AB Bank
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বালুদস্যুদের অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ অত্যন্ত জরুরি


Ekushey Sangbad

০৪:২২ এএম, আগস্ট ২০, ২০১৪
বালুদস্যুদের অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ অত্যন্ত জরুরি

একুশে সংবাদ : বাংলাদেশে একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে অবৈধ পথে অর্থ-বিত্তের উন্মাদনা অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গেছে। সংখ্যায় এরা কম নয়। দুর্নীতি এবং অন্যায় ও অপরাধের সমন্বয়ে গঠিত এসব চক্রের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে এসব কর্মকান্ড। দুস্থের জমি, অসহায়ের ভূমি দখল থেকে শুরু করে কখনও খাস জমি, কখনও রেলের জমি যখন যেদিকে সুবিধা এমন দখলি রাজত্ব চলছে দীর্ঘদিন ধরে। কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, নদীর পাড়ে অবৈধ স্থাপনা, কখনও আদালতের নির্দেশ সেখানে অগ্রাহ্য কিংবা খাল-বিল ভরাট বা দখল করে সবজি বাগান, নদী ঘেরাও করে মাছ চাষ ইত্যাদি চলছে মহাসমারোহে। গত কয়েক বছরের সংবাদপত্রের পাতা উল্টালে এমন বহু খবর নজরে আসবে। সত্যি বাংলাদেশ এক আজব দেশ, মনে হয় এমন দেশটি বুঝি বিশ্বের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিচিত্র পথে, অবৈধ পথে, নির্বিকারচিত্তে এ পাতায় রুপালি অর্জনে নতুন সংযোজন, নদী থেকে বালু উত্তোলন-মনে হয় এ বালুমহালের কোনো মালিকানা নেই, এগুলো দেখভাল করার কেউ নেই, এদের কোনো অভিভাবক নেই। তা বিনেপয়সায় এ উপার্জনও বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। প্রায়ই কাগজে চোখে পড়ে অবৈধ বালু তোলার খবর। এ ব্যবসার কত সুবিধা! মাল কিনতে এক টাকা খরচ নেই, শুধু পরিবহনে যা কিছু লাগে, প্রায় সর্বাংশে মুনাফা। পুরনো ঢাকার সেই আতরওয়ালার বিকিকিনির গল্পটা মনে পড়ে গেল। বহুকাল আগে শোনা, তবু এমন মজাদার যে মূল বিষয়টা স্মৃতি থেকে সরে যায়নি। আতরওয়ালার বাচ্চা ছেলেকে সন্ধ্যার আবছা আলোয় এক ঠগবাজ ক্রেতা এক টাকার আতর কিনে একটা ডাবল পয়সা গছিয়ে দিয়ে সরে পড়েছে। ক্রন্দনরত ছেলেকে সান্ত্বনা দিতে বাবার উক্তি- 'যানে দো বেটা, তাভবি ওসমে এক পাইসা নাফা হ্যায়।' উর্দুটা জুতসই হলো না বিস্মৃতির কারণে। এক টাকার বিক্রিতে দু'পয়সা পেলেও লাভ! বালুদস্যুদের হলো তেমনই রমরমা ব্যবসা, অনেকটা রবীন্দ্রনাথের কৌতুক রচনা 'বিনে পয়সার ভোজ'-এর মতো। কিংবা বিনে পুঁজিতে লাখ টাকার ব্যবসার মতো। এখন অবশ্য বাংলাদেশে কোনো ব্যবসায়ী লাখে কথা বলেন না, বলেন কোটিতে বা শত কোটিতে, কেউ কেউ হাজার কোটিতে। এই যে খবরগুলো, অর্থাৎ বালু উত্তোলনের খবরগুলো কাগজে প্রকাশিত হচ্ছে এগুলো কারও নজরে পড়ে না! কাউকে এ বিষয়ে বড় একটা লিখতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না-সংবাদ প্রতিবেদনের বাইরে। এমন একটি খবর হয়তো অনেকেরই চোখে পড়ে থাকবে। কারণ খবরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ : 'অবৈধ বালু উত্তোলন/ঝুঁকিতে মেঘনা সেতু'। যেহেতু সেতু ঝুঁকিতে, তথায় যোগাযোগমন্ত্রীর গমন এবং গোটা বিষয় তার চোখে ধরা পড়ায় ঘটনায় গুরুত্ব সঞ্চার। এবার প্রশাসন নড়েচড়ে বসতে বাধ্য। বাস্তবে এমনটাই ঘটেছে। কিন্তু আগেই বলেছি, এ পাতায় ঘটনা নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ বালুর ব্যবসা চলছে। আবারও বলি, এক বছরের কাগজ উল্টে দেখলে এমন অনেক সংবাদ-প্রতিবেদন চোখে পড়বে। সপ্তাহ খানেক আগে একটি দৈনিকে মোটা হরফে শিরোনাম : 'ড্রেজারের পাইপে ঘেরা বরিশাল নগরী/এরপর ছোট হরফে লেখা : অবাধে বালু উত্তোলন/খাল নদী দখল।' বিবরণে প্রকাশ, 'কীর্তনখোলা নদীতে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। ওই বালুর কারণে ধীরে ধীরে ভরছে নদীসংলগ্ন খালগুলো। অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা খালের ওপর দিয়ে জালের মতো ড্রেজারের পাইপ নেয়ায় বালু ঝরে পড়ছে খালেই। এমনকি বালু দিয়েই প্রভাবশালীরা দখল করছে কীর্তনখোলার তীর। প্রতিনিয়ত এক ডজন স্পটের উত্তোলিত অবৈধ বালু থেকে ভরাট আর দখল হচ্ছে নদীর পাড় ও ঐতিহ্যবাহী খাল।' বিস্তারিত বিবরণে না গিয়ে এটুকু বলাই যথেষ্ট, এভাবে প্রশাসনের নাকের ডগায় নদী ও খাল নিয়ে দখলদারির রাজত্ব চলছে নির্বিবাদে। সেই ভরাট জমিতে এরপর উঠবে অবৈধ স্থাপনা। সেগুলো বৈধ করার চেষ্টাও চলবে। এবং এক সময় খাল পুরোপুরি বেদখল হবে, নদীও ক্রমেই শীর্ণকায় হতে থাকবে। এদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নদী নিশ্চিহ্ন করার মহৎ কাজ সম্পন্ন করবে। দেশের জলাশয়গুলো ঘিরে এ ধরনের ঘটনা অনেক দিন ধরে চলছে। নদীমাতৃক দেশ বলে আমরা যে গর্ব করি তা আর বাস্তবে নদীমাতৃক থাকবে না। থাকবে বইপত্রে অতীত স্মৃতির স্বাক্ষর হিসেবে। কী চমৎকার নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ। এ বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পাড় ভাঙছে, মিলিয়ে যাচ্ছে তীরবর্তী গাছপালা, জনপদ, ভাঙছে বাড়িঘর, তলিয়ে যাচ্ছে স্কুল বা মসজিদ। সবকিছুই ওই বালু তুলে নেয়ার ফলে।   দুই. এবার আমরা আগের প্রসঙ্গে ফিরে যাই। মেঘনা সেতু বিপন্ন, রীতিমতো গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। এর কারণ কী? কারণ আর কিছুই নয়, অবৈধভাবে সেতুর নিচ থেকে নিয়মিত বালু তুলে নিয়ে যাওয়ায় সেতু ধরে রাখা পিলারের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। আর মাটি সরে গিয়ে গর্ত হওয়ায় তা পিলারের জন্য বড় রকমের ঝুঁকি তৈরি করেছে। সে ঝুঁকির রকমফের শুধু প্রকৌশলীরাই নির্ধারণ করতে পারবেন। আমরা জানি না এ অবস্থা চলতে থাকলে পিলার বসে যাবে না উপরে ফাটল দেখা দেবে, নাকি স্বয়ং পিলার মহোদয়ই হেলে পড়বেন। তবু রক্ষা যে, শেষ পর্যন্ত যোগাযোগমন্ত্রী মেঘনা সেতু পরিদর্শনে গেলেন, দেখলেন এবং ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দিয়েছেন। ফলে আটক হয়েছে বালুভর্তি ট্রাক এবং দু'চারজন দুর্বৃত্ত। কিন্তু এ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থায় তো কাজ হবে না। এজন্য দরকার স্থায়ী ব্যবস্থা। তা না হলে এ ঘটনাও শীতলক্ষ্যার অবৈধ স্থাপনার মতোই হয়ে দাঁড়াবে। বালু তোলার কাজ কিছুটা বিরতি দিয়ে আবার শুরু হবে এবং তা চলতে থাকবে যতক্ষণ না মেঘনা সেতু চলাচলের অনুপযোগী হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য চুনোপুঁটি নয়, ধরতে হবে নেপথ্যের রাঘব-বোয়ালদের। মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, অচিরেই সেতুর পিলার অংশে মেরামতের কাজ শুরু হবে। কিন্তু আসলে মেরামত তো প্রধান বিষয় নয়, ওটা তো করতেই হবে সেতু চলাচলযোগ্য রাখতে হলে, বড় কথা হলো বালু-ডাকাতির দৌরাত্ম্য বন্ধ করা। সেটা করা না হলে এবং করতে না পারলে সব সদিচ্ছা, সব চেষ্টা বিফলে যাবে। রাজনীতির হালচাল, তার কায়দা-কানুন যেভাবে চলুক, এ অপ্রিয় সত্যটি মন্ত্রী মহোদয়কে বুঝতে হবে। ভাঙতে হবে সিন্ডিকেট, দূর করতে হবে দুর্নীতিগ্রস্ত তৎপরতা, ব্যবসার অবৈধ কর্মকা-। তা সেসব যেখানেই ঘটুক না কেন। কিন্তু অন্য খাতের দায় তো যোগাযোগমন্ত্রীর নয়, সেখানে অনুপ্রবেশও সম্ভব নয়, উচিতও নয়। তাই তার নিজের জায়গাটাই আগে পরিষ্কার করা দরকার। মন্ত্রী স্বচক্ষে দেখতে পেলেন তার জমিতেও জমা হচ্ছে 'এত্তা জঞ্জাল' যে, তা না সরালে বা সরাতে না পারলে দুর্গন্ধ ছড়াবে। তার সদিচ্ছার ওপর আমাদের আস্থা আছে। সড়কের বেহাল দশায় তার ছোটাছুটি ও তার নিজেরও অসহায় বেহাল দশা দেখে অনেককে সহানুভূতিসূচক মন্তব্য করতে শোনা গেছে। এটা তার জন্য ইতিবাচক প্রাপ্তি। সেই জনমনোভাব ধরে রাখতে চাইলে আপাতত দুর্বৃত্ত বালুদস্যুদের বিরুদ্ধে যোগাযোগমন্ত্রীকে কিছুটা নির্মম হতেই হবে। মন্ত্রী বলেছেন, 'দলের নাম ভাঙিয়ে যারাই জাতীয় সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।' আমরা এ আশ্বাসের বাস্তবায়ন দেখতে চাই, দেখতে চাই বালু ব্যবসার দুর্বৃত্তচক্র অকার্যকর করা, তা সিন্ডিকেট বা অন্য যাই হোক না কেন। এবং দলীয় লোক যুক্ত থাকুক বা নাই থাকুক। কারণ সংশ্লিষ্ট ভূমি কর্তৃপক্ষের মতে, মেঘনা সেতু এলাকায় নদীতে কোনো ইজারা দেয়া হয়নি, বালু তোলা দূরে থাক। এ বক্তব্য থেকেই দুর্বৃত্তপনার চক্রান্তটি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। অতএব সাধু সাবধান! না হলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২০-০৮-০১৪:
Link copied!