উচ্চশিক্ষায় প্রত্যাশা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ
একুশে সংবাদ : নীরবেই কাজ চলছে ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুধু কৃষি, মৎস্য বা পশু সম্পদেই নয়, শিক্ষা, গবেষণা, পাঠ্যক্রম, গুণগত মান ও উৎকর্ষ নিয়েও কাজ চলছে। একাডেমিক দিক থেকে এখানকার ছাত্র ও শিক্ষকরা অনেক বেশি সংগঠিত ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগে সমৃদ্ধ। সেখানে বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসরদের নিয়ে কারিকুলাম, টিচিং-লার্নিং এবং কোয়ালিটি নিশ্চিতকরণের বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরূপে আমাকে যোগ দিতে হয়। ইউজিসি’র ‘হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহেন্সমেন্ট প্রজেক্ট’-এর আওতায় ট্রেনিং ও মতবিনিময়ে যোগ দিতেই ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিটিআই-এ আমার আগমন ও অবস্থান। এক সপ্তাহ ধরে সেখানে উচ্চশিক্ষার গুণগত মান, পাঠদান, পরীক্ষা পদ্ধতি, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, ছাত্রদের মনোযোগী করে তোলাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মূল ফোকাস দেয়া হয় উচ্চশিক্ষার গুণ ও মান এবং শ্রেণীকক্ষে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক বিষয়াদির ব্যবহার করে ছাত্রদের প্রণোদনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্তরে উত্তীর্ণ করার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল যুগের শিক্ষার্থীদের চাহিদাকে বিবেচনা করা এবং উচ্চশিক্ষায় তাদের প্রত্যাশা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ও আলোচিত হয়। টিচিং মেথড বা শিক্ষা পদ্ধতির নানা দিক আলোচনায় এটা অস্বীকার করার যো নেই যে, পাবলিক বা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদান, ভর্তি, বিভিন্ন পরীক্ষার ক্ষেত্রে নানা ধরনের সংস্কার ও পুনর্গঠনের বিকল্প নেই। গতানুগতিক প্রশ্ন, একই প্রশ্ন রিপিট করা, ফটোকপি বা ট্র্যাডিশনাল নোট পড়ে পাস করে যাওয়া বা ক্লাস না করেও পাস করার মতো বিষয়গুলো সিনিয়র শিক্ষকরা তুলে ধরেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সম্পর্কেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই। এটা ঠিক যে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া শিক্ষা, স্বার্থ, কৃষি ইত্যাদি জাতীয়ভিত্তিক ক্ষেত্রে প্রকৃত উন্নয়ন ও কল্যাণ নিশ্চিত করা যাবে না। এবং এসব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঐকমত্যও জরুরি। কারণ, কিছু মৌলিক সামাজিক ও নাগরিক বিষয়ে সকলকে একযোগে কাজ করতে হয়। সেখানে রাজনৈতিক হানাহানি ও বিভেদ কাম্য নয়। ফলে এ সব ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সাধন করতে হলে জাতীয়ভিত্তিক রাজনৈতিক সহমত, ঐক্য ও সদিচ্ছা একান্ত প্রয়োজন। তবে, জাতীয় স্তরের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে জড়িত শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসনের লোকজনও একটু সদিচ্ছা, আন্তরিকতা ও গতিশীলতার মাধ্যমে বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে পারেন। আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি, কারিকুলাম, পাঠ্যদান পদ্ধতি ইত্যাদি প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষকগণও ছাত্র সমাজকে প্রণোদিত করতে পারেন। বিশেষ করে জুনিয়র শিক্ষক ও নতুন শিক্ষকদের গতানুগতিক পাঠদানের চক্কর থেকে বের করে আধুনিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর এবং বিশ্বমানের শিক্ষাক্রমের পর্যায়ে নেয়ার প্রচেষ্টাও সময় ও বাস্তবতার অপরিহার্য দাবি। এ কথা ঠিক যে, বাংলাদেশে এখন সৃজনশীল পদ্ধতিতে নিম্ন ও মধ্যস্তরে শিক্ষাদান ও পরীক্ষা গ্রহণ চলছে। উচ্চস্তরকে অবশ্যই সেই দিকে যেতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে উচ্চশিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতোও গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা যেন দেশের চাহিদা মেটানোর সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এবং বিশ্বস্তরে গৃহীত ও সম্মানিত হয়, সেটাও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মনে রাখা দরকার। পাবলিক বা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মান ও গুণগত দিকগুলো সমন্বয় করা, বেসরকারি খাতের উচ্চশিক্ষাকে সার্টিফিকেট বিক্রির খপ্পর থেকে মুক্ত করা ইত্যাদি নানা বিষয় বর্তমানে দেশ ও জাতির প্রয়োজনে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার দাবি রাখে। ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিটিআইএ যে আলোচনা, পুনর্গঠন ও চিন্তা-ভাবনার সূচনা হয়েছে, সেটা বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে সঞ্চারিত হয়ে এ দেশের উচ্চশিক্ষার সঙ্কট ও সমস্যা মোচনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়। উচ্চশিক্ষার নানা ক্ষেত্র ও ইস্যু নিয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের প্রণোদিত করার জন্য প্রফেসর মোজাহার আলী, প্রফেসর মির্জা জাবেদ আলী, প্রফেসর মাসুমা হাবিবা, প্রফেসর হাম্মাদুর রহমানসহ একদল উচ্চশিক্ষা গবেষক ও বিশেষজ্ঞ যে প্রচেষ্টা নিয়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেটার সফলতাও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার উন্নয়ন, গতিশীলতা ও আধুনিকায়নের স্বার্থে প্রত্যাশা করি।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৮-০৮-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :