AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

‘দুর্ঘটনা এড়াতে নিজ দায়িত্বে পারাপার করিবেন’


Ekushey Sangbad

০৫:৪২ এএম, আগস্ট ২০, ২০১৪
‘দুর্ঘটনা এড়াতে নিজ দায়িত্বে পারাপার করিবেন’

একুশে সংবাদ : দুর্ঘটনা যেকোনো দেশে যেকোনো ক্ষেত্রে যেকোনো সময় ঘটতে পারে। তবে এর আশঙ্কা এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া বিশ্বজনীন নীতি। এর পরও যদি তা ঘটে, তার দায় নির্ধারণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কারও অবজ্ঞা-অবহেলায় এটা ঘটে থাকলে তাকে আইনের আওতায় আনার কথা। অথচ আমাদের দেশে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনায় দায়িত্ব নির্ধারণ আর দায়ী ব্যক্তির শাস্তি বিধান হয় না বললেই চলে। এ ছাড়া এক কর্তৃপক্ষের অন্য কারও ওপর দায়িত্ব চাপানোর প্রচেষ্টাও বেদনাদায়কভাবে লক্ষণীয়। সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে প্রচেষ্টা না নিয়ে এবং এর জন্য তাদের কোনো দায়িত্ব নেই বলেও আগাম নোটিশ ঝুলিয়ে রাখা হয়। সচেতন ব্যক্তিরা একে অস্বাভাবিক বললেও আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রেই এটা বাস্তব। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সম্প্রতি রেলক্রসিংয়ে একটি চলমান বাসকে ধাবমান ট্রেন ধাক্কা দিলে ১১ জন নিহত ও ৪০ জনের বেশি আহত হয়। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে তোলপাড় হয়েছে। রেলক্রসিংগুলো নিয়ে হয়েছে বেশ কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুসারে সারা দেশে রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা দুই হাজার ৫৪১টি। এর মধ্যে মাত্র ৩৭১টিতে গেট ও প্রহরী আছেন। অর্থাৎ দুই হাজার ১৭০টিই অরক্ষিত। অবশ্য কালীগঞ্জের ক্রসিংটিতে গেট আছে, গেটম্যানও আছেন; কিন্তু গেটটি খোলা রেখে গেটম্যান ছিলেন লাপাত্তা। এমনটা মাঝেমধ্যেই হয়। অন্তত এ ক্ষেত্রে রেলক্রসিংটিকে অবৈধ বা অরক্ষিত বলা যাবে না। এভাবে চাকরিরত ব্যক্তিদের দায়িত্বে অবহেলা অনেক হতাহতের কারণ ঘটিয়েছে। আলোচ্য ঘটনার পর পর স্টেশনমাস্টার আর গেটম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরাবর তা-ই হয়। তদন্তও হচ্ছে। দায়ী ব্যক্তি সরল বিশ্বাসে এ ধরনের কাজ করেছেন, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। তাই অতি দ্রুত দায়িত্ব নির্ধারণ করে বিভাগীয় শাস্তির পাশাপাশি দণ্ডবিধির আওতায় ফৌজদারি মামলা করা দরকার। কিন্তু হবে কী? এ ধরনের ঘটনায় মামলা তো হয় মূলত বিধ্বস্ত গাড়িচালকের বিরুদ্ধে, মোটরযান আইনে। সে আইনে নির্দেশিত সতর্কতা অবলম্বন না করায় চালকের বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। কিন্তু যাদের গেট বন্ধ করার কথা, তারা তা না করায় তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করা সংগত। আর অবৈধ বাদ থাকুক, বৈধ ক্রসিংগুলো যারা বছরের পর বছর অরক্ষিত রাখছে, তাদের তো কোনো কালেই কিছু হয় না। রেলওয়ে স্বীকৃত ক্রসিং এক হাজার ৪১৩ আর অস্বীকৃত বা অবৈধ এক হাজার ১২৮। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ রেললাইনের ওপর দিয়ে সড়ক তৈরির সময় রেল কর্তৃপক্ষের সম্মতি না নিয়ে যে ক্রসিংগুলো করেছে, সেগুলোকে বলা হয় অবৈধ। অবশ্য স্বীকৃত বা বৈধ এক হাজার ৪১৩টি ক্রসিংয়ের মধ্যে প্রহরী নেই এক হাজার ৪২টিতে। কোনো কোনো অরক্ষিত ক্রসিংয়ে রেলওয়ের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়। এগুলোয় লেখা থাকে, ‘এখানে কোনো গেটম্যান নাই। দেখিয়া-শুনিয়া চলিবেন।’ কোথাও বা ‘এখানে কোনো গেটম্যান নাই। পথচারী ও সকল যানবাহন চালক নিজ দায়িত্বে পারাপার করিবেন এবং যেকোনো দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে নিজেই বাধ্য থাকিবেন।’ বিস্ময়কর হলেও সত্য, এরূপ চলছে প্রায় তিন যুগ ধরে। শুধু দিনে দিনে বেড়ে চলেছে এ ধরনের ক্রসিংয়ের সংখ্যা। এসব বিষয়ের দায়িত্বে থাকা রেলপথ মন্ত্রণালয়েরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়হীনতায় তারা প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিতে পারছে না। রাস্তা নির্মাণ করতে গিয়ে যারা এ ক্রসিংগুলো করেছে, তারাও এ কাজের পক্ষে নানা যুক্তি দেখায়। এসব রাস্তাঘাট জনস্বার্থে হয়েছে, এমনটা বলা যায়। তবে ব্যক্তিগত কলকারখানার সামনের রাস্তায় ঝুঁকিপূর্ণ কিছু ক্রসিং আছে বলেও জানা যায়। তবে সব পক্ষই জেনেশুনে এ নিরাপত্তাব্যবস্থাটিকে উপেক্ষা করছে, এ অভিযোগ অস্বীকার করা যাবে না। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার সমন্বয়হীনতা সমস্যাটিকে প্রকট করে তুলেছে। রেলওয়ে এ দেশে একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। এখন এর আওতায় রয়েছে দুই হাজার ৮৫৫ কিলোমিটার রেলপথ। এ ভূখণ্ডে ব্রিটিশ সরকারের উদ্যোগে রেলের যাত্রা শুরু হয় ১৮৬২ সালে। ১৮৯৫ সালে এর দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া হয় আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের কাছে। আবার ১৯৪২ সালে তা চলে আসে সরকারি দায়িত্বে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর রেলওয়ে ছিল পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে একটি সংস্থা। ১৯৬১ সালে এটা প্রাদেশিক সরকারের নিয়ন্ত্রণে দেওয়া হয়। ১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইন দিয়ে চলছে সংস্থাটি। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, এ বছরের মে মাস পর্যন্ত গত সাত বছরে রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় বিভিন্ন যানবাহন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ২০১ জন। ঘটনার সংখ্যা ২৬৪। এ অবস্থা চলতে থাকলে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়বে। আমাদের সড়ক পরিবহন খাত কিছুটা নিয়ন্ত্রণহীন বললে দোষ ধরা যাবে না। এসব গাড়িচালকের বেপরোয়া আচরণে নিয়মিত হতাহতের ঘটনা ঘটে চলেছে। রেললাইন পার হওয়ার সময় কাছে গিয়ে থেমে ডানে-বাঁয়ে দেখার শিক্ষাই বা কজন চালকের আছে। লাইসেন্সপ্রাপ্তির জন্য এ ধরনের শিক্ষা বাধ্যতামূলক হলেও তা যাচাই করা হয় বলে মনে হয় না। এমনকি লেখাপড়া না জানা লোককেও লাইসেন্স দেওয়ার প্রস্তাব যখন দায়িত্বশীল মহল থেকে আসে, তখন পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে আছে, তা বিশদ বিশ্লেষণের আবশ্যকতা নেই। এ দেশে যাতায়াতব্যবস্থায় নৌপথের পরপরই রেলপথ স্থান নিয়েছিল। যাত্রী চলাচলসহ মালামাল পরিবহন—সব কাজেই ছিল এর ব্যবহার। দু-একটি দুর্ঘটনাও সময়ে সময়ে ঘটেছে। তবে মোটামুটি নিরাপদই মনে করা হতো রেল যোগাযোগব্যবস্থাকে। সময়সূচি অনুসরণেও বিচ্যুতি কমই ঘটত। স্টেশন, ইঞ্জিন, বগি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হতো নিয়মিত। রেলপথের সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজ চলমান ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার কয়েক বছর আগে থেকেই রেল পরিবহনব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে অধিক তৎপর হয় সরকার। ততোধিক অমনোযোগী হয় রেল যোগাযোগব্যবস্থার বিষয়ে। রেলওয়ে ছিল অগ্রসরমাণ সড়ক পরিবহনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। যেভাবেই ঘটুক, স্থলপথে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রেল যোগাযোগব্যবস্থার ওপর। দীর্ঘদিনের অবজ্ঞা ও অবহেলায় রেললাইন অনেক ক্ষেত্রেই বিপজ্জনক। নিয়মিত ও পরিমিত পাথর ফেলা হয় না। সেতু-কালভার্টগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ খুব দুর্বল। বগি ও ইঞ্জিনগুলোর বেশির ভাগই নড়বড়ে। স্টেশনগুলোর হতশ্রী অবস্থা। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয় না। আর অন্য খাতের মতো এখানেও দুর্নীতির ছড়াছড়ি। মালামাল পরিবহনেও এটা ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী কনটেইনারের ১০ শতাংশও টানতে পারছে না রেলওয়ে। অথচ কনটেইনার পরিবহনই এর আয়ের একটি বড় উৎস হতে পারে। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক পরিত্রাণ পেতে পারে এসব মালামাল বহনের চাপ থেকে। ব্রিটিশ–ভারত থেকে পাওয়া একটি রেলওয়ে ব্যবস্থাকে ভারতের মতো আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ দূরে থাকুক, আমরা ধরেও রাখতে পারছি না। বরং বেশ কটি শাখা লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রেলক্রসিংয়ে অযাচিত দুর্ঘটনার আশঙ্কা দূর করতে বৈধ-অবৈধ সব ক্রসিংয়ে গেট তৈরি, সিগন্যালিং ও প্রহরীর ব্যবস্থা করা আবশ্যক। প্রয়োজন তাদের কাজ নিবিড় তদারকির। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে যারা এ ধরনের ক্রসিং করেছে, তাদের থেকে উপযুক্ত টাকা নিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা রেলওয়েকে করতে হবে। আর টাকা না দিলে এসব ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়াই হবে সংগত। এগুলোসহ সব রেলক্রসিং নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা সরকারকেই সংস্থান করতে হবে। সে জন্য রেলে ব্যাপক বিনিয়োগ করে একে আকর্ষণীয় ও লাভজনক পরিবহন হিসেবে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার আবশ্যকতা রয়েছে। অপচয় ও দুর্নীতি হ্রাসে দৃশ্যমান উদ্যোগ দরকার। ফলে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি পেলেও তা যুক্তিসংগত হবে। বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে রেল চালানোর দাবি কেউ করে না। আর ছিটেফোঁটা বিনিয়োগে একে লাভজনক করা সম্ভব হবে বলে অনেকে মনে করে না। পাতাল রেল, মেট্রো রেল—এগুলো সম্পর্কে আমরা অনেক শুনছি। অবশ্যই প্রয়োজন আছে। করতে জোর প্রস্তুতি নেওয়া হোক, এটা সবাই চায়। তবে খুব বেশি করে চায় বিদ্যমান রেল যোগাযোগব্যবস্থাটির হতশ্রী অবস্থা থেকে উত্তরণ। আর একে নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য করা। রেলক্রসিং সড়কপথে পাড়ি দেওয়ার ব্যাপারটি শুধু ‘নিজ দায়িত্বের’ ওপর ছেড়ে না দিয়ে রেলের দায়িত্বেও রাখা যুক্তিসংগত। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২০-০৮-০১৪:
Link copied!