AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

নতুন প্রজন্মের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে


Ekushey Sangbad

১০:৪৩ এএম, আগস্ট ৯, ২০১৪
নতুন প্রজন্মের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে

একুশে সংবাদ : শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নই নয়, সংস্কৃতির চর্চা বাড়াতে চান সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলেন, আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন। মিলনায়তন দরকার, শিল্পীরা মহড়া দিতে চায়। তবে মূল বিষয় হচ্ছে সংস্কৃতির চর্চা বাড়াতে হবে। কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী বলেন, একটা সময় ছেলেমেয়েরা সংস্কৃতি চর্চায় ছিল। গান গাওয়া, ছবি আঁকার চেষ্টা ছিল। কোথাও ভোরে হাঁটতে বেরোলে হারমোনিয়ামের আওয়াজ পাওয়া যেত। অভিভাবকরাও এতে জোর দিতেন। শিক্ষকরাও উদ্যোগী ছিলেন। এখন সেই উদ্যোগ আর দেখা যায় না। অনেক কমে গেছে। এটা কীভাবে বাড়ানো যায় সেটিই হচ্ছে মূল বিষয়। চর্চা না হলে মিলনায়তন দিয়ে কী হবে? পরিপূর্ণ মানুষ ও খাঁটি বাঙালি করাই আমাদের প্রধান কাজ দায়িত্ব নিয়েছেন ৬ মাসের বেশি সময় হয়েছে। এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ের কম-বেশি সব কাজের খোঁজখবর নিয়েছেন মন্ত্রী। বসেছেন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে। সবার কথা শুনেছেন। মতবিনিময় করেছেন। সেই আলোকেই নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যান আগামী দিনগুলোতে। তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত কর্মসূচির বাইরে নতুন কিছু করার উদ্যোগ নিয়েছি। এজন্য আমাদের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পরামর্শ নিয়েছি। শীর্ষ পর্যায়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে বসেছি। তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিচ্ছি। সবকিছু মিলিয়ে আমরা একটি কার্যপত্র তৈরি করব। এটি হয়ে গেলে আগামী এক বছর আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব। অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্যেই কর্মসূচিগুলোকে সীমাবদ্ধ রাখতে চান না আসাদুজ্জামান নূর। এমন কিছু করতে চান, যেটা দীর্ঘদিন মানুষ মনে রাখে। মানুষের উপকারে আসে। সংস্কৃতি চর্চায় সুদূরপ্রসারী অবদান রাখতে পারে। ‘শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। বিদ্যালয়গুলোতে সংস্কৃতির চর্চার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু অল্পসংখ্যক বিদ্যালয়েই এটি চর্চা হয়। এখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা কোনো কাজ করতে পারি কি না সেই চেষ্টা চলছে’ বলছিলেন আসাদুজ্জামান নূর। জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনের নতুনকুঁড়ি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মেধা অন্বেষণ হয়। এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চালু করেছিলেন। কিন্তু তার পর জাতীয় পর্যায়ে মেধা অন্বেষণের জন্য নতুন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। বিষয়টি সংস্কৃতিমন্ত্রীও স্বীকার করলেন। তবে মেধা অন্বেষণের কর্মসূচি বাড়াতে নিজের ইচ্ছের কমতি নেই সেটাও বললেন। জানালেন, শিল্পকলা একাডেমি মেধা অন্বেষণ নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছে। বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারও এর সঙ্গে থাকবে। তরুণ প্রজন্মের জ্ঞানের পরিধি বেড়েছে। কিন্তু উদার, মুক্তচিন্তার খাঁটি বাঙালি তৈরির বিষয়টি চিন্তায় আছে। বললেন, ‘পরিপূর্ণ মানুষ ও খাঁটি বাঙালি তৈরি করাই হবে আমাদের প্রধান কাজ। নতুন প্রজন্মের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। আমরা আমাদের শেকড়ের লোকজ সংস্কৃতি, লালন-নজরুল-রবীন্দ্রচর্চার ব্যাপক প্রসার ঘটাতে চাই।’ প্রশ্ন ছিল শিল্পীদের নিয়ে। শুরুটা ভালো হয়। একটা সময় খুব ভালো থাকেন শিল্পীরা। কিন্তু জীবন সায়াহ্নে এসে অনেকেই টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়ে মারা যান। দীনতা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলে অনেক শিল্পীকে। শুধু মন্ত্রী নন, একজন গুণী শিল্পী হিসেবেও শিল্পীদের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ‘দুস্থ শিল্পীদের সহায়তার জন্য একটা তহবিল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা শিগগিরই করে দেওয়া হবে। এছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে দুস্থ শিল্পীদের আর্থিক সহায়তা এখনই করা হচ্ছে। শুধু শিল্পী নয়, কবি-সাহিত্যিকরাও এ সুবিধা পাবেন। আসলে অর্থের বরাদ্দ বাড়লে এসব খাতে বেশি ব্যয় করা সম্ভব হবে।’ ‘প্রথম প্রহর’ নাটকে দেড় মিনিটের ছোট চরিত্রে আসাদুজ্জামান নূরের অভিনয় দারুণ মনে ধরল হুমায়ূন আহমেদের। প্রযোজক নওয়াজীশ আলী খানকে বললেন, তাকে যেন আরও বড় চরিত্র দেওয়া হয়। নূরের সহজাত অভিনয় তার ভালো লেগেছে। তারপর শুরু। হুমায়ূন আহমেদের নাটকে নূর নানা ভঙ্গিতে আসতে লাগলেন। এইসব দিনরাত্রির রফিক, অয়োময়ের মীর্জা সাহেব, মাটির পিঞ্জিরার মাঝে বন্দি হইয়ারের নান্দাইলের ইউনূস, কোথাও কেউ নেই-এর বাকের ভাই ইত্যাদি। হুমায়ূন আহমেদের কালজয়ী নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’-এর বাকের ভাই চরিত্রে অভিনয় করে নব্বইয়ের দশকে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলেন আসাদুজ্জামান নূর। নাটকে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি ঠেকাতে প্রতিবাদ সভাও করেছিলেন দর্শক-ভক্তরা। একজন নিরপরাধ বাকের ভাইয়ের ফাঁসি মেনে নিতে না পেরে নাটকটির নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের বাসাতেও হামলা হয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদের সেলুলয়েডেও ছিলেন নূর। আগুনের পরশমণির মুক্তিযোদ্ধা নূর, শঙ্খনীল কারাগারের কলেজপড়–য়া বেকার যুবক, চন্দ্রকথার দাম্ভিক জমিদার। প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের এমন কম নির্মাণই আছে যেখানে নূর ছিলেন না। একদিকে শক্তিমান-জনপ্রিয় অভিনেতা, অন্যদিকে মন্ত্রী। কোন পরিচয়টাকে কাছের বলে মনে হয়? বলেন, ‘আমার প্রথম পরিচয় হচ্ছে মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ। এর বাইরে অভিনয় করি, রাজনীতি করি, এগুলো আমার কাজ। নাটকে আমি নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি। সব সময়ই বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে চেষ্টা করেছি। রোমান্টিক নায়ক বা নায়ক হয়ে থাকতে আমি কখনই চেষ্টা করিনি। যার কারণে মাস্তান, বাড়ির চাকর, খুনি, প্রেমিকের চরিত্রেও অভিনয় করেছি। এতেই আমার আনন্দ।’ অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতিতে আসার গল্পও বললেন নূর। ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৯৬২ সালে স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সব আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন আজকের সংস্কৃতিমন্ত্রী। পরবর্তী সময়ে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে ৬নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন তিনি। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনেরও একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন নূর। বলছিলেন, ‘নিশ্চয়ই আদর্শিক কারণেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসেছি। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার উদ্যোগই সবচেয়ে বেশি ছিল। তিনিই আমাকে রাজনীতিতে এনেছেন।’ বর্তমান সময়ের নাটক নিয়েও কথা বলেছেন দেশের কিংবদন্তি এই নাট্যব্যক্তিত্ব। বর্তমান সময়ের নাটক নিয়ে খুব বেশি সন্তোষ নেই তার মধ্যে। অনেক নাটক হচ্ছে এই বিষয়টির সঙ্গে তিনি একমত। কিন্তু নাটকের মান নিয়ে প্রশ্ন আছে তাও বললেন কথায় কথায়। নূর বলেন, ‘আসলে আমাদের সময় অনেক শিল্পীই অভিনয়ের পাশাপাশি অন্য পেশায় জড়িত থাকতেন। যে কারণে অভিনয় করে পাওয়া টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হতো না। কিন্তু এখনকার শিল্পীদের অনেকেই অভিনয়টাকেই একমাত্র পেশা হিসেবে নিয়েছেন। যে কারণে তাদের অনেক কাজ করতে হয়। আর অনেক কাজ করতে গিয়ে তো আর মান ধরে রাখা সম্ভব হয় না। নাট্যকার বা পরিচালকরাও সময় নিয়ে কাজ করতে পারছেন না। পারিশ্রমিকটাও একটা বিষয়। যদি শিল্পীদের পারিশ্রমিক বাড়ানো হয় তবে হয়ত অল্প কাজ করে তারা ভালো টাকা পাবেন। কিন্তু ভালো কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে কম।’ ১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর আবু নাজিম মো. আলী এবং মা আমীনা বেগমের কোলে আসেন আসাদুজ্জামান নূর। ২০০১, ২০০৮ এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে নীলফামারী-২ (সদর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এবার মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়েছে তাঁর। কিন্তু এরপরও নির্বাচনী এলাকার মানুষের সংস্পর্শে থাকার চেষ্টা করছেন সাধ্যমতো। সময় পেলে ছুটে যান এলাকায়। ‘অনেক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। তার পরও প্রতিমাসে একাধিকবার এলাকায় যাই’ বললেন নূর। মন্ত্রী হওয়ার পর বিশ্বের ইতিহাসে বাংলাদেশের নামটি নতুন করে লেখাতে সক্ষম হয়েছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী। লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ায় বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। বলছিলেন, ‘সবচেয়ে বড় মানবপতাকা বানানোর অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী চিন্তা করেছিলেন জাতীয় সংগীত গাওয়ার বিষয়টি। সেই চিন্তা থেকেই মূলত এই ধরনের উদ্যোগ সফল হয়েছে।’ সংস্কৃতির নীতিমালার বিষয়টি উঠে এসেছে কথার ফাঁকে। নূর বলেন, ‘আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি আছে। শিল্পী, সাহিত্যিক, কবিদের জীবনবোধ ও কর্মই আমাদের সংস্কৃতির সংজ্ঞা নিরূপণ করে দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে আলাদা কোনো নীতিমালার প্রয়োজন রয়েছে কি না তা ভেবে দেখা হবে। তবে আমরা কিছু কাজ করব। সেটা নীতিমালা অথবা কর্মসূচির ভিত্তিতে হতে পারে।’ মন্ত্রিত্ব মানেই রাজ্যের কাজ। বেশ ব্যস্ত সময় কাটাতে হয় সব সময়। যে কারণে আপাতত রক্তে মিশে থাকা অভিনয়ে সময় দিতে পারেন না নানা গুণে গুণান্বিত নূর। অভিনয় কী আপাতত বাদ দিচ্ছেন? মুচকি হেসে বললেন, ‘বাদ তো দিতে চাই না। কিন্তু সময় করে উঠতে পারি না। তবে সময় করতে পারলে যে কাজ করব না, তা নয়।’ একুশে সংবাদ ডটকম/আর/০৯-০৮-০১৪:
Link copied!