাতির ক্যাকটাস। সব মিলিয়ে স্বতন্ত্র সৌন্দর্যের জন্যই নাম ধারণ করেছে নিসর্গ।
গ্লাস হাউজ- মোট ৩২টি নার্সারি বেড যেখানে বিভিন্ন উদ্ভিদের বীজ, অঙ্গ ও প্রতঙ্গ হতে ওই উদ্ভিদের সংখ্যা ও বংশ বৃদ্ধির জন্য নতুন চারা তৈরি করা হয় এবং মূল জমিতে লাগানোর উপযোগী না হওয়া পর্যন্ত বিশেষভাবে যত্ন নেয়া হয় গ্লাস হাউজে।Botanical {focus_keyword} বাকৃবির বোটানিক্যাল গার্ডেন Botanical e1407475581905বাগানের সর্ব দক্ষিণে গ্লাস হাউজটি অবস্থিত। নবজাতককে যেরূপ কোমলতায় পরিপাটি করা হয় ঠিক তেমনি চারা গাছগুলোকে যত্ন নেয়া হয় এ গ্লাসহাউজে। শত প্রজাতির কচি শিশু উদ্ভিদগুলোকে মুক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে উঠার জন্য পূর্ব পরিচর্যা এ গ্লাস হাউজেই নেয়া হয়। শিশু উদ্ভিদকে বিশেষ যত্ন নেয়া ও প্রতিকূল বৈরী আবহাওয়া থেকে রক্ষার জন্য এখানে কনজারভেশন করা হয়।
অকির্ড হাউজ- বাগানের দক্ষিণ পাশের সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত অর্কিড হাউজ। এখানে বিরল অর্কিডের মিলনমেলা। শত প্রজাতি আর নানা রং মিলে রূপের যেন আর শেষ নেই এ অর্কিড হাউজের। ছোট বড়, লতানো, প্যাঁচানো, খাড়া কতনা আকৃতির অর্কিডের সমৃদ্ধ এ হাউজ। তবে সৌন্দর্যের সবচেয়ে উত্তম সময় বর্ষাকালে।
বছরের প্রায় সময়ই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় চার লাখেরও বেশি দর্শনার্থী গার্ডেনটি পরিদর্শনে এসে মুগ্ধ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী মো. ইউসুফ আলী প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে প্রায়ই বোটানিক্যাল গার্ডেনে আসেন। বিলুপ্তপ্রায় গাছগুলো দেখতে সবচেয়ে ভালো লেগেছে বলে তিনি জানান।
বোটানিক্যাল গার্ডেনের সহকারী কিউরেটর মো. সাইফুল হক মাসুম জানান, মোট ৫৫৮টি গাছের প্রজাতি নিয়ে প্রজাতির দিক থেকে দেশে একনম্বর বোটানিক্যাল গার্ডেন এটি। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের সঙ্গে বিলুপ্তপ্রায় ও দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয় । বোটানিক্যাল গার্ডেনের বিভিন্ন জোনে ভাগ করা হয়েছে, যাতে দর্শনার্থীরা হরেক রকম উদ্ভিদরাজির সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/০৮-০৮-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :