AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

সাদেক আলীর অদ্ভুত ভালোবাসা


Ekushey Sangbad

০৪:৪৯ এএম, আগস্ট ১৭, ২০১৪
সাদেক আলীর অদ্ভুত ভালোবাসা

একুশে সংবাদ : সাপকে বিশ্বাস করা যায়? অন্তত রাঙামাটির লংগদুর সাদেক আলী করেন। কেবল তা-ই নয়, সাপ তাঁর ধ্যানজ্ঞান, ভালোবাসা। মিতালি পাতিয়েছেন অজগরের সঙ্গে। নয় বছর ধরে বাড়িতে পেলে-পুষে বড় করছেন তিনটি অজগর। সাপগুলোর জন্য প্রতিদিন তিন থেকে চার কেজি মাছও কিনতে হয় তাঁকে। অভাবের সংসারে টানাটানি আছে। তাকে কী, প্রাণের তাগিদে মানুষ কী-না করে! ১৯৭৯ সালে ভাইয়ের হাত ধরে শেরপুরের নলিতাবাড়ী থেকে লংগদুতে এসে স্থায়ী আবাস গড়েন সাদেক আলী। জঙ্গলে কাঠ কাটতে গিয়ে খেয়াল করেন, পাহাড়ের অনেক বাসিন্দা সাপ ধরে নিয়ে খায়। তাই প্রাণীটি বিপন্ন হয়ে উঠছে দিন দিন। তখন থেকেই তাঁর সাপের প্রতি মমতা জন্মায়। সাপ পোষার পাশাপাশি জঙ্গল থেকে সাপ ধরে এনে খাইয়ে–দাইয়ে আবার ছেড়েও দিতেন। লংগদুর লঞ্চঘাটে নেমে মোটরসাইকেলে লংগদু-দীঘিনালা সড়ক ধরে মিনিট দশেক গেলেই বাইট্টাপাড়া বাজার। এখানে সড়কের পাশেই সাদেক আলীর বাড়ি। পাশেই পাহাড়ি খাদ। বাড়িতে ঢুকতেই দেখা গেল তিনটি অজগর মাথা তুলে চারদিক দেখছে। এখন খাবারের সময়, ওরা তাই অপেক্ষা করছে সাদেকের জন্য। খানিক পরেই তিনি এলেন মাছ নিয়ে। সাপটিকে দিতে শুরু করলেন মাছ। ১৯৯৯ সালের কথা। একদিন বাজার ঘুরেও মাছ পেলেন না। জানান, তিনি মুখে তুলে না দিলে সাপগুলো খায় না। বেদে নন, নন সাপুড়েও, তবে কীভাবে পোষ মানালেন সাপগুলোকে? অজগরের সঙ্গে মিতালি পাতিয়েছেন লংগদুর সাদেক আলী l প্রথম আলোজানান, শখের বশেই তাঁর সাপ লালন-পালনের শুরু। বাসায় রান্নার কাঠ জোগাড় করতে ঘুরতেন পাহাড়ে পাহাড়ে। তখন দেখতেন অনেকে সাপ ধরে নিয়ে যাচ্ছে খাওয়ার জন্য। মায়া হলো তাঁর। কিছু একটা করার কথা ভাবলেন। এভাবেই কাটতে লাগল দিন। ১৯৮৪ সালের কথা। একদিন পাহাড়ে কাঠ আনতে গিয়ে চোখের সামনে পড়ল একটা শঙ্খিনী সাপ। ভয়ডর ভুলে প্রায় সাড়ে তিন হাত লম্বা সাপটিকে সঙ্গে করে নিয়ে এলেন বাড়িতে। পরম ভালোবাসায় পুষতে শুরু করলেন সাপটিকে। ইচ্ছে ডিম ফুটিয়ে বংশ বাড়িয়ে আবার জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া। কিন্তু পারলেন না বেশি দিন। তিন মাসের মাথায় পরিবারের চাপের মুখে সাপটিকে ছেড়ে দিয়ে আসতে হয় জঙ্গলে। একবার চেষ্টা করেও পারলেন না। কিন্তু দমে গেলেন না। একদিন বনে ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে পেয়ে গেলেন প্রায় ১০ কেজি ওজনের একটি অজগর। অসম্ভব জেদি ছিল এটি। অনেক কৌশলে সঙ্গে নিয়ে আসেন বাসায়। অতি যত্নে লালন–পালন করতে শুরু করেন। কিন্তু বনের সাপকে পোষ মানানো কি এত সহজ! অজগরটি একের পর এক বাড়ির মুরগি খাওয়া শুরু করল। তবু হাল ছাড়েননি। সাপটিকে দিতে শুরু করলেন মাছ। ১৯৯৯ সালের কথা। একদিন বাজার ঘুরেও মাছ পেলেন না। এদিকে মামলার কাজে তাঁকে যেতে হবে চট্টগ্রাম। কয়েক দিন তিনি থাকবেন না। সাপটিও না খেয়ে থাকবে, এই ভেবেই খাওয়ালেন পাঁচ কেজি গরুর মাংস। চট্টগ্রাম গিয়ে খবর পেলেন সাপটি বাসা ভেঙে পালিয়েছে। প্রায় নয় বছর আগের কথা। লংগদুর সিজক পাহাড় থেকে আবারও তিনি ধরে আনলেন অজগর সাপের একটি বাচ্চা। সাপটি মেয়ে হলেও সাদেক তার নাম দেন বুশ। ঠিক নিজের সন্তানের মতো করেই বুশকে বড় করেছেন সাদেক। নয় বছর বয়সেও এখনো ধরে ধরে খাইয়ে না দিলে খেতে পারে না বুশ। চার-পাঁচ বছর আগে বন থেকে একটি পুরুষ অজগর ধরে আনেন তিনি। সেটিকে ছেড়ে দেন বুশের সঙ্গে। ছেলে সাপটির নাম দেয়া হয় সাদ্দাম। সাদ্দাম কিছুদিন পর খাঁচা ভেঙে পালালেও বুশ একসময় ১৮টি ডিম পাড়ে। চলতে থাকে ডিমসহ বুশের পরিচর্যা। একসময় ১১টি ডিম ফুটে বের হয় বাচ্চা। এর মধ্যে আটটি সাপের বাচ্চাকে ছেড়ে দিয়ে আসেন কালাপাহাড়ে। এরপর বুশ ও তার তিন বাচ্চাকে লালন–পালন শুরু করেন সাদেক। কিছুদিন পর মাছ কেনার টাকা জোগাড় করতে না পেরে দুটি বাচ্চাকে ছেড়ে দেন পাহাড়ে। বর্তমানে বুশ ও তাঁর ছানা ছাড়াও আরও একটি অজগর কিনে লালন-পালন করছেন। এর মধ্যেই লংগদু রেঞ্জের বন বিভগের হাতে তুলে দিয়েছেনে তিনটি সাপ। সাদেক আলীর এমন শখ প্রসঙ্গে লংগদু উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি মাঠ সহকারী সুশীল চাকমা বলেন, সাপ পালনের সব নিয়ম জানেন সাদেক। আর তাই তাঁর এ ধরনের শখ বন্য প্রাণী সংরক্ষণে ভূমিকা রাখছে। চাইলে সাপ দিয়ে খেলা দেখিয়ে আয় করতে পারতেন প্রচুর অর্থ। কিন্তু এসবে কোনো লোভ নেই সাদেকের। বর্তমানে কাজ করছেন ভিডিপিতে হাবিলদার হিসেবে। সেই সঙ্গে করছেন টুকটাক গাছের ব্যবসা। সাপের প্রতি অন্য রকম ভালোবাসা থাকলেও সংসারমুখী সাদেক। স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ সুখের সংসার তাঁর। তবে স্ত্রীও এখন সাপ পালনে সহায়তা করে বলে জানান তিনি। স্ত্রী আর বাচ্চারা ঘরে না থাকলে বুশকে বিছানায় নিয়ে রাতে গল্পও শোনান তিনি। সাদেক আলী প্রথম আলোকে বলেন, সাপ যত ভয়ংকর হোক না কেন, ইচ্ছে থাকলেই তাকে পোষ মানানো সম্ভব। ভবিষ্যতে আরও বড় সাপের খামার করার স্বপ্ন দেখেন তিনি। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৭-০৮-০১৪:
Link copied!