AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

'আমি যেন এ জীবন তোরই হয়ে চলি'


Ekushey Sangbad

০৬:৩২ এএম, আগস্ট ২০, ২০১৪
'আমি যেন এ জীবন তোরই হয়ে চলি'

একুশে সংবাদ : একবাক্যে ময়মনসিংহ তাদের স্মৃতির শহর হিসেবে অধিষ্ঠিত। কেউ হয়তো জন্মেছেন, কারো শৈশব, কৈশোর বা যৌবনের কোনো একটা সময় ওইখানে কেটেছে, বাকিরা অন্তত ঘুরতে গিয়েছিলেন কখনো আর সেইসূত্রে অনিবার্যভাবে মনে রয়ে গেছে শহরটির কথা। এছাড়াও কোনোভাবেই যারা কখনোই ময়মনসিংহ যাননি, তাদের অনেককেও বলতে শুনেছি যে, তারাও যেতে চান। তো আমরা জানি, যেতে চাওয়ার এই ইচ্ছেটিতে গোপনে প্ররোচনার মতো কলকল করে ওঠে যেই নদ— নাম তার ব্রহ্মপুত্র। এছাড়াও, প্রায় চল্লিশ বছরের পুরনো সাহিত্য সংগঠন ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ নানা সময়ে শহরটিতে বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য সম্মেলন, কর্মশালা ও পাঠচক্রের আয়োজন করে দেশের ও দেশের বাইরের অনেক লেখককে নিজ শহরের অতিথি করেছে। সেইসূত্রেও লেখালেখি পরিমণ্ডলে ময়মনসিংহ গুরুত্বপূর্ণ। আর শহরটি থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন ও সাহিত্য পত্রিকায় কখনোই কোনো লেখা ছাপা হয়নি, বাংলাদেশে এমন লেখক খুঁজে পাওয়া কঠিন। সার্বিকভাবে বলা যায় ময়মনসিংহে অবস্থানকারী স্থানীয় কবি-লেখকদের সাংগঠনিক মজবুত ভিত্তিটিই ওইখানকার নিজস্ব স্বর সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে আলাদাভাবে বাদবাকিদের সামনে খাড়া করে রাখে। যেই শহরকে কেন্দ্র করে এতকিছু, সেই ময়মনসিংহে, ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে ওইখানকার কবি-লেখকদের সঙ্গে সাহিত্য আড্ডা— টের পাওয়া যাচ্ছিল জমে উঠবে। কিন্তু তাই বলে এতটা! আড্ডা শেষে সন্ধ্যায় ফিরতি ট্রেনে আমাদের ঢাকায় ফেরত আসাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছিল। কেননা ময়মনসিংহের চন্দ্রাবতী (কবি শামসুল ফয়েজের ভাষায়) কবি রওশন ঝুনু চলতে থাকা আড্ডায় এইমর্মে নিন্দা জানালেন— ‘ঢাকা থেকে আগত অতিথিরা কী করে ময়মনসিংহে এসে বিকেলে বিকেলে আড্ডা সেরে আবার সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরে যাওয়ার সাহস দেখায়!’ আর তারসঙ্গে কণ্ঠ মেলালেন উপস্থিত অন্যরাও— দাবি উঠলো ট্রেনের টিকেট ক্যানসেল করার। শেষ পর্যন্ত তা করতে না পারার অপরাধবোধ নিয়েই ফিরতে হয় আমাদের। আমাদের বলতে, বাংলানিউজের কনসালট্যান্ট এডিটর কবি জুয়েল মাজহার, হেড অব নিউজ মাহমুদ মেনন, ফিচার এডিটর ফারুক আহমেদ, বিনোদন বিভাগীয় সম্পাদক জনি হক, অভিনেত্রী কবি জ্যোতিকা জ্যোতি, চিত্রশিল্পী খেয়া মেজবা ও আমি। এর আগে, সকালে কমলাপুর থেকে আমাদের ট্রেন তিস্তা এক্সপ্রেস। দু’দিন আগেই ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ করেছিলাম আমি। তো, খেয়া মেজবাসহ কমলাপুর ট্রেনে উঠেই টের পাই নির্ধারিত ১৬ তারিখের বদলে ভুলবশত ১৭ তারিখের টিকেট কাটা হয়েছে। সাড়ে সর্বনাশ! ওদিকে, বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে বাকিরা ট্রেনে উঠবেন। ঢাকা-ময়মনসিংহের প্রায়দীর্ঘ এই জার্নি নিশ্চয়ই দাঁড়িয়ে সম্পন্ন করা যায় না! কী করা যায় এখন? উদ্ধারকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হলেন ওই ট্রেনেরই টিকেট চেকার নজরুল ইসলাম সাহেব। সমস্যার কথা জানতে পেরে অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে তিনি প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপারকে করে তুললেন সম্ভব। ঢাকা-ময়মনসিংহের মতো ব্যস্ততম রেলরুটের রানিং ট্রেন থেকে সাতটি সিট তিনি ব্যবস্থা করে দিলেন আমাদের। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা। ভোরেই দু’দিনের সুনামগঞ্জ সফর শেষ করে ঢাকায় ফিরেছেন ফারুক আহমেদ। কয়েকঘণ্টার মধ্যেই আবার ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে যাত্রা— ক্লান্ত দেখাচ্ছিল তাঁকে। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে ট্রেন ছাড়তেই টিকেট সংক্রান্ত জটিলতার গল্প এবং অন্যান্য আড্ডায় মুহূর্তেই ধুয়ে মুছে গেল সব। ময়মনসিংহকেন্দ্রিক যার যা অভিজ্ঞতা— শেয়ারে শেয়ারে এগিয়ে চলছিল ট্রেন। জুয়েল মাজহার বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোণার মানুষ, ফলে ওইখানকার আঞ্চলিক উচ্চারণে তিনি সাবলীল; বলেও যাচ্ছিলেন ওই ভাষায়, আর বৃহত্তর ময়মনসিংহের মধ্যেই ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জের ভাষার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পার্থক্যগুলো সম্পর্কে জানাচ্ছিলেন আমাদের। দুইঘণ্টায় নাকি সাড়ে তিনঘণ্টায়— ঠিক কত সময় লাগিয়ে ট্রেন ময়মনসিংহ পৌঁছাবে— তর্ক চলছিল এ নিয়েও। আর নানা মত ও পথকে পেছনে ফেলে শরতের প্রথম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হুইসেল বাজাচ্ছিল ট্রেন।   এরমধ্যে অন্য আরেকটি ট্রেনের সঙ্গে ক্রসিংবশত কাওরাইদ স্টেশনে অনির্ধারিত যাত্রা বিরতি। স্টেশনে নামা কি ঠিক হবে? হুট করে ট্রেন ছেড়ে দেবে না তো? পাশের লাইনে অন্য ট্রেন চলে এলে!— ইত্যাদি প্রশ্ন ও সংশয়কে মাথায় নিয়েই প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়াই আমরা। ছবি তুলি। ব্রিটিশ স্থাপনার পুরানো ওই রেলস্টেশনের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব নিয়ে কথাবার্তা যদিও এগোয়, ট্রেন তো আর সহজে এগোয় না! ফলে বেশ খানিকক্ষণ সময় পাওয়া যায় কাওরাইদে। আমরা ঘুরে বেড়াই।   ময়মনসিংহ পৌঁছে স্টেশন থেকে বের হয়েই স্থানীয় প্রতিনিধি বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট আবদুল্লাহ আল মামুনের তত্ত্বাবধানে রম-থ্রি নামীয় রেস্টুরেন্টে গিয়ে নাস্তা সারতে হয়। সেখান থেকে বিকেল তিনটায় সাহিত্য আড্ডা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত রেস্ট নিতে হোটেল মোস্তাফিজ-এ নিয়ে যাওয়া হয় আমাদের। আর অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগে আগেই মামুনের বাসা থেকে প্রায় বারো-তেরো পদের ভর্তা-তরকারিসহ দুপুরের খাবার চলে আসে। সবগুলো বাটি থেকেই একটু একটু করে চেখে দেখায় ব্যস্ত জুয়েল মাজহারকে ডালের বাটির দিকে ইঙ্গিত করে ফারুক আহমেদ বললেন, ‘এটাও একটু খেয়ে দেখবেন নাকি জুয়েল ভাই!’ ঠিক তখনই ব্যাকগ্রাউন্ডে অভিযোগমিশ্রিত কণ্ঠে মাহমুদ মেনন সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন, ‘ময়মনসিংহ এলে এই ছেলেটা (মামুন) কখনোই বাইরের খাবার খেতে দেয় না, প্রতিবারই সে বাসায় ঝামেলা বাঁধায়!’ আর, আমাদেরও বুঝতে বাকি থাকে না এ অভিযোগ আদতে কৃতজ্ঞতাবোধেরই নামান্তর। আড্ডা শুরু হয় ব্রহ্মপুত্র পাড়ের হিমু রেস্তোরাঁয়। প্রথমেই এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্যদিয়ে সদ্যপ্রয়াত ছড়াকার ওবায়দুল গনি চন্দনকে সম্মান জানানো হয়। এরপর আর যা যা, সেসব বিষয়ে মাহমুদ মেনন ও ফারুক আহমেদের লেখায় বিস্তারিত বলা হয়েছে। আড্ডার অন্যতম ‘আকর্ষণ’ অভিনেত্রী কবি জ্যোতিকা জ্যোতি ময়মনসিংহেরই মেয়ে। শুটিং করতে অনেক সময় অনেক স্পটেই যেতে হয় তাকে, কিন্তু এবার কবিতা পড়তে, তাও আবার নিজের জন্মশহরে— আবেগ আর উচ্ছ্বাসটাও তাই অন্যরকম ছিল তাঁর ক্ষেত্রে। কবিতা পড়বার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জানালেনও সেই কথা। (পরবর্তীতে, ঢাকায় ফিরে জ্যোতি দেখলেন ময়মনসিংহের এক তরুণ কবি নিহার লিখন তাকে নিয়ে লিখেছেন কবিতা! ফেসবুকে জ্যোতির টাইম লাইনে নিহার পোস্ট করেন কবিতাটি।) কবি হিসেবে তার আত্মপ্রকাশে বাংলানিউজের শিল্প-সাহিত্য বিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভুললেন না জ্যোতি। নির্ধারিত তিনটা থেকে পাঁচটার আড্ডা সন্ধ্যা সাড়ে ছয়েও যখন শেষ হচ্ছিল না সঞ্চালক স্বাধীন চৌধুরী ঘোষণা করলেন, ‘ঢাকা থেকে আগত অতিথিদের ফিরবার ট্রেন সাতটা বিশে, আসুন আমরা বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করে একে একে সবাই কবিতা পড়ি।’ আর তখনই কবি রওশন ঝুনুর নেতৃত্বে আড্ডায় উপস্থিত সকলে বাধ সাধেন— ‘থেকে যেতে হবে, সারারাত ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে দিতে হবে আড্ডা।’ বন্ধুপ্রতীম কবি সালেহীন শিপ্রা কানে কানে আমাকে বললো, ‘তোমরা কি সত্যিই যাইবা? তাইলে ঘুইরা আসার নাম কইরা পলাইয়া যাও! এরা তোমগোরে যাইতে দিবো না!’ শিপ্রা আরো জানালো, কয়েকদিন আগেই নাকি কোন একটি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিকে ঘুরে আসার নাম করে পালিয়ে যেতে হয়েছিল! এই হচ্ছে ময়মনসিংহবাসির আতিথেয়তা ও আন্তরিকতার নমুনা— যা শুধু মুগ্ধই করে না, বাকরুদ্ধ করে, অশ্রুসিক্ত করে তোলে অতিথিদের চোখ। তবু ফিরতে হয়। তেমনই নিয়ম— আর আমরাও নিজ নিজ ঝোলা ব্যাগ নিয়ে কেউ গাড়িতে কেউ রিকশায় চড়ে পৌঁছে যাই ময়মনসিংহ জংশন। আমাদের বিদায় জানাতে প্ল্যাটফর্মে আসেন জ্যোতি। কেননা ছোটবোনের সঙ্গে আরো দু’টি দিন ময়মনসিংহেই থাকবেন তিনি। তাঁরই আমন্ত্রণে ট্রেন আসবার অবসরে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে নিজ নিজ পছন্দমতো কফি ও আইসক্রিম খাই আমরা। আর এরইমধ্যে এক নাম্বার প্ল্যাটফর্মের এক নাম্বার লাইনে এসে ঢোকেন মহামান্য অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস। হুইসেল দাগিয়ে যখনই তিনি (ট্রেন) মৃদু কম্পনে চলতে শুরু করেন— নাম না জানা কোন কবির দু’টি লাইন মাথায় বেজে ওঠে; “সান্ধ্য শরতে মম ব্রহ্মপুত্র তব কিনারে আসিয়া আমি বলি ব্যগ্র নিনাদে ভর করে যেন আমি যেন এ জীবন তোরই হয়ে চলি।” একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২০-০৮-০১৪:
Link copied!