এ যেন সবুজ শ্যামল এক নৈসর্গিক পরিবেশ!
একুশে সংবাদ : সবুজ অরণ্যভূমি হিসেবে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের পরিচিতি রয়েছে। উদ্যানটি ধীরে ধীরে জীববৈচিত্র ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য দর্শনীয় স্থানে পরিণত হচ্ছে। উদ্যানটি এখন আকর্ষণীয় এক প্রাকৃতিক বিনোদনকেন্দ্র। পর্যটন মৌসুম ছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময় ভ্রমণপিপাসু মানুষ উদ্যান দেখতে আসেন।
চট্টগ্রামের কাপ্তাই উপজেলাতেই দেশের অন্যতম জাতীয় এই উদ্যানটির অবস্থান। পুরো এলাকাজুড়ে রয়েছে উঁচু-নিচু, ছোট পাহাড়। গাছপালার কারণে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে সবুজ শ্যামল এক নৈসর্গিক পরিবেশ। উঁচু পাহাড়ে দাঁড়ালে দেখা যায় মাইলের পর মাইল শুধু সবুজের সমারোহ।
কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে নদী, পাহাড় এবং সবুজের সহাবস্থান দর্শককে মুগ্ধ করে। কর্ণফুলী নদী পথে প্রায় ১০ কি.মি. দীর্ঘ তীর ঘেঁষে বিপুল বৃক্ষরাজি অবাক করার মতো। বর্ষায় মেঘের আলিঙ্গন এবং শীতকালে কুয়াশার লুকোচুরি খেলা এখানে দূর থেকে অনেকটা তুষারপাতের নয়নাভিরাম দৃশ্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। পাহাড়ি ছড়ায় প্রবাহমান পানির ধারা যখন প্রবল শব্দে এসে পড়ে এবং সেই পানি যখন প্রবাহিত হতে থাকে সে দৃশ্য মন আলোড়িত করে। এসব দৃশ্য দেখতে চাইলে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে আসতে হবে।
কাপ্তাই উদ্যানে হাতির পাল দেখা যায়। খাবারের অভাব এবং আবাসস্থলের অনুকূল পরিবেশ কমে আসায় একাধিক হাতির পাল এই বনাঞ্চলে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। বনের মধ্যে বুনো হাতির পাল বিচরণের দৃশ্য উপভোগ্য। সেইসঙ্গে গাছে গাছে বানর, হনুমানের লাফালাফি, শত সহস্র পাখির কিচির-মিচির, বন মোরগের ডাকাডাকি তো রয়েছেই। এসব কারণে জায়গাটি সত্যিকার অর্থেই জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ ভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে। গোধূলী লগ্নে পাহাড়ি পথে গাছের ফাঁকে অস্তগামী সূর্যের আলোকচ্ছটা মোহনীয় দৃশ্যের সৃষ্টি করে। পর্যটকেরা এই দৃশ্য প্রাণভরে উপভোগ করেন।
কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান পাক-ভারত উপমহাদেশের শতাব্দি প্রাচীণ বন। ১৮৭৩ সালে কাপ্তাইয়ের রামপাহাড় সংরক্ষিত বনে সর্বপ্রথম কৃত্রিম বনায়ন কার্যক্রম শুরু করা হয়। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত মোট ৯,২৯৬ হেক্টর বন-বাগান প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় বৃক্ষ রোপণ করা হয়। ২০০০ সালে একে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কের বন-বাগান সংরক্ষণ, কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রাকৃতিক বিপুল বৃক্ষরাজির নৈসর্গিক দৃশ্যের সৌন্দর্য, বনাঞ্চলে বসবাসরত বন্যপ্রাণীর সৌন্দর্য্য ও জীববৈচিত্র দেশ-বিদেশের পর্যটকদের নিকট তুলে ধরা, বন-বাগান সৃজনের প্রাচীণ ইতিহাস সংরক্ষণ করাই এই পার্কের উদ্দেশ্য।
কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে বিশ্রামাগার, পিকনিক স্পট, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, পর্যটকদের বেড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় রাস্তা, সুউচ্চ পাহাড়ে ওঠার সিঁড়ি, বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির বন-বাগান সৃজন, শোভা বর্ধনকারী বৃক্ষরোপণ, প্রয়োজনীয় স্থানে ফুলের বাগান তৈরি, শৌচাগার নির্মাণ করা হলে এটি স্বয়ংসম্পূর্ণ উদ্যানে পরিণত হবে। তখন আরো বেশি পর্যটক আসবেন এটা আশা করা যায়।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২০-০৮-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :