ছেলের হাতে বাবার গিটার
একুশে সংবাদ : আমি চেয়েছি আহনাফের সংগীতজীবনের শুরুটা হোক একটা ভালো জায়গায়। ওর শুরুটা হোক আপনাদের নিয়ে, পুরো দেশকে নিয়ে। সবার কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা আমাকে আর এলআরবিকে যেভাবে ভালোবেসেছেন, আমার ছেলেকেও একইভাবে ভালোবাসবেন। আপনাদের নিয়ে আজ ওর যাত্রা শুরু হলো। আজ আমার কী আনন্দ হচ্ছে, তা বলে বোঝাতে পারব না। একজন বাবার কাছে বোধ হয় এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই!’ ২ আগস্ট রাতে যমুনা ফিউচার পার্কের মঞ্চে গান শুরুর আগে কথাগুলো বললেন আইয়ুব বাচ্চু।
ঈদ উপলক্ষে যমুনা ফিউচার পার্কে আয়োজন করা হয় ‘বামবা-যমুনা রক ফেস্টিভ্যাল’। তিন দিনের এই উৎসবে শেষ ব্যান্ড ছিল এলআরবি। সেদিন এলআরবির সঙ্গে মঞ্চে আসেন আইয়ুব বাচ্চুর ছেলে ‘আইয়ুব বাচ্চু জুনিয়র’ (এবি জুনিয়র)। পুরো নাম আহনাফ তাজোয়ার আইয়ুব। বাবা আদর করে ডাকেন ‘তাজো’। ছেলেকে দর্শকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন বাবা। এ সময় তাঁর ঠোঁটে ছিল সাফল্যের হাসি আর চোখ ছিল ভেজা।
পরদিন সকালে আইয়ুব বাচ্চুর ধানমন্ডির বাসায় কথা হলো বাবা আর ছেলের সঙ্গে। কনসার্ট শেষে তাঁরা বাসায় ফিরেছেন অনেক রাতে। কিন্তু চোখ-মুখে ক্লান্তির এতটুকু ছোঁয়া নেই। বসার ঘরে দুজনই ছিলেন বেশ হাসিখুশি।
শুরুতেই আহনাফ তাঁর অনুভূতি জানালেন এভাবে, ‘কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। টিভিতে লাইভ হচ্ছে, মঞ্চের সামনে অনেক দর্শক, পাশে বাবা। সংগীত কী, তা বাবার কাছ থেকেই শিখেছি। বাবা আমার শিক্ষক। তাঁর কাছ থেকে গিটারের তালিম নিয়েছি। এখনো শিখছি। মাসুদ চাচ্চুও (এলআরবির সদস্য) গিটারের অনেক কিছু হাতে-কলমে শিখিয়েছেন।’
আইয়ুব বাচ্চু বললেন, ‘ছোটবেলায় বুঝতে পারলাম, গিটারে তাজোর খুব আগ্রহ। এরপর ওর হাতে গিটার তুলে দিই। আমার কাছেই ওর গিটারে হাতেখড়ি হয়েছে।’
তাজো প্রথম গিটার হাতে পায় ২০০৪ সালে। তখন সে ক্লাস ওয়ানের ছাত্র। বাবা অস্ট্রেলিয়া থেকে উপহার হিসেবে নিয়ে আসেন গিটারটি। এরপর ধীরে ধীরে তাজোর গিটার শেখা শুরু। তাজো বললেন, ‘একদিন বাসায় বাবার একটা গিটারে চোখে পড়ল। গিটার নিয়ে বাবাকে বললাম, আমি এটা বাজাতে পারি? বাবা বললেন, “আগে শেখো, তারপর বাজাও।” ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে আমি নিয়মিত গিটার বাজাচ্ছি।’
গত বছর দুয়েক বাবা আর ছেলে একসঙ্গে গিটার বাজাচ্ছেন। ছেলের জন্য বাসায় একটি প্র্যাকটিস প্যাড আর স্টুডিও বানিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু। এখানেই চলে বাপ-বেটার জ্যামিং। আইয়ুব বাচ্চু বলেন, ‘বাসায় অনেক গিটার। আমার ৩৬টি আর তাজোর আছে আটটি।’
‘বামবা-যমুনা রক ফেস্টিভ্যাল’ থেকে এলআরবির হয়ে তাজো প্রথম পারিশ্রমিক পেয়েছেন ১২ হাজার টাকা। তাজো বললেন, ‘আমার কাছে তা ছিল অপ্রত্যাশিত। কনসার্ট শেষে ওই টাকা দিয়ে পরিবার আর কাছের মানুষদের নিয়ে মুহূর্তটি উদ্যাপন করেছি।’
বাবার অনেক গানই পছন্দ তাজোর। তবে খুব ভালো লাগে ‘তারা ভরা রাতে’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘নীল বেদনা’, ‘চাঁদ মামা’, ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘মন চাইলে মন পাবে’ গানগুলো।
আড্ডার শেষ দিকে নিজের পরিকল্পনা নিয়ে তাজো বললেন, ‘আমি পড়াশোনা করছি। আগে এটা শেষ করি। এলআরবি অনেক বড় প্ল্যাটফরম, আপাতত এখানেই থাকতে চাই।’
ছেলেকে নিয়ে আইয়ুব বাচ্চু বলেন, ‘ও তো এখনো অনেক ছোট। ও যা করছে, শখের বশে। ওর পড়াশোনা আছে। তাজো যদি কখনো বাজাতে চায়, তাহলে এলআরবির সঙ্গেই বাজাবে। ও গানকে পুরোপুরি পেশা হিসেবে নিক, এটা আমি চাই না। কারণ, আমাদের এখানে সেই পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। যদি ওরা বন্ধুরা মিলে ব্যান্ড করতে চায়, তাহলে আমি ওদের উৎসাহিত করব।’
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :