AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ঘুড়ে আসুন কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত স্থান 'কালিম্পঙ'


Ekushey Sangbad

০৫:৫৫ এএম, আগস্ট ১০, ২০১৪
ঘুড়ে আসুন কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত স্থান 'কালিম্পঙ'

একুশে সংবাদ : হাজার ফুট উঁচু থেকে কখনও কখনও মেঘের আড়াল ভেঙে দৃষ্টি সীমায় ধরা পরে সরু হয়ে বয়ে চলা তিস্তা নদী। সুদূর তিব্বত থেকে বয়ে আসছে তিস্তা। তারই এক পাশের পাহাড় চূড়ায় গড়ে উঠেছে গোর্খা জনগোষ্ঠীর শহর- কালিম্পঙ। অপর পাশের মিহি কালো পর্বতটা সিকিমের অংশ। কালিম্পঙ দার্জিলিং জেলার একটি শহর, জেলা সদর থেকে শহরটির দূরত্ব প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার পথ।   মেঘ-বৃষ্টির জম্পেশ খেলার মাঝে দার্জিলিং বাস স্ট্যান্ড থেকে সকালের জিপে রওনা হলাম কালিম্পঙ-এর উদ্দেশ্যে। এই বৃষ্টি এই মেঘ, স্যাঁতস্যাঁতে পিচ ঢালা পথ মূহুর্মূহু মিশে যায় মেঘের আবরণে। ক্রমেই পেছনে চলে যাচ্ছে শহর। কালিম্পঙ কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত স্থান। এখানে কাঞ্চনজঙ্ঘার সামনে মুগ্ধ কবি লিখেছিলেন- আমার আনন্দে আজ/ একাকার ধ্বনি আর রঙ/ জানে তা কি এ কালিম্পঙ। পাইন গাছ ঘেরা অসাধারণ সুন্দর পথ, আট হাজার ফুট উঁচু থেকে কেবল নেমে যাচ্ছে নিচের দিকে। উন্মুক্ত বানরের দল লেজ ঝুলিয়ে বসে আছে গাছের ডালে, কেউ আবার দল বেঁধে রাস্তায় নেমে শোরগোল করছে। লম্বা লেজওয়ালা বন মোরগও চোখে পড়ল। এরা আবার উড়তেও পারে। পাশ দিয়েই ফরফর করে উড়ে গেল দুটি বন মোরগ। ইতিমধ্যে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। পাইন গাছে বাঁধা দীর্ঘ দড়িতে পতপত করে উড়ছে স্লোক লেখা লম্বা সব রঙিন কাপড়। স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারিরা সেগুলো লাউচার বা প্রেয়ার ফ্ল্যাগ বলে। তাদের বিশ্বাস বাতাস তার স্পর্শে প্রতিনিয়ত পবিত্র ও নির্মলতার মধ্য দিয়ে কল্যাণময় হয়ে উঠছে। লপচু গ্রামে এসে যাত্রা পথের মধ্য বিরতি। দূর পাহাড়ের ঝর্ণা থেকে পাইপ দিয়ে টেনে আনা হয়েছে সুপেয় ঠাণ্ডা পানি। ফুলের মৌসুম তাই নানা বর্ণের ফুলে সাজানো হাতে গোনা কয়েকটি ঘড় নিয়ে ছোট লপচু গ্রাম। গন্তব্যের চেয়ে যাত্রা পথই মহত্তর, তাই পথের বর্ণনায় পাওয়া যায় সৌন্দর্যের অনেকখানি। বড় পেয়ালায় ধোঁয়া ওঠা টাটকা চায়ের ঘ্রাণ, সঙ্গে স্থানীয় খাবার থোপ্পা- চমৎকার নাস্তা হয়ে গেল চলার পথে। পুনরায় যাত্রা শুরু হলো। এবার জিপ চললো চা-বাগানের মাঝ দিয়ে। এক পর্যায়ে পৌঁছে গেলাম তিস্তা নদীর কাছাকাছি। উঁচু থেকে তিস্তার বয়ে যাওয়া দেখে ভাবতেই বিস্ময় লাগে- এই পানি বইতে বইতে ছুঁয়ে গেছে আমার দেশে! পথ চলছি তিস্তার পাড় ঘেষে। পারাপারের ব্রীজটা অনেক উঁচু। ব্রীজ পার হয়ে চিত্রে নামক গ্রাম হয়ে পুনরায় চলতে শুরু করলাম আরো উঁচুর দিকে। বাতাস ঠাণ্ডা হতে শুরু করেছে। সেই হিমশীতল বাতাস কেটে অপার এক মুগ্ধ বিস্ময় হৃদয়ে নিয়ে পৌঁছে গেলাম মেঘে ঢাকা শহর-কালিম্পঙ।   দুপুরের খাবার কটেজেই খেলাম। খাবারের দাম তুলনামূলক বেশি। অতো উঁচুতে ধান চাষ হয় না, তাই চাল আমদানি করতে হয় বহুদূর সমতল থেকে। সুতরাং ভাতের দাম বেশি। বড় থালের মাঝখানে বাটি উপুর করে রাখা সামান্য ভাত, পাশে দুটি রুটি, ছোট সাইজের দুই বাটিতে সবজি, টক জলে ভেজানো লম্বা করে কাটা শসা, গাজরের চার- পাঁচ ফালি সালাদ এবং সদ্য ভাজা মুড়মুড়ে পাপড়- এই হলো খাবার। ওঁরা স্বল্পাহারি কিন্তু ভীষণ পরিশ্রমী। নিজেদের কথোপকথনের জন্য গোর্খা ভাষার একক প্রাধান্য লক্ষণীয়। এ ছাড়া হিন্দির পাশাপাশি যৎকিঞ্চিৎ ইংরেজিও চলে। চরিত্রে তারা সৎ এবং সহযোগী মানসিকতার। থাকার জায়গার খোঁজে এক হোটেলে গেলে আমাদের বাজেটের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি অনুমান করতে পেরে রিসেপশন থেকে তারাই নিজ উদ্যোগে আরেকটি হোটেলের ঠিকানা জানিয়ে দিলেন। এমন সহযোগী মনোভাবে মুগ্ধ হলাম। রাতের পাহাড়ি শহর ঘুমিয়ে পরে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে। শহরের কেন্দ্রস্থলে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী খাবারের মাত্র কয়েকটি দোকানে বিকেল থেকে জমে ওঠে পুরোদস্তুর বেচাকেনা। চাওমিন, মমো, থোপ্পা, ফেম্বি, এগরোল, সসেজ, ভেজপুরি সেখানকার জনপ্রিয় খাবার। কটেজের সামনে খোলা সবুজ লনের শেষ প্রান্তে পাহাড়ের খাদ; জায়গাটি রেলিং দিয়ে ঘেরা। সামনে তাকালে শহরের বড় এক অংশের রঙিন বাতিগুলো দেখে মনে হয়, যেনো রাতের আকাশে অজস্র তারা ফুটে রয়েছে। ঈষৎ ডান দিকে তাকালে দীর্ঘ পাহাড়ের প্রাচীরে চলন্ত গাড়ির হঠাৎ তীর্যক আলো জানান দেয় সজাগ সিকিমের। সিকিমে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের প্রবেশ নিষেধ। তবে দিল্লির সংস্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি থাকলে অসুবিধা হয় না। মাস ছয়েক আগে আবেদন করে অনুমতি নিতে হয়। পর্যটক আকর্ষণের একটি বিশেষ স্থান দূরবীন। সেখানে যাওয়ার পথটি আরো উপরের দিকে উঠে গেছে। ভোরের শহরে মানুষের আনাগোনা তখনও শুরু হয়নি, নীরব পরিবেশে পায়ে হেঁটে এগুতে থাকলাম। অপরাধমূলক ঘটনা এখানে ঘটে না বললেই হয়। সুতরাং দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বরং স্থানীয়দের সৌহার্দ্য ও সহযোগিতাপূর্ণ ব্যবহার শিক্ষণীয় বটে। যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বেশ সুসংহত। এক পর্যায়ে আমাদের প্রায় আর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে সহযাত্রী হলেন স্থানীয় লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মি. সিনহাল। প্রাতঃভ্রমণরত হাস্যজ্জল সিনহাল সাহেব একে একে দেখিয়ে দিলেন চিত্রভানু ও পাইন ভিউ নার্সারির সহজ পথ। সবশেষে সন্ধ্যায় তার অফিসে কফি পানের নিমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বিদায় নিলেন।   পাহাড়ের খাদে চোখে পড়ল চমৎকার সাজানো প্রতিটি বাড়ি। ঠিক তার পাশ দিয়ে পিচ ঢালা মজবুত পথ। আড়মোড় ভেঙে বাসিন্দারা জানালা-কপাট খুলে দৈনন্দিন কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমরা হেঁটে চলেছি গন্তব্যের দিকে। অধিকাংশ বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া ছোট দোকান। একটি বিষয় লক্ষ্য করলাম-এখানে রঙ চায়ের প্রচলন নেই। প্যাকেটজাত তরল দুধের চা; অর্ডার দিলেই তৎক্ষণাৎ আলাদাভাবে দুধ জাল দিয়ে চা পরিবেশন সেখানকার রীতি। চায়ে গোল মরিচের মিহি গুঁড়া ছিটিয়ে পান করাটাই তাদের পছন্দ। যাই হোক, আরেকটি যে বিষয় নজর কাড়ল তা হলো, প্রতিটি বাড়ি ঝকঝকে, তকতকে। ফুল গাছ দিয়ে সাজানো নয় এমন বাড়ি খুঁজে পাওয়াই দুস্কর।   পথ প্রবেশ করল সেনানিবাস এলাকায়। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ আমলের সেনানিবাস। সে সময়ের স্থাপত্য নিদর্শন আজও বিদ্যমান। সেনানিবাস এলাকা ছাড়িয়ে পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত একটি বৌদ্ধ মন্দির-এটিই ‘দূরবীন’ নামে পরিচিত। চার তলা মন্দিরের শেষ তলা পর্যন্ত ওঠার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি তলায় ছড়ানো বারান্দা। পশ্চিম পাশের প্রাঙ্গনে উড়ছে হাজার হাজার প্রেয়ার ফ্ল্যাগ। যতদূর চোখ যায় কেবল মেঘে ঢাকা পর্বতমালা সে এক অপূর্ব দৃশ্য! মূল মন্দিরের দরজা তখনও খোলা হয়নি, অনুরোধ করায় একজন লামা দরজা খুলে দিলেন। আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। কালিম্পঙ-এ চোখ জুড়ানো বেশ কয়েকটি জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত ‘চিত্রভানু’ অন্যতম। ১৯৪৩ সালে কবির পুত্রবধূ শ্রীমতি প্রতিভা দেবী বাংলোটি নির্মাণ করেন। ইউরোপীয় গঠনের আড়াইতলা বাড়ি। মাইলের পর মাইল শুনশান উপত্যকা। সম্মুখে উপত্যকার পরে পর্বতমালা। ঠিক তার পেছনে কাঞ্চনজঙ্ঘা। প্রতিনিয়তই মেঘ এসে চিত্রভানুর শরীরে শীতল পরশ রেখে ফিরে যায় দূরের পর্বতমালা পেড়িয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার দিকে। কবি মাঝেমধ্যেই কালিম্পঙ-এ এসে মেঘ-পাহাড়ের নীরব সান্নিধ্যে কাব্য সাধনায় নিমগ্ন হতেন। মূলত সেই স্মৃতি রক্ষা করার জন্যই প্রতিভা দেবী গড়ে তোলেন চিত্রভানু। কয়েক বছর আগে এক ভূমিকম্পে ভবনের খানিক অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় সর্বসাধারণের জন্য ভেতরে প্রবেশ নিষিদ্ধ। ১৯৬৪ সাল থেকে বাংলোটির অক্ষত অংশ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনে একটি মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।   নিকটেই রয়েছে পাইন ভিউ নার্সারি। এটি মূলত ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা একটি ক্যাকটাস গার্ডেন। ১৯৭১ সলে শ্রী মোহন সমশের প্রধান নামক এক ক্যাকটাসপ্রেমী বাগানটি গড়ে তোলেন। সংরক্ষিত রয়েছে পৃথিবীর বহু প্রজাতির বিরল ক্যাকটাস। বিশেষ করে উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা অঞ্চলের ক্যাকটাস সেখানে বেশি। শহরের কেন্দ্র থেকে অল্প দূরে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন্দির- মঙ্গলধাম। অনেক বড় জায়গায় অত্যন্ত পরিপাটি করে সাজানো মঙ্গলধাম। সন্ধ্যার আগ থেকে এখানে শুরু হয় কীর্ত্তন। ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে অবশ্য সংস্কারমূলক কিছু নিয়ম আপনাকে মানতে হবে। আসলে পায়ে হেঁটে শহরের আশপাশটা ঘুরতে পারলে এখানকার শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কে আরো ভালো ধারণা পাওয়া যেত। কিন্তু সেটা আপাতত সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ আমাদের ফিরতে হবে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১০-০৮-০১৪:
Link copied!